উপসংহার
সোভিয়েত ইউনিয়ান একটি বিরাট দেশ। কত বিরাট তার খানিকটা ভৌগোলিক আভাস দিচ্ছি। এই যুক্তরাষ্ট্রটি অস্ট্রেলিয়ার তিন গুণ, দক্ষিণ আমেরিকার চেয়ে বেশ বড়, আফ্রিকার চেয়ে কিছুটা ছোট। অর্থাৎ দেশ নয়, প্রায় মহাদেশ বলা যায়। একটি ট্রেন যদি সারাদিন দু-হাজার কিলোমিটার যায় তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়ানের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছতে ওই ট্রেনটির এক মাস সময় লাগবে। এই দেশের পশ্চিম অঞ্চলে যখন সন্ধ্যা, পূর্ব প্রান্তে তখন ভোরের আলো ফুটে ওঠে। এ দেশে নদী আছে দশ হাজার, হ্রদের সংখ্যা পাঁচশো, এর মধ্যে কাস্পিয়ান হ্রদ এমনি প্রকাণ্ড যে সেটি সমুদ্র নামেই পরিচিত। ইউরোপের সবচেয়ে বড় নদী ভোলগা এসে পড়েছে এই কাস্পিয়ান হ্রদে। জনসংখ্যা সাড়ে ছাব্বিশ কোটি। ঊনআশিটি ভাষায় এখানে সাহিত্য রচিত হয়।
এই বিশাল দেশের অতি সামান্যই আমি দেখেছি। মোট চোদ্দো দিনের সফর, চারটি শহরে। তবু যতটুকু আমি দেখেছি, তাতেই মুগ্ধ হয়েছি। ভ্রমণকারী হিসেবে এদেশে এসে যথেষ্ট আনন্দ পাওয়া যায়। যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য তেমনই আছে প্রচুর ঐতিহ্যময় শিল্পসম্ভার। যে-কটি শহর আমি দেখেছি, তার মধ্যে একমাত্র মস্কোই খুব জনবহুল (লোকসংখ্যা বিরাশি লক্ষের বেশি) এবং সেইজন্যই বোধহয় মস্কোর অধিকাংশ অঞ্চল সেরকম কিছু সুদৃশ্য নয়। কিন্তু অন্যান্য শহরগুলি খুবই সুসজ্জিত, পথঘাট অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং নগর পরিকল্পনায় শিল্পরুচি আছে।
মস্কো থেকে প্যারিস যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে একজন ভারতীয় যুবকের আলাপ হয়। যুবকটি চার বছর পশ্চিম জার্মানি ও চোদ্দো বছর ধরে মার্কিন দেশে আছে, ভাবভঙ্গি সবই সাহেবি ধরনের। আমি সদ্য সোভিয়েত ইউনিয়ান দেখে আসছি শুনে সে জিগ্যেস করল, আপনার কেমন লাগল? দেখার মতন কিছু আছে? আমি তো কয়েকবার যাব-যাব ভেবেও শেষ পর্যন্ত যাইনি!
আমি বললুম, দেখার মতন কিছু আছে কি না সেটা নির্ভর করে আপনি ঠিক কী কী দেখতে চান তার ওপরে। আমার তো বেশ ভালোই লাগল। অনেক ভুল ধারণা ভেঙে গেছে, অনেক কিছু নতুনভাবে জানলুম।
যুবকটি ফস করে বলে বসল, ওদের দেশে তো ব্যক্তি-স্বাধীনতা বলে কিছু নেই।
আমি বললুম, আমি ভারতীয়। ব্যক্তি-স্বাধীনতা কাকে বলে তা আমি জানি না। কারণ, ক্ষুধার্ত মানুষের কোনও ব্যক্তি-স্বাধীনতা থাকে না। শুধু দু-বেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকার চিন্তা থেকেই যারা মুক্ত হতে পারেনি, তারা কোনওরকমেই স্বাধীন নয়। সোভিয়েত দেশে আমি কোনও ক্ষুধার্ত মানুষ দেখিনি। রাস্তায়-ঘাটে আমি কোনও রুগণ চেহারার, ছেঁড়া খোঁড়া জামা-কাপড় পরা, ভিখিরি ধরনের মানুষ দেখিনি। লন্ডন-নিউইয়র্কে কিন্তু সেরকম লোক দেখা যায়!
