২৭৩. শ্ৰীরামজন্ম-কথন

২৭৩তম অধ্যায়

শ্ৰীরামজন্ম-কথন

মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “হে ভরতশ্রেষ্ঠ! মহাবলপরাক্রান্ত দুৰ্দান্ত রাবণ মায়াপ্রভাবে আশ্রমে প্রবিষ্ট হইয়া জানকীকে হরণ ও পথিমধ্যে গৃধ্র জটায়ুর প্রাণ সংহারপূর্ব্বক স্বস্থানে প্রস্থান করিলে পর রামচন্দ্ৰ সীতার অদর্শনে তোমা অপেক্ষা সমধিক দুঃখ ভোগ করিয়াছিলেন। অনন্তর তিনি সুগ্ৰীবের সাহায্যে সমুদ্রে সেতুবন্ধনপূর্ব্বক দশাননপুরী লঙ্কা দগ্ধ করিয়া জানকীর উদ্ধার সাধন করেন।”

যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভগবন! রাম কোন বংশ অলঙ্কৃত করিয়াছিলেন, তাঁহার শৌৰ্য্য, বীৰ্য্য ও পরাক্রমই বা কিরূপ এবং রাবণই বা কাহার পুত্র? তাঁহার সহিত কোন ব্যক্তির শক্ৰতা হইয়াছিল? তৎসমুদয় সবিস্তর কীর্ত্তন করুন। অনুত্তম রামচরিত শ্রবণ করিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ জন্মিয়াছে।’

মার্কণ্ডেয় কহিলেন, “রাজন! পূর্ব্বে ইক্ষ্বাকুবংশসস্তুত অজনামে এক সুবিখ্যাত নরপতি ছিলেন। তাঁহার পুত্রের নাম দশরথ; তিনি অতি পবিত্ৰস্বভাব ও নিরন্তর স্বাধ্যায়নিরত ছিলেন। দশরথের চারি পুত্ৰ;—রাম, লক্ষ্মণ, ভরত ও শক্রঘ্ন; তাঁহারা সকলেই ধর্ম্ম ও অর্থ চিন্তাবিশারদ। রামের জননী কৌশল্যা, ভারতের জননী কৈকেয়ী এবং লক্ষ্মণ ও শক্রঘ্নের জননী সুমিত্ৰা। বিদেহরাজ দুহিতা সীতা রামের প্রিয়তমা মহিষী হইবেন বলিয়া বিশ্বকর্ম্মা স্বয়ং তাঁহাকে নির্ম্মাণ করেন।

রাবণ জন্মবৃত্তান্ত

“হে ভূপাল! রাম ও সীতার জন্মবৃত্তান্ত কীর্ত্তিত হইল; এক্ষণে রাবণের জন্মবৃত্তান্ত বর্ণন করিতেছি, শ্রবণ কর।

“সর্ব্বলোকপ্ৰভূ ভগবান প্রজাপতি রাবণের পিতামহ, তাঁহার পুলস্ত্যনামে এক মানস-পুত্র জন্মে, তিনি পিতার পরম প্রিয়পাত্ৰ ছিলেন। পুলাস্ত্যের পুত্র বৈশ্রবণ; বৈশ্রবণ পিতাকে পরিত্যাগ করিয়া পিতামহের নিকট উপস্থিত হইলে তাঁহার পিতা ক্ৰোধে তনুত্যাগ করিলেন; কিন্তু বৈশ্রাবণের প্রতি তাঁহার সম্পূর্ণ ক্ৰোধ ছিল; অতএব তিনি তাঁহার প্রতিকার করিবার নিমিত্ত স্বয়ং অৰ্দ্ধাংশে দ্বিজকুলে জন্ম পরিগ্রহ করিয়া বিশ্রবানামে বিখ্যাত হইলেন।

“এ দিকে পিতামহ বৈশ্রাবণের প্রতি প্রীত হইয়া তাঁহাকে অমরত্ব, ধনেশত্ব, লোকপালত্ব ও নলকুবরনামে পুত্র প্রদান করিলেন এবং মহাদেবের সহিত তাঁহার সখ্যবিধান করিয়া তাঁহাকে পুষ্পকাখ্যা কামগ বিমান সমর্পণপূর্ব্বক রাক্ষসগণপরিপূর্ণ লঙ্কা তদীয় রাজধানী নির্দ্দিষ্ট করিয়া দিলেন। বৈশ্রাবণ ভগবান কোমলযোনির কৃপাবলে যক্ষগণের আধিপত্য ও রাজরাজত্ব প্রাপ্ত হইলেন।”