২৩৩. প্রলয়প্রসঙ্গ—জগতের অবস্থা

২৩৩তম অধ্যায়

প্রলয়প্রসঙ্গ—জগতের অবস্থা

“ব্যাস কহিলেন, ‘অতঃপর ভগবান বিশ্বযোনি [বিশ্বস্রষ্টা] সৃষ্টির অবসানে যেরূপে এই বিশ্বসংসার ক্রমশঃ সূক্ষ্ম করিয়া স্বীয় আত্মায় প্ৰলীন করেন, এক্ষণে সেই প্রলয়বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।

‘প্রলয়সময়ে সূৰ্য্য এবং অনলের সপ্তশিখা সমুদিত হয় এবং উহাদের সমুজ্জ্বল তেজঃপ্রভাবে সমুদয় জগৎ প্রজ্জ্বলিত হইতে থাকে। ঐ সময় পৃথিবীস্থ সমুদয় স্থাবরজঙ্গমাত্মক পদার্থ উহাতে লীন হইলে ভূমণ্ডল বৃক্ষ ও তৃণপরিশূন্য হইয়া কূৰ্ম্মপৃষ্ঠের ন্যায় নিরীক্ষিত হয়। তৎপরে সলিল ভূমির গুণ গ্রহণ করে। জল পৃথিবীর গুণ গ্রহণ করিলেই উহার প্রলয়দশা সমুপস্থিত হইয়া থাকে। ঐ সময় সলিলরাশি চতুর্দ্দিক্‌ প্লাবিত করিয়া তরঙ্গজাল বিস্তারপূর্ব্বক গভীর শব্দসহকারে প্রবলবেগে বিচরণ করিতে থাকে। তৎপরে জ্যোতি সলিলের গুণ গ্রহণ করিলে সলিলও অগ্নিতে পরিণত হয়। ঐ সময় হুতাশনের শিখাজাল মধ্যস্থ সূৰ্য্যমণ্ডলকে তিরোহিত করে এবং নভোমণ্ডল জ্বালাপটলে পরিপূর্ণ হইয়া প্রজ্জ্বলিত হইতে থাকে। তৎপরে বায়ু জ্যোতির গুণ রূপকে গ্রহণ করে। সমীরণ জ্যোতিগুণ গ্রহণ করিলে জ্যোতি প্রশান্তভাব অবলম্বন করে এবং সমীরণ আপনার উৎপত্তিস্থান আকাশে ব্যাপ্ত হইয়া প্রবলবেগে চতুর্দ্দিকে ধাবমান হয়। তৎপরে আকাশ বায়ুর গুণ স্পর্শকে গ্রাস করিলে বায়ু শান্তভাব ধারণ করিয়া থাকে এবং আকাশ রূপস্পর্শগন্ধবিবর্জ্জিত ও আকার পরিশূন্য হইয়া ব্যক্ত শব্দের ন্যায় অবস্থান করে। আকাশ অব্যক্ত শব্দের ন্যায় অবস্থিত হইলে প্রকাশাত্মক সূক্ষ্মস্বরূপ মন আত্মপ্রকাশিত আকাশের গুণ শব্দকে গ্রাস করিয়া থাকে। ইহারই নাম স্থূল ব্রহ্মাণ্ডের প্রলয়।

‘তৎপরে চন্দ্রমা মনকে গ্রাস করে। মন গ্রস্ত হইলে জ্ঞান বৈরাগ্য প্রভৃতি উহার গুণগ্রাম তৎকালের চন্দ্রেই অবস্থান করিয়া থাকে। সেই চন্দ্রসংজ্ঞক মন বহুকালের পর বৈষয়িক সঙ্কল্পকে আয়ত্ত করে। তৎপরে ব্রহ্মে অভেদজ্ঞানস্বরূপ সঙ্কল্প সেই চলসংজ্ঞক মনকে, শ্রেষ্ঠ জ্ঞান সেই সঙ্কল্পকে, কাল সেই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান ও বলরূপ আপনার শক্তিকে এবং বিদ্যা সেই কালকে গ্রাস করিয়া থাকে। তৎপরে সেই বিদ্যা অব্যক্ত শব্দে এবং সেই অব্যক্ত শব্দ আত্মায় প্রবিষ্ট হয়। আত্মাই নিত্য, অব্যক্ত, পরমব্রহ্ম। এইরূপে ভূতসমুদয় পরব্রহ্মে লয়প্রাপ্ত হইয়া থাকে। হে বৎস! তুমি পরম সুপণ্ডিত, এই নিমিত্ত আমি তোমার নিকট যোগিগণের জ্ঞেয় ব্রহ্ম ও প্রকৃতি এবং ব্রহ্মার যুগসহস্রদ্বয়াত্মক অহোরাত্রির বিষয় নিঃসংশয়ে আনুপূৰ্ব্বিক কীৰ্ত্তন করিলাম।’ ”