যুবকটি বক্রভাবে জানাল, আপনি কি সব দেখেছেন? আপনাকে যেটুকু দেখানো হয়েছে সেটাই দেখেছেন। ওদেশের লোক কি ইচ্ছেমতন তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে?
আমি বললুম না, আমি সব দেখিনি। ঘুরেছি মাত্র কয়েকটি শহর। কিন্তু সেই শহরগুলিতে যখন যেখানে ইচ্ছে গেছি, কয়েক জায়গাতে একা একাও ঘুরে বেড়িয়েছি। কিন্তু কোথাও একটিও সেরকম অভাবগ্রস্ত মানুষের চেহারা আমার চোখে পড়েনি। ওদেশের সবাই ইচ্ছেমতন মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে কি না জানি না, কারণ আমি তাদের মনের মধ্যে ডুব দিয়ে দেখিনি। অধিকাংশ লোকই ইংরিজি জানে না, সেই জন্য রাস্তার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। তবে কোথাও কোনও বিক্ষোভের চিহ্ন আমার নজরে পড়েনি। বেশ ভালোভাবেই জীবনপ্রবাহ চলছে, এই তো মনে হল!
যুবকটি বলল, আরে মশাই, আমি নিজে না গেলেও আমার অনেক কলিগ সোভিয়েত রাশিয়ায় গেছে, তাদের মুখে শুনেছি, বইপত্রেও পড়েছি, ওদের দেশে কিছুই পাওয়া যায়। ইচ্ছেমতন খাবারদাবার পাওয়া যায় না, সন্ধে কাটাবার কোনও ব্যবস্থা নেই…ওদেশে আপনার কি কিছুই খারাপ লাগেনি?
আমি মুচকি হেসে বললুম, হ্যাঁ, একটা জিনিস খুব খারাপ লেগেছে। তা হল ওদের চা। একেবারে বিস্বাদ।
আমি মুখের সামনে একটি পত্রিকা তুলে আলোচনা বন্ধ করে দিলুম। এর সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই। নানারকম প্রচার ও ভুল ধারণা মিশে রয়েছে এর মাথায়। আমার নিজেরও কিছু ভুল ধারণা ছিল।
পশ্চিমি দেশের যে-কোনও বড় শহরের সব রাস্তাই নানারকম দোকানপাটে একেবারে মোড়া থাকে। থরেথরে সাজানো থাকে হাজার রকমের ভোগ্যপণ্য। সোভিয়েত দেশের শহরগুলিতে সেরকম দোকানের সংখ্যা কম। প্রয়োজনীয় দ্রব্য অবশ্য সবই পাওয়া যায়। কিয়েভ শহরের বাজারেও আমি ঢুকেছিলুম। প্যারিসের একটি বাজারে ঢুকে একবার আমার চোখ প্রায় কপালে ওঠার উপক্রম হয়েছিল, অন্তত তিরিশ রকমের মাংস, পঁচিশ রকমের মাছ, আর আনাজপত্তর যে কত তার ইয়ত্তা নেই। ফরাসিরা ভোজনবিলাসী, তবে সে দেশেও গরিব আছে, সেই গরিবরা নিশ্চয়ই তিরিশ রকমের মাংস আর পঁচিশ রকমের মাছ কখনও খেয়ে দেখেনি। কিয়েভের বাজারে খাবারদাবারের বৈচিত্র্য বিশেষ ছিল না। তবে ভাত, রুটি, আলু, মাছ, মাংস নিশ্চয়ই ওখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, সেজন্য সকলেরই স্বাস্থ্য ভালো। ভারতীয় হিসেবে এটাই আমার যথেষ্ট বলে মনে হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে একটা মজার ঘটনা মনে পড়ল। কিয়েভের রাস্তায় এক ভদ্রলোকে বাজার করে ফিরছিলেন, একজন বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা হঠাৎ সেই লোকটিকে থামিয়ে কী যেন জিগ্যেস করলেন। ভদ্রলোকটি কী যেন বলে হাত তুলে একটা দিক দেখালেন, ভদ্রমহিলা দ্রুত হেঁটে গেলেন সেদিকে! আমি সারগেই-কে জিগ্যেস করলুম, ভদ্রমহিলা কী জিগ্যেস করছিলেন? সারগেই বলল, ওই ভদ্রলোক শশা কিনেছেন, নতুন শশা উঠেছে তো! তাই বৃদ্ধা মহিলা জিগ্যেস করলেন, কোন বাজারে শশা পাওয়া যাচ্ছে!
