১৭৫. অম্বার পরশুরামদর্শনের উপায় কথন

১৭৫তম অধ্যায়

অম্বার পরশুরামদর্শনের উপায় কথন

“হোত্রবাহন কহিলেন, “বৎসে! তুমি মহাবলপরাক্রান্ত ভগবান পরশুরামকে মহারণ্যে ঘোরতর তপানুষ্ঠান করিতে সন্দর্শন করিবে। তিনি প্রতিদিন বেদবিৎ মহর্ষি, গন্ধর্ব্ব ও অপ্সরাগণসমভিব্যাহারে মহেন্দ্ৰপৰ্বতে বাস করিয়া উপাসনা করিয়া থাকেন। তুমি সেই পর্ব্বতে গমন করিয়া তাঁহাকে অভিবাদনপূর্ব্বক আমার নামকীর্ত্তন ও আপনার অভিলষিত কাৰ্য্য নিবেদন করিলে তিনি তাহা সম্পাদনা করিবেন। সেই বীরশ্রেষ্ঠ জমদগ্নিতনয় পরশুরাম আমার সখা ও প্রিয়সুহৃৎ।”

“রাজর্ষি হোত্ৰবাহন অম্বাকে এইরূপ কহিতেছেন, এই অবসরে জমদগ্ন্যের প্রিয় অনুচর অকৃতব্ৰণ তথায় প্রাদুর্ভূত [সহসা উপস্থিত] হইলেন। তখন শতসহস্র মহর্ষিগণ ও বৃদ্ধরাজ হোত্ৰবাহন আসন হইতে উত্থিত হইয়া যথোচিত সৎকারপূর্ব্বক তাহাকে বেষ্টন করিয়া উপবেশন করিলেন এবং প্রীতমনে দিব্যমনোরম কথাসকল কহিতে লাগিলেন। অনন্তর রাজা হোত্ৰবাহন অকৃতব্ৰণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হে মহাবাহো! এক্ষণে সেই প্রতাপান্বিত মহাবীর জামদগ্ন্য কোথায় অবস্থান করিতেছেন? এখন কি তাঁহার সাক্ষাৎকারলাভে সমর্থ হইব?”

“অকৃতব্ৰণ কহিলেন, “মহারাজ! ভগবান পরশুরাম সততই আপনার নামকীর্ত্তন করিয়া কহিয়া থাকেন,-রাজর্ষি সৃঞ্জয় হোত্ৰবাহন আমার প্রিয়সখা। বোধ হইতেছে, তিনি কল্য প্ৰভাতে আপনাকে দর্শন করিবার নিমিত্ত এ স্থানে আগমন করিবেন। তাহা হইলে আপনিও তাহার সাক্ষাৎকার লাভ করিতে সমর্থ হইবেন। এক্ষণে জিজ্ঞাসা করি, এই কন্যাটি কে, কি নিমিত্ত অরণ্যে আগমন করিয়াছেন এবং কন্যাটি আপনারই বা কে?”

অকৃতব্রণের নিকট অম্বার স্বয়ংবরবিয় বর্ণন

“হোত্ৰবাহন কহিলেন, “হে অকৃতব্ৰণ! এই কন্যা কাশিরাজের জ্যেষ্ঠা দুহিতা ও আমার দৌহিত্রী। ইহার নাম অম্বা। অম্বিকা ও অম্বালিকানামে ইহার দুইটি কনিষ্ঠ ভগিনী আছে। ইহাদিগের স্বয়ংবরকাল উপস্থিত হইয়াছিল, তন্নিমিত্ত কাশীনগরীতে অনেকানেক ভূপাল সমবেত হইয়াছিলেন। তথায় কন্যার নিমিত্ত বিবিধ উৎসব অনুষ্ঠিত হইতে লাগিল। অনন্তর মহাবীর ভীষ্ম নৃপতিগণকে পরাজয়পূর্ব্বক তিনকন্যাকে হরণ করিয়া হস্তিনাপুরে প্ৰতিগমন করিলেন এবং সত্যবতীকে এই বৃত্তান্ত নিবেদন করিয়া ভ্ৰাতা বিচিত্ৰবীৰ্য্যের বিবাহের উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। তদ্দর্শনে অম্বা মন্ত্রিগণের সমক্ষে ভীষ্মকে কহিলেন, “হে বীর! আমি মনে মনে শাল্বভূপতিকে পতিত্বে বরণ করিয়াছি, অতএব আপনার ভ্রাতাকে অন্যসংসক্তমনা [অন্য ব্যক্তিতে আসক্তচিত্তা] কন্যাদান করা উচিত হইতেছে না।”

“তখন ভীষ্ম মন্ত্রিগণের সহিত পরামর্শ করিয়া জননী সত্যবতীর অনুমতি গ্রহণপূর্ব্বক ইহাকে পরিত্যাগ করিলেন। তখন অম্বা সৌভপতি শাল্বের নিকট গমন করিয়া অবসরক্রমে কহিল, ‘মহারাজ! ভীষ্ম আমাকে পরিত্যাগ করিয়াছেন; এক্ষণে আপনি আমার ধর্ম্ম রক্ষা করুন; আমি পূর্ব্বেই আপনাকে মনে মনে বরণ করিয়াছি।” তখন শাল্বরাজ ইহার চরিত্রের প্রতি আশঙ্কা ও তপানুষ্ঠানই কর্ত্তব্য মনে করিয়া তৎক্ষণাৎ ইহাকে প্রত্যাখ্যাত করিলেন। এক্ষণে অম্বা তপানুষ্ঠানবাসনায় তপোবনে আগমন করিয়াছে। আমি ইহার বংশপরিচয় প্রাপ্ত হইয়া ইহাকে বিদিত [চিনিতে পারিয়াছি] হইয়াছি। এক্ষণে এই কন্যা কহিতেছে, ভীষ্মই আমার এই দুঃখের মূল কারণ।”

“তখন অম্বা কহিল, “হে তপোধন!! রাজা হোত্ৰবাহন আমার মাতামহ, ইনি যাহা কহিলেন, তদ্বিষয়ে আর অণুমাত্ৰও সন্দেহ করিবেন না। এক্ষণে আমি অপমান ও লজ্জাভয়ে স্বনগরে প্ৰতিগমন করিতে সমর্থ হইতেছি না। ভগবান পরশুরাম আমাকে যাহা কহিবেন, তাহাই আমি একমাত্র প্রধান কাৰ্য্য বলিয়া বোধ করিব।” ”