কলির সাধনার ফলস্বরূপ ধরায় আবার ম্লেচ্ছাচার
বহু বছর কেটে গেছে রাজা প্রদ্যোতের ম্লেচ্ছ নিধন যজ্ঞের পর। আর্য সভ্যতার বৃদ্ধি ঘটছে। আর্যদের শাসনের জোরে ম্লেচ্ছদের আর মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল না।
দ্বাপরের পর এল কলি। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর–প্রত্যেকেই যে যার নিজের ধর্ম পালন করেছে এবং কলিতে সবাই ম্লেচ্ছচারী হবে। কলিকেও তার ধর্ম পালন করতে হবে। ধার্মিক রাজা প্রদ্যোত, তার পুত্র বেদবান, পৌত্র সুনন্দ প্রত্যেকেই চেষ্টা করেছেন যাতে রাজ্যে অনাচার প্রবেশ না করে। কোনো শ্লেচ্ছদের এখানে স্থান নেই। কিন্তু কলির আগমন কি করে হবে?
রাজ্য বিস্তার করতে না পারার জন্য কলি পড়েছেন মহা সমস্যায়। মানুষকে অনাচারী করার চেষ্টায় বিফল হয়ে শেষে শ্রীহরির শরণাপন্ন হলেন। তাঁর আকুল প্রার্থনায় শ্রীহরি দেখা দিয়ে বললেন– ভেবনা কলি। ধৈৰ্য্য ধর, দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমার স্মরণ নিয়েছ, সব দায়িত্ব আমার।
স্বয়ং নারায়ণের আশ্বাস পেয়ে কলি মহানন্দে নীলাচল পাহাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন।
আর্যদের রাজত্বে সুনন্দ শেষ রাজা। তার কোনো সন্তান ছিল না। এমন ধার্মিক রাজার রংশ লোপ পেল সন্তানের অভাবে। ঋষি মুণিগণ শঙ্কিত হয়ে পরম পবিত্র স্থান নৈমিষারণ্য ত্যাগ করে হিমালয়ে চলে গেলেন। তাঁরা সেখান থেকে ম্লেচ্ছাচার নিবারণের জন্য বিষ্ণুকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু বিধাতার নিয়ম ভঙ্গ করার ক্ষমতা স্বয়ং ভগবানেরও নেই।
রাজ্যের প্রধান নগরের পূর্বদিকে সুবিশাল এক মহাবন আছে। ঈশ্বরের ইচ্ছায় সেই বলে সৃষ্টি বল এক পুরুষ আর এক নারীর। পুরুষের নাম আদম এবং নারীর নাম হব্যবতী। তারা স্বামী-স্ত্রী। তারা ধার্মিক, শান্ত, পরম উদার, তাদের মনে কোনো লোভ নেই, লালসা বা হিংসা নেই। সেই বনে তারা দুজনে মহাসুখে বাস করত। গাছের ফলমূল ছিল তাদের খাদ্য। কিন্তু একটি গাছ ছিল তার নাম পাপ গাছ। সেই গাছের ফল ছিল খুব মিষ্টি, কিন্তু একবার সেই ফল যে খাবে তার সর্বনাশ হবে।
বিষ্ণু কলিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদম ও হব্যবতাঁকে প্রলুব্ধ না করার জন্য। কিন্তু কলি বিষ্ণুর আদেশ অমান্য করে সেই বনে প্রবেশ করামাত্র গাছগুলি ভেঙে সাপের আকৃতি হয়ে গেল।
ওদিকে আদম ও হব্যবতীর মতিভ্রম ঘটল। তার পাপ গাছের ফল খেল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদার মন হয়ে উঠল হিংসায় পরিপূর্ণ। তারা অনাচারী হয়ে ম্লেচ্ছের মত ব্যবহার কর। তাদের বংশধরেরা ম্লেচ্ছরূপেই জন্মগ্রহণ করল। সারাদেশ ম্লেচ্ছ ধর্মে ভরে গেল।
আৰ্যবৰ্ত টুকরো টুকরো হয়ে ম্লেচ্ছদের রাজত্ব হল। কেউ বেদ মানে না, যজ্ঞ করে না। মাথাচাড়া দিয়ে উঠল শক, হুণ, যবনের দল। কলির অভিলাষ পূর্ণ হল।