আমাদের দেশে শশা অবশ্য এমন কিছু লোভনীয় জিনিস নয় যে লোককে ডেকে জিগ্যেস করতে হবে, কোথায় শশা পাওয়া যাচ্ছে। সোভিয়েত দেশে শশা নিশ্চয়ই প্রিয় খাদ্য।
সোভিয়েত দেশ সমাজতন্ত্রের পিতৃভূমি। অনেক প্রতিকূল শক্তির সঙ্গে লড়াই করে এবং নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেই দেশটি এখন একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। আমার ধারণা, সমাজতন্ত্রই ইতিহাসের নিয়তি, পৃথিবীর যদি আয়ু থাকে, তাহলে পৃথিবীটা সেইদিকেই এগোবে। সেই সমাজতন্ত্র একটি অতবড় দেশে কীভাবে কার্যকর হয়েছে তা দেখার কৌতূহল ছিল অনেকদিন ধরেই। যেটুকু আমি দেখেছি, তাতে আমি সমালোচনার কিছু পাইনি। এ দেশে সকলেই কাজ পায়, সকলেই বাসস্থান পায়, বৃদ্ধ বয়সে অনাহারের দুশ্চিন্তা নেই, শিক্ষার সুযোগ আছে সকলের, চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয় না, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে না। আমাদের চোখে অত বড় একটা দেশের সরকারের পক্ষে এগুলিই তে দারুণ কৃতিত্বের ব্যাপার। রাস্তা-ঘাটে মানুষজনকে দেখে অসন্তুষ্ট, গোমড়ামুখোও মনে হয়নি। তবে সরকারের নানান কীর্তি সম্পর্কে দেশের কিছু কিছু মানুষের আপত্তি বা প্রতিবাদ তো থাকতেই পারে। তারা কীভাবে কিংবা কতদূর পর্যন্ত সেই প্রতিবাদ জানাতে পারে তা আমি জানি না।
বাইরে থেকে গিয়ে, ওদেশের সিকিউরিটি ব্যবস্থার কড়াকড়ি প্রথম প্রথম আমাদের চোখে লাগে। ওদের পুলিশের নাম মিলিশিয়া, তারা সবাই অতি গম্ভীর। প্রত্যেক হোটেলে গিয়েই পাশপোর্ট ও ভিসা ফর্ম জমা দিতে হয়, অন্যান্য দেশে এ ব্যবস্থা দেখিনি। অবশ্য, সোভিয়েত ব্যবস্থাকে বানচাল করে দেওয়ার জন্য নানান রকম চেষ্টা হয়েছে, একাধিকবার এই রাষ্ট্র আক্রান্ত হয়েছে, সেইজন্য বাইরের শত্রুর হাত থেকে সাবধান হওয়ার জন্য এঁদের তো ব্যবস্থা নিতেই হবে। শুনেছি, আগে কড়াকড়ি অনেক বেশি ছিল, এখন তা ক্রমশ শিথিল হচ্ছে, এখন পৃথিবীর সব দেশ থেকে প্রচুর ভ্রমণকারী আসছে।
আমাদের দেশ সম্পর্কে সোভিয়েত দেশের বুদ্ধিজীবীদের, এমনকী সাধারণ মানুষদেরও যথেষ্ট কৌতূহল ও আকর্ষণ আছে বোঝা যায়। অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলিতে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা ও রহস্যবাদ সম্পর্কে মাঝে মাঝে আগ্রহ জাগে বটে, কিন্তু আধুনিক ভারতীয় শিল্প-সাহিত্য বা সংস্কৃতি সম্পর্কে তেমন কোনও উৎসাহ দেখা যায় না। সোভিয়েত দেশে রবীন্দ্রনাথ যতখানি জনপ্রিয়, তেমন আর বোধহয় পৃথিবীর অন্য কোনও দেশেই নয়। আধুনিক সাহিত্যেরও অনুবাদ হচ্ছে। রাস্তার সাধারণ মানুষদের দেখে আমার মনে হয়েছে, যদিও ভাষার ব্যবধানের জন্য ভাব বিনিময় করা যাচ্ছে না, তবু ভারতীয় হিসেবে আমার পরিচয় পেয়ে তারা বন্ধুত্ব জানাতে চেয়েছে।
