ম্লেচ্ছ রাজা ন্যূহকে স্বপ্নযোগে বিষ্ণুর নির্দেশ এবং পৃথিবীতে প্রলয় ও পুনরায় ন্যূহের বংশ
ন্যূহ হচ্ছেন আদমের বংশধর লোমকের ছেলে। কলির প্রভাবে সে ম্লেচ্ছ ছিল। সে বেদের ভাষা না বুঝলেও মনে মনে বিষ্ণুর ভক্ত ছিল। বিষ্ণু ন্যূহকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন–বৎস ন্যূহ, আজ থেকে সাতদিন পরে মহাপ্রলয় হবে। কেউ বাঁচবে না। তুমি আমার ভক্ত। তোমাকে রক্ষা করবার জন্য বলছি। তোমার আত্মীয়-পরিজনদের নিয়ে তুমি একটি নৌকায় উঠে জীবন রক্ষা করবে। আর সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। প্রলয়ের পর তুমিই হবে এই পৃথিবীর নতুন রাজা।
বিষ্ণুর নির্দেশমতো ন্যূহ আত্মীয়-পরিজনদের একস্থানে জড়ো করলেন। একটি নৌকো তৈরি করে তাতে সকল প্রকার শস্যদানাও মজুত করলেন। তার এই কর্ম দেখে সবাই ভাবল রাজা বুঝি পাগল হয়ে গেছে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন–সময় হলেই সব বুঝতে পারবে।
তিনশো হাত লম্বা, পঞ্চাশ হাত চওড়া আর তিরিশ হাত উঁচু এই বিশালাকার নৌকো দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। কারণ ইতিপূর্বে এমন নৌকো কেউ কখনো দেখেনি।
সময় আর বেশি নেই তাই নূহ তার আত্মীয়-পরিজনেদের সেই নৌকায় উঠিয়ে নিলেন। আর নিলেন সংগ্রহ করা বিভিন্ন প্রকার দানাশস্য।
সেই সপ্তম দিন এল। সেইদিন আর ভোর হয় না। চারিদিকে শুধু অন্ধকার। মেঘের ওপর মেঘ তারপর নামল প্রবল বৃষ্টি। খানা, ডোবা, নদী, সাগর সব জলে ভরে উঠল। পার্থিব জিনিস, প্রাণী, সবকিছুই জলের তলায় চলে গেল। শুধুমাত্র রাজা নূহের নৌকো ভেসে থাকল জলের ওপর। স্রোতের টানে চলল সাগরে।
একটানা চল্লিশ দিন ধরে চলল সেই মুষলধারা বৃষ্টি। গোটা দেশটাই চলে গেল জলের তলায়। শুধু রাজার নূহের নৌকো ভেসে চলল সেই প্রলয়ঙ্করী ঢেউ-এ।
বিষ্ণুর কথামতো সবকিছুই তেমনি ঘটতে লাগল। শুধু একটিমাত্র স্থান ছাড়া আর কোথাও কোন স্থল সেই। সেই জায়গাটি হল বিশালা। মুনি-ঋষিরা নৈমিষারণ্য থেকে হিমালয়ের সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই স্থানটি হল বিশালা।
বিশালায় বসে ঋষিরা মহামায়ার স্তব করছেন। ন্যূহের নৌকো সেখানে গিয়ে উপস্থিত হল। নূহ নৌকোতেই বসে রইলেন। ঋষিদের স্তবে মহামায় তুষ্ট হলে বর্ষা থেমে গেল। মেঘ কেটে আকাশ পরিষ্কার হল। সূর্যের প্রকাশ হল। জলরাশি নেমে গেল। ‘শিষিনা’ নামে হিমালয়ের তটভূমি রাজার দৃষ্টিগোচরে হল।
ন্যূহ সেখানে সবাইকে নিয়ে নৌকো থেকে নামলেন। গড়ে তুললেন নতুন দেশ।