০৮৭. ধৌম্যকর্ত্তৃক বিবিধ পুণ্য-বন বর্ণনা

৮৭তম অধ্যায়

ধৌম্যকর্ত্তৃক বিবিধ পুণ্য-বন বর্ণনা

বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! বিপ্রবরাগ্রগণ্য বৃহস্পতিকল্প ধৌম্য পাণ্ডবগণকে নিতান্ত দীন ও একান্ত সমুৎসুক নিরীক্ষণ করিয়া যুধিষ্ঠিরকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন, “হে ভরতকুলপ্ৰদীপ! আমি ব্ৰাহ্মণগণের অনুমত পবিত্ৰ আশ্রম, দিক, তীর্থ ও পর্ব্বত-সমুদয়ের বিষয় কহিতেছি, শ্রবণ করুন। আপনি দ্রৌপদী ও ভ্রাতৃগণ-সমভিব্যাহারে উহা শ্রবণ করিলে শোকবিমুক্ত হইয়া পুণ্যলাভ করিবেন; আর যদি সেই সেই স্থানে গমন করেন, তাহা হইলে সেই পুণ্য শত শত গুণে বৰ্দ্ধিত হইবে।

পূর্ব্বদিক স্থিত নৈমিষাদি তীর্থ

পূর্ব্বদিকের কথা কহিতেছি, শ্রবণ করুন। ঐদিকে নৈমিষক্ষেত্র [নৈমিষক্ষেত্ৰ সাধারণের পূর্ব্বদিকস্থ নহে। বেদব্যাস বদরিকা আশ্রমে বসিয়া বলিতেছেন পূর্ব্বদিক, অতএব তৎপূর্ব্বদিগবর্ত্তী] আছে, তথায় দেবগণের পৃথক পৃথক পবিত্র তীর্থ-সমুদয় সংস্থাপিত হইয়াছে। যে স্থানে দেবর্ষিসেবিত পরমপবিত্র রমণীয় গােমতী নদী প্রবাহিত হইতেছে, যে স্থানে দেবগণের যজ্ঞভূমি দেদীপ্যমান রহিয়াছে ও যে স্থানে যমোদ্দেশে পশুবলি-সকল দৃষ্ট হইয়া থাকে, সেই দিকে পরমপবিত্র রাজর্ষিসৎকৃত গয়নামে গিরিবর আছে এবং দেবর্ষিসেবিত ব্ৰহ্মসরোবর পরিদৃশ্যমান হইতেছে; যাহা উদ্দেশ করিয়া পুরাতন মহর্ষিরা কহিয়াছেন, লোকের বহু পুত্ৰ কামনা করা উচিত; কেন না, তাহাদিগের মধ্যে অন্ততঃ একজনেরও গয়া-গমন, অশ্বমেধানুষ্ঠান বা নীলবৃষোৎসর্গ করিবার সম্ভাবনা, তাহা হইলে বংশের পূর্ব্বতন দশপুরুষ ও অবরজ দশ পুরুষ উদ্ধার হয়। তথায় মহানদী ফল্গু ও গয়শির আছে এবং অক্ষয়করণ বটও বিদ্যমান রহিয়াছে; এই নিমিত্ত ব্ৰাহ্মণগণ কীর্ত্তন করিয়া থাকেন যে, তথায় পিতৃগণোদ্দেশে অন্ন প্ৰদান করিলে উহা অক্ষয় হয়। ঐ স্থানে বহুবিধ ফলমূলযুক্ত কৌশিকীনাম্নী নদী প্রবাহিত হইতেছে; যে স্থানে তপােধন বিশ্বামিত্ৰ ব্ৰাহ্মণত্ব-প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তথায় পুণ্যসলিলা স্রোতস্বতী ভাগীরথী আছেন; যাহার তীরে ভগীরথ ভুরিদক্ষিণ বহুবিধ যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন।

“পঞ্চাল-দেশে উৎপলানামে বন আছে; যে স্থানে কুশিকানন্দন বিশ্বামিত্র স্বীয় পুত্র-সমভিব্যাহারে যজ্ঞ করিয়াছিলেন এবং যে স্থানে ভগবান জমদগ্নিনন্দন বিশ্বামিত্রের অতিমানুষী বিভূতি সন্দর্শন করিয়া তাঁহার বংশপরম্পরা কীর্ত্তন করিয়াছিলেন। বিশ্বামিত্ৰ কন্যকুব্জে ইন্দ্ৰ-সমভিব্যাহারে সোমরস, পান করিয়া ক্ষত্ৰিয়জাতি হইতে অপক্রান্ত হইয়া “আমি ব্ৰাহ্মণ” এই কথা বলিতে লাগিলেন। পূর্ব্বে সর্ব্বভূতাত্মা ভগবান ব্ৰহ্মা পরমপবিত্ৰ ঋষিকুলাসেবিত লোকবিশ্রুত গঙ্গাযমুনার সঙ্গমে যজ্ঞ করিয়াছিলেন; তিন্নিমিত্ত ঐ স্থান প্ৰয়াগ বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছে। ঐ স্থানে অগস্ত্যের আশ্রম আছে। সেই তপসারণ্য অদ্যাপি পূর্ব্বের ন্যায় তাপসগণপরিবৃত রহিয়াছে। তন্ত্রস্থ কালঞ্জর পর্ব্বতে মহান হিরণ্যবিন্দু বিদ্যমান আছে। পরমরমণীয় ও পবিত্র অগস্ত্যপর্ব্বতও সেই স্থানে আছে। পূর্ব্বে সর্ব্বলোকপিতামহ ব্ৰহ্মা তত্রস্থ মহাত্মা ভাৰ্গবের মহেন্দ্ৰনামক পর্ব্বতে যজ্ঞ করিয়াছিলেন; যে স্থানে পরমপবিত্ৰ ভাগীরথী নদী মণিকর্ণিকাতে প্রবিষ্ট হইয়াছে। যথায় পুণ্যবান ব্যক্তিগণকর্ত্তৃক আকীর্ণ পবিত্ৰ ব্ৰহ্মশালা প্রতিষ্ঠিত আছে; উহা দৰ্শন করিলে পুণ্য হয়। ঐ স্থানেই মহাত্মা মতঙ্গের পরমপবিত্র, মাঙ্গলিক, লোকবিখ্যাত কেদারনামে আশ্রম ও বহুবিধ ফলমূলযুক্ত রমণীয় কুণ্ডোদনামে পর্ব্বত আছে; সে স্থানে তৃষ্ণার্ত্ত নিষধাধিপতি নল জলপান করিয়া পরিতৃপ্ত হইয়াছিলেন। ঐ পর্ব্বতে তাপসশোভিত রম্য দেববন ও উহার শৃঙ্গে বাহুদা ও নন্দানাম্নী নদী দৃষ্ট হইয়া থাকে।

“হে মহারাজ! পূর্ব্বদিকস্থিত যাবতীয় পবিত্র তীর্থ, নদী, পর্ব্বত ও আয়তন-সমুদায় কীর্ত্তিত হইল। এক্ষণে অন্য তিন দিকে যে সমস্ত তীর্থাদি আছে, তাহা কহিতেছি, অবধানপূর্ব্বক শ্রবণ করুন।”