২৬৩. দ্রৌপদীদর্শনে জয়দ্রথের দুষ্টভিপ্ৰায়

২৬৩তম অধ্যায়

দ্রৌপদীদর্শনে জয়দ্রথের দুষ্টভিপ্ৰায়

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! পাণ্ডবেরা বহুলমৃগযূথসংযুক্ত ফলপুষ্পোশোভিত ঋতুকাল-রমণীয় অরণ্যসকল নিরীক্ষণ করিয়া কাম্যাকবনে মৃগানুসরণপ্রসঙ্গে ইতস্ততঃ পৰ্যটনপূর্ব্বক অমরগণের ন্যায় বিহার করিতে লাগিলেন। পরে তাঁহারা সেই অরণ্যে কিয়ৎক্ষণ অবস্থান করিয়া মহর্ষি তৃণবিন্দু ও পুরোহিত ধৌম্যের নির্দেশানুসারে দ্রৌপদীকে আশ্রমে রাখিয়া ব্রাহ্মণগণের তৃপ্তিসাধনাৰ্থ মৃগয়াপ্রসঙ্গে এককালে চতুর্দ্দিকে নিৰ্গত হইলেন।

এই অবসরে সিন্ধুদেশাধিপতি জয়দ্ৰথ বিবাহাৰ্থী হইয়া সমুচিত পরিচ্ছেদ পরিধানপূর্ব্বক শান্বেয়দিগের নিকট গমন করিলেন। তথা হইতে অনেকানেক ভূপালগণ-সমভিব্যাহারে কাম্যাকবনে উপস্থিত হইলেন।

যাদৃশ সৌদামিনী নীল জলাধরকে উজ্জ্বল করিয়া থাকে, তথায় পাণ্ডবপ্রিয়া দ্রৌপদী তদ্রূপ সেই বনবিভাগ আলোকময় করিয়া আশ্রমদ্বারে উপবেশন করিয়া আছেন, এই অবসরে তিনি রাজা জয়দ্রথের নয়নপথে পতিত হইলেন। তখন অন্যান্য ভূপালগণ ‘ইনি অপ্সরা কি দেবকন্যা অথবা দৈবীমায়া’ এই বলিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁহাকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন।

অনন্তর রাজা জয়দ্ৰথ দ্রৌপদীকে সন্দর্শনপূর্ব্বক নিতান্ত বিস্মিত ও মদনবাণে একান্ত আহত হইয়া দুষ্টমনে রাজা কোটিকাস্যকে কহিলেন, “হে সৌম্য! এই সর্ব্বাঙ্গসুন্দরী ভুবনমোহিনী কাহার রমণী? বোধ হয়, ইনি মানুষী নহেন। আমি বিবাহাৰ্থ ইহাকে নিজ রাজধানীতে লইয়া যাইব। এক্ষণে ইনি কাহার পরিগৃহীতা, কোথা হইতে আসিয়াছেন, এই কণ্টকাকীর্ণ অরণ্যে আগমন করিবার কারণ কি, আর ত্ৰিলোকলালামভূতা ঐ ললনা আমাকে কি ভজনা করিবেন এবং আমি ইঁহাকে পাইয়া কি সফলকাম হইব? হে কোটিকা! তুমি সত্বর গমন করিয়া এই সকল কথা সবিশেষ অবগত হইয়া আইস।” তখন শৃগাল যেমন ব্যাঘ্রীকে জিজ্ঞাসা করে, তদ্রূপ কোটিকাস্য দ্রৌপদীর নিকট উপনীত হইয়া কহিলেন।