০৫৫. সঞ্জয়কর্ত্তৃক পাণ্ডবগণের রথসজ্জাবৰ্ণন

৫৫তম অধ্যায়

সঞ্জয়কর্ত্তৃক পাণ্ডবগণের রথসজ্জাবৰ্ণন

দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে সঞ্জয়! যুধিষ্ঠির ও অন্যান্য রাজগণ সাত অক্ষৌহিণী মাত্র লাভ করিয়াই কি যুদ্ধ করিতে সমুৎসুক হইয়াছে?”

সঞ্জয় কহিলেন, “হে রাজন! রাজা যুধিষ্ঠির যুদ্ধ করিবার নিমিত্ত অত্যন্ত আহ্লাদিত হইয়াছেন; ভীম, অর্জ্জুন, নকুল এবং সহদেবও ভয়প্রাপ্ত হয়েন নাই। ধনঞ্জয় অস্ত্রপ্রয়োজক মন্ত্ৰসকল পরীক্ষা করিবার অভিলাষে দিব্যরথ সংযোজনা করিয়া দশদিক উদ্ভাসিত করিতেছেন। আমি সেই বর্মিতাঙ্গ [বর্ম্মাচ্ছাদিত-বর্ম্মদ্বারা রক্ষিত] ধনঞ্জয়কে সৌদামিনী-সমুদ্ভাসিত জলদের ন্যায় অবলোকন করিলাম। তিনি গাঢ়তর চিন্তা করিয়া আমাকে কহিলেন, “হে সঞ্জয়! আমরা যে জয়লাভ করিব, এই তাহার পূর্ব্বলক্ষণ দেখা।” তিনি যেরূপ কহিলেন, আমি তাহা বাস্তবিক বোধ করিলাম।”

দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে সঞ্জয়! তুমি ত’ অপরাজিত পাণ্ডবগণের অভিনন্দনপূর্ব্বক প্রশংসাই করিয়া থাক; বল দেখি, অর্জ্জুনের রথের অশ্বগণ কি প্রকার? ধ্বজসকলই বা কিরূপ?”

সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! বিশ্বকর্ম্মা, পুরন্দর ও প্রজাপতি মহামূল্য ও লঘুতর বহুবিধ আকৃতি কল্পনা করিয়া সেই ধ্বজ চিত্ৰিত করিয়াছেন এবং মারুতসূত হনুমান ভীমসেনের অনুরোধে সেই ধ্বজে আত্মপ্রতিকৃতি আরোপিত করিবেন। সেই ধ্বজ তিৰ্য্যক ও ঊর্দ্ধদিকে এক যোজন আবৃত করে এবং বিশ্বকর্ম্মা তাহাতে এরূপ মায়া প্রকটিত করিয়াছেন যে, তাহা বৃক্ষে নিরুদ্ধ হইলেও তাহাতে সংসক্ত হয় না। আকাশে যেমন নানাবর্ণ ইন্দ্ৰধনু প্রকাশিত হয়, কিন্তু তাহা কি পদার্থ, কিছুই জানি না, বিশ্বকর্ম্মার নির্মিত ধ্বজেও সেইরূপ বহুবিধ বৰ্ণ দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। যেমন ধূম আকাশে উত্থিত ও রুদ্ধ হইলে তেজোদ্বারা বহুবিধ বর্ণে সুশোভিত হয়, বিশ্বকৰ্ম-বিনির্মিত ধ্বজও সেইরূপ; কিন্তু ইহার ভারও নাই, অবরোধও নাই। চিত্ররথ তাহাকে যে দিব্যরথ ও বায়ুসদৃশ বেগবান শ্বেতবর্ণ তরঙ্গসকল প্রদান করিয়াছেন, কি পৃথিবী, কি অন্তরীক্ষ, কি স্বৰ্গ, কত্ৰাপি সেই রথ বা অশ্বসমূহের গতিরোধ হয় না। রাজা যুধিষ্ঠিরের রথে যে শুভ্রবর্ণ প্ৰকাণ্ডকলেবর স্ববীৰ্য্যের অনুরূপ শত অশ্ব সংযোজিত আছে, তাহাদের যত বিনষ্ট হউক, শতসংখ্যা পূর্ণ থাকিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। ভীমসেনের রথে যেসকল অশ্ব সুশোভিত আছে, তাহারা সপ্তর্ষির ন্যায় তেজস্বী ও বায়ুতুল্য বেগবান; তাহাদের পৃষ্ঠদেশ তিত্তির পক্ষীর ন্যায় বিচিত্ৰবৰ্ণ এবং অন্যান্য অবয়ব কৃষ্ণবর্ণ। ধনঞ্জয় প্রীত হইয়া ভীমসেনকে ঐ সকল অশ্ব প্রদান করিয়াছেন। ভ্রাতৃগণের অশ্ব অপেক্ষাও উৎকৃষ্ট ও অম্লানস্বভাব অন্য অশ্বসকল সহদেবকে এবং ইন্দ্ৰদত্ত তুরঙ্গমগণ নকুলকে বহন করে। বয়স ও বিক্রমে বায়ুসমান বলবান ও বেগবান, ইন্দ্রাশ্বের তুল্য মহাজব [অত্যন্ত বেগবান] ও বিচিত্ররূপ, দেবদত্ত অশ্বগণ দ্ৰৌপদেয় [দ্রৌপদীপুত্ৰগণ] ও সৌভধ্র [অভিমন্যু] কুমারগণকে বহন করিয়া থাকে।”