শরভরূপে শিবকর্তৃক নৃসিংহদেবের তেজ হরণ
বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুর ছোট ছেলে প্রহাদ, শ্রীহরির একান্ত ভক্ত। বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুকে নিধন কারার জন্য শ্রীহরি ভক্তের ডাকে স্ফটিক স্তম্ভের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হলেন নৃসিংহ রূপে। উপরের দিকে মানুষের মত বলে এঁর নাম-নরসিংহ। ভয়ঙ্কর তার মূর্তি, ভীষণ তার গর্জন। আর হাতের নখগুলো করাতের মত ধারালো।
ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হিরণ্যকশিপু দিনে কিংবা রাতে, ঘরে কিংবা বাইরে, জলে-স্থলে-আকাশে, ব্রহ্মার সৃষ্টি কোনো প্রাণীর দ্বারা, এমনকি কোনো অস্ত্রশস্ত্রে মরবে না। তাহলে তার মৃত্যু হবে কিসে? হিরণ্যকশিপু ভাবল যে সে তাহলে অমর।
জগতে কেউ অমর নয়, সকলেরই মৃত্যু আছে। তাই ব্রহ্মার বরকে রক্ষা করবার জন্য ঠিক সন্ধ্যার সময়, দরজার গোড়ায়, নৃসিংহ দেব তার উরুর উপরে হিরণ্য কশিপুকে রেখে কোন অস্ত্ৰছাড়া নখের আঁচড়ে তার বুক চিরে বিনাশ করলেন তাকে। প্রচুর রক্তের স্রোত দেখে নৃসিংহদেব মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না। শ্রীহরি তার আসল পরিচয় ভুলে নিজের দশটি নখের দ্বারা সামনে যত দানবকে দেখতে পেলেন সবাইকে বিনাশ করলেন। রক্তের নেশায় উন্মাদ হয়ে প্রচণ্ড গর্জনে দাপাদাপি করে বেড়াতে লাগলেন। যেন ত্রিভুবন ধ্বংস করে ফেলবেন।
ব্রহ্মাদি দেবতাগণ দূরে দাঁড়িয়ে তার বহু স্তব স্তুতি করলেন। সেই স্তুতির মধ্যে তাঁকে জানানো হল যে তিনি সামান্য সিংহ মাত্র নন, দৈত্য হিরণ্যকশিপুকে বিনাশ করার জন্য দেবতাদের অনুরোধে তিনি এমন বীভৎস রূপ ধারণ করেছেন। কাজ সমাপ্ত। এখন তিনি নিজেকে সংবরণ করুন। এই উন্মাদনায় সৃষ্টি লোপ পেতে বসেছে। এই ধ্বংসলীলা থেকে নিজেকে বিরত করুন। নরসিংহদেব ভীষণভাবে তর্জন গর্জন করায় দেবতাদের স্তুতিবাক্য তার কানে প্রবেশ করল না। এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ব্রহ্মা অন্য দেবতাদের নিয়ে কৈলাসে গিয়ে শিবের কাছে বহু স্তব-স্তুতি করলেন। শিবকে বললেন–যে নরসিংহদেবের কবল থেকে ত্রিভুবনকে রক্ষা করুন এবং সকলের হিতের জন্য নৃসিংহের তেজ বিনাশ করুন।
ব্রহ্মার বিনীত নিবেদন শুনে শিব অভয় দিয়ে বললেন–যে, কোনো ভয় নেই, সবাইকে রক্ষা করার জন্য তিনি নৃসিংহদেবের তেজ হরণ করবেন।
ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবগণ শিবের আশ্বাস পেয়ে সেই নৃসিংহদেবের কাছে ফিরে গেলেন। এরপর সকল গণের অধিনায়ক বীরভদ্রকে মহাদেব স্মরণ করতেই সে উপস্থিত হল। বিকট তার মূর্তি, যেন সাক্ষাৎ যম, দক্ষের বিশাল যজ্ঞ লন্ডভন্ড হয়েছিল বীরভদ্রের দাপটে। শিবকে প্রণাম করে সে জানতে চাইল কিসের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়েছে?
