৭১. খাণ্ডবপ্রস্থে পাণ্ডবপ্রস্থান

খাণ্ডবপ্রস্থে পাণ্ডবপ্রস্থান

যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে রাজন! আমরা কি করিব অনুমতি করুন। আপনি আমাদের ঈশ্বর; আমরা চিরদিন আপনার শাসনের অনুবর্তী হইয়া থাকিতে ইচ্ছা করি।”

ধৃতরাষ্ট্ৰ কহিলেন, “অজাতশত্ৰো! তোমার কল্যাণ হউক, তোমরা গমন কর, আমি অনুজ্ঞা করিতেছি, সমস্ত ধন লইয়া গমনপূর্ব্বক আপনার রাজ্য অনুশাসন কর। হে মহাপ্রাজ্ঞা! তুমি ধর্মের সূক্ষ্মগতি বুঝিয়াছ, বিনীত হইয়াছ এবং বৃদ্ধগণের সেবা করিয়া থাক; আমিও বৃদ্ধ হইয়াছি; অতএব আমার শাসন যেন তোমার হৃদয়ঙ্গম হয়; আমার বাক্য তোমার কল্যাণকর হইবে সন্দেহ নাই। যেখানে বুদ্ধি, সেইখানেই ক্ষমা, অতএব তুমি ক্ষমা অবলম্বন কর। সুদৃঢ় দারুতেই শস্ত্রপাত হইয়া থাকে, অন্যস্থান শস্ত্রপাতের লক্ষ্য নহে। যাহারা বৈরাচরণ জানেন না, দোষ পরিত্যাগ করিয়া কেবল গুণই দর্শন করেন এবং বিরোধে লিপ্ত নহেন, তাহারাই উত্তম পুরুষ। সাধুগণ বৈরাচরণ বিস্মরণপূর্ব্বক কেবল শক্ৰকৃত সৎকাৰ্য্যেরই স্মরণ করিয়া পরোপকারানুরোধে প্ৰতিকার-পরাঙ্মুখ থাকেন। অধম পুরুষেরা বিবাদস্থলে পরুষবাক্য প্রয়োগ করিয়া থাকে। কেহ পরুষবাক্য কহিলে মধ্যম পুরুষেরা কঠোরবাক্যে তাহার উত্তর প্রদান করে। ধৈৰ্য্যশালী উত্তম পুরুষেরা কথিত বা অকথিত সর্ব্বপ্রকার অহিত পরুষবাক্যই পরিত্যাগ করেন। সজ্জনগণ শক্ৰকৃত সৎকাৰ্য্যেরই স্মরণ করেন, বৈরাচরণ তাঁহাদিগের অন্তঃকরণে স্থান প্রাপ্ত হয় না। সদাশয় লোকেরা সকলের প্রিয়দর্শন হয়েন এবং কাহারও অর্থ ও মর্য্যাদা অতিক্রম করেন না। তুমিও আৰ্য্যতাপবশতঃ সেই প্রকার আচরণ করিয়াছ। হে তাত! দুৰ্য্যোধনের নিষ্ঠুর ব্যবহার মনে করিও না, তুমি গুণগ্ৰাহিতাগুণে তোমার জননী গান্ধারী এবং আমার প্রতি দৃষ্টিপাত কর। এই দ্যূতক্ৰীড়া আমার উপেক্ষিত ছিল, কেবল মিত্রগণকে পরীক্ষা এবং পুত্ৰগণের বলাবল বুঝিবার নিমিত্ত ইহাতে অনুমোদন করিয়াছিলাম। হে রাজন! তুমি যাহাদিগের শাসনকর্তা এবং সর্ব্বশাস্ত্ৰবিশারদ ধীমান বিদুর যাহাদিগের মন্ত্রী, সেই কুরুগণ তোমার শোচনীয় নহে। তোমাতে ধর্ম্ম, ধনঞ্জয়ে ধৈৰ্য্য, বৃকোদরে পরাক্রম, নকুলে শুদ্ধতা, এবং সহদেব গুরুশুশ্রূষা বিলক্ষণ লক্ষিত হইতেছে, অতএব হে বৎস! তোমার কল্যাণ হইবে, তুমি খাণ্ডবপ্রস্থে প্রস্থান কর। ভ্রাতৃগণের সহিত সৌভ্রাত্র এবং তোমার মন ধর্মে অনুরক্ত হউক।”

বৈশম্পায়ন কহিলেন, জনমেজয়! ভরতশ্রেষ্ঠ ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির এই প্রকার অভিহিত হইয়া শিষ্টাচার প্রদর্শনপূর্ব্বক ভ্রাতৃগণ ও দ্ৰৌপদীর সহিত মেঘসঙ্কাশ রথে আরোহণ করিয়া হষ্টচিত্তে ইন্দ্রপ্রস্থে প্রস্থান করিলেন।

দ্যূতপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।