অপুত্রক সগর রাজা বহুপুত্রের পিতা হলেও তার দুঃখবৃদ্ধি
সূর্যবংশে বাহু নামে এক প্রবল শক্তিশালী রাজা ছিলেন। বহুরাজ্য হঠাৎ একদিন বিদেশি শত্রুরাজ্য দ্বারা আক্রান্ত হল। রাজা প্রস্তুত না থাকায় যুদ্ধে পরাজিত হলেন। তখন গোপনে রাজমহিষীদের নিয়ে চলে গেলেন বনে। গভীর অরণ্যে ঔর ঋষির আশ্রমে। মহাপরাক্রমী হয়েও পরাজিত হলেন সামান্য শত্রুদের কাছে। এই আত্মগ্লানিতে বাহুরাজা দিন দিন ক্ষীণ হতে লাগলেন। যদিও সপরিবার মহারাজ ঔর ঋষির আশ্রমে বিশেষ সমাদরেই ছিলেন। তথাপি মানসিক যন্ত্রণায় কাতর হয়ে একদিন তিনি দেহত্যাগ করলেন, তার এক মহিষী যাদবী স্থির করলেন স্বামীর চিতায় সহমরণে যাবেন। ঋষিবর ঔর জানতে পেরে তাকে বাধা দিলেন। বললেন–তোমার গর্ভে সন্তান আছে, এ অবস্থায় তোমার সহমরণে যাওয়া উচিত নয়।
ঋষির বাধা শুনে রাজমহিষী যাদবী বললেন–আমার গর্ভের মধ্যে সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। আমার এক সতীন খাবারের সঙ্গে বিষ প্রয়োগ করে ছিল। তাতে কি আর গর্ভের সন্তান বাঁচে? সাত আট বছর হয়ে গেল তাই সন্তান প্রসব হল না।
রাজমহিষীর আশঙ্কার কথা শুনে ঋষি ধ্যানের দ্বারা সকল ঘটনাবলী জানতে পারলেন না। রানির গর্ভের সন্তান মারা যায়নি। তারপর কিছুদিন পরে সেই আশ্রমেই যাদবীর গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। ঔর ঋষি তার নাম রাখলেন সগর। “গর” মানে বিষ। বিষের সঙ্গেই তার জন্ম, তাই সগর।
ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল সগর। ঋষিবর তাকে পুত্রের মতই স্নেহ করতেন। আর নানাপ্রকার শাস্ত্র শিক্ষা-দীক্ষা পাঠ দিলেন। অসাধারণ তার প্রতিভা, অল্পদিনের মধ্যে সব শাস্ত্র পাঠ করে পণ্ডিত হয়ে উঠল রাজপুত্র। যুদ্ধবিদ্যাতেও দক্ষ হলেন, বহু আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শিখলেন সগর। ক্ষত্রিয় রাজার পুত্র সগরও ক্ষত্রিয়। ক্ষাত্র ধর্মে বীর্যবান হয়ে উঠলেন ঔর ঋষির আন্তরিক প্রচেষ্টায়।
এদিকে সগরের মনে চিন্তা এল–তিনি তো বংশজাত ক্ষত্রিয়, তাহলে ঋষির আশ্রমে কেন? কে তার বাবা? কোথায় তার দেশ? কেনই বা মায়ের সঙ্গে অরণ্য মধ্যে আশ্রমে বাস করছেন তিনি? মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন মায়ের কাছে করতেন। কিন্তু মা কিছুই বলেন না, চুপ করেই থাকেন। কিন্তু অন্তরে অন্তরে খুব কাঁদেন। মাঝে মাঝে খুব জিদ ধরতেন সগর, এইসব প্রশ্নের উত্তর জানবার জন্য। তখন তার মা একই উত্তর দেন। বলেন–এখন নয় বাবা, সময় হলে সব জানতে পারবে।
এখন সেই সময় এসেছে সগরকে সব জানাবার। একদিন ঋষি ঔর সগরকে সকল কথা জানালেন। সঙ্গে সঙ্গে সগরের অন্তরে জেগে উঠল ক্ষত্রিয় তেজ। আর কালবিলম্ব নয়। অল্প কিছু সৈন্য সঙ্গে নিয়ে চললেন আপন পিতৃরাজ্য উদ্ধার করবার জন্য। তার শিক্ষা আগ্নেয়াস্ত্র সকল কখনও বিফল হল না, অল্পক্ষণের মধ্যেই হৈহয় ও তলিজঙ্ঘ বংশ ছারখার হয়ে গেল। পুনরায় পিতৃ-সিংহাসনে বসে রাজ্য পরিচালনা করলেন সগর। পিতা বাহুর মতই তিনি সুশাসক হলেন। প্রজাবৃন্দ সকলেই খুশি। প্রজাদের সকল দুঃখের অবসান হয়েছে। দিনে দিনে সমৃদ্ধ হল তাঁর রাজ্য।
