১৮৪. ষষ্ঠ দিনের যুদ্ধ-পরম্পর ব্ৰহ্মাস্ত্ৰত্যাগ

১৮৪তম অধ্যায়

ষষ্ঠ দিনের যুদ্ধ-পরম্পর ব্ৰহ্মাস্ত্ৰত্যাগ

“অনন্তর নিশাকাল অতীত হইলে আমি প্রতিবোধিত [জাগরিত—শয্যা হইতে উত্থিত] হইয়া স্বপ্নবৃত্তান্ত চিন্তা করিয়া একান্ত হৃষ্ট হইলাম। পরে আমাদিগের সর্ব্বভূতলোমহর্ষণ [সমস্ত প্রাণীর রোমাঞ্চকর] তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ হইল। ভার্গব আমার প্রতি অনবরত শরবর্ষণ করিতে লাগিলেন; আমিও শরজালদ্বারা তৎসমুদয় নিবারণ করিতে লাগিলাম। তখন তিনি গতদিনের কোপে [পরাজয়জনিত ক্ৰোধে] অভিভূত হইয়া অশনিসমস্পর্শ [বজ্রসদৃশ দাহকারী শক্তিসম্পন্ন], যমদণ্ডোপম, হুতাশনের ন্যায় প্রজ্বলিত লেলিহান [লক লক জিহ্বা বাহির করিয়া ভক্ষণোদ্যত] এক শক্তিপ্রয়োগ করিলেন। উহা গগনচারী নক্ষত্রের ন্যায়। শীঘ্র আমার জত্রু [কণ্ঠের উভয়পার্শ্বস্থ অস্থি]দেশে নিপতিত হইল। তখন আমার ক্ষত হইতে গৈরিক ধাতুর ন্যায় অনবরত রুধিরক্ষরণ হইতে লাগিল। পরে আমি নিতান্ত ক্রুদ্ধ হইয়া সাপবিষ তুল্য মৃত্যুসঙ্কাশ এক শর নিক্ষেপ করিলে দ্বিজসত্তম জামদগ্ন্য সেই শরদ্বারা ললাটদেশে অভিহিত হইয়া একশৃঙ্গ শৈলের ন্যায় শোভমান হইতে লাগিলেন। তিনি তাহা উৎপাটন করিয়া রোষকষায়িতলোচনে [ক্ৰোধরক্তিমনেত্রে] বলপূর্ব্বক শরাসন আকর্ষণ করিয়া অন্তকোপম এক শর সন্ধান করিলেন। ঐ শর ভীষণ অজগরের [বৃহৎ কলেবর সর্প-ছাগ, মেষ গিলিতে পারে—সুতরাং মানুষও গিলিতে পারে, তত বড়] ন্যায় মহাবেগে আমার বক্ষঃস্থলে নিপতিত হইলে আমি শোণিতলিপ্তকলেবর হইয়া ধরাতলে নিপতিত হইলাম। অনন্তর সংজ্ঞা লাভ করিয়া প্ৰজ্বলিত অশনির[বজ্রের] ন্যায় এক শক্তি নিক্ষেপ করিলাম; উহা তাহার বক্ষঃস্থলে নিপতিত হইলে তিনি নিতান্ত বিহ্বল হইয়া কম্পিত হইতে লাগিলেন। তখন তাঁহার প্রিয়সখা অকৃতব্ৰণ তাঁহাকে মধুরবাক্যে আশ্বাস প্রদান করিলেন।

“মহাত্মা ভার্গব আশ্বস্ত হইয়া ক্রোধাভরে ব্ৰহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করিলে আমি তাহা নিবারণ করিবার নিমিত্ত এক ব্ৰহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করিলাম। ঐ ব্ৰহ্মাস্ত্ৰ অন্তরীক্ষে প্ৰজ্বলিত হইতে লাগিল, তখন বোধ হইল, যেন প্ৰলয়কাল সমুপস্থিত হইয়াছে। ঐ অস্ত্রদ্বয় আমাদিগের নিকট উপস্থিত না হইয়া নভোমণ্ডলে পরস্পর মিলিত হইলে তাহা হইতে সহসা এক তেজঃ প্রাদুর্ভূত হইল। তদ্দর্শনে প্রাণীগণ একান্ত ভীত ও নিতান্ত শঙ্কিত হইতে লাগিল; মহর্ষি, গন্ধর্ব্ব ও দেবগণ অস্ত্ৰতেজঃপ্রভাবে সাতিশয় পীড়িত হইয়া উঠিলেন, পর্ব্বতবনসম্পন্না অবনী কম্পিত হইতে লাগিল; প্রাণীগণ নিতান্ত সন্তপ্ত হইয়া সাতিশয় বিষণ্ন হইল। গগনচারী প্রাণীগণ তথায় আর অবস্থান করিতে সমর্থ হইল না। সর্ব্বত্র হাহাকার শব্দ সমুত্থিত হইলে আমি প্রকৃত অবসর বিবেচনা করিয়া ব্ৰাহ্মণগণের বিচনানুসারে, সত্বর প্রস্বাপাস্ত্র পরিত্যাগ করিতে অভিলাষ করিলাম এবং ঐ অস্ত্র তৎক্ষণাৎ আমার মনোমধ্যে প্রতিভাত [প্রতিফলিত-স্ফূরিত] হইল।”