২১৮. অঙ্গিরার অপরাপর অগ্নি-সন্ততি

২১৮তম অধ্যায়

অঙ্গিরার অপরাপর অগ্নি-সন্ততি

মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “হে নৃপবর! চন্দ্ৰমসীনামে বৃহস্পতির যে মনস্বিনী ভাৰ্য্যা ছিলেন, তিনি পরমপবিত্র ছয় পাবক ও এক কন্যা প্রসব করেন। যজ্ঞকালে যে হুতাশনে ঘৃতাহুতি প্রদত্ত হয়, সেই অগ্নির নাম শংযু। চাতুৰ্ম্মস্য ও অশ্বমেধ-যজ্ঞের সময় উহার সমীপে অগ্রজ পশু থাকে। উনি অনেকবিধ শিখা দ্বারা প্ৰদীপ্ত হইয়া শোভমান হয়েন। ঐ শংযুর ভাৰ্য্যার নাম সত্যা, উনি ধর্ম্মের কন্যা। সত্যার গর্ভে শংযুর এক পুত্র ও তিন কন্যা জন্মে। পুত্রটি প্রদীপ্ততর হুতাশন, উহার নাম ভরদ্বাজ, উনি শংযুর প্রথম পুত্র। যজ্ঞানুষ্ঠানসময়ে প্রথম আজ্যভাগদ্বারা উঁহাকে পূজা করিয়া থাকে। শংযুর দ্বিতীয় পুত্রের নাম উর্জ্জভরত। শংযুর আর যে তিনটি কন্যা ছিলেন, ঐ ভরত তাহাদের অপেক্ষা জ্যেষ্ঠ। উর্জ্জভরতের পুত্রের নাম ভরত ও কন্যার নাম ভারতী। ভরতপুত্ৰ প্ৰজাপতি ভারতের তনয় পাবক, ইনি লোকে মধ্যে সাতিশয় পূজিত।

“ভরদ্বাজের ভাৰ্য্যার নাম বীরা। বীরার গর্ভে ভরদ্বাজের ঔরসে বীরনামা হুতাশনের জন্ম হয়। দ্বিজগণ সোমের ন্যায় উহাকেও আজ্যদ্বারা আহুতি প্ৰদান করিয়া থাকেন। উঁহার আর তিনটি নাম রথপ্ৰভু, রথাধবনি ও কুম্ভরেতাঃ। উনি সরযূতে সিদ্ধিলাভ ও স্বীয় তেজঃপুঞ্জপ্রভাবে সূৰ্য্যকে আবৃত করিয়াছিলেন এবং উহার আরাধনা করিলে সুবর্ণ প্ৰদান করিয়া থাকেন। যিনি কখনই স্বীয় যশ, তেজ ও শ্ৰী হইতে চ্যুত হয়েন না, তাঁহার নাম নিশ্চ্যবন অগ্নি। উনি কেবল পৃথিবীরই স্তব করেন। উঁহার পুত্রের নাম বিপাপ অগ্নি, উনি কলুষ্যশূন্য, বিশুদ্ধ ও অর্চিষ্মান। যিনি রোরুদ্যমান প্রাণীগণের নিষ্কৃতি করেন, তাঁহার নাম নিষ্কৃতি হুতাশন। নিস্কৃতির পুত্র স্বন। উনি লোকের শরীরে রোগ প্রদান করেন; বেদনার্ত্ত ব্যক্তিগণ উঁহার প্রভাবেই আর্ত্তস্বরে চীৎকার করে।

“যিনি জগতীতলস্থ সমুদয় লোকের বুদ্ধি আক্রমণ করিয়া থাকেন, অধ্যাত্মবেত্তারা তাঁহাকে বিশ্বজিৎ অগ্নি বলিয়া কীর্ত্তন করেন। যিনি দেহিগণের অন্তরে থাকিয়া ভুক্ত দ্ৰব্য-সমুদয় পাক করেন, তিনি লোকে বিশ্বভূক্‌ হুতাশন বলিয়া প্রসিদ্ধ। ব্রহ্মচারী, যতাত্মা, বিপুলব্রত ব্ৰাহ্মণগণ পাকযজ্ঞে সতত ইঁহাকে পূজা করিয়া থাকেন। পবিত্রতা গোমতী নদী ইহার পত্নী। ব্ৰহ্মচারী ব্যক্তিগণ ঐ হুতাশনে সমুদয় ধর্ম্মকর্ম্ম সম্পন্ন করিয়া থাকেন। যে দারুণ বাড়বাগ্নি সমুদ্রের জল পান করেন ও সতত উৰ্দ্ধগামী, উহার নাম উৰ্দ্ধভাক্‌; আর প্রাণকে আশ্রয় করিয়া যে অগ্নি থাকে, তাহার নাম কবি।

“লোকে যাঁহাকে নিত্য বারিপুত স্বিষ্ট-নামক হবিঃ প্রদান করিয়া থাকে, তাহার নাম স্বিষ্টকৃৎ অগ্নি। যে অগ্নি প্রলয়কালে সমুদয় লোক বিনষ্ট হইলেও ক্ৰোধস্বরূপে বর্ত্তমান থাকেন, তাঁহার নাম মন্যু। মন্যুর কন্যার নাম স্বাহা, উঁহার স্বভাব সাতিশয় ক্রূর ও দারুণ। তিনি সকল লোকেই অবস্থিতি করেন। স্বর্গে তাঁহার তুল্য রূপবান আর কেহই নাই, লোকে তাঁহাকে কামপাবক বলিয়া জানে। দেবগণ উঁহার অসামান্য রূপলাবণ্যসন্দর্শনে উঁহাকে কামপাবক আখ্যা প্ৰদান করিয়াছেন। যিনি মাল্যধারণ, ধনুগ্রহণ ও রথে আরোহণপূর্ব্বক সমরে সমুদয় শক্ৰগণকে সংহার করেন, তাহার নাম অমোঘ হুতাশন। উক্‌থ নামে অগ্নি বেদবাক্য দ্বারা সতত সংস্তুত হইয়া থাকেন। উহার পুত্ৰ মহাবাক, মহাবাকের অপর নাম সকাশ্বাস।”