০৭৮. যুদ্ধের উদ্যোগে কৃষ্ণের উৎসাহ

৭৮তম অধ্যায়

যুদ্ধের উদ্যোগে কৃষ্ণের উৎসাহ

কৃষ্ণ কহিলেন, “হে পাণ্ডুনন্দন! তুমি যাহা কহিলে, তাহা যথার্থ, কৌরব ও পাণ্ডবগণের যাহাতে শ্রেয়োলাভ হয়, উহা আমার অবশ্য কর্ত্তব্য। সন্ধি ও বিগ্ৰহ এই উভয়ই আমার আয়ত্ত, কিন্তু এ স্থলে আমার কিছু বক্তব্য আছে, শ্রবণ কর। উর্ব্বরক্ষেত্রে যথানিয়মে হলচালন ও বীজবপনাদি করিলেও বর্ষা ব্যতীত কখনই ফলোৎপত্তি হয় না; পুরুষ যদি পুরুষকারসহকারে তাহাতে জল সেচন করে, তথাপি দৈবপ্রভাবে উহা শুষ্ক হইতে পারে। অতএব প্রাচীন মহাত্মাগণ দৈব ও পুরুষকার উভয় একত্র মিলিত না হইলে কাৰ্য্যসিদ্ধি হয় না বলিয়া স্থির করিয়াছেন। আমি যথাসাধ্য পুরুষকার প্রকাশ করিতে পারি, কিন্তু দৈবকর্মের অনুষ্ঠানে আমার কিছুমাত্র ক্ষমতা নাই।

“দুরাত্মা দুৰ্য্যোধন কর্ম্ম ও লোকভয় পরিত্যাগপূর্ব্বক স্বজনবিগৰ্হিত দুষ্কর্ম্মানুষ্ঠান করিয়াও লজ্জিত বা সন্তাপিত হইতেছে না। শকুনি, কৰ্ণ প্রভৃতি তাহার মন্ত্রিগণ ও ভ্রাতা দুঃশান নিয়ত উত্তেজনাদ্বারা ঐ দুরাত্মার পাপপ্রবৃত্তি পরিবর্দ্ধিত করিতেছে; অতএব স্পষ্টই বোধ হইতেছে যে, পাপাত্মা ধৃতরাষ্ট্রতনয় রাজ্য প্রদান করিয়া তোমাদের সহিত সন্ধি করিবে না। সুতরাং তাহাকে নিধন না করিলে তোমাদের রাজ্যলাভ হইবার সম্ভাবনা নাই। রাজ্য পরিত্যাগপূর্ব্বক সন্ধি করা যুধিষ্ঠিরের অভিপ্রেত নহে; কিন্তু আমরা যাচ্ঞা করিলেও দুরাত্মা দুৰ্য্যোধন কদাচ রাজ্য প্ৰদান করিবে না। আমার মতে তাহার নিকট যুধিষ্ঠিরের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা অকর্ত্তব্য; ঐ দুরাত্মা কখনই উহাতে সম্মত হইবে না। তাহা হইলে পাপপরায়ণ কৌরবকুলকলঙ্ক দুৰ্য্যোধন আমার ও পৃথিবীস্থ সমস্ত লোকেরই বধ্য হইবে।

“ঐ দুরাত্মা বাল্যাবস্থায় সতত তোমাদিগকে বঞ্চিত করিত, পরিশেষে ধৰ্মরাজের অতুল সম্পত্তি দর্শনে সুস্থির হইতে না পারিয়া তোমাদের রাজ্য বিলুপ্ত করিয়াছিল। ঐ পাপাত্মা অনেকবার তোমাদের উপর আমার ভেদবুদ্ধি জন্মাইবার চেষ্টা করিয়াছিল; কিন্তু আমি তাহার সেই কুমন্ত্রণা গ্ৰহণ করি নাই। হে মহাবাহো! দুৰ্য্যোধনের যেরূপ অভিপ্রায় ও আমি যুধিষ্ঠিরের প্রিয়ানুষ্ঠানে যেরূপ বাসনা করি, তাহা তোমার অবিদিত নাই; তবে কি নিমিত্ত আজি অনভিক্তেজ্ঞর ন্যায় কথা কহিতেছ? তুমি সামান্য লোক নও, ভূভারহরণ জন্য ধরাতলে অবতীর্ণ হইয়াছ।

“হে মহাত্মন! শক্রগণের সহিত সন্ধিসংস্থাপন একান্ত দুষ্কর। যাহা হউক, আমি বাক্য ও কাৰ্য্যদ্বারা সন্ধিসংস্থাপনে যথাসাধ্য যত্ন করিব; কিন্তু বোধ হয়, কৃতকাৰ্য্য হইতে পারিব না। গোহরণকালে তোমাদের অজ্ঞাতবাসের বৎসর শেষ হইয়াছিল; সেই সময়ে মাহাত্মা ভীস্ম রাজ্যপ্রদানপূর্ব্বক তোমাদের সহিত সন্ধি করিতে দুৰ্য্যোধনকে অনুরোধ করিয়াছিলেন; কিন্তু ঐ দুরাত্মা তাহাতে সম্মত হয় নাই। সে অতি অল্পমাত্র রাজ্যপ্রদানেও সম্মত নহে। হে অর্জ্জুন! তুমি যখন তাহাকে বধ্য বলিয়া জ্ঞান করিয়াছ, তখন সে নিহত হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। যাহা হউক, আমি সর্ব্বদা যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা প্রতিপালনপূর্ব্বক দুরাত্মা দুর্য্যোধনের পাপকর্মে দৃষ্টিপাত করিব।”