সমগ্র রাজ্য যখন মহাসুখে ভাসছে, রাজা সগরের মনে কিন্তু সুখ নেই। তিনি নিঃসন্তান। তার দুই রানি একজন কৌশিকী। অন্যজন সুমতী। কারো গর্ভে কোনও সন্তান হল না। সেই দুঃখে রাজা সগর সারাক্ষণ চিন্তাগ্রস্ত থাকেন। একদিন এক ঋষি তার প্রাসাদে এলেন। রাজা তাঁকে পাদ্য অর্ঘ্যে সমাদরে পূজা করলেন। ঋষি সন্তুষ্ট হয়ে আশীর্বাদ করতে চাইলেন। রাজা বললেন–আমার কোন সন্তান নাই। সেই দুঃখই আপনি মোচন করুন। আপনি আমাকে এক পুত্র আর ষাট হাজার কন্যা দান করুন।
ঋষি বললেন–তোমার অভিলাষ পূর্ণ হবে। তোমার যখন দুই ভার্যা। তাহলে একজনের গর্ভে জন্মাবে এক পুত্র, অন্যের গর্ভে জন্মাবে ষাট হাজার কন্যা।
কৈশিনী প্রথমে এগিয়ে এসে বলল–আমার গর্ভে এক পুত্ৰই হোক। সুমতি আর কি করবে! অগত্যা ষাট হাজার কন্যার জননী হতে হবে।
অন্নদান, বস্ত্রদান, স্বর্ণদান, গাভীদান অপেক্ষা কন্যাদান শ্রেষ্ঠ। তাই ঋষির কাছে ষাট হাজার কন্যা প্রার্থনা করেছিলেন মহারাজ সগর। কিন্তু সুমতির সে ইচ্ছা নয়। সেও চায় পুত্রের জননী হতে। সগর রাজা যজ্ঞ করলেন। সে যজ্ঞের চরু কৈশিকী অর্ধেক খেল এক পুত্রের আশা করে আর সুমতি খেল ষাট হাজার পুত্রের বাসনায়।
ঋষির বাক্য কখনও মিথ্যা হবার নয়। যথা সময়ে কৈশিনীর গর্ভে এক পুত্রের জন্ম হল। নাম রাখলেন অসমঞ্জ। আর সুমতি প্রসব করলেন একটি লাউ। কান্নায় ভেঙে পড়ল সুমতি। সগরেরও মন খুব খারাপ হল। ঋষির বাক্য মিথ্যা হল। এমন সময় হল আকাশবাণী–এই লাউটিকে অবহেলা করে ফেলে দিও না। ওর প্রতিটি বীজ থেকে জন্ম নেবে একটি করে পুত্র।
সেই আকাশবাণী শুনে সগর বড়ই আশ্চৰ্য্য বোধ করলেন, আমি চেয়েছিলাম কন্যা। কিন্তু এই লাউ থেকে জন্ম নেবে পুত্র? তখন রানি সুমতি বলল–মহারাজ আমি চরু পান করবার সময় পুত্রের বাসনাই করেছিলাম।
আসলে ইন্দ্রের কৌশলে এমন ব্যাপার ঘটেছে। দেবরাজ ইন্দ্র ভেবেছিলেন, সগর রাজা যখন ষাট হাজার কন্যাকে পাত্রস্থ করবে অর্থাৎ বিবাহ দেবে, সেই কন্যাদানের পুণ্যে হয়তো স্বর্গের ইন্দ্রপদ লাভ করবে। তাই ইন্দ্র সরস্বতাঁকে পাঠিয়ে সুমতির কণ্ঠে বসিয়ে চরু খাওয়ার সময় কন্যার পরিবর্তে পুত্রের কামনা করেছিলেন। যাই হোক, সেই লাউ গরম জলে পরিচর্যা করতে এক এক করে ষাট হাজার পুত্রের জন্ম হল। যে প্রাসাদ এতদিন ছিল সন্তানশূন্য সেই প্রাসাদ এখন অসংখ্য পুত্রের হাসি-কান্না, চপলতাতে ভরে উঠল। আনন্দে রাজাও দুই রানির মন ভরে উঠল। রাজার সব অবসাদ দূর হয়ে গেল। পিতা-মাতার স্নেহ যত্নে বড় হতে লাগল সেই পুত্রসন্তানগণ। এদিকে বিধাতার ললাটলিখন বিচিত্র!
