কিয়েভ শহরে পৌঁছে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। হোটেলের ঘরটি আমার পছন্দ হয়নি, বেশ ছোট ঘর, অন্ধকার-অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে, হিটিং ব্যবস্থা ঠিক মতন কাজ করছে না বোধহয়। একটি মাত্র জানলা, সে জানলা দিয়ে দেখবার কিছু নেই। চোখে পড়ে একটা কারখানা মতন জায়গায় উঠোন, সেখানে পড়ে আছে কিছু ভাঙাচোরা জিনিস।
সুটকেসটা ঘরের মাঝখানে নামিয়ে রেখে আমি অপ্রসন্ন মুখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলুম চুপ করে। তারপর আপন মনেই হেসে উঠলুম হো হো করে। অবস্থা বিশেষে মানুষের মানসিকতার কত পরিবর্তনই হয়!
আমি জীবনে কত সস্তার হোটেলই না থেকেছি, ক্যানিং-এ টিনের ঘরে দেড় টাকা সিট ভাড়া দিয়ে হাটুরে লোকদের সঙ্গে পাশাপাশি ঘুমিয়েছি, বেলপাহাড়িতে একই খাঁটিয়া দুজনে ভাগাভাগি করে রাত কাটিয়ে দিয়েছি আকাশের নীচে, হায়দ্রাবাদ রেলে স্টেশনে একটা কম্বলের অভাবে সারারাত শীতে ঠকঠক করে কেঁপেছি, সেই আমারই হোটেলের ঘর নিয়ে খুঁতখুঁতুনি? এই ঘরটি তেমন কিছু খারাপ নয়, আসলে লেনিনগ্রাড ও রিগায় দারুণ আরামদায়ক হোটেলে থেকে এসে আমার প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। বেশি আদর পেয়ে-পেয়ে আমার পায়াভারী হয়েছে! আমি নিজের খরচে বেড়াতে এলে এর চেয়ে অনেক খারাপ হোটেলে আমায় উঠতে হত।
এ ঘরে পৌঁছে দেওয়ার সময় সারগেই অবশ্য বারবার দুঃখ প্রকাশ করে গেছে। কিয়েভ শহরে এখন টুরিস্টদের সাংঘাতিক ভিড়, অনেক চেষ্টা করেও এর চেয়ে ভালো ঘর জোগাড় করা যায়নি। এই হোটেলটি বেশ বড়, এর নাম হোটেল নিপ্রো, এর পেছন দিকের দুটি ঘর কোনওক্রমে পাওয়া গেছে আমাদের জন্য।
মনে-মনে এসব সান্ত্বনা বাক্য নাড়াচাড়া বারবার পরও কিন্তু আমার মন ভালো হল। ঘর যেমনই হোক, জানলা দিয়ে রাস্তাঘাট দেখা গেলেই আমি খুশি হতাম। কিয়েভ শহরটি যে বড়ই সুন্দর!
এয়ার পোর্ট থেকে আসতে আসতেই এই শহরের অনেকখানি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এমন সবুজ শহর আমি আগে কখনও দেখিনি। মনে হয় পুরো শহরটাই একটা উদ্যান, বাড়িঘরগুলি গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে। রাস্তার দুপাশের গাছগুলিতে ফুটে আছে থোকা-থোকা চেস্টনাট ফুল। লন্ডন শহরে এইরকম চেস্টনাট ফুল ফোটে, প্যারিসেও দেখেছি কিন্তু এ দেশে এসে এই ফুল আগে চোখে পড়েনি। এর আগে যে তিনটি শহর দেখেছি, সেই তিনটিই সমতল, কিয়েভ কিন্তু ঢেউ খেলানো, ছোট-ছোট টিলা এদিক ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে, শহরের মাঝখান দিয়েই বয়ে চলেছে বিশাল নিপার নদী।
এরকম সুন্দর শহরে এসে হোটেলের ঘরে বসে থাকার কোনও মানে হয় না। সারগেইকে এখানকার অফিসের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তা ছাড়া সে তার স্ত্রীকে ফোন করবে। আমার সঙ্গে টানা দিন দশেক ঘুরছে, এর মধ্যে তার স্ত্রীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগই নেই। আমি একলাই বেরিয়ে পড়লুম বাইরে। পথঘাট না চিনলেও ঠিক যে-পথ দিয়ে যাব, সেই পথ দিয়ে ফিরে আসব।
আমাদের হোটেলের খুব কাছেই অক্টোবর রেভেলিউশান স্কোয়ার। এই স্থানটি বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এখানে অনেক রক্ত গড়িয়েছে। অথচ এখন এই জায়গাটি এতই মনোরম যে এখানে এসে দাঁড়ালেই একটা চমৎকার অনুভূতি হয়। চতুর্দিকেই ফুলের বাগান, একদিকে বিশাল চত্বরের একপাশে উঠে গেছে থাক থাক সিঁড়ি, তার ওপরে লেনিনের সুদৃশ্য মূর্তি।
