মহারাজ অম্বরীষের কন্যার স্বয়ম্ভর সভায় দেবর্ষি নারদ ও পর্বত মুনি
পরম বিষ্ণুভক্ত মহারাজ অম্বরীষ। তাঁর পিতা ত্রিশঙ্কু এবং মাতা ভক্তিমতী পদ্মাবতী। রাজরানি হয়েও তিনি নিজেকে বিষ্ণুর একজন সেবিকা মনে করতেন। সব সময়েই শ্রীহরির সেবায় মনোনিবেশ করতেন। তার মুখে সব সময় হরিনাম। এইভাবে রানি পদ্মাবতী দশ হাজার বছর ভগবান শ্রীহরির সেবায় কাটালেন। তিনি যথাযথভাবে দীন-দুঃখীদের দান ও সম্মান করলেন।
একদিন ত্রিশঙ্কু মহিষী পদ্মাবতী দ্বাদশী তিথিতে উপবাস করে নিশি জাগরণের জন্য বিষ্ণুমন্দিরে আছেন। মহারাজ ত্রিশঙ্কু পাশে আছেন। বহুক্ষণ জেগে থাকার পর শেষ রাতের দিকে চোখে ঘুম জড়িয়ে এলে তিনি সেখানেই শুয়ে পড়লেন।
ভগবান শ্রীহরি পদ্মাবতাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন–হে ভামিনি, কি কারণে তুমি আমার এত ব্রত উপবাস করছ? কি তোমার অভিলাষ?
স্বপ্নে নারায়ণের দর্শন পেয়ে পদ্মাবতী আনন্দে অভিভূত হয়ে বললেন–প্রভু, আমাকে এমন এক পুত্র দিন, যে আপনার একান্ত ভক্ত হবে। আর তেজস্বী ও সর্বগুণান্বিত হবে।
নারায়ণ বললেন–আমার প্রদত্ত এই ফল খেয়ে তুমি গর্ভবতী হবে। যথাসময় তুমি মনের মত পুত্র লাভ করবে। তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে।– এই কথা বলে শ্রীহরি অন্তর্হিত হলেন। রানি জেগে উঠে তাকিয়ে দেখলেন নারায়ণ নেই। মনে মনে ভাবলেন তিনি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলেন, আর স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না। কিন্তু সামনে একটা ফল পড়ে থাকতে দেখতে পেলেন। সেটি হাতে নিয়ে ভাবলেন, তাহলে তো মিথ্যে নয় এ স্বপ্ন। এটি নিশ্চয়ই শ্রীহরি প্রদত্ত ফল। তারপর গোবিন্দের প্রসাদ রূপে সেটি ভোজন করলেন রানি।
যথাসময় একটি পুত্রসন্তান প্রসব করলেন রানি। রাজা-রানি আনন্দের সঙ্গে তার নাম রাখলেন অম্বরীষ। ত্রিশঙ্কুর মৃত্যুর পর অম্বরীশ রাজা হলেন। কিন্তু রাজকার্যে তার মন না থাকায় মন্ত্রীর হাতে রাজ্যের ভার দিয়ে তিনি তপস্যা করার জন্য বনে চলে গেলেন। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে শ্রীহরি সেখানে এলেন। তবে তিনি ইন্দ্রের রূপ ধরে রাজা অম্বরীষের সামনে এলেন।
ইন্দ্ররূপী শ্রীহরি রাজার সামনে গিয়ে বললেন–হে রাজন, তুমি দেখ, আমি দেবরাজ ইন্দ্র তোমাকে বরদান করার জন্য এসেছি। সকল লোকের প্রভু আমি, মঙ্গল হোক তোমার। বল তোমাকে কি বর দেব?