সগর রাজার গৃহে আবার দুর্ভাগ্য নেমে এল! বড় ছেলে অসমঞ্জ। এই অসমঞ্জ পূর্বজন্মে যোগ্য ছিলেন। কিন্তু অসৎ সঙ্গ হেতু যোগ হতে বিচলিত হন তিনি। এই জন্মে জাতিস্মর হওয়ায় নানান নিন্দিত কর্মের জন্য জনগণের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ালেন। ক্রমে ক্রমে অসমঞ্জ যৌবনপ্রাপ্ত হলে রাজা তার বিবাহ দিলেন। একটি পুত্র জন্মাল তথাপি তার স্বভাবের পরিবর্তন হল না। এমনকি শিশুদেরকেও হত্যা করতেও তার বাঁধত না। তিনি নির্বিচারে শিশুদের ধরে সরযূ নদীর জলে ফেলে দিতেন। তার ব্যবহার দেখে তাকে সগর রাজা নির্বাসিত করলেন। অন্য দিকে বাকি ষাট হাজার পুত্রও সকলেই বড় ভাই-এর অনুগামী। সকলেই নিষ্ঠুর, নির্মম, খল, প্রতারক। তাই সগর রাজার মনে এত দুঃখ। ভাবলেন–এমন পুত্র থাকার থেকে না থাকাই ভালো।
অসমঞ্জসের পুত্র অংশুমান। তার ব্যবহার কিন্তু পিতার ঠিক উল্টো, সে পরম ধার্মিক, সর্বজন হিতে রত। সকলের প্রতি তার করুণা। এমন নাতি পেয়ে রাজাও ফিরে পেলেন মনের আনন্দ। ইতিপূর্বে বহুবার তিনি যজ্ঞ করেছেন। আর একবার যজ্ঞ করলে শতযজ্ঞ পূর্ণ হবে তার। তাই খুশিতে সব আয়োজন করলেন। যজ্ঞের অশ্বকে ছেড়ে দেওয়া হল পৃথিবী পরিক্রমার জন্য, আবার দেবরাজ চিন্তা করলেনআমি নিজে শত যজ্ঞ সাধন করে ইন্দ্ৰত্ব লাভ করেছি। এই সগর রাজা যদি শত যজ্ঞ পূর্ণ করতে পারে, তাহলে আমাকে হারাতে হবে স্বর্গের সিংহাসন। তাই তিনি স্থির করলেন, যেভাবেই হোক সগরের এ যজ্ঞ সম্পূর্ণ করতে দেওয়া হবে না। তখন তিনি কৌশলে যজ্ঞের অশ্বটিকে হরণ করে মহর্ষি কপিলের আশ্রমে লুকিয়ে রাখলেন।
সগর রাজা এই যজ্ঞের অশ্বকে রক্ষণাবেক্ষণের ভার দিয়েছিলেন তার ষাট হাজার পুত্রের উপর। তারা যজ্ঞের অশ্ব না দেখতে পেয়ে চারিদিকে খুঁজতে লাগল। শেষে তারা সেই অশ্বকে কপিল মুনির আশ্রমে দেখতে পেল। মনে ভাবল–এই মুনি অশ্ব চুরি করেছে। তাই তারা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সেই মুনিকে মারবার জন্য উদ্যত হল। কপিল মুনি ধ্যানে নিমগ্ন ছিলেন। সহসা চোখ মেলতেই তারা সকলেই ভস্মীভূত হয়ে গেল।
যিনি শুদ্ধসত্ত্ব মূৰ্ত্তি, যিনি স্বীয় দেহের দ্বারা জগতকে পবিত্র করেন। তার কি কখনও ক্রোধ হতে পারে? সর্বজ্ঞ পরমাত্মার স্বরূপ সেই কপিলদেবের শত্ৰুমিত্ররূপা ভেদ দৃষ্টি কিরূপ সস্তৃত হতে পারে? অতএব সগরের পুত্রগণ নিজেদের অপরাধের ফলেই ভস্ম হয়েছে।
সগর রাজা কিন্তু জানতে পারলেন না তার পুত্রদের বিষয়। বহুদিন পরে দেবর্ষি নারদ এসে সব জানালেন তাকে। সগর রাজা মনে ভাবলেন, তাদের ঔদ্ধত্যের সমুচিত শাস্তিই তারা পেয়েছে। তারপর তিনি তার নাতি অংশুমানকে কপিলদেবের আশ্রমে পাঠিয়ে দিলেন যজ্ঞের ঘোড়া ফিরিয়ে আনার জন্য। বালকের ব্যবহারে কপিলদেব মহাখুশি। ফিরিয়ে দিলেন যজ্ঞের ঘোড়া। আর সগররাজ্যের পুত্রদের উদ্ধারের উপায়ও বলে দিলেন। স্বর্গের গঙ্গাকে মর্ত্যে আনতে পারলে ভস্মীভূত সকলেই গঙ্গাজল স্পর্শে পাপ মুক্ত হবে। ঘোড়া ফিরিয়ে নিয়ে এসে সগর রাজাকে দিলেন অংশুমান। যজ্ঞ শেষ হল। তারপর অংশুমানের নাতি ভগীরথ বহু তপস্যা করে গঙ্গাকে মর্ত্যধামে আনলেন। ভারতবর্ষ পবিত্র হল। সেদিন যদি সগর রাজার পুত্রেরা অপরাধ না করত, আমরা ত্রিভুবন তারিণী গঙ্গাকে ভারতবর্ষের ভূমিতে পেতাম না।