মহাদেব বললেন–শ্রীহরি নৃসিংহ মূর্তি ধারণ করে হিরণ্যকশিপুকে বধ করে নিজের অস্তিত্ব ভুলে রক্তপিপাসু সিংহের মত বিচরণ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছেন। তাকে যেমন করে তোক সংযত করতে হবে।
গর্বভরে বীরভদ্র বলল, সে কি তার মুণ্ড ছিঁড়ে নিয়ে আসবে, যেমন এনেছিল প্রজাপতি দক্ষের।
মহেশ্বর তার কথায় বাধা দিয়ে বললেন–না, তাকে আগে ভালোভাবে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে। তাতে যদি কোন ফল না হয়, তখন তার মুণ্ডটাই ছিঁড়ে আনবে।
যেখানে নৃসিংহদেব দাপাদাপি করছেন সেখানে যাবার আদেশ পাওয়া মাত্রই ছুটল বীরভদ্র। ভীষণাকৃতি বীরভদ্রকে দেখে রক্তমাখা দেহেই নৃসিংহদেব একটু থমকে দাঁড়ালেন। তখন বীরভদ্র তাকে প্রণাম করে বলল–আপনি কি করছেন? আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনি জগতের পিতা? মৎস্য, কূর্ম, বরাহদি রূপে জগতকে বারে বারে আপনি রক্ষা করেছেন। নৃসিংহ রূপের কাজ শেষ হয়েছে, এবার লীলা সম্বরণ করুন। এই ভীষণ রূপ ত্যাগ করে ত্রিভুবনের সকলকে নির্ভয় করুন।
বীরভদ্রের কথা শুনে নৃসিংহদেব ভীষণভাবে গর্জন করে বললেন–সাবধান বীরভদ্র, আমাকে উপদেশ দিও না। তুমি জান না আমার স্বরূপ। আমার কাছে নতি স্বীকার করে সেই পালেন ভোলা প্রভুর কাছে তুমি ফিরে যাও। আমি বিষ্ণু, ব্রহ্মা আমার পুত্র, আর শিব ব্রহ্মার পুত্র। সৃজন, পালন, সংহার সবকিছুই আমি করি। আমারই অংশে এই সকল দেবগণ। এখন আমার ইচ্ছা হচ্ছে সবকিছু সংহার করবার। তুমি বলার কে?
শ্রীহরির কথা শুনে ভীষণভাবে গর্জন করে বীরভদ্র বলল–তুমি মহেশ্বরকে পৌত্ররূপে জ্ঞান করছো হে বলবান সিংহ। কিন্তু তাহলেও তুমি স্রষ্টা কিংবা সংহর্তা ও স্বাধীন কিছুই হতে পারছ না। তোমার কপালে এখনও বর্তমান তোমার কূর্মরূপের চিহ্ন। যখন তুমি বরাহরূপ ধারণ করে হিরণ্যাক্ষকে বধ করতে গিয়েছিলে, তখন সেই দৈত্য শিববরে বলীয়ান হয়ে তোমার একটা দাঁত তুলে নিয়েছিল, তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি। দক্ষের শিবহীন যজ্ঞে তুমি আমার হাতে যে সাজা পেয়েছিলে তা নিশ্চয়ই মনে আছে। ব্রহ্মাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিচ্ছ, সেই ব্রহ্মা শিব নিন্দা করেছিল বলে ভগবান শঙ্কর তার পঞ্চম মাথাটি ছিঁড়ে ফেলেছিল। আশা করি তা মনে আছে। তোমার কি মনে আছে যে তুমি শিবভক্ত দধীচ মুনির কাছে যুদ্ধে হেরেছিলেন জগতে তুমি চক্রধারী নামে পরিচিত যে সুদর্শন চক্র ধারণ করে, সেটি কে দিয়েছিলেন, মনে হয় তা ভুলেই গেছ। আজ কি তোমার মনে নেই যে তুমি বিষসেন রূপে রুদ্রের শূলাগ্রে দগ্ধ হয়েছিলে। জগতের পালনের দায়িত্ব তোমায় দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখন তুমি সৃষ্টি আর সংহারের কর্তা হতে চাইছ। এমন পাগলের মতো কথা বোলো না।
এই কথাগুলি বীরভদ্র ব্যঙ্গের হাসি হাসতে হাসতে বলেই আবার ভয়ঙ্কর শব্দে হুঙ্কার করে বলল– এখুনিই এই ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা সম্বরণ করো হে বিষ্ণো, তা যদি না কর, তবে শিবশক্তির প্রভাব এখনই দেখতে পাবে।
নৃসিংহরূপী বিষ্ণু বীরভদ্রের এমন ক্রুদ্ধমূর্তি দেখে আরো রেগে গিয়ে মহা হুঙ্কার করে বীরভদ্রকে যেই আক্রমণ করতে গেলেন, তখনই আকাশ থেকে হঠাৎ এক বিশালাকার শরভ নেমে এল। সেই শরভের হাজার হাত, মস্তকে জটা, তাতে অর্ধচন্দ্র, দেহের অর্ধেক দেহ হরিণের মত, পক্ষ দুটি বিশাল, চক্ষু আর দাঁতগুলি অতি ধারালো, তিনটি চোখ থেকে আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে। সে ভীষণভাবে গর্জন করছে। নৃসিংহরূপী বিষ্ণু সেই শরভমূর্তি দেখে এবং ভয়ঙ্কর গর্জন শুনে, দুর্বল ও অবাক হয়ে পড়লেন। সেই শরভের তেজের কাছে নিজেকে জোনাকির মতন মনে হল। হঠাৎ সেই শরভ নৃসিংহকে পায়ের ফাঁকে বেঁধে ডানার ঝাঁপটা মেরে ভীষণ ঝড়ের সৃষ্টি করে শূন্যপথে উঠে আবার মাটিতে নেমে এল। আবার শূন্যে উড়ে গেল। শূন্য থেকে শুরভরূপী শিবের বিক্রম দেখে ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবতারা স্বস্তি বোধ করলেন। ত্রিভুবন নাশের ভয় নিবারিত হল।
শরভের বিক্রমের কাছে নৃসিংহদেবকে হার মানতে হল। শরভরূপী মহাদেবের শরণাপন্ন হয়ে তিনি বহু স্তব স্তুতি করলেন।
তারপর বললেন–হে পরমেশ্বর, আমার অহঙ্কারজনিত মোহ যখন উপস্থিত হবে, আপনি তখন নিবারণ করতে ক্ষান্ত হবেন না।
শরভরূপে শিবকর্তৃক নৃসিংহদেবের তেজ হরণ
বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুর ছোট ছেলে প্রহাদ, শ্রীহরির একান্ত ভক্ত। বিষ্ণুবিদ্বেষী হিরণ্যকশিপুকে নিধন কারার জন্য শ্রীহরি ভক্তের ডাকে স্ফটিক স্তম্ভের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হলেন নৃসিংহ রূপে। উপরের দিকে মানুষের মত বলে এঁর নাম-নরসিংহ। ভয়ঙ্কর তার মূর্তি, ভীষণ তার গর্জন। আর হাতের নখগুলো করাতের মত ধারালো।
ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হিরণ্যকশিপু দিনে কিংবা রাতে, ঘরে কিংবা বাইরে, জলে-স্থলে-আকাশে, ব্রহ্মার সৃষ্টি কোনো প্রাণীর দ্বারা, এমনকি কোনো অস্ত্রশস্ত্রে মরবে না। তাহলে তার মৃত্যু হবে কিসে? হিরণ্যকশিপু ভাবল যে সে তাহলে অমর।
জগতে কেউ অমর নয়, সকলেরই মৃত্যু আছে। তাই ব্রহ্মার বরকে রক্ষা করবার জন্য ঠিক সন্ধ্যার সময়, দরজার গোড়ায়, নৃসিংহ দেব তার উরুর উপরে হিরণ্য কশিপুকে রেখে কোন অস্ত্ৰছাড়া নখের আঁচড়ে তার বুক চিরে বিনাশ করলেন তাকে। প্রচুর রক্তের স্রোত দেখে নৃসিংহদেব মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না। শ্রীহরি তার আসল পরিচয় ভুলে নিজের দশটি নখের দ্বারা সামনে যত দানবকে দেখতে পেলেন সবাইকে বিনাশ করলেন। রক্তের নেশায় উন্মাদ হয়ে প্রচণ্ড গর্জনে দাপাদাপি করে বেড়াতে লাগলেন। যেন ত্রিভুবন ধ্বংস করে ফেলবেন।
ব্রহ্মাদি দেবতাগণ দূরে দাঁড়িয়ে তার বহু স্তব স্তুতি করলেন। সেই স্তুতির মধ্যে তাঁকে জানানো হল যে তিনি সামান্য সিংহ মাত্র নন, দৈত্য হিরণ্যকশিপুকে বিনাশ করার জন্য দেবতাদের অনুরোধে তিনি এমন বীভৎস রূপ ধারণ করেছেন। কাজ সমাপ্ত। এখন তিনি নিজেকে সংবরণ করুন। এই উন্মাদনায় সৃষ্টি লোপ পেতে বসেছে। এই ধ্বংসলীলা থেকে নিজেকে বিরত করুন। নরসিংহদেব ভীষণভাবে তর্জন গর্জন করায় দেবতাদের স্তুতিবাক্য তার কানে প্রবেশ করল না। এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য ব্রহ্মা অন্য দেবতাদের নিয়ে কৈলাসে গিয়ে শিবের কাছে বহু স্তব-স্তুতি করলেন। শিবকে বললেন–যে নরসিংহদেবের কবল থেকে ত্রিভুবনকে রক্ষা করুন এবং সকলের হিতের জন্য নৃসিংহের তেজ বিনাশ করুন।
ব্রহ্মার বিনীত নিবেদন শুনে শিব অভয় দিয়ে বললেন–যে, কোনো ভয় নেই, সবাইকে রক্ষা করার জন্য তিনি নৃসিংহদেবের তেজ হরণ করবেন।
ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবগণ শিবের আশ্বাস পেয়ে সেই নৃসিংহদেবের কাছে ফিরে গেলেন। এরপর সকল গণের অধিনায়ক বীরভদ্রকে মহাদেব স্মরণ করতেই সে উপস্থিত হল। বিকট তার মূর্তি, যেন সাক্ষাৎ যম, দক্ষের বিশাল যজ্ঞ লন্ডভন্ড হয়েছিল বীরভদ্রের দাপটে। শিবকে প্রণাম করে সে জানতে চাইল কিসের জন্য তাকে স্মরণ করা হয়েছে?
