৭৬. পাণ্ডবপ্রস্থানে বিদুরের আশীৰ্বাদ

পাণ্ডবপ্রস্থানে বিদুরের আশীৰ্বাদ

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “এক্ষণে আমি সকল ভারতবৃদ্ধ পিতামহ, রাজা সোমদত্ত, বাহ্লীক, দ্রোণ, কৃপ, অশ্বত্থামা, বিদুর, ধৃতরাষ্ট্র সকল ধাৰ্ত্তরাষ্ট্র, সঞ্জয় এবং অন্যান্য সভাসদগণের নিকট বিদায় লইয়া চলিলাম, পুনর্ব্বার আসিয়া আপনাদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিব।” তাঁহারা লজ্জাক্রমে ধীমান, যুধিষ্ঠিরকে কিছুই বলিতে পারিলেন না, কিন্তু মনে মনে তাহার শুভানুধ্যান করিতে লাগিলেন। বিদুর কহিলেন, “আৰ্য্যা পৃথা রাজপুত্রী, তাঁহার বনগমন করা কোনক্রমেই উচিত হয় না; বিশেষতঃ তিনি বৃদ্ধা, সুকুমারী এবং চিরকাল সুখে অতিবাহিত করিয়াছেন; অতএব তিনি সৎকৃত হইয়া আমার আবাসে বাস করুন। হে পাণ্ডবগণ! তোমাদিগের সর্ব্বত্র মঙ্গল হউক।” পাণ্ডবেরা ‘যে আজ্ঞা’ বলিয়া নিবেদন করিলেন, “মহাশয়! আপনি পিতৃতুল্য পিতৃব্য, আমরাও আপনার একান্ত বশংবদ, আপনি যে বিষয়ের অনুমতি করিতেছেন তাহা আমাদিগের অবশ্য কর্তব্য, যেহেতু, আপনি পরম গুরু। হে প্রাজ্ঞবীর! যদ্যপি আর কিছু কর্তব্য থাকে, তাহাও আদেশ করুন।” বিদুর কহিলেন, “বৎস যুধিষ্ঠির! নিশ্চয় জানিবে, অধৰ্মাচরণপূর্ব্বক কেহ জয়লাভ করিতে পারে না, প্রত্যুত পরাজয় হইলে যৎপরোনাস্তি মনস্তাপ উপস্থিত হয়। তুমি ধর্ম্মজ্ঞ, ধনঞ্জয় যুদ্ধে জেতা, ভীমসেন অরিহন্তা, নকুল অর্থসংগ্রাহী, সহদেব সংযমী, ধৌম্য ব্রহ্মবিৎ, ধৰ্মাৰ্থদশিনী দ্রৌপদী ধর্ম্মচারিণী। তোমরা সকলেই পরস্পরের প্রিয় ও প্রিয়দর্শন, সর্ব্বদা সন্তুষ্টচিত্ত; শত্রুবৰ্গ তোমাদিগের সৌহার্দ্য বিচ্ছেদ করিতে পারে না। তোমরা সকলেরই স্পিহণীয়। হে ভারত। তোমার সমাধি অশেষক্ষেমাস্পদীভূত, শত্রুসদৃশ শক্ৰও ইহাকে উপহাস করিতে পারে না। তুমি পূর্ব্বে হিমাচলে মেরুসাবর্ণি কর্তৃক অনুশিষ্ট হইয়াছ, বারণাবতনগরে মহর্ষি দ্বৈপায়নের নিকট শিক্ষিত হইয়াছ, ভৃগুতুঙ্গে রামের নিকট উপদিষ্ট হইয়াছ, দৃষদ্বতীতে মহাদেবের নিকট জ্ঞানলাভ করিয়াছ এবং কল্মাষী-নদীতীরস্থিত মহর্ষি ভৃগুর শিষ্য হইয়াছ। দেবর্ষি নারদ তোমার সর্ব্ববিষয়ে পরিপ্রেক্ষক এবং ধৌম্য তোমার পুরোহিত। হে পাণ্ডব! পরলোক বিষয়ে ঋষিপ্রশংসিত স্বীয় অসামান্য বুদ্ধিবৃত্তি পরিত্যাগ করিও না; তুমি বুদ্ধিতে পুরূরবাকে পরায় করিয়াছ, শক্তিতে রাজলোকদিগকে পরাভব করিয়াছ, ধর্ম্মাচরণে ঋষিগণকে অতিক্রম করিয়াছ। জয়ে ইন্দ্ৰকে, ক্ৰোধ-সংবরণে যমকে, ক্ষমাগুণে পৃথিবীকে, ত্যাগে কুবেরকে, সংযমে বরুণকে, আত্মপ্রদানে চন্দ্ৰকে, আত্মসম্পদে পঞ্চভুতকে, তেজে সূৰ্য্যদেবকে এবং বলে পবনকে পরাস্ত করিয়াছ। তোমাদিগের মঙ্গল হউক। নির্বিঘ্নে প্রত্যাগত হও, পুনর্ব্বার সাক্ষাৎ হইবে। হে কৌন্তেয়! তুমি সমুদয় কর্তব্যবিষয়ে উপদিষ্ট হইয়াছ, অতএব যখন যাহা উপস্থিত হইবে, অবিকল সম্পাদনা করিও ।”

সত্যবিক্রম যুধিষ্ঠির বিদুর কর্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া, ‘যে আজ্ঞা’ বলিয়া ভীষ্ম ও দ্রোণকে অভিবাদনপূর্ব্বক প্রস্থান করিলেন।