গঙ্গার প্রতি শিবের ভালোবাসায় উমার ক্ষোভ ও গণেশের নিকট দুঃখ মোচনের প্রার্থনা, গৌতমের অতিথিসেবা, গণেশের কৌশলে গৌতম মুনির দ্বারা মর্ত্যধামে গঙ্গাকে আনয়ন ও উমার স্বস্তি।
গঙ্গার দুই ধারা একটি বিন্ধ্য পর্বতের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেষে সাগরসঙ্গমে এসে মিশেছে। তার নাম ভাগীরথী, সগর বংশধর ভগীরথ বহু তপস্যা ও সাধনার বলে স্বর্গধাম থেকে গঙ্গাকে মর্ত্যধামে এনেছিলেন বলে, তারই নামে গঙ্গার এই নাম হয়েছে।
গঙ্গার অপর ধারা হিমালয় থেকে নেমে বয়ে গেছে বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণ দিক দিয়ে। মহর্ষি গৌতম দীর্ঘকাল বহু তপস্যা করে গঙ্গার এই দ্বিতীয় ধারাকে মর্ত্যে এনেছিলেন বলে তারই নামানুসারে গঙ্গার নাম হল গৌতমী বা গোদাবরী।
হিমালয়ের কন্যা পার্বতী বহু কঠোর তপস্যা করে লাভ করেছেন মহেশ্বরকে। সব নারীরা স্বামীকে ভালোবাসে কিন্তু পার্বতী যেন সবার উপরে। মহেশ্বর পার্বতীকে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু গঙ্গার প্রতি মহেশ্বরের আকর্ষণ যেন একটু বেশি। এক মুহূর্তও তিনি গঙ্গাকে ছেড়ে থাকতে পারেন না। এতে পার্বতীর অন্তরে খুব ক্ষোভ। হাজার হোক সতীন তো। পার্বতী ভাবে কিভাবে স্বামীর কাছ থেকে গঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়া যায়।
দেবদেব মহাদেব, চতুর্দশ ভুবনে কোথায় কি হচ্ছে, সবই তার জানা। কাজেই গঙ্গার প্রতি উমার যে ক্ষোভ তা শিবের অবিদিত নেই। উমাও যেমন মুখে কিছু না বলে কেবল অন্তরে জ্বলে পুড়ে মরতেন, শিবও তেমনি কাউকে এ ব্যাপারে কিছু বলতেন না। চোখের সামনে থাকলে পাছে পার্বতীর রাগ আরও বেড়ে যায়, তাই তিনি করলেন কি, গঙ্গাকে নিজের বিশাল জটার মধ্যে লুকিয়ে রাখলেন।
যেমন শঙ্কর, তেমনি শঙ্করী। শিবের চালাকি ধরতে উমার বেশি সময় লাগল না। তখন তিনি রাগে ক্ষোভে একেবারে অস্থির হয়ে সরাসরি তিরস্কার করে বসলেন মহাদেবকে। সতীন আমার চক্ষুশূল, তাকে কিনা মাথায় তোলা? ভেবেছ আমি কিছু বুঝি না? এইরূপে নানান কথায় শিবকে ভৎর্সনা করলেন। কিন্তু তিনি তো ভোলা মহেশ্বর। পার্বতীর এমন ভৎর্সনা শুনেও মুখে কিছু বললেন–না। হাসি হাসি মুখে সব সহ্য করে নিলেন। তারপর পার্বতীর সঙ্গে এমনভাবে কথাবার্তা বললেন–যে, তাতে তার মন একেবারে জুড়িয়ে গেল।
তারপর কিছুদিন ভালোয় ভালোয় কাটল। কিন্তু আবার যে কে সেই। সতীন গঙ্গার প্রতি বিদ্বেষ স্বামীর উপর ক্ষোভ, সব মিলে যেন পুড়ে মরতে বসেছে দেবী অম্বিকা। সখী জয়ার কাছে বসে কত কাঁদেন। কিন্তু কেঁদে কি ফল হবে? তারপর অনেক ভেবে-চিন্তে স্থির করলেন, এই ব্যাপারটা যদি তার দুই ছেলের কাছে বলেন তাহলে তারা কোনও একটা সুরাহা করতে পারে। কার্তিক বড় একরোখা, তার কাছে লড়াইটাই যেন সব সমস্যার সমাধান করে দেবে এই মনে করে। কিন্তু গণেশ, তার অতীব প্রখর বুদ্ধি আছে। কৌশল করে সব সমস্যা মিটাতে তার মত দক্ষ কে আছে? তবে দেখে মনে হবে নিরীহ, গোবেচারা,-যেন কিছুই জানে না, তার উপর কোন কাজের দায়িত্ব দিলে, সে নিশ্চয় চুপিসারে তা সমাধান করবেই করবে। পাছে কার্তিক কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসে, তাই উমা গণেশকেই ডেকে বললেন–গঙ্গাকে যেমন করে তোক শিবের সঙ্গ ছাড়া করতে হবে। শেষে তিনি গজাননকে এও বললেন–গজানন তুমি যদি এ কাজে সফল না হতে পার, তাহলে আমি কিন্তু এই কৈলাস ত্যাগ করে আবার হিমালয়ে গিয়ে তপস্যা করব।