চোখ খুলে অম্বরীষ দেখলেন, সত্যিই ইন্দ্র তাঁর সামনে উপস্থিত। তখন তিনি বললেন–হে ইন্দ্র, আমি শ্রীহরির তপস্যা করছি। আপনার উদ্দেশে কোনো তপস্যা করিনি, তাই আপনার দেওয়া বরেও কোনো প্রয়োজন নেই আমার। শ্রীহরি আমার একমাত্র প্রভু। আপনি আপনার নিজের স্থানে গমন করুন।
মহারাজ অম্বরীষের এই কথা শুনে শ্রীহরি গরুড়ের উপর চুতর্ভুজ মূর্তিতে বিরাজ করতে লাগলেন। দেবতা এবং গন্ধর্বগণ চারিদিকে তার স্তুতি করছেন। গরুড় ধ্বজ শ্রীহরিকে দর্শন করে
অম্বরীষ আনন্দে বিহ্বল হয়ে প্রণাম করে স্তব-স্তুতি শুরু করলেন।
ভগবান শ্রীহরি রাজার স্তবে তুষ্ট হয়ে বললেন–হে সুব্রত, আমি সর্বদাই ভক্তপ্রিয়। তুমি আমার পরমভক্ত। তোমার অভিলাষ আমি পূর্ণ করব।
তখন রাজা বললেন–হে পরমানন্দ, কায়-মনবাক্যে আমি যেন নিরন্তর আপনার সেবায় নিযুক্ত থাকতে পারি। সমস্ত জগতবাসীকে বিষ্ণুপরায়ণ করে যেন পৃথিবী পালন করতে পারি। দেবতাদের পূজাও হোমের দ্বারা সন্তুষ্ট করতে পারি। বৈষ্ণবদের প্রতিপালন এবং শত্রুদের বিনাশ করা আমার মনের বাসনা।
রাজার কথা শুনে শ্রীহরি আনন্দের সঙ্গে বললেন–তোমার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। তোমাকে আমার এই সুদর্শন চক্র দান করছি। এটি তোমার পাহারায় থাকবে। এই চক্র শত্রু বিনাশ করবে এবং অকাল মৃত্যু বা সকল প্রকার ব্যধিকে বিনষ্ট করবে। . এই বর দিয়ে শ্রীহরি অন্তর্হিত হলেন। রাজা অম্বরীষ নিজের রাজ্যে ফিরে এলেন। তিনি সর্বদা নারায়ণ পরায়ণ হয়ে বিষ্ণু ভক্তগণকে বিশেষ ভাবে প্রতিপালন করলেন। অশ্বমেধ যজ্ঞ, বাজপেয় যজ্ঞ, সাধন করে পৃথিবী পালন করলেন। সব গৃহেই বেদ অধ্যয়ন, হরিনাম কীর্তন হতে লাগল। কোন প্রজা কোন দিন দুর্ভিক্ষে পীড়িত হল না।
ব্রহ্মার পুত্র নারদমুনির কথা সবাই শুনেছে। তিনি ছিলেন চিরকুমার। তিনি বিবাহ করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল, তাই তিনি বিবাহ করেননি।
মহারাজ অম্বরীষের দরবারে একদিন পর্বত মুনিকে সঙ্গে নিয়ে নারদমুনি এসে উপস্থিত হলেন। রাজা মহাসমাদরে তাদের অভ্যর্থনা করে পাদ্যাদি ধারায় পূজা করলেন। সেই সময় মহারাজের কন্যা হঠাৎ সেখানে এসে উপস্থিত হলে, দুই মুনি কন্যার রূপ দেখে মুগ্ধ হলেন, কন্যা সর্বসুলক্ষণাও।
নারদমুনি রাজা অম্বরীষকে জিজ্ঞাসা করলেনএই রূপবতী কন্যা কে?
অম্বরীষ বললেন–আমার কন্যা শ্রীমতী। বিয়ে দেবার জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান করছি।
নারদমুনি সহসা বললেন–তোমার এই বিবাহযোগ্যা মেয়েকে আমিই বিয়ে করব।
রাজা অম্বরীষ বললেন–সে তো আমার মেয়ের সৌভাগ্য।
পর্বতমুনির মনেও ইচ্ছা ছিল রূপবতী শ্ৰীমতাঁকে বিয়ে করবার। আগেভাগে নারদ বিয়ের কথা বলে ফেলায় তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তারপর ভাবলেন–যা হয় তোক, একবার আমিও বলে দেখি, এই চিন্তা করে তিনি রাজাকে বললেন–মহারাজ, আপনার কন্যা শ্রীমতাঁকে আমিই বিয়ে করব।
রাজা অম্বরীষ মহা সমস্যায় পড়লেন। যাঁকে তিনি কন্যাদান করবেন না, তিনিই শাপ দেবেন। তারপর অনেক ভেবেচিন্তে বললেন–আমার কন্যা যেমন সুন্দরী, তেমনি বুদ্ধিমতীও। তার বিয়ের জন্য আমি যদি স্বয়ম্বরের আয়োজন করি, তাহলে সে স্বামী বেছে নেবে। আগামীকাল আমার গৃহে আপনারা আসুন। স্বয়ংম্বরের ব্যবস্থা করছি।
