গয়াতীর্থের উৎপত্তি ও তার মাহাত্ম্য বর্ণন
পুরাকালে গয় নামে এক অসুর ছিল। সে প্রবল শক্তি ধরত। কঠোর তপস্যায় সে বসল। তার তপস্যায় স্বর্গ মর্ত্য-পাতাল কেঁপে উঠল। দেবতাদের তখন থরহরি কম্প অবস্থা। কী করবেন? দিশা না পেয়ে সকলে শ্রীহরির শরণ নিলেন। তারা সবিস্তারে গয়াসুরের তপস্যার কথা জানালেন। ওই অসুর তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করলে স্বর্গ থেকে সকলকে বিদায় নিতে হবে।
শ্রীহরি দেবতাদের আশ্বস্ত করে বললেন–তোমরা শান্ত হত্ত। তপস্যার বলে ও দেহ ছেড়ে শিবধামে গমন করবে। ওকে নাশ করার চেষ্টা করো না।
দেবতারা বললেন–গয় যদি শিবত্ব লাভ করে, তাহলেও সৃষ্টির বিনাশ হবে না। কিন্তু অসুর যদি নিধন না হয়, তাহলে সৃষ্টি ধ্বংস হবে, তাই বলছি, ওকে বিনাশ করুন, প্রভু।
–বেশ, তাই হবে।
শ্রীবিষ্ণুর কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে দেবতারা ফিরে গেলেন যে যার আলয়ে।
গয়াসুর ছিল শিবভক্ত। ক্ষীরোদ সাগরে গেল ফুল আনতে, শিবের চরণে তা নিবেদন করবে। ফুল নিয়ে ফিরে আসার সময় স্বয়ং বিষ্ণু তার ওপর মায়া বিস্তার করলেন। বিষ্ণুর মায়ার প্রভাবে গয়াসুর অচৈতন্য হয়ে সেখানে পড়ে গেল। এ সুযোগ শ্রীহরি নষ্ট করলেন না। গদা দিয়ে আঘাত করলেন তার মাথায়, গয়াসুরের মৃত্যু হল। তার দেহ যেখানে পড়েছিল সেখানে সৃষ্টি হল একতীর্থ স্থান। নাম গয়া।
এই পুণ্যক্ষেত্রে যে স্নান করে যজ্ঞ, শ্রাদ্ধ, পিণ্ড দানাদি করে, সে ব্রহ্মলোকে ঠাঁই পায়। তাকে কখনও নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না।
সেই গয়াক্ষেত্র হল তীর্থস্থান। ব্রহ্মা সেখানে যজ্ঞের আয়োজন করলেন। অনেক ব্রাহ্মণ এলেন পৌরোহিত্য করার জন্য। ব্রহ্মা সহর্ষে ওই তীর্থভূমি ব্রাহ্মণদের দান করলেন।
ব্রাহ্মণরা ছিল অত্যন্ত লোভী। তারা যজ্ঞের সমস্ত উপকরণ গ্রহণ করে সেখানেই নদীর তীরে বাস করতে শুরু করলেন।
ব্রহ্মা ব্রাহ্মণদের প্রতি রুষ্ট হলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে অভিশাপ বর্ষণ করলেন।
–তোমাদের তিন পুরুষের অর্জিত বিদ্যা ও ধন সব নষ্ট হবে। এই পাষাণ পর্বত আর এই নদী হবে আজ থেকে তোমাদের একমাত্র সহায়।
ব্রাহ্মণগণ এমন অভিশাপ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তারা তখন ব্রহ্মাকে প্রসন্ন করার জন্য তার স্তব করতে লাগলেন।
ব্রহ্মা তখন সদয় হলেন। বললেন–এই শাপ থেকে মুক্ত হওয়ার একটা উপায় আছে। যেসব পুণ্যার্থী এখানে শ্রাদ্ধাদি করার জন্য আসবে, তারা তোমাদের পুজো করবে, আমিও সেই সঙ্গে অর্চিত হব। ব্রহ্মজ্ঞান, গয়াশ্রাদ্ধ, গোগৃহে মরণ, কুরুক্ষেত্রে বাস–এই চরিটি হল মুক্তির কারণ। গয়াতীর্থে স্নান করলে সকল তীর্থের স্নানের সমান ফললাভ করা যায়।
ব্রহ্মা হত্যা, চুরি, সুরাপানদি, মতো মহাপাপগুলির হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, এই গঙ্গাতীর্থে শ্রাদ্ধকৰ্ম নিষ্পন্ন করার ফলে। যারা পশু বা চোরের দ্বারা, সাপের দংশনে অথবা দীক্ষা নেওয়ার আগেই মারা যায়, তাদের শ্রাদ্ধকর্মাদি এই গয়াতীর্থে করলে স্বর্গলাভ হয়। গয়াতীর্থে গমন করতে যে প্ররোচণা দেয়, সেও পুণ্য লাভ করে এবং পিতৃঋণ থেকে মুক্তি পায়।