০৫. রাজা যুবনাশ্বের গর্ভে মান্ধাতার জন্ম
মহারাজ প্রসেনজিতের পুত্র যুবনাশ্ব। কালক্রমে ধরায় আধিপত্য লাভ করে প্রজাদের পুত্ররূপে পালন করেন। কিন্তু একটাই দুঃখ তাঁর অন্তরে, বহুকাল পুত্রধনে বঞ্চিত আছেন। একদিন ভারাক্রান্ত হৃদয়ে চিন্তা করলেন– ঋষিরা যোগবলে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারেন। যদি আমার ভাগ্য ভালো হয়, তাহলে তারা আমাকে পুত্রলাভের কোনো পরামর্শ দেবেন।
এমন চিন্তা করে একদিন রাজা যুবনাশ্ব অরণ্যে গিয়ে ঋষিদের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। এবং প্রণাম জানিয়ে নিজের সকল দুঃখ জানালেন।
সব কথা শুনে ঋষিরা যজ্ঞ করবার পরামর্শ দিলেন। পুত্রলাভের আশায় আনন্দে বিঘল যুবনাশ্ব সকল আয়োজন করলেন। কোনো ত্রুটি রাখলেন না। ঋষিরা যথাকালে যজ্ঞ শুরু করলেন। মধ্যরাত্রে সেই যজ্ঞের সমাপ্তি হল।
তারপর ঋষিগণ বেদীর উপর একটি জলপূর্ণ কলসী রাখলেন। সকলে একযোগে মন্ত্রপাঠ করলেন। রাজা যুবনাশ্ব সারা দিন-রাত্রি উপবাসে রয়েছেন। যজ্ঞের শেষে ঋষিরা ঘুমিয়ে পড়েছেন। রাজাও ঘুমিয়ে পড়েছেন, সহসা রাজার ঘুম ভেঙে গেল। পিপাসা পেল, নিদ্রা জড়িত অবস্থায় অন্য কোথাও জল দেখতে না পেয়ে তৃষ্ণায় কাতর রাজা তাড়াতাড়ি সেই মন্ত্রপূত জলপূর্ণ কলসী থেকে জল গড়িয়ে পান করে সুস্থ বোধ করলেন।
তারপর ভোর হলে ঋষিরা রাজাকে জাগালেন, আর বললেন– হে রাজন, এই কলসিতে সেই মন্ত্রপূত জল আছে, ওই জল যেই নারী পান করবে, তার গর্ভে বীরপুত্র অবশ্যই জন্ম নেবে।
রাজা যুবনাশ্ব এই কথা শুনে বিস্মিত ও দুঃখিত হলেন। এক ঋষি গিয়ে দেখলেন কলসিতে কোনো জল নেই- কি হল জল? কে পান করল?
তখন যুবনাশ্ব কাতর কণ্ঠে বললেন– ঋষি, ওই জল আমি পান করেছি। তৃষ্ণার জন্য। রাজার কথা শুনে ঋষি বললেন–মন্ত্রপূত জল যে খাবে তারই গর্ভ হবে, পুরুষ কিংবা নারী যেই হোক। ঋষিরা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। এদিকে গর্ভের লক্ষণ হল রাজার শরীরে। সাতদিন পরে প্রসবের ব্যথা উঠল। কিন্তু প্রসব হবে কেমন করে?
তখন একজন ঋষি কুশ দিয়ে তার কুক্ষিদেশ ছিন্ন করে দিলেন। সেই পথ দিয়েই জন্মাল এক পুত্র। কুক্ষিভেদ করে পুত্র জন্মাণেও রাজার মৃত্যু হল না। কয়েকদিন পরেই রাজা সুস্থ হয়ে উঠলেন। এদিকে শিশু জন্মানমাত্র ক্ষুধায় কাঁদতে লাগল। মা নেই তার, স্তন দুগ্ধ পাবে কোথায়? মহা চিন্তায় পড়লেন ঋষিরা।
এমন সময় এলেন দেবরাজ ইন্দ্র, বললেন–আপনারা এর জন্য চিন্তা করবেন না, আমি এর আহারের ব্যবস্থা করছি।
এই কথা বলে ইন্দ্র তার বুড়ো আঙুল সেই শিশুটির মুখের মধ্যে ধরলেন, মাতৃস্তন ভেবে সেই শিশু তাই চুষতে লাগল, আঙুল চুষতে চুষতেই সেই শিশু যুবকে পরিণত হল। ঋষিরা অবাক হলেন, তার নাম রাখলেন মান্ধাতা। কিন্তু সেই যুবনাশ্বের পুত্র ‘মান্ধাতা’ নামেই বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন।
যুবনাশ্বের পর বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি হলেন তিনি।