মহেশ্বর ক্রোধে সমুদ্রের পুত্ররূপে জলন্ধরের জন্ম
পঞ্চপাণ্ডবের বনবাসকালে একদিন দেবর্ষি নারদ তাদের আশ্রমে উপস্থিত হলে তাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন –হে মুনিবর, কোন্ কর্মফলে আমরা দুঃখ সাগরে পতিত হলাম।
দেবর্ষি বললেন–সকলেই মানবজন্ম ধারণ করে দুঃখ ভোগ করে, এর থেকে কারোও রেহাই নেই। স্বয়ং ভগবান যখন মনুষ্য দেহ ধারণ করেন, তখন তিনিও দুঃখ ভোগ করেন। সূৰ্য্যকেও রাহু গ্রাস করে। দেবদেব মহেশ্বরও জালন্ধরের দ্বারা সাগরে নিক্ষিপ্ত হন। সেই জালন্ধরকে অবশ্য মহেশ্বর নিধন করেন।
নারদের মুখে জালন্ধরের কথা শুনে মহারাজ যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন–জালন্ধর কে? কার পুত্র? এমন বনমালী কেমন করে হল? কেমন করে মহেশ্বর সেই জালন্ধরকে নিধন করলেন বলুন।
দেবর্ষি বললেন–মহেশ্বরের স্তব করার জন্য একদিন দেবরাজ ইন্দ্র, অন্যান্য দেবতা, গান্ধবগণ, অপ্সরাগণ কৈলাস পুরে গেলেন। কৈলাস শিখরে শঙ্করের সুবিশাল প্রাসাদের দ্বারদেশে উপস্থিত হয়ে ভেতরে প্রবেশ করবার জন্য প্রাসাদের দ্বাররক্ষী নন্দীকে বললে, নন্দী শঙ্করের অনুমতি নিয়ে এসে সবাইকে প্রবেশ করবার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিল। দেবরাজ বৃষধ্বজের কাছে গিয়ে তার স্তব শুরু করলেন। নর্তকীরা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে সহর্ষে শিবের সামনে নৃত্য আরম্ভ করল।
তখন মহেশ্বর ইন্দ্রকে বললেন–আমি প্রসন্ন হয়েছি, এখন মনের মত বর গ্রহণ কর।
এর উত্তরে ইন্দ্র গর্বভরে শিবকে বললেন–হে হর, আমার সঙ্গে আপনি সংগ্রাম করুন, আমি এই বরই গ্রহণ করছি। যেখানে আপনার মত যোদ্ধা আছে, সেখানে তার সঙ্গে আমার যুদ্ধ বাধিয়ে দিন। তারপর শিবের কাছে বর লাভ করে ইন্দ্র সহ সকলে সেখান থেকে চলে গেলেন।
এরপর মহেশ্বর প্রমথগণকে বললেন–ইন্দ্র বড়ই গর্বিত হয়েছে। এই কথা বলে শিব খুব রেগে গেলেন। তখন মূর্তিমান ক্রোধ আবির্ভূত হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর বলল–হে প্রভু, আমি আমার কোন্ কাৰ্য্য সমাধন করব বলুন।
শঙ্কর বললেন–তুমি সাগর সঙ্গমে সাগর-বীর্য্যে উৎপন্ন হয়ে ইন্দ্রকে জয় কর। শিবের আদেশ শুনে ক্রোধ সেখান থেকে অন্তর্হিত হল। ঈশান কল্পে স্বর্গ গঙ্গার সঙ্গে সাগরে সঙ্গম হয়েছিল। তাতে একটি সুস্থ সবল সন্তানের জন্ম হয়েছিল। জন্মগ্রহণ করা মাত্রই সেই সন্তান উচ্চস্বরে ক্রন্দন করে, তাতে ত্রিভুবন বিচলিত হল। তখন ইন্দ্রের কথায় ব্রহ্মা সেখানে উপস্থিত হলে, সমুদ্র তার অর্চনা করে আপন নবজাত পুত্রকে তার কোলে তুলে দিলেন। অপূর্ব সেই সমুদ্রের পুত্রকে দেখে ব্রহ্মা বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেলেন। তারপর তার বিক্রম দেখে তার নাম দিলেন জালন্ধর। আর স্নেহ ভরে তাকে, দেবতাগণের অজেয় হবে, স্বর্গ ও পাতাল রাজ্য ভোগ করবে, এই বর দিয়ে ব্রহ্মা চলে গেলেন।