০৭৭. নলরাজের পুনরাগমনে বিদর্ভদেশে মহানন্দ

৭৭তম অধ্যায়

নলরাজের পুনরাগমনে বিদর্ভদেশে মহানন্দ

বৃহদশ্ব কহিলেন, “মহারাজ! নিষধরাজ নল উত্তম বেশভূষা সমাধানপূর্ব্বক দময়ন্তীর সহিত সুখে যামিনীযাপন করিলেন; পরদিন প্রাতঃকালে পত্নী-সমভিব্যাহারে বিদর্ভরাজের নিকট উপনীত হইয়া অতি বিনীতভাবে শ্বশুরাচরণে প্ৰণাম করিলেন। অনন্তর দময়ন্তীও পিতাকে অভিবাদন করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। বিদর্ভরাজ জামাতাকে নয়নগোচর করিয়া আনন্দে পুলকিত হইলেন এবং মহাসমোদর প্রদর্শনপূর্ব্বক সূতনির্ব্বিশেষে তাহাকে আলিঙ্গন, তদীয় মস্তকান্ত্রাণ ও যথোচিত সৎকার করিয়া উভয়কেই নানাপ্রকার আশ্বাস প্রদান করিতে লাগিলেন। নলরাজ সৎকৃত হইয়া বিধিপূর্ব্বক শ্বশুরের পরিচর্য্যা করিলেন। জনপদস্থ সমস্তলোক বহুদিবসের পর নিষধরাজকে প্রত্যাগত দেখিয়া আহ্লাদসাগরে নিমগ্ন হইল। তাহাদিগের হর্ষজনিত কোলাহলে নগর পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল ও পরমধ্যে নিরন্তর আনন্দধ্বনি হইতে লাগিল। পুরবাসিগণ কুসুমমালায় স্ব স্ব দ্বারদেশ সুশোভিত করিল; স্থানে স্থানে ধ্বজপতাকা-বিরাজিত রাজপথ-সকল সলিলসিক্ত, সম্মার্জ্জিত ও পুষ্পরাশি-সমাকীর্ণ হওয়াতে সেই নগরীর অতি অনির্ব্বচনীয় শোভা সম্পন্ন হইল। অধিবাসী লোকেরা মঙ্গলার্থী হইয়া সমুদয় দেবালয়ে নানাপ্রকার পূজোপহার প্রদান করিতে লাগিল।

“ভূপাল ঋতুপর্ণ বাহুকবেশধারী নলরাজ দময়ন্তীর সহিত মিলিত হইয়াছেন শ্রবণ করিয়া সাতিশয় আনন্দিত হইলেন এবং রাজাকে আনয়ন করিয়া বিস্ময়োৎফুল্লমানসে তাহার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করিয়া বিনয়বাক্যে কহিলেন, “মহারাজ! আপনি যে বহুকালেল পর নিজ পত্নীর সহিত সমাগত হইয়াছেন, ইহা আমার পরম ভাগ্য। আপনি ছদ্মবেশে আমার আবাসে অবস্থিতি করিয়াছিলেন; সেই অজ্ঞাতবাসসময়ে আমি বুদ্ধিপূর্ব্বক কোন অপরাধ করি নাই; কিন্তু প্রার্থনা করি, যদি জ্ঞানকৃত অথবা অজ্ঞানকৃত কোন অপরাধ হইয়া থাকে, তাহাও মার্জ্জনা করিতে হইবে।”

“নলরাজ কহিলেন, “হে পার্থিব! আমি সত্য বলিতেছি, আপনি আমার অণুমাত্রও অপরাধ করেন নাই অথবা যদি ভ্ৰান্তিক্ৰমে কোন অপরাধ হইয়া থাকে, তাহাতেও ক্ৰোধ করিব না, বরং ক্ষমা করিব। পূর্ব্বে আপনি আমার সখা ছিলেন এবং আপনার সহিত বিশেষ সম্বন্ধও আছে; অতএব অতঃপর আর ক্ষমা-প্রার্থনার প্রয়োজন নাই। এক্ষণে উদ্বেগ দূর করিয়া পরমপ্রীতি লাভ করুন; আমি সর্ব্বদা সুবিহিত [সম্ভূত—আয়োজিত] বিবিধ কাম্যবস্তু উপভোগ করিয়া আপনার গৃহে যাদৃশ সুখে বাস করিয়াছিলাম, স্বগৃহে সেরাপ সুখসম্ভোগ হওয়া সুকঠিন। মহাশয়! আপনার যে অশ্ববিদ্যা আমার নিকট ন্যস্ত হইয়া রহিয়াছে, যদি অনুমতি হয় তাহা হইলে এক্ষণে প্ৰদান করিতে ইচ্ছা করি।” নিষধরাজ এই কথা বলিয়া ঋতুপর্ণকে অশ্ববিদ্যা প্ৰদান করিলে, তিনিও বিনিময়স্বরূপ তাঁহাকে অক্ষতত্ত্ব প্ৰদানপূর্ব্বক বিধানানুসারে তদ্দত্ত অশ্ববিদ্যা গ্রহণ করিয়া অন্য এক সারথি লইয়া স্বপুরে প্রত্যাবর্ত্তন করিলেন। ঋতুপর্ণের প্রস্থানানত্তর নিষধাধিপতি কুণ্ডিনপুরে অত্যল্পকাল অবস্থিতি করিয়াছিলেন।”