মহাদেব বললেন–শ্রীহরি নৃসিংহ মূর্তি ধারণ করে হিরণ্যকশিপুকে বধ করে নিজের অস্তিত্ব ভুলে রক্তপিপাসু সিংহের মত বিচরণ করে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছেন। তাকে যেমন করে তোক সংযত করতে হবে।
গর্বভরে বীরভদ্র বলল, সে কি তার মুণ্ড ছিঁড়ে নিয়ে আসবে, যেমন এনেছিল প্রজাপতি দক্ষের।
মহেশ্বর তার কথায় বাধা দিয়ে বললেন–না, তাকে আগে ভালোভাবে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে। তাতে যদি কোন ফল না হয়, তখন তার মুণ্ডটাই ছিঁড়ে আনবে।
যেখানে নৃসিংহদেব দাপাদাপি করছেন সেখানে যাবার আদেশ পাওয়া মাত্রই ছুটল বীরভদ্র। ভীষণাকৃতি বীরভদ্রকে দেখে রক্তমাখা দেহেই নৃসিংহদেব একটু থমকে দাঁড়ালেন। তখন বীরভদ্র তাকে প্রণাম করে বলল–আপনি কি করছেন? আপনি কি ভুলে গেছেন যে আপনি জগতের পিতা? মৎস্য, কূর্ম, বরাহদি রূপে জগতকে বারে বারে আপনি রক্ষা করেছেন। নৃসিংহ রূপের কাজ শেষ হয়েছে, এবার লীলা সম্বরণ করুন। এই ভীষণ রূপ ত্যাগ করে ত্রিভুবনের সকলকে নির্ভয় করুন।
বীরভদ্রের কথা শুনে নৃসিংহদেব ভীষণভাবে গর্জন করে বললেন–সাবধান বীরভদ্র, আমাকে উপদেশ দিও না। তুমি জান না আমার স্বরূপ। আমার কাছে নতি স্বীকার করে সেই পালেন ভোলা প্রভুর কাছে তুমি ফিরে যাও। আমি বিষ্ণু, ব্রহ্মা আমার পুত্র, আর শিব ব্রহ্মার পুত্র। সৃজন, পালন, সংহার সবকিছুই আমি করি। আমারই অংশে এই সকল দেবগণ। এখন আমার ইচ্ছা হচ্ছে সবকিছু সংহার করবার। তুমি বলার কে?
শ্রীহরির কথা শুনে ভীষণভাবে গর্জন করে বীরভদ্র বলল–তুমি মহেশ্বরকে পৌত্ররূপে জ্ঞান করছো হে বলবান সিংহ। কিন্তু তাহলেও তুমি স্রষ্টা কিংবা সংহর্তা ও স্বাধীন কিছুই হতে পারছ না। তোমার কপালে এখনও বর্তমান তোমার কূর্মরূপের চিহ্ন। যখন তুমি বরাহরূপ ধারণ করে হিরণ্যাক্ষকে বধ করতে গিয়েছিলে, তখন সেই দৈত্য শিববরে বলীয়ান হয়ে তোমার একটা দাঁত তুলে নিয়েছিল, তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি। দক্ষের শিবহীন যজ্ঞে তুমি আমার হাতে যে সাজা পেয়েছিলে তা নিশ্চয়ই মনে আছে। ব্রহ্মাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিচ্ছ, সেই ব্রহ্মা শিব নিন্দা করেছিল বলে ভগবান শঙ্কর তার পঞ্চম মাথাটি ছিঁড়ে ফেলেছিল। আশা করি তা মনে আছে। তোমার কি মনে আছে যে তুমি শিবভক্ত দধীচ মুনির কাছে যুদ্ধে হেরেছিলেন জগতে তুমি চক্রধারী নামে পরিচিত যে সুদর্শন চক্র ধারণ করে, সেটি কে দিয়েছিলেন, মনে হয় তা ভুলেই গেছ। আজ কি তোমার মনে নেই যে তুমি বিষসেন রূপে রুদ্রের শূলাগ্রে দগ্ধ হয়েছিলে। জগতের পালনের দায়িত্ব তোমায় দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখন তুমি সৃষ্টি আর সংহারের কর্তা হতে চাইছ। এমন পাগলের মতো কথা বোলো না।