ইউক্রাইনের রাজধানী কিয়েভ শহরটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো। বেশ কিছুদিন প্রাচীন রাশিয়ার রাজধানী ছিল এই কিয়েভ। পরে সেই রাশিয়া ভেঙে তিনটি জাতি হয়, রাশিয়ায, ইউক্রাইনিয়ান ও বিয়েলো রাশিয়ান। এখানকার মাটি এত উর্বর যে ইউক্রাইনকে বলা যায় এক বিশাল শস্য ভাণ্ডার। যন্ত্রশিল্পেও এ রাজ্যটি এখন খুবই উন্নত।
এত সৌন্দর্য ও সবুজের সমারোহ দেখে কল্পনা করাই শক্ত যে এখানে একদিন কী সাংঘাতিক যুদ্ধকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। দু-বছর এই শহরটি নাতসিরা অধিকার করেছিল, এখানকার ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, মিউজিয়ামগুলি লুট করেছে এবং দু-লক্ষ নাগরিককে হত্যা করেছে। অবরোধমুক্ত করে ইউক্রানিয়ান বিজয়ী বাহিনী যখন এখানে প্রবেশ করে তখন নাকি তাদের মনে হয়েছিল, এটা একটা মৃতের নগরী।
এখানে আসবার আগেই আমি ইউক্রাইন ও কিয়েভ সম্পর্কে কিছু-কিছু পড়ে নিয়েছি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কাহিনিগুলির মধ্যে একট কাহিনি যেমনই মর্মন্তুদ তেমনই সেটি মানুষের অপরাজেয় মনোভাবের একটি মহান দৃষ্টান্ত।
ঘটনাটি এইরকম :
কিয়েভে ডায়নামো টিম নামে একট বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় দল ছিল। যুদ্ধের সময় এই দলের অনেক খেলোয়াড় প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেয়। এই দলের একজন প্রধান খেলোয়াড় মাকার গনচারেংকো একদিন আহত হয়ে নাতসিদের হাতে ধরা পড়েন। নাতসিদের মধ্যে অনেকে তাঁকে চিনতে পেরেছিল। নাতসিরা তখন আহ্বান জানাল ডায়নামো টিমের সঙ্গে তাদের একটি ফুটবল ম্যাচ হোক। নাতসিদের মধ্যেও অনেক প্রফেশনাল খেলোয়াড় ছিল।
ডায়নামো টিমের খেলোয়াড় কয়েকজন আগেই ধরা পড়েছিল, কয়েকজন ছিল অবরুদ্ধ নগরীতেই। তারা বুঝতে পারল, এই ম্যাচ মানে মৃত্যু-খেলা। এই খেলায় জিতলে প্রাণে বাঁচার কোনও আশাই নেই। খেলা শুরুর আগে ড্রেসিং রুমে ঢুকে রেফারি বলে গেল, মনে রেখো, দু-দলের একটাই জনধ্বনি, তা হল, ‘হাইল হিটলার’।
দু-দল দাঁড়াল মাঠের মাঝখানে। ইউক্রানিয়ান খেলোয়াড়রা তাদের জাতীয় জনধ্বনিই দিল। তাদের পরনে লাল পোশাক। তবু নাতসিরা কিছু বলল না। তারা ধরেই নিয়েছিল ডায়নামো টিম তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারবে না। ডায়নামো টিমের ছেলেরা অনেকদিন ভালো করে খেতে পায়নি, রুগন চেহারা, প্র্যাকটিসও নেই বহুদিন।
প্রথম অর্ধে খেলার ফলাফল হল ৩-২, জার্মানরা এক গোলে এগিয়ে। বিরতির পর ডায়নামো টিমের ছেলেরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল। খেলা হচ্ছে খেলা! খেলতে নামলে জেতার চেষ্টা করতেই হবে, টিমের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতেই হবে, তার ফলে মৃত্যুদণ্ড হোক আর যাই হোক। রেফারি তাদের পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে ঢুকতেই দিচ্ছে না, সেখানে গেলেই অফ সাইড বলে দিচ্ছে। গোল করতে গেলে অনেক দূর থেকে শট মারতে হবে। তবু তারা জয়ের শপথ নিল।