সতীনের জন্য স্বামীর উপর রাগ করে মা যদি চলে যান, সেটা কি ভালো দেখাবে? বিশেষ করে দুইজন উপযুক্ত ছেলে থাকতে? তাই গণেশ বললেন–মা, তুমি কোন চিন্তা করো না, তোমার আদেশ আমি কখনও অমান্য করিনি। আজও করব না। তবে একটা কথা আমাকে তুমি কোন একটা যুক্তি বলে দাও। যাতে করে ক্ষমা এখান থেকে চলে যেতে পারে।
পার্বতী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন–আমি মনে মনে একটা উপায় চিন্তা করেছি। তোমার পিতা তপস্যার দ্বারা সহজেই তুষ্ট হন, কোন সৎ ব্রাহ্মণ যদি কঠোর তপস্যায় শিবকে তুষ্ট করতে পারে তখন তিনি বর দিতে উদ্যত হবেন, সেই সুযোগে তপোকারী ব্রাহ্মণ যদি গঙ্গাকে প্রার্থনা করেন, তখন মহেশ্বর তাকে সেই বর না দিয়ে থাকতে পারবেন না।
মায়ের কথা শুনে গণেশ বললেন–ঠিক আছে, তাই আমি করব। কিন্তু তার আগে যদি আমরা দুই ভাই বাবাকে একবার বুঝিয়ে সে ব্যবস্থা করতে পারি। তাহলে সহজেই কাজ মিটে যায়।
গণেশের মুখে এমন কথা শুনে উমা বললেন–না, না তাতে কোন ফল হবে না। আমি তাকে বহুবার বলেছি, এমনকি তিরস্কারও করতে ছাড়িনি কিন্তু তাতে কোন ফল হয়েছে কি?
সেই সময় একটানা চৌদ্দ বছর পৃথিবীতে অনাবৃষ্টি দেখা দিল। মাঠ, ঘাট, পুকুর খাল, বিল সব শুকিয়ে গেছে। দেখা দিল প্রবল দুর্ভিক্ষ! মানুষ কুখাদ্য খেতে শুরু করল, তার ফলে নানান ব্যাধির স্বীকার হল মানুষেরা। মরতেও লাগল প্রচুর। বিধাতার সৃষ্টি বুঝি লোপ পেয়ে যায়।
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার মনে ভীষণ চিন্তা, এভাবে সৃষ্টি লোপ পেলে কি হবে? তখন তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে ঘুরতে এসে দেবগিরিতে উপস্থিতি হলেন এখানেই ছিল মহর্ষি গৌতমের আশ্রম। সর্বত্র অনাবৃষ্টি, সব নির্মুল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গৌতমের আশ্রমে তার কোন ছায়া পড়েনি। নানা ফুলে ফলে লতায় সুশোভিত এই আশ্রম। জলের কোন অভাব নেই। সেই দেবগিরিতেই ব্রহ্মা যজ্ঞ শুরু করলেন, তারপর থেকে দেবগিরির নাম হল ব্রহ্মগিরি। সেই অনাবৃষ্টির সময় মহর্ষি গৌতম যজ্ঞ করে চলেছেন এক মনে। ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ল গৌতমের খ্যাতি, দলে দলে সবাই আসতে লাগল সেই আশ্রমে। সকলকেই ঋষিবর সমাদর করলেন, সকলের আকাঙ্ক্ষা তিনি পূরণ করতে লাগলেন, স্বর্গলোকেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল।
গণেশও শুনলেন গৌতমের কথা। মনে মনে মায়ের দুঃখের অবসানের উপায়ও স্থির করে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে উমার কাছে গিয়ে বললেন–মা, আর তোমাকে কোনও চিন্তা করতে হবে না। আমি মহর্ষি গৌতমকে দিয়েই তোমার কাজ হাসিল করে দেব। উমা হাত তুলে তাঁকে আশীর্বাদ জানালেন।
এই কথা বলেই ছদ্মবেশ ধরে মায়াকে নিয়ে চললেন গৌতমের আশ্রমে। দেখলেন সেই সুন্দর আশ্রমটিকে। কি অপরূপ, তার তুলনাই হয় না। কোন কিছুরই অভাব নেই। কত অতিথি আসছে, সমাদর, খাওয়া, দাওয়া সব ব্যবস্থাই যথাযথ ভাবে হচ্ছে।
আশ্রমের পাশে ব্রাহ্মণবেশী গণেশ যখন এই সব দেখছেন আর আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন–কেমন করে সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে একসঙ্গে এতগুলো কাজের দেখাশুনা করা?
