০৬৮. ব্ৰহ্মাকৃত বাসুদেবস্তব

৬৮তম অধ্যায়

ব্ৰহ্মাকৃত বাসুদেবস্তব

“ভীষ্ম কহিলেন, “হে রাজন! এক্ষণে ভগবান কমলযোনি যেরূপে বাসুদেবের স্তব করিয়াছিলেন এবং যাহা ভূমণ্ডলে ব্ৰহ্ম ও দেবগণকর্ত্তৃক পূর্ব্বে কীর্ত্তিত হইয়াছে, তাহা শ্রবণ কর। ভগবান নারদ বাসুদেবকে সাধ্য ও দেবগণের প্রভু, দেবদেবেশ্বর, লোকভাবন [অন্তৰ্য্যামী] ও ভাবজ্ঞ বলিয়া কীর্ত্তন করেন। মহর্ষি মার্কণ্ডেয় তাঁহাকে ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্ত্তমান, যজ্ঞের যজ্ঞ [পূজ্য—যজ্ঞেশ্বর] ও নারায়ণের চক্ৰ বলিয়া নির্দেশ কলিয়াছেন। মহামুনি বাদরায়ণি কহিয়াছেন, হে ভগবান! তুমি ভূতগণের দেবদেব। পূর্ব্বপণ্ডিতেরা প্ৰজাসৃষ্টি বিষয়ে তোমাকে প্রজাপতি দক্ষ বলিয়া কীর্ত্তন করিয়াছেন। মহর্ষি অঙ্গিরা তাঁহাকে সর্ব্বভুতস্রষ্টা বলিয়া নির্দেশ করেন। মহর্ষি দেবল কহিয়াছেন, হে দেব! অব্যক্ত বিষয় [ত্ৰিগুণান্বিত ব্ৰহ্মা বিষ্ণু শিব] তোমার শরীর হইতে সমুৎপন্ন হইয়াছে; ব্যক্ত বিষয় [গুণাতীত নারায়ণ] তোমার মনে অবস্থান করিতেছে। দেবগণ তোমার বাক্য হইতে উৎপন্ন হইয়াছেন। হে নাথ! তোমার মস্তকদ্বারা নভোমণ্ডল ব্যাপ্ত হইয়াছে; বাহুযুগল ধরাতল ধারণ করিতেছে এবং জঠরমধ্যে ভুবনত্ৰয় অবস্থিত আছে। তুমি সনাতন পুরুষ; মানুষ্যেরা তপঃপ্রভাবে তোমাকে দেবতা বলিয়া বিদিত হইয়া থাকে। তুমি আত্মদৰ্শনতৃপ্ত মহর্ষি ও উদার প্রকৃতিসম্পন্ন সমরে অপরাঙ্মুখ রাজর্ষিগণের একমাত্র গতি। এই বলিয়া সনৎকুমারপ্রভৃতি যোগীরা প্রতিনিয়ত তোমার অর্চনা ও স্তব করিয়া থাকেন।

“ ‘হে বৎস! আমি সংক্ষেপে ও সবিস্তর ভগবান বাসুদেবের বিষয় স্বরূপতঃ কীর্ত্তন করিলাম; তুমি এক্ষণে তাঁহার প্রতি প্রীত [অনুরাগযুক্ত হও] হও।

সঞ্জয় কহিলেন, “হে রাজন! রাজা দুৰ্য্যোধন ভীষ্মের নিকট এই পবিত্র উপাখ্যান শ্রবণ করিয়া মনে মনে কেশব ও পাণ্ডবদিগকে বহুমান [বহু সম্মান—মনে মনে পূজা] করিলেন। শান্তনুনন্দন ভীষ্ম পুনরায় তাঁহাকে কহিলেন, “বৎস! তুমি আমাকে যাহা জিজ্ঞাসা করিলে, আমি অর্জ্জুন ও কেশবের সেই মাহাত্ম্য এবং যে নিমিত্ত তাঁহারা মনুষ্যমধ্যে অবতীর্ণ হইয়াছেন ও যে কারণে কেহ তাঁহাদিগকে পরাজয় করিতে সমর্থ হয় না, তৎসমুদয় কীর্ত্তন করিলাম; আর মহাত্মা পাণ্ডবগণ যে নিমিত্ত অবধ্য হইয়াছেন, তাহাও শ্রবণ করিলে। হে মহারাজ! বাসুদেব পাণ্ডবগণের প্রতি একান্ত প্রীতি প্রদর্শন করিয়া থাকেন; অতএব আমি তোমাকে বারংবার কহিতেছি, তুমি এক্ষণে তাঁহাদের সহিত শান্তিসংস্থাপন করিয়া মহাবলপরাক্রান্ত ভ্রাতৃগণসমভিব্যাহারে রাজ্যভোগ কর। তুমি নর ও নারায়ণকে অবজ্ঞা করিলে নিশ্চয়ই বিনষ্ট হইবে।”

“এই বলিয়া ভীষ্ম তুষ্ণীভাব অবলম্বন করিয়া রাজা দুৰ্য্যোধনকে বিদায় করিলেন। দুৰ্য্যোধনও তাঁহাকে প্ৰণিপাতপূর্ব্বক শিবিরে প্রবেশ ও দুগ্ধফেননিভ ধবল শয্যায় শয়ন করিয়া রাত্রিকাল অতিবাহিত করিতে লাগিলেন।”