১১৯. যযাতিতনয়া মাধবীর স্বয়ম্বর

১১৯তম অধ্যায়

যযাতিতনয়া মাধবীর স্বয়ম্বর

“মহারাজ যযাতী স্বীয় কন্যার স্বয়ম্বর সম্পাদন করিবার মানসে। তাঁহাকে দিব্যমাল্যবিভূষিত ও রথে আরোপিত করিয়া গঙ্গাযমুনার সঙ্গমসমীপস্থ আশ্রমে আনীত করিলেন। পুরু ও যদু স্বীয় ভগিনীর অনুসরণক্ৰমে সেই আশ্রমে গমন করিলেন। বিবিধ দেশ, শৈল ও বন হইতে অসংখ্য মনুষ্য, নাগ, যক্ষ, গন্ধৰ্ব, মৃগ ও পক্ষীগণ ঐ আশ্রমে সমাগত হইলেন। বহুসংখ্যকভূপতি ও ব্ৰহ্মাকল্প মহর্ষিগণে সেই আশ্রমকানন পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। কিন্তু বরবর্ণিনী [নারীশ্রেষ্ঠা] মাধবী তথায় বহুসংখ্যক উপযুক্ত পাত্র সমুপস্থিত থাকিলেও তাঁহাদিগকে পরিহারপূর্ব্বক অরণ্যকে [বনকে] বরণ করিলেন। অনন্তর তিনি রথ হইতে অবতরণপূর্ব্বক বন্ধুগণকে নমস্কার করিয়া বনমধ্যে তপানুষ্ঠান করিতে লাগিলেন। ক্ৰমে ক্রমে বহুবিধ উপবাস, দীক্ষা ও নিয়ম দ্বারা আপনার মনকে রাগদ্বেষাদিবিবর্জিত করিলেন। বৈদূৰ্য্যাঙ্কুরসন্নিভ [বৈদূৰ্য্যমণির কণার মত কান্তিবিশিষ্ট], মৃদু, হরিত, তিক্ত ও মধুর শস্যভক্ষণ এবং প্রস্রবণশ্রুত [ঝরণা হইতে পতিত] পরমপবিত্র অতি নির্ম্মল সুশীতল জল পান করিয়া মৃগবহুল, ব্যাঘ্ৰপ্ৰভৃতি হিংস্ৰ জন্তু বিবর্জিত, দাবানলবিহীন, জনশূন্য কাননে হরিণসমভিব্যাহারে মৃগীর ন্যায় ভ্ৰমণ করিয়া ব্ৰহ্মচৰ্য্যদ্বারা [বেদবিহিত অনুষ্ঠান] বিপুল ধর্ম্ম উপার্জ্জন করিতে লাগিলেন।

যযাতির পরলোকগমন

“মহারাজ যযাতিও পূর্ব্বতন ভূপতিগণের বৃত্তি অবলম্বন করিয়া বহুসহস্র বর্ষ পরে পরলোকযাত্ৰা করিলেন। পুরু ও যদু হইতে মহারাজ যযাতির দুই বংশ বৰ্দ্ধিত হইয়া লোকসকলকে প্রতিষ্ঠিত করিল এবং মহর্ষিকল্পনরপতি যযাতি পরলোকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত হইয়া স্বর্গের প্রধান ফল ভোগ করিতে লাগিলেন। এইরূপে বহুসহস্র বর্ষ অতীত হইলে পর, তিনি একদা একত্ৰ সমাসীন বহুসংখ্যক রাজর্ষি ও মহর্ষিগণের সমক্ষে মূঢ়ের ন্যায় দেব, ঋষি ও নরগণের অবমাননা করিলেন। সুররাজ শত্রু তাঁহার মনের ভাব বুঝিতে পারিলেন এবং সমুদয় রাজর্ষিগণ তাঁহাকে ধিক্কার প্রদান করিতে লাগিলেন। তখন তত্ৰস্থ সকলেই যযাতিকে অবলোকন করিয়া বিচার করিতে লাগিলেন যে, এ ব্যক্তি কে? কাহার পুত্ৰ? কিরূপেই বা এ স্থানে আগমন করিল? এ কোন কর্ম্ম করিয়া সিদ্ধ হইয়াছে? কোন স্থানে বা তপানুষ্ঠান করিয়াছে? স্বৰ্গমধ্যে ইহাকে কিরূপে পরিজ্ঞাত হওয়া যাইবে? আর কোন ব্যক্তিই বা ইহাকে জানে? স্বৰ্গবাসিগণ পরস্পর এইরূপ যযাতির বিষয় পৰ্য্যালোচনা করিতে লাগিলেন এবং বিমানপাল [বিমানরক্ষক], স্বৰ্গদ্বাররক্ষক ও আসনপাল [ব্ৰহ্মাসন, ইন্দ্রাসনপ্রভৃতির প্রহরী]গণকে যযাতির বিষয় জিজ্ঞাসা করিলেন, কিন্তু তাঁহারা কহিলেন, “আমরা কিছুই জানি না।” এইরূপে স্বৰ্গবাসিগণ যযাতির বিষয় কিছুই পরিজ্ঞাত হইতে পারিলেন না। কিন্তু এদিকে মহারাজ যযাতি মুহূর্ত্তমধ্যেই নিস্তেজ হইয়া উঠিলেন।”