খেলার শেষে ৫-৩ গোলে জয়ী হল ডায়নামো টিম। সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিয়ে যাওয়া হল কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে এবং তাদের এক এক করে হত্যা করা হল। গানচারেংকো প্রায় অলৌকিকভাবে সেই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাঁর কাছ থেকেই জানা গেছে এই কাহিনি। সেই অসাধারণ সাহসী ফুটবল খেলোয়াড়দের নামে এখন রয়েছে একটি বিরাট স্মৃতিস্তম্ভ।
কিয়েভ শহরটিতে এরকম অনেক স্মৃতিস্তম্ভ, মিউজিয়াম, গির্জা ও পার্ক আছে। পুরো শহরটাই বেড়াবার জন্য, কাজকর্মের জন্য নয় মনে হয়। যদিও ইউক্রাইনের রাজধানী হিসেবে এটি একটি ব্যস্ত শহর নিশ্চই, এখন জনসংখ্যা ১৬ লক্ষ।
সারগেই এই ইউক্রাইনেরই ছেলে। কিয়েভ শহরে নয়, ওর বাড়ি প্রায় দুশো মাইল দূরে। স্কুল শেষ করার পর সারগেই প্রথমে পড়তে এসেছিল কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর মত বদলে চলে যায় মস্কোতে। এখন সারগেই খুব মস্কোর ভক্ত। মস্কো আর লেনিনগ্রাড শহরের মধ্যে খানিকটা প্রতিযোগিতার ভাব আছে, যেমন মার্কিন দেশে আছে নিউ ইয়র্ক আর লস এঞ্জেলিসে। সারগেই-এর মতে মস্কো অনেক বেশি জীবন্ত।
সন্ধেবেলা সারগেই আমাকে খাওয়াল ইউক্রাইনের নিজস্ব কিছু খাবার। বর্স সুপ তো আগেই খেয়েছি, তা ছাড়া এখানকার সসেজেও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, আরও নানান রকম রান্না। সবচেয়ে অবাক হলুম এখানকার ভদকা দেখে। সিলকরা বোতলের মধ্যে ভাসছে দুটি আস্ত শুকনো লঙ্কা। গেলাসে ঢেলে খানিকটা পান করে দেখলুম জিনিসটা রীতিমতন ঝাল। এর আগে আমি কখনও ঝাল মদ আস্বাদ করিনি। আমার অবশ্য খেতে বেশ ভালোই লাগল।
কিয়েভে আমাদের প্রথম অ্যাপয়েন্টমেন্ট গত মহাযুদ্ধের দুই বীর সেনানীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার। পরদিন সকালে গেলুম এ পি এন অফিসে নির্দিষ্ট সময়ে। সে অফিসে পা দিয়ে প্রথমেই যে কারণে অবাক হতে হয় তা হল পরিচ্ছন্নতা। সমস্ত অফিসটা একেবারে ঝকঝক করছে, যেন গতকালই তৈরি হয়েছে। দেওয়ালে কাঠের প্যানেল, তার পালিশ একেবারে আয়নার মতন। এ দেশে অনেক জায়গাতেই খুব উচ্চাঙ্গের কাঠের কাজ দেখেছি।
একটু পরেই দুজন প্রাক্তন সেনানী এসে উপস্থিত হলেন, তাঁরা জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃত। তাঁরা পরিধান করে আছেন পুরোদস্তুর সামরিক পোশাক, বুকের দু-দিকে অনেকগুলি পদক ও স্ট্রাইপ। দুজনেরই এখন যথেষ্ট বয়েস হয়েছে।
ওঁদের সামনে বসে আমি ভাবলুম, এবার নিশ্চয়ই মজা হবে। বৃদ্ধেরা সাধারণত একটু বেশি কথা বলতে ভালোবাসেন, এবং নিজের কথাও বেশি বলতে চান। দুই বৃদ্ধ একসঙ্গে বলতে শুরু করলে, নিশ্চয়ই একজন অন্যজনকে মাঝে-মাঝেই থামিয়ে দিয়ে বলবেন, আরে তুই চুপ কর! শোন না, তখন আমি কী করেছিলুম! অন্যজন বলবেন, আরে তুই তো ওখানে ছিলিই না, আমার স্পষ্ট মনে আছে…।
বাস্তবে কিন্তু সেরকম কিছুই হল না। এই দুই বীর সেনানীই অত্যন্ত বিনয়ী। এঁরা প্রথমেই বললেন, দেশরক্ষার জন্য প্রত্যেকেই প্রাণপণে যুদ্ধ করে, আমরা বেশি কিছু করিনি।
তবু বললুম, তবু আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
এঁদের একজনের নাম আইভানোভস্কি অ্যান্ড্রিউ ইনি ছিলেন বিমান বাহিনীর মেজর জেনারেল। অন্যজন হলেন সুখভ কনস্টানটিন, ইনি ছিলেন স্থল বাহিনীতে।
