২১৬. অগ্নির বহুত্ব—তদ্বরে অঙ্গিরার বৃহস্পতিকে পুত্ররূপে লাভ

২১৬তম অধ্যায়

অগ্নির বহুত্ব—তদ্বরে অঙ্গিরার বৃহস্পতিকে পুত্ররূপে লাভ

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির মহর্ষি মার্কণ্ডেয়ের সমীপে উক্ত প্রকার ধর্ম্মসংযুক্ত কথা শ্রবণানন্তর পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে ব্ৰহ্মন! পূর্ব্বে ভগবান হুতাশন কি নিমিত্ত সলিলে প্রবেশ করিয়াছিলেন? অগ্নি এক, কিন্তু কাৰ্য্যকালে তাহার বহুত্ব দৃষ্ট হয়, তাঁহার কারণ কি? তিনি অন্তর্হিত হইলে পর ভগবান আঙ্গিরাঃ কিরূপে স্বয়ং হুতাশন হইয়া হব্য বহন করিয়াছিলেন? কার্ত্তিকেয় কিরূপে সমুৎপন্ন হয়েন, কিরূপেই বা মহাদেবের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন আর গঙ্গা ও কৃত্তিকাগণই বা কিরূপে তাহার মাতা হইয়াছিলেন? হে মহর্ষে! আপনার নিকট এই সমস্ত বৃত্তান্ত শ্রবণ করিতে আমার একান্ত কৌতুহল জন্মিয়াছে; আপনি অনুগ্রহ প্রকাশ করিয়া সমুদয় বৃত্তান্ত যথাবৎ কীর্ত্তন করুন।”

মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “হে রাজন! ভগবান হুতাশন যে নিমিত্ত ক্রুদ্ধ হইয়া তপানুষ্ঠানের জন্য সলিলে প্রবেশ করিয়াছিলেন এবং মহর্ষি অঙ্গিরাঃ যে প্রকারে স্বীয় প্রভাবে সমুদয় জগৎ সন্তাপিত ও তিমির বিনষ্ট করিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে পুরাতন ইতিহাস কীর্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করা।

“পূর্ব্বকালে মহাভাগ অঙ্গিরাঃ আশ্রমে থাকিয়া অতি কঠোর তপানুষ্ঠানদ্বারা অগ্নি অপেক্ষা অধিকতর তেজস্বী হইয়া উঠিলেন। তিনি ক্ৰমে ক্ৰমে সূৰ্য্যের ন্যায় স্বীয় প্রভায় সমুদয় জগৎ প্রকাশিত করিতে লাগিলেন। ঐ সময় ভগবান হব্যবাহন সলিলমধ্যে প্রবেশপূর্ব্বক তপানুষ্ঠান করিতেছিলেন। তিনি অঙ্গিরার প্রভাবে একান্ত সন্তপ্ত ও গ্লানিযুক্ত হইলেন, কিন্তু উহার কোন কারণই অবগত হইতে পারিলেন না। পরিশেষে মনে মনে চিন্তা করিলেন যে, ‘ব্ৰহ্মা এই সমস্ত লোকের নিমিত্ত অন্য এক অগ্নি সৃষ্টি করিয়াছেন। বহু দিবস তপস্যা করাতে আমার অগ্নিত্ব বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে। এক্ষণে কি করি, কিরূপেই বা পুনরায় অগ্নিত্ব প্রাপ্ত হই?’ ভগবান হুতাশন এইরূপে চিন্তা করিতে করিতে সেই অগ্নিসদৃশ লোকতাপন মহৰ্ষিকে নিরীক্ষণ করিয়া শনৈঃ শনৈঃ তাহার সমীপে গমন করিলেন।

“মহাভাগ অঙ্গিরাঃ অগ্নিকে অবলোকন করিয়া সভয়ান্তঃকরণে কহিলেন, “হে ভগবন! আপনি শীঘ্র অগ্নি হইয়া জনগণের হিতসাধন করুন। আপনি এই স্থাবর জঙ্গমাত্মক ত্ৰিলোকীমধ্যে সমস্তই বিশেষরূপে জ্ঞাত আছেন। ভগবান কমলযোনি তিমিরাপনোদন জন্য প্রথমে আপনার সৃষ্টি করিয়াছিলেন। অতএব আপনি শীঘ্র আপনার অধিকার প্রাপ্ত হইন।”

‘অগ্নি কহিলেন, “লোকমধ্যে আমার কীর্ত্তি বিনষ্ট হইয়াছে; আপনি এক্ষণে হুতাশনত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন। লোকে আপনাকেই অগ্নি বলিয়া জানিবে, আমাকে কেহই অগ্নি বলিয়া মান্য করিবে: না, অতএব আমি অগ্নিত্ব পরিত্যাগ করিতেছি, আপনিই প্রথম অগ্নি হউন, আর আমি দ্বিতীয় অগ্নি হইব।”

“অঙ্গিরাঃ কহিলেন, “হে হুতাশন! আপনি অগ্নি হইয়া হর্ব্বিবহনদ্বারা প্ৰজাগণের স্বৰ্গলাভের পথ প্রকাশ করুন, আর আমার প্রতি অনুগ্রহ করিয়া আমাকে প্রথমে একটি পুত্র প্রদান করুন।”

“ভগবান হুতাশন আঙ্গিরার প্রার্থনানুরূপ কাৰ্য্য করিতে সম্মত হইলে বৃহস্পতিনামে অঙ্গিরার এক পুত্ৰ জন্মিল। দেবগণ অগ্নির প্রভাবে অঙ্গিরার প্রথম পুত্ৰ জন্মিয়াছে জানিয়া তাঁহার সমীপে আগমনপূর্ব্বক কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি দেবগণের সমীপে সমুদয় কারণ ব্যক্ত করিলেন। দেবগণও তাঁহার বাক্যে অনুমোদন করিলেন। হে রাজন! অগ্নি নানাপ্রকার, উহারা বহুবিধ কর্ম্মদ্বারা বিখ্যাত, উহাদের এক একটি দ্বারা পৃথক পৃথক কাৰ্য্য সুসম্পন্ন হইয়া থাকে।”