‘তবে তাই হোক’ বলে দুই মুনি, সেখান থেকে চলে গেলেন। তারপর নারদমুনি সোজা বিষ্ণুলোকে গিয়ে, বিষ্ণুকে গোপনে বললেন–প্রভু, আপনার পরম ভক্ত অম্বরীষের কন্যা সুন্দরী শ্রীমতাঁকে আমি বিবাহ করতে চাই। কিন্তু আমার সঙ্গে থাকা পর্বতমুনিও একই প্রস্তাব দিল রাজ অম্বরীষকে। সঙ্কটে পড়ে রাজা কন্যার স্বয়ম্বরের ব্যবস্থা করেছে। হে মাধব, আপনি যদি আমার হিত করতে চান, তাহলে স্বয়ম্বর সভায় রাজকন্যার দৃষ্টিতে পর্বতমুনির মুখ যেন বানরের মত হয়। আপনি তাই করুন।
ভগবান শ্রীহরি নারদের কথা স্বীকার করে বললেন–তোমার অভিলাষ পূর্ণ হবে। পর্বতমুনিকে শ্ৰীমতী বানরমুখো দেখবে। বিষ্ণুর কথা শুনে নারদমুনি আনন্দে বিষ্ণুকে প্রণাম করে চলে গেলেন।
তার কিছুক্ষণ পরে পর্বত মুনিও বৈকুণ্ঠে এসে একই প্রস্তাব দিলেন বিষ্ণুর কাছে। শ্রীমতীর স্বয়ংম্বর সভায় নারদমুনি হবেন বানরমুখো, বিষ্ণুর কাছে এই কথা আদায় করে আনন্দে চলে গেলেন।
স্বয়ম্বর সভায় বহু রাজাদের নিমন্ত্রণ করে এনেছেন রাজা অম্বরীষ। সবার জন্য সমাদরের ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি ছিল না। যথাসময় রাজা শ্রীমতাঁকে সঙ্গে নিয়ে সেই স্বয়ম্বর সভায় প্রবেশ করলন। নারদমুনি ও পর্বত মুনিও সেই সভায় পাশাপাশি দুটি সুসজ্জিত সিংহাসনে বসেছেন।
মহারাজ অম্বরীষ মুনিদ্বয়কে প্রণাম জানিয়ে নিজ কন্যাকে বললেন–হে কল্যাণী, এই যে দুজন মুনি বসে আছেন, এদের মধ্যে যাঁকে তোমার পছন্দ তার গলায় মালা পরিয়ে দাও। পিতার বাক্যে শ্রীমতী মুনিদ্বয়ের কাছে গিয়ে দেখলেন দুটি বানরমুখো মানুষ সিংহাসনে বসে আছেন। শ্রীমতী ভীত হয়ে কাঁপতে লাগলেন।
কন্যার অবস্থা দেখে রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেনকি হল তোমার, এমন করে কাপছ কেন?
শ্রীমতী বলল–বাবা, তুমি বললে যে দুজন মুনি বসে আছেন। কিন্তু আমি দুজন নরবানরকে দেখছি। দেবর্ষি নারদ বা পর্বতমুনিকে তো দেখতে পাচ্ছি না। তবে এদের মাঝখানে এক সুন্দর পুরুষকে দেখতে পাচ্ছি। বহু মূল্যবান অলঙ্কারে ভূষিত। দীর্ঘবাহু কি অপরূপ সুন্দর দেহ। কান পর্যন্ত লম্বা দুটি চোখ।
“ইনিই আমার পতি হোন”–এই কথা বলে শ্রীমতী তাঁরই উদ্দেশে মালা দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে সেই রাজকন্যা অদৃশ্য হয়ে গেল। সভায় সবাই এমন দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেল। পূর্বকালে শ্রীহরিকে পতিরূপে লাভ করার জন্য এই শ্ৰীমতী বহুকাল তপস্যা করেছিল। ফলে শ্রীহরি ভক্ত অম্বরীষের ঔরসে শ্ৰীমতী জন্মলাভ করে শ্রীহরিকে পতিরূপে লাভ করল।
দুই মুনি মনে মনে ভাবছেন যে শ্রীহরির দয়ায় অন্যের মুখ বানরমুখো হওয়ার কথা। কিন্তু আমার মুখ বানরের মত হল কেন? তাঁরা দু’জনে নিজেদের ধিক্কার দিতে দিতে বিষ্ণুলোকে বাসুদেবের কাছে গেলেন। মুনিদ্বয় এসে বাসুদেবকে বললেন– হে গোবিন্দ, আপনি আমাদের হিতকাৰ্য্য করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি সেই কন্যাকে হরণ করেছেন।
মুনিদ্বয়ের কথা শুনে শ্রীহরি তার দুই কান বন্ধ করে বললেন–তোমরা কি আশ্চর্য্য কথা বলছ, নিজ নিজ ইচ্ছানুসারেই তোমাদের এমন ভাব হয়েছে। আমি তোমাদের উভয়ের হিতকাৰ্য্যই করেছি।
শ্রীহরিকে নারদ মুনি জিজ্ঞাসা করলেনআমাদের উভয়ের মাঝে এসে শ্রীমতাঁকে যিনি হরণ করলেন তিনি কে?
