৬৮. ভীমের বিক্ষোভ-প্ৰকাশ

ভীমের বিক্ষোভ-প্ৰকাশ

বৈশম্পায়ন কহিলেন, সভাস্থ সমস্ত রাজগণ ব্যাধভয়ভীত কুরঙ্গিণীর ন্যায় বাষ্পাকুলালোচনা দ্ৰৌপদীকে নিরীক্ষণ করিয়া ধৃতরাষ্ট্রের ভয়ে ভালমন্দ কিছুই বলিতে পারিলেন না। তাঁহারা মৌনভাবে রহিয়াছেন দেখিয়া দুৰ্য্যোধন দ্রৌপদীকে কহিলেন, “যাজ্ঞসেনি! এক্ষণে তুমি ভীম, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেবকে জিজ্ঞাসা কর, ইহারা তোমার প্রশ্নের উত্তর করিবেন। তাহারা তোমার নিমিত্ত এই আৰ্য্যলোকমধ্যে যুধিষ্ঠিরের প্রভুত্ব অস্বীকার করুন এবং সেই ধর্ম্মরাজকে মিথ্যাবাদী করিয়া তোমাকে দাসীত্বশৃঙ্খল হইতে মুক্ত করুন। এই সমস্ত কৌরবেরা তোমার দুঃখে যৎপরোনাস্তি দুঃখিত হইয়াছে। বিশেষতঃ তোমার স্বামীদিগের দুর্ভাগ্য দর্শন করিয়া ইহারা কখনই যথার্থ কথা বলিতে পারিলেন না। সত্যসন্ধ মহাত্মা যুধিষ্ঠির পরম-ধার্মিক, তিনি যাহা করিবেন, অবিলম্বে তাহা প্রতিপালন করিবেন।” সভ্যেরা কুরুরাজের বাক্য শ্রবণানন্তর তাঁহাকে ভুরি ভুরি প্রশংসা করিতে লাগিলেন, এদিকে হাহাকার-শব্দ হইতে লাগিল। কৌরবেরা ও কুরুপক্ষীয় অন্যান্য রাজগণ কৌতুহলোক্রান্ত হইয়া হৰ্ষোৎফুল্ল-লোচনে যুধিষ্ঠিরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিতে লাগিলেন, “দেখ, ধর্ম্মজ্ঞ কি বলেন এবং ভীম, অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেব ইহাদিগেরই বা মত কি?”

আর্তনাদ নিরস্ত হইলে ভীমসেন ভুজোত্তোলনপূর্ব্বক কহিলেন, “যদি এই উদারস্বভাব কুলপতি ধর্ম্মরাজ প্ৰভু না হইতেন, তাহা হইলে আমরা কখনই ক্ষমা করিতাম না। যিনি আমাদিগের পুণ্য ও তপস্যার প্রভু এবং জীবনেরও ঈশ্বর, যদ্যপি তিনি আত্মাকে পরাজিত মনে করেন, তাহা হইলে আমারাও পরাজিত হইয়াছি সন্দেহ কি? আমার প্রভুত্ব থাকিলে কি অদ্য পাঞ্চালীর কেশাকর্ষণ করিয়া দুরাত্মা জীবিত থাকিতে পারে? কি করি, ধর্ম্মপাশে বদ্ধ রহিয়াছি, এই নিমিত্তই আমার ভূজবল সকলের প্রত্যক্ষ হইল না; নতুবা আমার ভুজন্তরে নিপতিত হইলে ইন্দ্র মুক্ত হইতে পারেন না। যদ্যপি ধর্ম্মরাজ কটাক্ষে অনুমতি করেন, তাহা হইলে মৃগেন্দ্র যেমন ক্ষুদ্র প্রাণীগণের প্রাণ সংহার করে, তদ্রুপ আমি অবলীলাক্রমে মুহূৰ্তমধ্যে পাপাত্মা ধৃতরাষ্ট্রের বংশ ধ্বংস করিতে পারি।” ভীমের ক্রোধানল উত্তরোত্তর প্রজুলিত হইতেছে দেখিয়া ভীষ্ম, দ্রোণ ও বিদুর তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “ভীম! ক্ষান্ত হও, তোমার অসাধ্য কিছুই নাই, তোমাতে সকলই সম্ভবে।’