১৯৪৩ সালের ৬ নভেম্বর নাতসি বাহিনী ভেদ করে সোভিয়েতে সৈনিকরা কিয়েভ নগরীতে ঢোকে। তারপর এখানকার পথে পথে লড়াই হয়। সেই বাহিনীতে ছিলেন জেনারেল সুখভ কনস্টানটিন, তাঁরা অসম সাহসের সঙ্গে নাতসি বাহিনীকে নিপার নদীর ওপারে ঠেলে নিয়ে যান। ম্যাপ দেখিয়ে এই শহরের তখনকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা বোঝাতে এক জায়গায় থেমে গিয়ে তিনি বললেন, এবারে অ্যান্ড্রিউ তুমি বলো, তুমি তো এর পরের অংশ ভালো জানো।
মেজর জেনারেল অ্যান্ড্রিউ শোনাতে লাগলেন, সেই সময় বিমান বাহিনী কীভাবে স্থলযুদ্ধকে সাপোর্ট দিয়েছিল। তিনি নিজের কীর্তির কথা না বলে তার এক মৃত সহযোদ্ধার কথা বেশি বলতে লাগলেন, যিনি প্রাণ তুচ্ছ করে এতবার শত্রু এলাকায় ঢুকে পড়েছিলেন যে তাঁর সম্পর্কে নানান কাহিনি প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল।
কথায় কথায় জানা গেল যে, এই দুই বীর যোদ্ধাই লেখক। একজন কবিতা লেখেন, অন্যজন গল্প। ইউক্রাইনিয়ান ভাষায় কয়েকটি পত্রপত্রিকাও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, তাতে ওদের সম্পর্কে লেখা ছাপা হয়েছে। সেই লেখা থেকে কিছু কিছু অংশ পড়ে শোনালেন ওঁরা। আমাকে কয়েকটি বইপত্র দিলেন, পরে পড়ে দেখার জন্য। আমি যে ইউক্রাইনিয়ান ভাষা একবর্ণও বুঝি না, সে কথা ওঁরা শুনলেন না। ভালোবেসে ওইসব বইপত্র আমাকে দিলেন নিজেদের নাম সই করে।
ওঁদের দুজনের কোথাও লাঞ্চের নেমন্তন্ন আছে, এবারে ওঁদের উঠতে হবে। আমি বললুম, এত বড় যোদ্ধাদের আমি কখনও কাছাকাছি দেখিনি। আপনাদের গল্প শুনে আমি রোমাঞ্চিত বোধ করছিলুম।
ওঁরা বললেন, যুদ্ধ জিনিসটা মোটেই ভালো নয়। এসো, আমরা সবাই মিলে আশা করি, পৃথিবীতে আর কোনওদিন কোনও যুদ্ধ যেন না হয়।
ওঁরা দুজনে ইংরিজি একেবারেই জানেন না। কথাবার্তা বলছিল সারগেই-এর অনুবাদের মাধ্যমে। আমার পরিচয় শুনে ওঁরা শেষকালে বললেন, এবারে তোমার একটা কবিতা শোনাও। তোমার নিজের মাতৃভাষায় শোনাও। তুমি কী ভাষায় লেখো?
আমি বললুম, বাংলায়। কিন্তু সে ভাষা তো আপনারা বুঝতে পারবেন না কিছুই!
ওঁরা বললেন, তবু শোনাও। আমরা বাংলা ভাষা কখনও শুনিনি। কীরকম শুনতে লাগে দেখি!
ঠিক সেই মুহূর্তে আমার নিজের কোনও কবিতাই মনে পড়ল না। তা ছাড়া আমি ভাবলুম, এঁরা শুনতে চাইছেন বাংলা ভাষার শব্দঝংকার, সুতরাং সেরকম কোনও ঝংকারময় কবিতা বলাই ঠিক হবে। এরকম ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের দুঃসময় কবিতাটি একেবারে আদর্শ।
সুতরাং আমি আবৃত্তি করলুম–যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে, সব সঙ্গীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া…তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি অন্ধ, বন্ধ না করো না পাখা…।
ওরা দুজনেই বেশ তারিফ করে বললেন, বাঃ, বেশ সুন্দর, এর মানে কী?
এবারে আমি প্রমাদ গুনলুম। অনুবাদ করার পক্ষে রবীন্দনাথের এই কবিতাটি আবার খুবই শক্ত। যাই হোক, আক্ষরিক অনুবাদ না হলেই বা কী আসে যায়!
আমি বললুম, এটা একটা পাখি সম্পর্কে…ফিনিক্স পাখি…জানেন নিশ্চয়ই যে পাখি বারবার আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে আবার পুনর্জীবন পায়…।
আমাদের সামনে রয়েছে একটা টেপ রেকর্ডার। ভবিষ্যতে যদি কেউ আমাদের এই আলোচনা নিয়ে গবেষণা করতে চায়, তা হলে বাংলা কবিতার এই অংশটি নিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে।