০৮১. পাণ্ডবসমীপে নারীদের আগমন

৮১তম অধ্যায়

পাণ্ডবসমীপে নারীদের আগমন

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির, অর্জ্জুনবিরহে নিতান্ত উৎকণ্ঠিত কৃষ্ণসমবেত ভ্রাতৃগণের বাক্যশ্রবণে স্বয়ং পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর বিমনাঃ হইয়া আছেন, এই সময়ে দেবর্ষি নারদ তথায় সমুপস্থিত হইলেন। ধর্ম্মাত্মা যুধিষ্ঠির হুতহুতাশনসদৃশ ব্ৰহ্মতেজে জাজ্বল্যমান মহর্ষিকে সমাগত দেখিয়া ভ্রাতৃগণ-সমভিব্যাহারে গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক তাঁহাকে যথাবিধি পূজা করিলেন। কুরুকুলচুড়ামণি যুধিষ্ঠির তৎকালে ভ্রাতৃগণে পরিবৃত হইয়া সুরগণপরিবেষ্টিত শীতক্রতুর ন্যায় শোভাধারণ করিলেন। যেমন সাবিত্রী বেদ-সমুদয় ও সূৰ্য্যপ্ৰভা মেরু-পর্ব্বতকে পরিত্যাগ করে না, তদ্রূপ সেই পতিপরায়ণা যজ্ঞসেনী পতিগণের সঙ্গ পরিত্যাগ করেন না।

ভগবান নারদ পাণ্ডবগণের পূজা-গ্ৰহণানন্তর ধর্ম্মনন্দন যুধিষ্ঠিরকে যথাযোগ্য আশ্বাস প্রদানপূর্ব্বক কহিলেন, “হে ধর্ম্মবিদগণের অগ্রগণ্য! তোমার কোন বিষয়ে প্রয়োজন আছে, বল, আমি তোমাকে কি প্ৰদান করিব?”

তখন ধর্ম্মনন্দন ভ্রাতৃগণ-সমভিব্যাহারে দেবাভিলষিত দেবর্ষির চরণে প্ৰণিপাতপূর্ব্বক কৃতাঞ্জলিপুটে কহিতে লাগিলেন, “হে মহাভাগ! যখন আপনি অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি পরিতুষ্ট হইয়াছেন, তখন আমার সমুদয় অভিলাষই পরিপূর্ণ হইয়াছে। আপনি আমার ও আমার ভ্রাতৃগণের উপর বিশেষ অনুকম্পা প্রকাশ্যপূর্ব্বক একটি সন্দেহভঞ্জন করিয়া কৃতাৰ্থ করুন। হে মহাভাগ! যে তীর্থগমনে তৎপর হইয়া সমুদয় মেদিনীমণ্ডল প্ৰদক্ষিণ করে, তাহার কি ফল হয়? আপনি অনুগ্রহ করিয়া এই বিষয় সবিশেষ বর্ণন করুন?”

তীৰ্থসম্বন্ধে ভীষ্ম-পুলস্ত্য সংবাদ

নারদ কহিলেন, “হে রাজন! ধীমান্‌ ভীষ্ম পূর্ব্বে পুলস্ত্যের নিকট যে বৃত্তান্ত সবিশেষ শ্রবণ করিয়াছিলেন, তাহা আমার নিকট শ্রবণ করা। পূর্ব্বে ধার্ম্মিকাগ্রগণ্য মহাত্মা ভীষ্ম পিতৃকৃত্য করিবার নিমিত্ত মুনিগণের সহিত ভাগীরথী-তটিনী-তীরে বাস করিয়াছিলেন, তিনি সেই দেবদেবর্ষিগন্ধর্ব্বসেবিত, পরমপবিত্র গঙ্গাদ্বারে বাস করিয়া বেদবিধানানুসারে দেব, ঋষি ও পিতৃগণের তর্পণ করিয়া কিয়ৎকাল যাপন করেন।

“একদা ধর্ম্মাত্মা ভীষ্ম একাগ্রচিত্তে জপ করিতেছেন, এমন সময় অদ্ভুতদৰ্শন ঋষিসত্তম পুলস্ত্য মহাশয় তথায় সমুপস্থিত হইলেন। কুরুবংশাবতংস ভীষ্ম সেই দেদীপ্যমান উগ্ৰতপাঃ পুলস্ত্যকে দর্শন করিয়া যৎপরোনাস্তি হৃষ্ট ও বিস্ময়াবিষ্ট হইলেন। তখন তিনি বিধিপূর্ব্বক সেই সমাগত মহর্ষির পূজা করিলেন এবং পরমপবিত্র ও প্রয়তমানসে মস্তকদ্বারা অর্ঘ্য আহরণপূর্ব্বক ‘আমার নাম ভীষ্ম’ এই বলিয়া আপনার পরিচয় প্রদানপূর্ব্বক কহিলেন, হে সুব্ৰত! আমি আপনার দাস, আপনাকে সন্দর্শন করিয়া আমি সর্ব্বপাপ হইতে বিনির্ম্মুক্ত হইলাম।” ধার্ম্মিকশ্রেষ্ঠ ভীষ্ম এই কথা কহিয়া মৌনাবলম্বনপূর্ব্বক কৃতাঞ্জলিপুটে দণ্ডায়মান রহিলেন। মহর্ষি পুলস্ত্য কুরুকুলচূড়ামণি ভীষ্মকে নিয়ম, স্বাধ্যায় ও উপদেশে একান্ত রথ দেখিয়া পরম পরিতুষ্ট হইলেন।”