৬১. বিদুরের ধৃতরাষ্ট্রকে তিরস্কার

বিদুরের ধৃতরাষ্ট্রকে তিরস্কার

বিদুর কহিলেন, “দ্যূতক্রীড়া কলহের মূল; দ্যূত হইতে পরস্পরের প্রণয়চ্ছেদ হয়; দ্যূতই মহাদ্‌ভয়ের হেতু। ধৃতরাষ্ট্ৰপুত্ৰ দুৰ্য্যোধন ভয়ঙ্কর শত্রুতা উৎপাদন করিতেছে। দুৰ্য্যোধনের অপরাধে প্রাতিপেয় [প্ৰতীপবংশজ], শান্তনব, ভীমসেনাদি ও বাহ্লীক ইঁহারা সকলেই ক্লেশ প্রাপ্ত হইবেন। যেমন বৃষভ মত্ত হইয়া আপনার বিষাণ-ভঙ্গ দ্বারা আপনাকে রুগ্ন করে, সেইরূপ দুৰ্য্যোধন মত্ততাপ্রযুক্ত রাষ্ট্র হইতে আপনার কল্যাণ সুদূরপরাহত করিতেছে। যেমন বালনাবিক-চালিত নৌকা সমুদ্রে নিমগ্ন হইয়া থাকে, তদ্রুপ যে ব্যক্তি পরের চিত্তানুবর্তী হইয়া চলে, সে অচিরকালমধ্যে ব্যসনাপন্ন হয়। পণপূর্ব্বক ক্রীড়ায় দুৰ্য্যোধনের জয়লাভ হইতেছে বলিয়া আপনি প্রীতি প্ৰকাশ করিতেছেন, কিন্তু অতিপরিহাসেই সর্ব্বপ্রাণীভয়ঙ্কর সংগ্রাম উপস্থিত হয়। আপনি কেবল কথাতেই প্রতিকূলতাচরণ করিতেন, কিন্তু মন্ত্রণামূলক সমাধি আপনার অন্তঃকরণে নিহিত রহিয়াছে। ফলতঃ পরম-বন্ধু যুধিষ্ঠিরের সহিত কলহ করা আপনার অভিপ্রেত, তাহাতে সন্দেহ নাই। হে প্রতিপেয়! হে শান্তনব! আপনারা কৌরবগণের পরিহাসবাক্য শ্রবণ করুন, কিন্তু মোহবশতঃ প্রজ্বলিত হুতাশনে পতিত হইবেন না। যখন অজাতশত্রু যুধিষ্ঠির অক্ষমাদাভিভূত হইয়া ক্ৰোধ পরিহার করিতেছেন না, তখন ভীম, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেব ইহাদিগের মধ্যে কোন ব্যক্তি আপনাদের এই তুমুল ব্যাপারে মধ্যস্থ হইবেন? হে মহারাজ! আপনি বহুধনের অধীশ্বর হইয়াও মনে মনে দুরোদর বাসনা করিয়াছেন। যদ্যপি বহুধনসম্পন্ন পাণ্ডবগণকে জয় করেন, তাহা হইলেই বা তাহাদের ধন লইয়া আপনাদের কি হইবে, বরং এক্ষণে পাণ্ডবগণকে লাভ করুন। সৌবলের অক্ষক্রীড়া অবগত আছি; সৌবল দ্যূতক্রীড়ায় বিলক্ষণ কপটতা জানেন; অতএব উনি এক্ষণে স্বস্থানে গমন করুন; মহাবীর পাণ্ডবদিগের সহিত যুদ্ধঘটনা করিবেন না।”