২. মানব-মানবীর মঙ্গল ও অমঙ্গল সূচক লক্ষণ

মানব-মানবীর মঙ্গল ও অমঙ্গল সূচক লক্ষণ

যে পুরুষের পিঠ কচ্ছপের খোলকের মতো উঁচু, যার ঘাম হয় না, নখ তাম্রবর্ণের, পায়ের তলা নরম, আঙুলগুলো পরস্পর লাগানো, সে লোক রাজা হয়। যার হাত পায়ের নখ রুক্ষ এবং পাণ্ডু বর্ণের, মুখের শিরাগুলি স্পষ্ট, আঙুলগুলো রুক্ষ, সে অর্থাভাবে দুঃখ ভোগ করে। যার গায়ে প্রতিটি রোমকূপে একটি করে রোম, জঙ্ হাতির শুড়ের মতো গোলাকার সেও রাজা হয়, আর যদি রোমকূপে রোমের সংখ্যা এদের বেশি হয়, তা হলে পণ্ডিত হওয়ার লক্ষ্মণ জানতে হবে। তবে প্রতি রোমকূপে তিনটি রোম থাকলে দারিদ্রতা লাভ হয়। শীর্ণ জানুবিশিষ্ট পুরুষ আজীবন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করে। স্থলাকার লিঙ্গবিশিষ্ট পুরুষ দরিদ্র হয়। যার অণ্ডকোষ একটি, চিরকাল দুঃখভোগের লক্ষণ। অণ্ডকোষ একটি বড়ো ও অন্যটি ছোটো, সুমতি যুক্ত পত্নী লাভ হয় না। যে পুরুষ দুটি সমান আকারের অণ্ডকোষের অধিকারী সে রাজা হয়। কোষ দুটি প্রলম্বিত হলে অল্পায়ু হয়। যে পুরুষের লিঙ্গ মণি পাণ্ডুর অথবা বিবর্ণ তাকে আজীবন দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়। শব্দের সঙ্গে যে মূত্র ত্যাগ করে, সে হয় দরিদ্র। মূত্র ত্যাগকালে বেশি শব্দ না হলে নরপতি হয়। সমানকার উদর ভাগ্যবানের লক্ষণ। কুম্ভের ন্যায় জঠর যার, সে হতদরিদ্র হয়।

সুগঠিত তিনটি সমানাকার রেখা বিশিষ্ট কপালের অধিকারী ষাট বছর পর্যন্ত পূর্ণ সংসার করে। দুটো রেখাবিশিষ্ট কপাল চল্লিশ বছর আয়ুর লক্ষণ। বিশ বছর পরমায়ু হয় তার, যে একটি রেখাযুক্ত কপাল লাভ করে। স্বল্পায়ুদের কপালের রেখা কান পর্যন্ত ঝুলে পড়ে। কান পর্যন্ত প্রলম্বিত তিন ললাট রেখা শতায়ুর লক্ষণ। রেখাগুলো স্পষ্ট না হলে বিশ বছর বেঁচে থাকে। যার কপাল রেখাবিহীন, সে হয় চল্লিশ বছরের অধিকারী। ললাটে রেখা কাটাকুটি থাকলে অপঘাতে মৃত্যু নিশ্চয়ই হবে। কপালে ত্রিশূল আকারের রেখা থাকলে সে হবে পরিমা যুক্ত নারী বা পুরুষ। ধনে-মনে পুণ্যবাণ হয়, পৃথিবীতে একশো বছর বেঁচে থাকে।

যে স্ত্রীর কেশদাম কোঁকড়ানো, নাভী দক্ষিণাবর্ত, সে হল কুলবর্দ্ধিনী। সুবর্ণ গাত্রবর্ণ, হাতের তালু পদ্মের মতো লাল লক্ষণ যুক্ত নারী পতিব্রতা হয়। বক্রকেশযুক্ত গোলাকার চোখ বিশিষ্ট রমণী অচিরে বিধবা হয়। সে আজীবন দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করে। যে রমণীর মুখ চাঁদের ন্যায়, নতুন অরুণের ন্যায় অঙ্গের রং, ঠোঁট দুটি লাল, টানা টানা দুটি চোখ–এমন নারী কখনও দুঃখকষ্ট পায় না। অসংখ্য রেখাবিশিষ্ট করতল যুক্তা নারী দুর্ভাগ্য ভোগ করে। শাস্ত্রে বলেছে, যে রমণীর হাতে রেখার সংখ্যা অত্যন্ত কম সে দীনদরিদ্র হয়, হাতের রেখা লালাভ যার, সে সর্বদা সুখ ভোগ করে। হাতের রেখা কালো হলে, সেই কন্যা দাসবৃত্তি করে।

আয়ুরেখা তর্জমা ও মধ্যমার মাঝখানে দিয়ে সোজা চলে গেলে দীর্ঘায়ু লাভ হয়। জ্ঞানরেখা, অঙ্গুষ্ঠের মূল হতে উদগত হয়। মধ্যমাঙ্গুলির মূলগত রেখা হল আয়ুরেখা। কনিষ্ঠাঙ্গুলির মূল থেকেই এর উৎপত্তি। বিচ্ছিন্ন বা বিভক্ত আয়ুরেখা শতায়ুর লক্ষণ। আয়ুরেখা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলেও শতবর্ষ লাভ হয়। কনিষ্ঠাঙ্গুলির মূল থেকে মধ্যমার মূল পর্যন্ত আয়ুরেখা বিস্তৃত হলে সে ষাট বছর বেঁচে থাকে।

যে কন্যার হাতে প্রকার ও তোরণাকার রেখা থাকে সে প্রথমে দুঃখী হয়, পরে রানি হয়। নাভিদেশে লোম দেখা দিলে এবং তা ইতস্ততঃ পিঙ্গলবর্ণ হলে, উধ্বদিকে বৃত্তাকারে গমন করলে, সে রাজপরিবারে জন্মালেও দীন দুঃখিনী হয়। যে কন্যার পায়ে অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠগুলি হাঁটার সময় মাটিতে পড়ে না, সে অচিরেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হয়। উজ্জ্বল চোখ সৌভাগ্যের লক্ষণ। যার দাঁত উজ্জ্বল, সে খাদ্যরসিক হয়। উজ্জ্বল গাত্রবর্ণযুক্ত কন্যা উত্তম শয্যালাভ করে। পা দুটি স্নেহযুক্ত হলে উত্তম বাহন লাভ করে। কন্যার চরণ দুখানি স্নিগ্ধ সমুন্নত হয়, নখগুলো তামাটে রঙের সেখানে মৎস্য, অঙ্কুশ, পদ্মাদি চিহ্ন থাকলে জানবে শুভ লক্ষণযুক্ত। সুলক্ষণা নারীর মধ্যে কোমল চরণতল ও ঘামবিহীন দেখা যায়। জঙ্ঘা ও উরুরোমবিহীন এবং হাতির শুড়ের মতো গোলাকার, সুগভীর নাভিদেশ ত্বক ও দক্ষিণাবর্ত, স্তনদুটি লোমবিহীন, এই শ্রেণীর রমণীকে ভগবান সুলক্ষণাযুক্ত বলেছেন।