একটা দেশের শাসন ব্যবস্থাকে বদলানো মানেই সে দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথাবাহিত আচার-আচরণ একেবারে মুছে ফেলা নয়। অনেকের ধারণা এই যে, বিপ্লবের পর সোভিয়েত দেশ সেখানকার পুরোনো সবকিছু একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। গিয়ে দেখলুম, ব্যাপারটা ঠিক উলটো। ওদেশে শুধু শোষকদের চিহ্ন ও ব্যবস্থাগুলি ছাড়া পুরোনো সব কিছুকেই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। পুরোনো শিল্পসামগ্রী, পুরোনো রাজপ্রাসাদ, গির্জা, পুরোনো সংস্কৃতি, গান-বাজনা এসব সংরক্ষণ বা পুনরুদ্ধারের জন্য বিপুল উদ্যম নিয়োজিত। এদেশে অনেকেই এখনও বিয়ের সময় নববধূকে আগেকার দিনের মতন সাজে দেখতে ভালোবাসে। পল্লিগীতি এবং লোকনৃত্য সম্পর্কে অনেকেরই বেশ মায়া আছে। পারিবারিক বন্ধন এখনও অনেকটা অক্ষুগ্ন আছে। এদেশের গল্প উপন্যাস পড়লে বা ফিলম দেখলে বোঝা যায়, মা-বাবার সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে যায়নি।
দু-সপ্তাহের মধ্যে একদিনও আমার খবরের কাগজ পড়ার সুযোগ হয়নি। ইংরিজি ভাষার পত্রিকা পাওয়া যায় না, কিংবা পাওয়া গেলেও চোখে পড়েনি। খবরের কাগজ থেকে দেশের একটা দৈনন্দিন চিত্র ফুটে ওঠে। সুতরাং, ওদেশে প্রতিদিন কীরকম খুন জখম, চুরি-ডাকাতি হয় তা আমার জানা হয়নি। এত বড় দেশটায় যে ওরকম কিছুই ঘটে না, তা তো হতেই পারে না। সামাজিক পরিবেশ অনুযায়ী মানুষের চরিত্র গঠিত হয়। ঠিকই, তবু জটিল মনস্তাত্বিক কারণে কিছু-কিছু মানুষের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা দেখা দেবেই। বিলাসের পরিবেশে থেকেও যেমন কিছু-কিছু লোক সন্ন্যাসী হয়ে যায়, সেইরকম সামাজিক বৈষম্য না থাকলেও কিছু-কিছু লোক ডাকাত বা খুনি হতে পারে। চাক্ষুষ কোনও প্রমাণ না পেলেও আমার নিশ্চিত ধারণা, সোভিয়েত দেশে এরকম অপরাধের সংখ্যা কম। এটা অনুভবের ব্যাপার। পশ্চিমি দেশগুলিতে নিরাপত্তার কথা সবসময় চিন্তা করতে হয়। এখানে আমি যে ক’দিন ঘুরেছি সেরকম কোনও কথা মনে পড়েনি। এখানকার ভারতীয়দের মুখেও শুনেছি যে এখানে রাত-বিরেতে পথ চলতেও ভয়ের কিছু নেই।