যাগযজ্ঞের বিরাম নেই। কারো কোথাও কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, সব দিকেই লক্ষ্য করছেন মহর্ষি গৌতম। তিনি সহসা দেখতে পেলেন ব্রাহ্মণবেশী গজাননকে। তাড়াতাড়ি তাদের কাছে এসে সমাদরে ডেকে নিয়ে গেলেন আশ্রমের ভিতর। তারপর পাদ অর্থ্যাদি দিয়ে সেবা করলেন।
গণেশ কিন্তু খুঁজছেন মুনির ছিদ্রপথ, মুনি কোনও অপকর্ম করেন কিনা, দেখতে লাগলেন। কিন্তু না, দিনের পর দিন যায়, মুনির কোনও ছিদ্র গণেশ দেখতে পান না। ইতিমধ্যে আশ্রমের মুনিদের সঙ্গে গণেশের খুব ভাব হয়ে গেল, সবাই তাকে ভালোবাসে তার মিষ্টি ব্যবহারের জন্য। কিন্তু গণেশের সবসময় চেষ্টা মুনির ছিদ্রান্বেষণ করা, অনেক চেষ্টা করেও মুনির কোনরূপ অনাচার খুঁজে পেলেন না। তাহলে কি মায়ের দুঃখ দূর করা যাবে না? মা যে আশীর্বাদ করেছেন, তার আশীর্বাদ কি বিফল হবে?
এইভাবে চিন্তা করতে করতে গজানন একটা মতলব এঁটে সকল অতিথি মুনিগণকে বললেন–আমরা অনেক দিন হল এই আশ্রমে আছি। মহর্ষি গৌতম ও আমাদের সমাদরে নিত্য নিত্য আহারাদি যোগাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কি উচিত হচ্ছে, এভাবে বসে বসে অলসভাবে শুধু খাওয়া-দাওয়া আর ঘুমিয়ে কাটান? মুনিবরকে এভাবে ব্যতিব্যস্ত করা আমাদের ঠিক হয়নি। এবার আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়াই উচিত।
অতিথি ত্রিশের কথা মুনিদের মনে ধরল। সত্যই তো বহুদিন হয়ে গেল তারা এখানে এসেছেন। মহর্ষি গৌতমের কোন রকম বিরক্তি নাই, সবসময় যখন যেমন কাজ ঠিকঠাক ভাবে করে চলেছেন, কিন্তু মুনিদের একটা বিবেক বোধ থাকা উচিত, এতদিন ধরে একজনের উপর এত কাজের ভার দেওয়া উচিত নয়। গণেশের যুক্তি সবাই এক বাক্যে স্বীকার করলেন।
তারপর সবাই মিলে গৌতমের কাছে গিয়ে বললেন–আমরা এতদিন আপনার আশ্রমে রইলাম। আপনার সঙ্গ পেয়ে আমরা খুব খুশি। এখন আমরা যে যার নিজের আশ্রমে যাই।
তাদের কথা শুনে গৌতম মনে খুব কষ্ট বোধ করে বললেন–আপনাদের হয়তো আমি ঠিকমত সেবা করতে পারছি না। যতটুকু করেছি, তাতে আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। আপনারা আমাকে এই সেবা থেকে বঞ্চিত করবেন না।
গৌতমের এমন কথা শুনে মুনিরা আর কি বলবেন? বলার আর কিছু নাই? থেকেই গেলেন গৌতমের আশ্রমে। গণেশের প্রথম কৌশল ব্যর্থ হল। আবার চিন্তা করলেন গণেশ, কি করা যায়? এই মুনির কাছে অতিথিরা এত প্রিয়। আমিও বিঘ্নরাজ, তোমাকে ছাড়ছি না আমি। যেমন করেই হোক তোমাকে বিপদে ফেলবই। তোমার মত ব্রাহ্মণকেই আমার চাই। মায়ের দুঃখ মোচন–আর কারও দ্বারা সম্ভব হবে না। এবার তিনি ভেবে স্থির করলেন, গৌতম মুনিকে কোন পাপকর্মে ফেলতে পারলে অতিথি মুনিরা তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাতে আমার কাজও সিদ্ধ হবে।
