১১৩. গালব-গরুড়ের যযাতির নিকট গমন

১১৩তম অধ্যায়

গালব-গরুড়ের যযাতির নিকট গমন

“গরুড় বলিলেন, “হে তপোধন! ভূমির অন্তর্গত পাংশু [ধূলি] সকল বায়ুদ্বারা পরিশোধিত ও বহ্নিদ্বারা সুসংস্কৃত হইয়া সুবর্ণাদি ধাতুরূপ ধারণ করে বলিয়া সমুদয় জগৎ হিরণ্যপ্রধান এবং লোকে সুবর্ণাদি হিরণ্যনামে বিখ্যাত হইয়াছে। ঐ হিরণ্যসমুদয় ব্ৰহ্মাণ্ডপোষণ ও সকলের জীবন ধারণ করে বলিয়া উহার নাম ধন। ঐ ধন পূর্ব্বভাদ্রপদ [*নক্ষত্র], উত্তরভাদ্রপদ [*], অগ্নি ও কুবেরের নিকট এবং ত্ৰিলোকমধ্যে সতত সন্নিবেশিত আছে। হিরণ্যরেতঃ অগ্নি আপনার রেতঃস্বরূপ ধন মনুষ্যগণকে প্রদান করিয়া থাকেন। পূর্ব্বভাদ্রপদ ও উত্তরভাদ্রপদ ঐ ধন রক্ষা করে, ধনপতি কুবের তাহার অধ্যক্ষা; অতএব ধনলাভ করা নিতান্ত সহজ ব্যাপার নহে। ধন ব্যতীত অশ্বপ্রাপ্তির উপায়ান্তর নাই। অতএব যে ভূপতি স্বীয় প্ৰজাগণকে পীড়ন না করিয়া আমাদিগকে অর্থ প্রদান করিতে পারেন, তাহার নিকট গমন করিয়া প্রার্থনা করা কর্ত্তব্য। হে দ্বিজোত্তম! সোমবংশীয় নহুষতনয় যযাতিরাজা আমার পরমমিত্ৰ। ঐ ভূপতি ধনপতির [কুবের] ন্যায় বিভবশালী; আমি স্বয়ং তাঁহার নিকট অর্থ প্রার্থনা করিলে তিনি অবশ্যই আমাদের আশা পূর্ণ করিবেন। তাহা হইলে তুমি অনায়াসে গুরুর ঋণ পরিশোধ করিতে পরিবে।”

“এইরূপ স্থির হইলে পর উভয়ে স্বার্থসম্পাদননিমগ্ন হইয়া যযাতির নিকট গমন করিলেন; মহাত্মা নহুষতনয় অর্ঘ্য প্রভৃতি প্রদানপূর্ব্বক তাঁহাদের যথেষ্ট সৎকার করিয়া আগমনকারণ জিজ্ঞাসা করিলেন। তখন গরুড় কহিলেন, “হে রাজন! এই তপোনিধি গালব আমার প্রিয়সখা; ইনি বহু সহস্র বর্ষ বিশ্বামিত্রের শিষ্য হইয়াছিলেন। পরিশেষে তিনি ইঁহাকে স্বাভিলষিত প্রদেশে গমনে অনুমতি করিলে ইনি তাঁহাকে গুরুদক্ষিণা প্ৰদান করিতে ইচ্ছা করিলেন। তপোধন বিশ্বামিত্ৰ বারংবার তাঁহাতে অস্বীকার করিলেও ইনি নির্ব্বন্ধতিশয় [অতীব আগ্রহ] প্রকাশ করিলেন। তখন তিনি ক্রুদ্ধ হইয়া ইহার ঐশ্বৰ্য্য নাই জানিয়াও কহিলেন, “গালব! তুমি আমাকে শুভ্ৰ শ্যামৈককর্ণ অষ্টশত অশ্ব গুরুদক্ষিণা প্ৰদান কর।” ইনি তাঁহার আদেশানুরূপ কাৰ্য্য করিতে অসমর্থ হইয়া নিতান্ত সন্তপ্তচিত্তে আপনার শরণাপন্ন হইয়াছেন; আপনার নিকট ভিক্ষা গ্ৰহণ করিয়া গুরুদক্ষিণা প্ৰদান করিবেন। হে রাজার্ষে। আপনি এই দ্বিজোত্তমকে ইঁহার অভিলষিত ভিক্ষা প্ৰদান করিলে ইনি স্বীয় তপস্যার বিভাগ [অংশ] প্ৰদানদ্বারা আপনার বহু যত্নোপার্জিত তপস্যা বর্দ্ধিত করিবেন। অশ্বের শরীরে যাবৎসংখ্যক লোম থাকে, অশ্বপ্রদাতার তাবৎসংখ্যক পুণ্যলোকপ্ৰাপ্তি হয়। এই দ্বিজসত্তম গ্রহণের ও আপনি দানের উপযুক্ত পাত্র; অতএব ইঁহাকে অভিলষিত দ্রব্য প্রদান করিয়া আপনার অনুরূপ কাৰ্য্য করুন।” ”