এই কথাগুলি বীরভদ্র ব্যঙ্গের হাসি হাসতে হাসতে বলেই আবার ভয়ঙ্কর শব্দে হুঙ্কার করে বলল– এখুনিই এই ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা সম্বরণ করো হে বিষ্ণো, তা যদি না কর, তবে শিবশক্তির প্রভাব এখনই দেখতে পাবে।
নৃসিংহরূপী বিষ্ণু বীরভদ্রের এমন ক্রুদ্ধমূর্তি দেখে আরো রেগে গিয়ে মহা হুঙ্কার করে বীরভদ্রকে যেই আক্রমণ করতে গেলেন, তখনই আকাশ থেকে হঠাৎ এক বিশালাকার শরভ নেমে এল। সেই শরভের হাজার হাত, মস্তকে জটা, তাতে অর্ধচন্দ্র, দেহের অর্ধেক দেহ হরিণের মত, পক্ষ দুটি বিশাল, চক্ষু আর দাঁতগুলি অতি ধারালো, তিনটি চোখ থেকে আগুনের হল্কা বেরোচ্ছে। সে ভীষণভাবে গর্জন করছে। নৃসিংহরূপী বিষ্ণু সেই শরভমূর্তি দেখে এবং ভয়ঙ্কর গর্জন শুনে, দুর্বল ও অবাক হয়ে পড়লেন। সেই শরভের তেজের কাছে নিজেকে জোনাকির মতন মনে হল। হঠাৎ সেই শরভ নৃসিংহকে পায়ের ফাঁকে বেঁধে ডানার ঝাঁপটা মেরে ভীষণ ঝড়ের সৃষ্টি করে শূন্যপথে উঠে আবার মাটিতে নেমে এল। আবার শূন্যে উড়ে গেল। শূন্য থেকে শুরভরূপী শিবের বিক্রম দেখে ব্রহ্মা এবং অন্যান্য দেবতারা স্বস্তি বোধ করলেন। ত্রিভুবন নাশের ভয় নিবারিত হল।
শরভের বিক্রমের কাছে নৃসিংহদেবকে হার মানতে হল। শরভরূপী মহাদেবের শরণাপন্ন হয়ে তিনি বহু স্তব স্তুতি করলেন।
তারপর বললেন–হে পরমেশ্বর, আমার অহঙ্কারজনিত মোহ যখন উপস্থিত হবে, আপনি তখন নিবারণ করতে ক্ষান্ত হবেন না।
এই প্রার্থনা করে নরসিংহ শান্তভাব ধারণ করলেন। এরপর বীরভদ্র নরসিংহের মুণ্ড ছেদন করে, তাঁর গায়ের ছাল ছাড়িয়ে মহাদেবকে উপহার দিলেন। মহাদেব বসনরূপে সেই ছালটিকে ব্যবহার করলেন। তারপর সব দেবতারা মহেশ্বরের অনেক স্তব স্তুতি করলেন। তখন শরভরূপী মহেশ্বর বললেন–এই নরসিংহরূপী বিষ্ণু আমার মধ্যে লীন হয়েছেন। উভয়েই আমরা অভিন্ন। জগতের সংহার করতে এই মহাবলদর্পকারী নৃসিংহই প্রবৃত্ত আছেন। আমাতে ভক্তিমান হয়ে যাঁরা সিদ্ধি কামনা করেন, এই মহাবলদর্পকারী নৃসিংহকেই পূজা ও নমস্কার করুন। এই উপদেশ দিয়ে ভগবান মহেশ্বর অন্তর্হিত হলেন।
এই প্রার্থনা করে নরসিংহ শান্তভাব ধারণ করলেন। এরপর বীরভদ্র নরসিংহের মুণ্ড ছেদন করে, তাঁর গায়ের ছাল ছাড়িয়ে মহাদেবকে উপহার দিলেন। মহাদেব বসনরূপে সেই ছালটিকে ব্যবহার করলেন। তারপর সব দেবতারা মহেশ্বরের অনেক স্তব স্তুতি করলেন। তখন শরভরূপী মহেশ্বর বললেন–এই নরসিংহরূপী বিষ্ণু আমার মধ্যে লীন হয়েছেন। উভয়েই আমরা অভিন্ন। জগতের সংহার করতে এই মহাবলদর্পকারী নৃসিংহই প্রবৃত্ত আছেন। আমাতে ভক্তিমান হয়ে যাঁরা সিদ্ধি কামনা করেন, এই মহাবলদর্পকারী নৃসিংহকেই পূজা ও নমস্কার করুন। এই উপদেশ দিয়ে ভগবান মহেশ্বর অন্তর্হিত হলেন।