২৫৪. পাণ্ডবগণের রাজসূয়ানুকরণে দুর্য্যোধনের বৈষ্ণব যজ্ঞ

২৫৪তম অধ্যায়

পাণ্ডবগণের রাজসূয়ানুকরণে দুর্য্যোধনের বৈষ্ণব যজ্ঞ

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! অনন্তর সূতপুত্র কর্ণ দুৰ্য্যোধনকে কহিলেন, “দুৰ্য্যোধন! এই ভূমণ্ডলমধ্যে তোমার শত্ৰু আর কেহই নাই। এক্ষণে তুমি ইন্দ্রের ন্যায় নির্ব্বিঘ্নে এই পৃথিবী পালন কর।”

রাজা দুৰ্য্যোধন কর্ণের বাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “অঙ্গরাজ! তুমি যাহার সহায়, যাহার প্রতি অনুরক্ত এবং যাহার কাৰ্য্যসাধনে সতত সমুদ্যত তাহার কিছুই দুর্লভ নাই। এক্ষণে আমার এক অভিপ্ৰায় আছে, শ্রবণ কর। পাণ্ডুনন্দনের রাজসূয় যজ্ঞ-দর্শনাবধি উহার অনুষ্ঠানে আমারও স্পৃহা হইয়াছে; অধুনা তুমি আমার সেই অভিলাষ সম্পাদন কর।”

মহাবীর কৰ্ণ কহিলেন, “হে রাজন! এক্ষণে সমুদয় ভূপতিই তোমার বশীভূত হইয়াছেন, অতএব তুমি দ্বিজগণকে আহ্বান করিয়া যজ্ঞোপকরণ-সমুদয় আহরণ কর। বেদপারগ ঋত্বিকগণ আসিয়া সুচারুরূপে কর্ম্ম সম্পন্ন করুন। হে মহারাজ! তুমি বহুবিধ অন্ন, পান ও অতুল সমৃদ্ধিসম্পন্ন মহাযজ্ঞ আরম্ভ কর।”

মহারাজ দুৰ্য্যোধন কর্ণের বাক্য-শ্রবণানন্তর স্বীয় পুরোহিতকে আনয়নপূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন, “হে দ্বিজসত্তম! আপনি আমার নিমিত্ত বিপুলদক্ষিণ মহাক্ৰতু রাজসূয়ের যথাবিধি অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হউন।”

পুরোহিত দুৰ্য্যোধনকে শ্রবণ করিয়া কহিলেন, “হে মহারাজ! ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির জীবিত থাকিতে আপনাদের বংশে কেহই রাজসূয়ানুষ্ঠান করিতে সমর্থ হইবেন না। বিশেষতঃ আপনার পিতা ধৃতরাষ্ট্র জীবিত থাকিতে রাজসূয়ানুষ্ঠান করা আপনার পক্ষে নিতান্ত বিরুদ্ধ। হে মহারাজ! রাজসূয়-যজ্ঞের সদৃশ আর এক মহাসত্র আছে, আপনি তাহারই অনুষ্ঠান করুন। যে সমুদয় ভূপতি আপনার করপ্রদ হইয়াছেন, এক্ষণে তাঁহারা আপনাকে সুবৰ্ণ প্ৰদান করুন। আপনি সেই সুবর্ণসমূহদ্বারা লাঙ্গল প্রস্তুত করাইয়া তন্দ্বারা যজ্ঞভূমি কর্ষণ করিতে আজ্ঞা প্ৰদান করুন এবং তথায় যথাশাস্ত্র প্রভূতান্নসম্পন্ন সুসংস্কৃত যজ্ঞের অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হউন। এই সৎপুরুষসম্পাদ্য যজ্ঞের নাম বৈষ্ণব-যজ্ঞ। বিষ্ণু ব্যতীত আর কেহই পূর্ব্বে এ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতে পারেন নাই। এই যজ্ঞ রাজসূয় যজ্ঞের সমকক্ষ। ইহা আপনার পক্ষে শ্রেয়স্কর, ইহাতে আমাদের সম্পূর্ণ মত আছে। আপনার আশা সফল ও এই যজ্ঞ নির্ব্বিঘ্নে সম্পন্ন হইবে, তাহার সন্দেহ নাই।”

মহীপতি দুৰ্য্যোধন পুরোহিতবাক্য শ্রবণ করিয়া কৰ্ণ, শকুনি ও স্বীয় ভ্রাতৃগণকে কহিলেন, “দেখ, ব্রাহ্মণ যাহা কহিলেন, উহাতে আমার সম্পূর্ণ মত আছে, তোমাদের মত কি?” তখন কৰ্ণ প্রভৃতি সকলেই দুৰ্য্যোধনের বাক্যে অনুমোদন করিলেন। পরে মহারাজ দুৰ্য্যোধন শিল্পীগণকে সুবর্ণ লাঙ্গল প্রস্তুত করিতে আজ্ঞা প্ৰদান করিবামাত্র অনতিকাল মধ্যেই সমুদয় দ্রব্যজাত প্রস্তুত হইয়া উঠিল।