মৃত্যুপথযাত্রীর সেবা
শ্রীহরি বললেন– হে গরুড়, এই হল জীবের গর্ভাবস্থা থেকে সারা জীবনের কষ্ট ভোগের কাহিনি। নরকলোকের কথাও তুমি শুনলে। আর কোনো প্রশ্ন থাকলে বলো, আমি জবাব দেব।
গরুড় বলল– হে ভগবান, মরণাপন্ন রোগীর কীভাবে পরিচর্যা করা দরকার, কী করলে তাকে আর যমালয়ে যেতে হবে না, এই সবের প্রতিকার কী? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমার মন বড়োই উতলা হয়ে উঠেছে।
শ্রী নারায়ণ বললেন– মৃত্যু পথযাত্রীকে পঞ্চ জলে স্নান করানো উচিত। পঞ্চজল অর্থাৎ তীর্থজল, কুশোকে, গোমূত্র, গোময়, ও গদামৃত্তিকা। গোবর দিয়ে মাটি লেপন করে সেখানে দক্ষিণ ভাগে কুশ বিছিয়ে তার ওপরে তিল ছড়িয়ে দিতে হয়। এবার দুটি ধোয়া কাপড় রোগীকে পরিধান করিয়ে উত্তর অথবা পূর্বদিকে মাথা রেখে শোয়াতে হবে। রোগীর মুখে থাকবে একটি সোনার টুকরো।
শালগ্রাম শিলা, তুলসী গাছ, ঘিয়ের প্রদীপ রোগীর পাশে থাকবে। এবার ভগবান বাসুদেবকে পুজো করবে। মহামন্ত্র জপ করবে। পুষ্প, ধূপ দিয়ে শ্রীবিষ্ণুর অর্চনা করা দরকার। এরপর স্তব পাঠ করবে। বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করার পর দানধ্যান করতে হয়। সংসার পরিজন, পুত্র কন্যা, শত্রু-মিত্র, ধনসম্পদ সকলের কথা মৃত্যু পথযাত্রী ভুলে যাবে, সে তখন বিষ্ণুর চরণকমল বন্দনা করবে।
রোগী জ্ঞান হারালে আত্মীয়-স্বজন জোরে জোরে পুরুষসূক্ত পাঠ করবে।
এখন শোনো, এই প্রক্রিয়ার ফল। স্নান করানোর ফলে বিশুদ্ধতা লাভ হয়, অপবিত্রতা দূর হয়। শ্রীবিষ্ণুর চরণ বন্দনার প্রভাবে সর্বকার্য সিদ্ধ হয়। তিল, কুশ ও তুলসির ওপর শয়নের ফলে স্বর্গলাভ হয়। তিল, কুশ যুক্ত হয়ে স্নান করলে সর্বজ্ঞের সমান ফল পাওয়া যায়। মণ্ডল অঙ্কন করা দরকার। কারণ এর মাঝে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, লক্ষ্মী ও অগ্নি অবস্থান করেন। উত্তম লোক লাভ করার জন্য উত্তর বা পূর্বদিকে মাথা রেখে শোয়াতে হয়। এর ফলে সকল পাপ নাশও হয়। স্বর্ণখণ্ড রোগীর মুখে থাকার ফলে জ্ঞান লাভ হয়। তখন ভবসাগরে পড়ে মুমূর্ষ জন হাবুডুবু খায়, দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে। বিষ্ণু, একাদশী জো, তুলসী ও ব্রাহ্মণ, এই সব তাদের ভেলাতে গমন। ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন করে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলে বিষ্ণুর সমান পুণ্য লাভ হয়। দানধ্যান করার ফলে মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুর পরে স্বর্গ লোকে সুখে থাকে। মমত্ত্ব বিনাশ করার জন্য পুরুষসূক্ত পাঠের প্রয়োজন। সাধ্যমত দান ধ্যান করলে ভগবান সন্তুষ্টি হন। দাতার মনোবাঞ্ছা শ্রীহরির দয়ায় পূর্ণ হয়।