এটাও অনুভব করেছি যে বিশ্বশান্তির জন্য এদেশের মানুষ সত্যিকারের আগ্রহী। যুদ্ধের আগুনে সাংঘাতিকভাবে দগ্ধ হয়ে এরা যুদ্ধকে ঘৃণা করতে শিখেছে। ইউরোপ আমেরিকায় সাধারণ মানুষও নিশ্চিত যুদ্ধ চায় না। তবু মারাত্মক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় কোটি-কোটি টাকা অনর্থক খরচ হচ্ছে। একটি সাধারণ অ্যাটম বোমা বানাতে যা খরচ তাতে তেরো লক্ষ শিশুর এক বছরের ভরণপোষণ হয়ে যায়। আমাদের মতন তৃতীয় বিশ্বে প্রতি ঘণ্টায় চারশো সত্তর জন মানুষ অনাহারে কিংবা অনাহারজনিত রোগে মরছে। অথচ আণবিক অস্ত্রের জন্য ওই বিপুল অর্থের অপচয়…এই কথা ভাবলেই মাথা ঘুরতে থাকে, মনে হয় কয়েকটা পাগল পৃথিবীটা ধ্বংস করতে চলেছে। তবে এ কথাও স্বীকার করতে হবে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করবার জন্য যে ক’যার শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে, তাতে সোভিয়েত দেশ বেশি আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে।
সোভিয়েত রাশিয়ার সাহিত্য-ছবি-ভাস্কর্য আর শিল্প সুষমামণ্ডিত নয়, এরকম ধারণা অনেকেরই আছে, আমারও ছিল। সোসালিস্ট রিয়েলিজম মানে ধরাবাঁধা একঘেয়েমি, ট্র্যাক্টর চালানো আর মেয়েরা কত দক্ষতার সঙ্গে ক্রেন তৈরি করছে কিংবা খামারে কত উৎপাদন হচ্ছে এইসব। গোড়ার দিকে এই ধরনের গল্প-উপন্যাস অনেক লেখা হয়েছে। ঠিকই, কিন্তু সেই সব ধারণা কবেই পালটে গেছে। জীবনেরও বহুমুখীনতা এবং মনের জটিল রহস্যকে বাদ দিলে শিল্প-সাহিত্য কিছুই হয় না! এ দেশের লেখক, শিল্পী বা নীতি নির্ধারকরা এখন তা যথেষ্টই বোঝেন! ইউ এস এস আর-এর ১৯৮৩ সালের ইয়ার-বুকে স্পষ্ট লিখে দেওয়া হয়েছে–’Socialist realism is not a cut-and-dried recipe for artists and writers; it does not prescribe subjects or themes . It rejects neither conventions nor the grotesque, nor the use of symobolism …..Socialist realism means a truthful depiction of reality in a concrete historical situation, in its revolutionary development . It accepts everything that is valuable in past and present world culture, and rejects everything that isolates art from life and the individual from society.’
এই সংজ্ঞা অনেক ব্যাপক। সেই জন্যই আধুনিক অনেক সোভিয়েত লেখকের গল্প উপন্যাস কবিতা পড়ে শিল্পের আস্বাদ পাওয়া যায়। আধুনিক ছবিতেও চোখে পড়ে অনেক পরীক্ষা। জীবনের মতন শিল্পও পরিবর্তনশীল।
সোভিয়েত দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় আমি যথেষ্ট উপকৃত হয়েছি।