০৫৬. তৃতীয়-দিবসীয় যুদ্ধ-ব্যূহ প্রতিব্যূহরচনা

৫৬তম অধ্যায়

তৃতীয়-দিবসীয় যুদ্ধ-ব্যূহ প্রতিব্যূহরচনা

সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! সেই রজনী প্ৰভাত হইবামাত্র আপনার পুত্ৰগণের জয়াকাঙ্ক্ষী কুরুকুলপিতামহ ভীষ্ম সেনাগণকে সমরগমনে আদেশ করিয়া গারুড়ব্যূহ [এই ব্যূহে সারি দিয়া সাজান সৈন্যের অগ্র ও পশ্চাৎ ভাগ সূক্ষ্ম এবং মধ্যভাগ অতিশয় স্থূল হইবে] রচনা করিলেন। শান্তনুনন্দন ভীষ্ম স্বয়ং ঐ গারুড়ব্যূহের মুখে; মহাবীর দ্রোণ ও কৃতবর্ম্মা উহার চক্ষুর্দ্বয়ে; অশ্বত্থামা ও কৃপাচাৰ্য্য ত্ৰিগৰ্ত, মৎস্য, কৈকেয় ও বারধানগণসমভিব্যাহারে উহার মস্তকে; মহাবল ভূরিশ্রবা, শল, শল্য, ভগদত্ত, জয়দ্ৰথ এবং মদ্রক, সিন্ধু, সৌবীর ও পঞ্চনদগণ উহার গ্ৰীবাতে; মহারাজ দুৰ্য্যোধন সোদর ও অনুচরগণসমভিব্যাহারে উহার পৃষ্ঠে; অবন্তিদেশীয় বিন্দ ও অনুবিন্দ এবং কাম্বোজ, শক ও শূরসেনাগণ উহার পুচ্ছে; মাগধ ও কলিঙ্গগণ দানোরকগণসমভিব্যাহারে উহার দক্ষিণপক্ষে এবং করূষ, বিকুঞ্জ, মুণ্ড ও কৌক্তিবৃষগণ বৃহদ্বলসমভিব্যাহারে উহার বামপার্শ্বে অবস্থান করিতে লাগিলেন।

“এদিকে অরাতিনিপাতন সব্যসাচী ধনঞ্জয় কৌরবসৈন্যগণকে ব্যূহিত দেখিয়া ধৃষ্টদ্যুম্নসমভিব্যাহারে স্বকীয় সৈন্যগণকে অৰ্দ্ধচন্দ্ৰব্যূহে প্রতিব্যূহিত করিতে আরম্ভ করিলেন। ব্যূহের দক্ষিণ শৃঙ্গে মহাবীর বৃকোদর নানাশস্ত্রসম্পন্ন নানাদেশীয়গণে পরিবৃত হইয়া রহিলেন। ভীমের পশ্চাৎ বিরাট ও দ্রুপদ, তৎপশ্চাৎ নীলায়ুধসমবেত নীল এবং তৎপশ্চাৎ চেদি, কাশী, করুষ ও পৌরবগণসমভিব্যাহারে মহারথ ধৃষ্টকেতু অবস্থান করিতে লাগিলেন। মহাবীর ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী, পাঞ্চালগণ ও প্রভদ্রকগণ প্রভূত সৈন্য লইয়া ঐ ব্যূহের মধ্যভাগে অবস্থান করিলেন। মহারাজ ধর্ম্মরাজও করিসৈন্য লইয়া সেই স্থানে রহিলেন; তাঁহার পশ্চাৎ সাত্যকি ও দ্রৌপদীর পাঁচপুত্র, তৎপরে ইরাবান, তৎপরে ভীমসেনের পুত্র ও মহারথ কৈকেয়গণ এবং তৎপরে সেই ব্যূহের বামপার্শ্বে সর্ব্বজগতের রক্ষক জনাৰ্দনকর্ত্তৃক রক্ষিত মানবশ্রেষ্ঠ মহাবীর অর্জ্জুন অবস্থান করিতে লাগিলেন।

“হে মহারাজ! মহাত্মা পাণ্ডবগণ মহাশয়ের পুত্র ও তৎপক্ষ বীরগণকে সংহার করিবার নিমিত্ত এইরূপে প্রতিব্যূহ, রচনা করিলেন। পরে কৌরব ও পাণ্ডবগণের পক্ষীয় সৈন্যগণ ঘোরতর সংগ্রাম আরম্ভ করিয়া পরস্পর সংহার করিতে লাগিল। উভয়পক্ষীয় হস্তী ও রথিসমুদয় পরস্পরের প্রহারে নিহত হইয়া নিপতিত হইতে লাগিল। হে রাজন! রথসমূদয়ের ঘর্ঘরধ্বনি ও পরস্পর সংহারকারী বীরগণের সিংহনাদ দুন্দুভিশব্দে বিমিশ্রিত হওয়াতে রণস্থলে তুমুল শব্দ সমুত্থিত হইয়া আকাশমার্গ পৰ্য্যন্ত অবরুদ্ধ করিল।”