একদিন পার্বতীর প্রধান সহচরী জয়া ছদ্মবেশে সেই মুনির আশ্রমে এলেন। তখন তাকেই ডেকে গণেশ বললেন–এবার আমি একটি কৌশল করেছি, সেটি সাধন করতে তোমাকে বিশেষ প্রয়োজন, তুমি একটি রুগ্ন গাভীর বেশ ধরে গৌতম মুনির সবুজ ক্ষেতের উপর গিয়ে যেন ফসল নষ্ট করছে, এমন ব্যবহার করবে, তখন মুনিবর গিয়ে তোমাকে লাঠি দিয়ে তাড়াতে যাবে। তুমি সামান্য আঘাতেই মাটিতে এমনভাবে পড়বে যেন মরে গেছ। তারপর আমি যা করার করব। দেখবে এবারে আর বাছাধন রেহাই পাবে না। এবার আমার কৌশল সিদ্ধ হবেই হবে।
আশ্রমের কাছেই মুনির সুন্দর ধানের ক্ষেত। পৃথিবীর সর্বত্র অনাবৃষ্টি হলেও মুনির আশ্রমে চালের অভাব নেই। খুব ভালো ফসল হয়েছে। মুনি নিজেই সেই ক্ষেত দেখাশুনা করেন। সবুজ ক্ষেত দেখে মাঝে মাঝে কয়েকটা গাভী আসে তৃণের লোভে। মুনি কিন্তু তেমন কিছু বলেন না। হেট-হাট করে তাড়িয়ে দেন। কোনও দিন প্রহার করেন না। কারণ গোরুকে প্রহার করা মহা পাপ! সেদিন এসেছে। গাভীর রূপ ধরে জয়া, প্রথমে মুনি মুখে শব্দ করে সেই গাভীকে ক্ষেত থেকে তাড়াবার অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু গাভীর সে দিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। তাই দেখে মুনি কয়েকটি বড় ঘাস তুলে সেই গাভীর গায়ে মৃদু আঘাত করলেন। তাতেই সেই গাভী আর্তনাদ করে সেই ক্ষেতের উপরেই লুটিয়ে পড়ল। যেন প্রবল প্রহারের ফলেই গাভীর এমন দশা হয়েছে, গৌতম মুনি এমন দেখে তো অবাক!
সেই গাভীর আর্তনাদ শুনে গৌতমের আশ্রমের অতিথিরা সকলেই ছুটে এলেন। ছদ্মবেশী গণেশও এলেন। সবাই দেখলেন, একি হল, একটা গাভী মরে পড়ে আছে, কে এমন করে মারল? গৌতমের হাতে তখনও সেই একমুষ্টি ঘাস ধরা। সবাই বুঝতে পারলেন এই গৌতমের আঘাতেই গাভীটির এমন দশা হয়েছে। গাভী হত্যা মহাপাপ, এর পরে কি আর গৌতমের অতিথি হয়ে থাকা চলে? তার দেওয়া অন্ন আর গ্রহণ করা চলেনা।
সবাই মুনির আশ্রম ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত, তা দেখে মুনিবর তাদের পায়ের উপর লুটিয়ে পড়ে বললেন,–দোহাই আপনাদের, আমাকে এ ভাবে মহাপাপের মধ্যে ফেলে রেখে চলে যাবেন না। আমি কীভাবে এই মহাপাপ থেকে উদ্ধার পেতে পারি বলুন। আপনাদের উপদেশমত আমি প্রায়শ্চিত্ত করব। আপনাদের সেবা করার সুযোগ থেকে আমাকে এইভাবে বঞ্চিত করবেন না।
সেখানে শোরগোল বেঁধে গেল। ব্রাহ্মণবেশী গণেশের মনে খুশির আমেজ। এগিয়ে এলেন বিনায়ক। সহানুভূতির সঙ্গে সেই অতিথিদেরকে বললেন–আপনারা কেমন স্বভাবের বুঝতে পারছি না, যাঁর অন্নে এতদিন পেট ভরিয়েছেন, তিনি আজ একটু বিপদে পড়েছেন, তার জন্য কি আপনাদের মনে একটুও দয়ার উদ্রেক হল না? এ আপনাদের কেমনতর আচরণ!
