২৭. আধুনিক প্রেমপত্রের নমুনা

‘তোমার চোখের নরম আলো আমাকে ভোরের হাওয়ার মতো ছুঁয়ে যায়। তোমার কণ্ঠস্বরে ঝর্ণার জলের শব্দ শুনতে পাই-ইত্যাদি, ইত্যাদি।’

‘যতবার তোমার চোখের দিকে তাকাই, আমার মনে পড়ে ভোরের পরিষ্কার নীল আকাশ, রাত্রির রহস্য তাতে এখনও লেপে আছে–ইত্যাদি, ইত্যাদি।’

‘ভভানি, আমার সোনামনি, তোমাকে যতক্ষণ না দেখি, আমার বুকের মধ্যে অন্ধকার হয়ে থাকে। কারাগারের শৃঙ্খলের শব্দ শুনতে পাই। তারপর যখনই তোমাকে জানালা দিয়ে দেখি, তুমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছো, তক্ষুনি আমার–ইত্যাদি ইত্যাদি।

‘তোমার নীল চোখ দুটি ভূমধ্যসাগরের জলের মতন, তোমার ভুরু দুটি যেন দুই উড়ন্ত পাখি, তোমার থুতনি দেখলে উপত্যকার কথা মনে পড়ে, তোমার বুক…ইত্যাদি, ইত্যাদি।‘

এই হল কতকগুলি আধুনিক প্রেমপত্রের নমুনা। প্রতিযোগিতাটি একবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনে। প্রেমপত্রের প্রতিযোগিতায় প্রায় পাঁচশো প্রতিযোগী যোগদান করেছিল, তাঁদের মধ্যে ন’জন উঠে ছিল ফাইনালে। যেসমস্ত রচনাকারী পাঠক প্রেম-ট্রেমের মতন হালকা জিনিস পছন্দ করেন না, তাঁরা রচনাটি এখানেই পড়া বন্ধ করবেন না।

প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ছিলেন শ্রীযুক্ত সুইস ইয়ং। প্রেমপত্রের ধারাকে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে তাঁর একটা অপ্রত্যক্ষ স্বার্থ আছে, শ্রীযুক্ত ইয়ং একজন বিবাহের পোশাক বিক্রেতা। শ্রেষ্ঠ প্রেমপত্রের লেখককে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল ৫০ গিনি। এবং প্রেমিক শ্ৰেষ্ঠর স্যার প্যালাহাড’ এই খেতাব। ছেলেদের প্রেমপত্রই প্রতিযোগিতার বিষয়–কিন্তু কয়েকজন মেয়েও যোগ দিয়েছিল। এই হিসেবে যে, তাদের চিঠিগুলো তাদের প্রেমিকের লেখা।

প্রাথমিক পরীক্ষা হয়েছিল হাইড পারকে, ফাইনাল হয় সোহো পল্লির এক রেস্তোরাঁয়। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে গদগদ ভাষায় প্রেমের কথা বলতে কারুরই সাহসের অভাব হয়নি। একজন জ্যান্ত প্রেমিকাও সেখানে উপস্থিত ছিল অবশ্য। উদ্যোক্তারা লেসলি হিল নামে একজন মডেলকে প্রেমিকদের মনে প্রেরণা জাগাবার জন্য সাজিয়ে রেখেছিলেন। মডেলটি জানালার পাশে বসে উদাস চোখে প্রেমিকা সেজে খুব ভাব দিছিল।

আধুনিক ছেলেদের ওইসব প্রেমপত্রও পুরোনো ন্যাকামিতে ভরতি। সেই উচ্ছাসময় জোলো ভাবা, চাঁদ-তারা-ফুলও যথেষ্ট।

মেয়েরা তাদের প্রেমিকের লেখা হিসেবে যে ক’টি প্রেমপত্র পাঠ করেছে তার দু একটিতে কিছু নতুনত্ব আছে। একজন প্রেমিক লিখছে, সে তার প্রেমিকাকে ভালোবাসে, কারণ মেয়েটি ‘উত্তম্যানস ওউন’’ জাতীয় পত্রিকা পড়ে সময় নষ্ট না করে প্রামাই গ্রীন আই-রীস মারভক–প্রভৃতি ভালো ভালো লেখকের বইও পড়ে। আরেক জন ‘তোমাকে আমি প্রত্যেক থিয়েটারে প্রথম দিন আর শেষ দিনের টিকিট কেটে রাখবো।’

শুনতে-শুনতে বিচারক কয়েকজনের হাই উঠছিল। একজন বলেছিলেন এতেই বোঝা যাচ্ছে প্রেম জিনিসটা কী বিরক্তিকর। অন্য এক জন, ‘‘আধুনিক ছেলেদের কাছ থেকে আমি অন্য রকম দুঃসাহসিক কিছু আশা করেছিলাম।’

যাই হোক প্রতিযোগিতায় প্রথম হল গ্রেগরি পেইন নামে ২০ বছরের একটি ছেলে। তার চিঠির এক লাইন ‘তোমার জন্য আমার হৃদয় এমন মধুর বাসনায় পূর্ণ হয়ে আছে তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না।’ বিচারকদের মতে তার চিঠিতে এমনই এলোমেলো ভাব এবং অসংযত উচ্ছ্বাস রয়েছে-যা খাঁটি প্রেমের চিহ্ন।

গ্রেগরি পেইন তো পুরস্কারের চেকটা নিয়ে হাসিমুখে পকেটে পুরল। তার চিঠিতে প্রেমিকার নাম ছিল জেনি। অনেকে জেনিকে নিয়ে একটু রঙ্গরস করতে চাইল। জেনি কে, সে এখানেই আছে নাকি? কবে তাকে বিয়ে করছ?

আকাশ থেকে পড়লো পেইন। জেনি? ও নামে সে কারুকে চেনে না। কোনও মেয়ের প্রেমে সে পড়েনি। সম্প্রতি একটা নভেল পড়ছিল সে–সেই নভেলের নায়িকার নাম জেনি। মোটামুটি সেই নায়িকার কথা ভেবেই লিখেছে। চিঠিটা লিখতে-লিখতে তার কোনও বান্ধবীর মুখ তার একবারও মনে পড়েনি? উঁহু তার বান্ধবীরা ওই ধরনের কথা শুনলে হাসবে। আর বিয়ে? যেন এরকম অসম্ভব কথা সে আর শোনেনি। বিরক্তির মুখ কুঁচকে সে বলেছে, বিয়ে? ধুৎ।

বস্তুত বিয়ের পোশাক বিক্রেতার পক্ষে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় কোনও লাভ হয়নি। ৫০০ খানি প্রেমপত্রের মধ্যে কোনও প্রেমিকই প্রেমিকার কাছে বিয়ের প্রস্তাব জানায়নি।