১৯৩. ভীষ্মদ্রোণাদির নিকট দুৰ্য্যোধনের যুদ্ধপ্রশ্ন

১৯৩তম অধ্যায়

ভীষ্মদ্রোণাদির নিকট দুৰ্য্যোধনের যুদ্ধপ্রশ্ন

সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! রজনী প্ৰভাত হইলে আপনার আত্মজ দুৰ্য্যোধন সর্ব্বসৈন্যের সমক্ষে পিতামহ ভীষ্মকে কহিলেন, ‘হে গাঙ্গেয় [গঙ্গাতনয়]! আচাৰ্য্য দ্রোণ, মহাবল কৃপ, সমরশ্লাঘী [যুদ্ধের প্রতি সশ্রদ্ধ—সমরামোদী] কর্ণ ও দ্বিজসত্তম অশ্বত্থামা সকলেই দিব্যাস্ত্রবেত্তা [উত্তম অস্ত্ৰবিৎ] ও সকলেই আমার পক্ষ; এক্ষণে বলুন, আপনারা ধৃষ্টদ্যুম্ন ও ভীমার্জ্জুনপ্রভৃতি মহাবলপরাক্রান্ত লোকপালতুল্য ব্যক্তিদ্বারা সুরক্ষিত, প্ৰভূততর নর, নাগ [হস্তী], অশ্বযুক্ত মহারথসমাকুল, অর্ধষ্য [দুর্দ্দম্য] অনিবাৰ্য্য অদ্ভুত সাগরোপম, দেবগণেরও অক্ষোভ্য [অজেয়] বলসমুদয়কে কত কালে বিনাশ করিবেন, ইহা শ্রবণ করিবার নিমিত্ত আমার অন্তঃকরণ একান্ত কৌতুহলাক্রান্ত হইয়াছে।”

“ভীষ্ম কহিলেন, “হে রাজন! তুমি যে শক্রগণের বলাবলের বিষয় জিজ্ঞাসা করিতেছ, ইহা তোমার অনুরূপই হইয়াছে। এক্ষণে আমি রণস্থলে যেরূপ পরমশক্তি, শস্ত্ৰবল ও ভুজবীৰ্য্য প্রদর্শন করিব, তাহা শ্রবণ কর। ধর্ম্মশাস্ত্রে এইরূপ নির্ণীত আছে যে, অকপট ব্যক্তির সহিত অকপট যুদ্ধ এবং মায়াবীর সহিত মায়াযুদ্ধ করিবে। আমি প্রতিদিন প্ৰাতঃকালে পাণ্ডবসৈন্যগণমধ্যে সহস্র রথী ও দশসহস্ৰ যোদ্ধা বিনাশ করিব। আমি নিত্য উৎসাহসম্পন্ন হইয়া এইরূপ এক এক ভাগ কল্পনা করিয়া শতসহস্ৰঘাতী [অসংখ্য লোকের প্রতি আঘাতে সমর্থ] শরনিকরদ্ধারা একমাস মধ্যে সমস্ত পাণ্ডবসৈন্য সংহারে সমর্থ হইব।”

“অনন্তর রাজা দুৰ্য্যোধন দ্রোণাচাৰ্য্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘হে আচাৰ্য্য! আপনি কতদিনের মধ্যে পাণ্ডবসৈন্যগণকে বিনাশ করিতে সমর্থ হইবেন?”

“তখন দ্রোণ হাস্যমুখে কহিলেন, “হে মহারাজ! আমি জরাজীর্ণ [জয়াদ্বারা গলিত দেহ-শুষ্ক শরীর] ও ক্ষীণপ্ৰাণ [দুর্ব্বল] হইয়াছি; অতএব বোধ হইতেছে, আমিও ভীষ্মের ন্যায় একমাস মধ্যে সমস্ত পাণ্ডবসৈন্যগণকে অস্ত্ৰাগ্নিদ্বারা দগ্ধ করিব। এই আমার পরমশক্তি ও এই আমার পরমবল।”

“কৃপাচাৰ্য্য কহিলেন, ‘মহারাজ! আমি দুইমাসে সমস্ত পাণ্ডবসৈন্যবিনাশে সমর্থ হইব।” অশ্বত্থামা কহিলেন, “মহারাজ! আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি, দশ রাত্রির মধ্যে বিপক্ষগণের বলক্ষয় করিব।” তখন অঙ্গরাজ কর্ণ অঙ্গীকার করিলেন, “আমি পাঁচ রাত্রির মধ্যে পাণ্ডবদিগের সৈন্যবিনাশ করিতে সমর্থ হইব।” মহাবীর ভীষ্ম এই কথা শ্রবণ করিবামাত্ৰ উচ্চস্বরে হাস্য করিয়া কহিলেন, “হে রাধেয়! তুমি বাসুদেবসহায় অর্জ্জুনকে যতক্ষণ রণস্থলে নিরীক্ষণ না কর, ততক্ষণ এইরূপ বিবেচনা করিতে পার। তুমি স্বেচ্ছানুসারে ইহা অপেক্ষা অধিকও বলিতে পার।’ ”