ব্রাহ্মণের কথা শুনে মুনিদের চেঁচামেচি থেমে গেল। গৌতমমুনি যেন একটু আশ্বস্ত হলেন। তখন গম্ভীরভাবে ব্রাহ্মণ বললেন–এই গাভীকে মেরে মুনিবর পাপ করেছেন ঠিকই, তার জন্য তিনি প্রায়শ্চিত্ত করতে রাজি আছেন। তাহলে আমি একটি প্রায়শ্চিত্তের বিধান দিতে পারি। তা আপনারা শুনে যদি সমর্থন করেন আর ঋষি গৌতম যদি তা পালন করতে স্বীকার করেন, তাহলে আমি তা বলব।
তখন ঘাড় নেড়ে সবাই ব্রাহ্মণের কথায় সম্মতি জানালে গণেশ বললেন–আমরা শুনেছি ব্রহ্মার কমণ্ডলুতে পবিত্র গঙ্গা ছিলেন। তারই একটি ধারা শিবের জটার মধ্যে আছে। এই মহাপাপী গৌতম যদি সেই জলধারা এখানে এনে এই স্থানটিকে ধৌত করে দিতে পারে, তবে তার সব পাপ দূর হয়ে যাবে। তখন আর আমাদের থাকার অসুবিধা হবে না।
মুনি আশ্রমস্থিত অতিথিগণ ব্রাহ্মণের কথায় সমর্থন জানালেন, আর গৌতম তা পালনে সম্মত হলেন। কাজটি সহজ নয়, বরং বেশ দুরূহ, তথাপি তাকে করতেই হবে, তা না হলে তিনি মহাপাপ থেকে মুক্তি পাবেন কেমন করে।
সব মিটমাট হয়ে গেল, মুনিগণ যে যার স্থানে এসে বসলেন, কিন্তু মুনিবর গৌতম ভেবে পেলেন না, কেমন করে সম্ভবপর হল এই গাভীর মৃত্যুর ব্যাপার। সামান্য তৃণের আঘাতে কি কেউ মরে? সঠিক তথ্য জানবার জন্য মুনি ধ্যানে বসলেন। মনের ভারটা যেন হালকা হল, আসলে তিনি গাভী হত্যা করেননি। সবই ছদ্মবেশী গণেশ দেবতার কৌশল। কাউকে কিছু না বলে তিনি গণেশ প্রদত্ত সেই গুরুদায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলেন, পাপ হোক বা না হোক, গঙ্গা মর্ত্যধামে এলে পৃথিবীর তো মঙ্গল হবে, দেবী পার্বতীর মনেও সুখ হবে।
তারপর ব্রহ্মগিরি থেকে মহামুনি গৌতম কৈলাসে গিয়ে হর-পার্বতীর স্তুতি করলেন। মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে হর-পার্বতী দিব্য রূপে দর্শন দিয়ে বললেন–গৌতম তুমি কি জন্য আমাদের এত স্তুতি করছো? আমরা উভয়েই খুব সন্তুষ্ট, কি প্রার্থনা তোমার বল, নিশ্চয় পূরণ করব।
ঈশ্বরের কথায় খুব খুশি হয়ে গৌতম মুনি বললেন–যদি আমার প্রতি আপনি তুষ্ট হয়ে থাকেন, তাহলে পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য আপনার মস্তকে অবস্থিত মর্ত্যে আগমনের আদেশ গঙ্গাকে দিন, মহেশ্বর গৌতমকে গঙ্গাকে দিয়ে অন্তর্হিত হলেন। মহা উৎসাহে গৌতম গঙ্গাকে নিয়ে চললেন। নানা পথ অতিক্রম করে গঙ্গাকে নিয়ে এলেন ব্রহ্মগিরিতে, আকাশ থেকে দেবতাগণ সব পুষ্প বৃষ্টি করলেন। সবাই গৌতম ঋষির প্রশংসা করলেন, আর সতীনের গমনে পার্বতীও প্রীত বোধ করলেন।
ব্রহ্মগিরি গঙ্গার জলে পবিত্র হল। তারপর গঙ্গা গৌতম মুনিকে বললেন– ঋষিবর, তোমার মহাপাপের ক্ষেত্রকে আমি আমার জলের দ্বারা পবিত্র করে দিয়েছি। আমার কর্তব্য শেষ, এবার আমি ফিরে যাব কৈলাসে।
গঙ্গার কথা শুনে ঋষিবর হাত জোড় করে বললেন–মাগো, পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য আমি তোমাকে শিবের কাছ থেকে প্রার্থনা করে এনেছি। তিনিও আমাকে সেই উদ্দেশ্যে তোমাকে দান করেছেন। আপনার ফিরে যাওয়ার তো কথা ছিলনা। আপনাকে এখানেই চিরকাল থাকতে হবে। খুব বিনয়ের সঙ্গে কথাগুলি বললেন–গৌতম, ফেলতে পারলেন না। গঙ্গাদেবী গৌতমের কথা এবং খুশি হয়েই রয়ে গেলেন মর্তে। তারপর গঙ্গা ব্রহ্মগিরি থেকে বিভিন্ন ধারার ছড়িয়ে পড়লেন বিভিন্ন দিকে।