শ্রীহরি নারদের প্রশ্নে বললেন–জগতে কত মায়াবী রয়েছে। শ্রীমতী তাদের কাছেই হয়ত অদৃশ্য হয়ে লুকিয়ে আছে।
এই কথা শুনে মুনিদ্বয় অযোধ্যায় অম্বরীষের কাছে গিয়ে বলল–রাজা তুমি মায়া সৃষ্টি করে, আমাদের উপেক্ষা করে, কন্যাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছ। তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি– অন্ধকাররাশি তোমাকে ঢেকে রাখবে। তুমি তোমার নিজের দেহকেও পূর্বের মত স্পষ্ট করে দেখতে পাবে না।
অভিশাপ বাণী উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার রাজাকে ঢেকে ফেলল। তখন বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র রাজাকে রক্ষা করার জন্য আবির্ভুত হল। চক্র রাজাকে রক্ষা করে মুনিদ্বয়কে আক্রমণ করল। মহাবিপদে পড়লেন মুনিদ্বয়। “ওহে, আমাদের কন্যা সিদ্ধিলাভ হয়েছে” একথা বলতে বলতে দুই মুনি এ লোকে থেকে সে লোকে হাঁপাতে হাঁপাতে নিরন্তর ছুটে বেড়াচ্ছেন। স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছেনা। চক্র তাড়া করছে। “হে গোবিন্দ, আমাদের রক্ষা করুন।” এই কথা বলতে বলতে তারা বিষ্ণুলোকে। উপস্থিত হলেন।
তখন শ্রীহরি সেই অন্ধকার ও তার আপন চক্রকে নিবারণ করে দুই মুনিকে রক্ষা করলেন। মুনিদ্বয় ভয়মুক্ত শ্রীবিষ্ণুকে প্রণাম জানিয়ে বিষ্ণুলোক থেকে প্রস্থান করলেন এবং শোকাভিভূত হয়ে পরস্পর বলতে লাগলেন–আজ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা বিবাহ করব না।
ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী বিষ্ণুর তপস্যায় বসলেন। সেই তপস্যার তেজে সূর্যমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে উঠল। চঞ্চল হয়ে উঠল দেবলোক। কি চান ব্রাহ্মণ?
ব্রাহ্মণ যেন মনে মনে এই চাইছেন–হে বিষ্ণু, মানুষকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে না রেখে, তাদের চৈতন্য দাও। তারা তোমাকে যেন ভুলে না যায়। কলির মোহ-ফঁদে যাতে পা না দেয়।
স্বর্গের কশ্যাপ অদিতি, মথুরার বসুদেব দেবকী, অযোধ্যার দশরথ কৌশল্যা তারা এলেন নবদ্বীপে জগন্নাথ মিশ্র আর শচীদেবী রূপে, এই ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী তাদেরই সঙ্গে মিলে গেলেন।
সেই সূর্যমণ্ডলের তেজ প্রথমে এল জগন্নাথ মিশ্রের শরীরে, তার থেকে শচীদেবীর অঙ্গে।
ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যার সময় সকলঙ্ক চন্দ্রে গ্রহণের ছলে জগতের সকল জীবকে হরিনাম বলতে বলতে নবদ্বীপ ধামে অকলঙ্ক শ্রীগৌরহরি আবির্ভূত হলেন। অন্তরীক্ষ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হল। দেবতারা স্তবগান করছে–হে শচীনন্দন, তুমি যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে। কখন নৃসিংহ, কখন মৎস্য, কখন বরাহ, কখন বামন রূপে ধরে পৃথিবীকে বারে বারে তুমিই উদ্ধার করেছ। কলির মানুষরা স্রষ্টাকে অস্বীকার করছে। তারা আত্মজ্ঞান হারা। নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। মোহ-মায়ার জালে তারা আবদ্ধ। পৃথিবীর এই দুর্দিনে তোমার আবার আবির্ভাব হল। তুমি অসুর বিনাশকারী। কলির মানুষেরা প্রত্যেকেই অসুরভাবাপন্ন। প্রেম দান করে অসুরভাব থেকে সকলকে মুক্ত কর। জীবকে চৈতন্য দান কর। জগতে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নামে তুমি খ্যাতি লাভ করবে।
যবন শক্তি যখন ভারতবর্ষকে গ্রাস করতে উদ্যত হল, চারিদিকে বৌদ্ধধর্ম যখন প্রবল হয়ে উঠেছে–ঠিক সেই সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার ভাবকান্তি অঙ্গীকার করে অবতীর্ণ হলেন নবদ্বীপে। অল্প বয়সেই পাণ্ডিত্য অর্জন করলেন তিনি। গৃহী হয়ে ও সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে প্রেমধর্ম প্রচার করলেন। সবরকম বিভেদ প্রেমের বন্যায় ভাসিয়ে একাকার করে দিলেন। তাঁর অপ্রতিহত গতির সামনে বৌদ্ধ ও যবন শক্তি থমকে দাঁড়িয়ে গেল।