২৭২. রামোপাখ্যানপৰ্ব্বাধ্যায় নির্ব্বিন্ন যুধিষ্ঠির-প্রশ্ন

২৭২তম অধ্যায়

রামোপাখ্যানপৰ্ব্বাধ্যায় নির্ব্বিন্ন যুধিষ্ঠির-প্রশ্ন

জনমেজয় জিজ্ঞাসা করিলেন, হে ব্ৰহ্মন! দ্রৌপদী অপহৃত হইলে পাণ্ডবেরা নিরতিশয় দুঃখপ্রাপ্ত হইয়া পরিশেষে কি করিলেন?

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ! ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির জয়দ্রথকে পরাজিত ও দ্রৌপদীকে বিমুক্ত করিয়া পরিশেষে কাম্যাকবনে মুনিগণ-সমভিব্যাহারে একত্র সমাসীন হইয়া নানা প্রকার কথোপকথন আরম্ভ করিলেন। মহর্ষিগণ তাঁহাদিগের দুঃখবার্ত্তা শ্রবণ করিয়া সাতিশয় শোক প্রকাশ করিতে লাগিলেন।

অনন্তর ধর্ম্মরাজ মার্কণ্ডেয়কে কহিলেন, “ভগবন! আপনি দেবর্ষিগণের মধ্যে বিশেষ বিখ্যাত; ভূত ও ভবিষ্যৎ বর্ত্তমানের ন্যায় প্রত্যক্ষ করেন; অতএব অনুগ্রহপূর্ব্বক আমার অন্তঃকরণের সংশয় অপনোদন করুন। স্পষ্টই প্ৰতীত হইতেছে যে, কাল, দৈব ও ভবিতব্যতা অনতিক্রমণীয়; নতুবা অযোনিজ, বেদিমধ্যসম্ভূতা, মহাত্মা পাণ্ডুর পুত্রবধূ ও আমাদিগের সহধর্ম্মিণী সেই ধর্ম্মচারিণী দ্রুপদরাজনন্দিনী কি নিমিত্ত এরূপ দুরবস্থাগ্রস্ত হইলেন? তিনি কদাপি পাপ ও নিন্দিত কর্ম্ম করেন নাই, সর্ব্বদা দ্বিজসেবা প্রভৃতি ধর্ম্মাচরণে তৎপর।

“পাপমতি জয়দ্ৰথ ধর্ম্মচারিণী দ্রৌপদীকে বলপূর্ব্বক হরণ করিয়াছিল বলিয়া সহায়সম্পন্ন হইলেও সে সংগ্রামে পরাজিত হইয়াছে এবং তাঁহার মস্তকের কেশপাশ মুণ্ডিত হইয়াছে। আমরা সমুদয় সিন্ধুদেশীয় সৈন্য নিহত করিয়া দ্ৰৌপদীর উদ্ধারসাধন করিয়াছি। যাহা হউক, অতর্কিতচর ভাৰ্য্যাহরণ, দীর্ঘকাল অরণ্যবাস, বনোচর নিরপরাধ মৃগগণের প্রাণহিংসাদ্বারা জীবিকা ও কপটাচারী জ্ঞাতিকর্ত্তৃক নির্ব্বাসন, এই সকল দুঃখে আমাদিগের হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে। মহর্ষে আপনি ত্রিকালজ্ঞ, অতএব আপনি কি কখন আমার ন্যায় হতভাগ্য মনুষ্যকে দর্শন বা নাম শ্রবণ করিয়াছেন?”