২৪. ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরটি বেশ চেনা

আগের বার প্রায় দিন দশেক ছিলাম, তাই ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরটি বেশ চেনা হয়ে গিয়েছিল। ট্রামে চেপে বইমেলায় যাতায়াত করতাম। এইবারেও ১৬ নম্বর ট্রামে চেপে নামলাম ‘বুক মেসে’ বা বইমেলার গেটের সামনে। কিন্তু নেমে আর গেট খুঁজে পাই না। মাত্র তিন বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে, প্রবেশ দ্বারটি এখন অন্যত্র এবং সুবিশাল। পাশেই গম্বুজের মতন একটি বহুতল বাড়ি উঠেছে, সেটাও বইমেলার অন্তর্গত হবে।

আগেরবার ছিলাম আমন্ত্রিত, এবার রবাহুত দর্শক মাত্র। তবে বিদেশ থেকে কেউ এলেই তাকে একটি সিজন কার্ড দেওয়া হয়। বিনামূল্যে এই সৌজন্যটুকু বইমেলা কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন করেন। পাশপোর্ট দেখিয়ে কার্ড সংগ্রহ করে ভেতরে ঢুকতে যেতেই সশস্ত্র প্রহরীর সম্মুখীন। মনটা বিবশ হয়ে গেল। বইমেলার মধ্যেও পিস্তল-বন্দুক! আজকাল বিমান-ভ্রমণে এতরকম সিকিউরিটির ঝঞ্ঝাট যে সব আনন্দই মাটি হয়ে যায়। হুমদো হুমমো চেহারার লোকেরা গায়ে হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখে, আমি আবার পুরুষ মানুষের স্পর্শ একেবারে সহ্য করতে পারি না। বইমেলাতেও সেই উৎপাত! শুধু যে হাত ব্যাগই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তাই-ই নয়। প্রহরীদের সামনে শ্রীগৌরাঙ্গের চ্যালাদের মতন হাত তুলে দাঁড়াতে হচ্ছে।

ফ্রাঙ্কফুর্টের মেলা এলাকাটা এবার যেন আরও বড় মনে হল। অনেকগুলি প্রকান্ড প্রকান্ড হল, তিন-চারতলা করে। সেগুলির এক একটি ঘুরে দেখতেই পা ব্যথা হয়ে যায়। মেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিনা পয়সার বাস চলে, হলের সিঁড়িগুলি চলন্ত, তবু হাজার-হাজার বইয়ের স্টলের গোলকধাঁধার মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলতে হয়। প্রথমে ঢুকে তো আমি ভারতীয় প্রকাশকদের জন্য নির্দিষ্ট অংশটি খুঁজেই পাই না। চতুর্দিকে নতুন বইয়ের গন্ধ।

ভারতীয় বিভাগটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট্রের। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকাশকদের বই তাঁরাই নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন, তারপর প্রকাশকরা ওখানে গিয়ে আলাদা আলাদা দোকান সাজিয়ে বলেন। ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট্রের নিজস্ব একটি প্রদর্শনীও থাকে! ভারতীয় প্রকাশকদের মধ্যে দিল্লিরই আধিপত্য, কিছু বম্বের, মাদ্রাজ অঞ্চলের প্রকাশকদের সংখ্যা খুবই কম। কলকাতার বেশ কয়েকজন প্রকাশক আছেন বটে, তবে অধিকাংশই ইংরেজি বইয়ের, এদের মধ্যে সদাব্যস্ত বিমল ধরের উপস্থিতি সর্বত্র বিরাজমান। ভারতীয় স্টলগুলির মধ্যে একটিতে এক ঝকঝকে ধারালো চেহারার রমণীর দিকে বারবার চোখ চলে যায়, কেমন যেন চেনা-চেনা লাগে। পরে জানা গেল, ইনি নর্তকী ও অভিনেত্রী মল্লিকা সারাভাই, পিটার ব্রুকসের মহাভারতে দ্রৌপদীর ভুমিকায় অভিনয় করে যিনি বিশ্বখ্যাতি পেয়েছেন। মল্লিকাদেরও পারিবারিক প্রকাশনা ব্যাবসা আছে, এ বছর তাঁরা ইংরেজি মহাভারতের একটি সংস্করণও প্রকাশ করেছেন।

ছিয়াশি সালে এসে বাংলা বইয়ের অনেকগুলি দোকান দেখেছিলাম। সে বছর মেলা কর্তৃপক্ষ ভারতকে মুখ্য আকর্ষণ বলে ঘোষণা করেছিলেন। এ বছরের মুখ্য আকর্ষণ যেমন ফ্রান্স। সেবারে কলকাতার অধিকাংশ চেনা প্রকাশককে দেখেছিলাম এই মেলায়, এবছর বাংলা বই টিমটিম করছে মাত্র দুটি স্টলে, আনন্দ পাবলিশার্স ও ফার্মা কে এল মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় এলাকার বাইরেও বাংলা বই রয়েছে অন্যত্র আরও দুটি জায়গায়, থার্ড ওয়ার্লড কান্ট্রির এলাকায়, যেখানে কলকাতার মন্দিরা নামে এক প্রকাশক এবং বাংলাদেশের এক প্রকাশক আমন্ত্রিত।

এত বৃহৎ বিশ্ব বইমেলায় ভারতের স্থান নগণ্য, বাংলা বইয়ের উপস্থিতি নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর বলা যেতে পারে। যদিও বাংলা সারা পৃথিবীর সপ্তম প্রধান ভাষা। এই বইমেলায় পশ্চিমি দেশগুলির বই-ব্যাবসাই প্রধান, তাদেরই রমরমা। আনন্দ পাবলিশার্সের বাদল বসু প্রতি বছর এই মেলায় বাংলা বই সাজিয়ে বসে থাকেন। একটা প্রেস্টিজের ব্যাপার আছে ঠিকই, এই এলাহি বইমেলায় কলকাতার বাংলা বইয়ের প্রকাশক অকুতোভয়ে অংশগ্রহণ করছেন, বিশ্ব প্রকাশকদের তালিকায় তাঁদেরও নাম স্থান পাচ্ছে, কিন্তু ব্যাবসার কোনও সুরাহা হয় বলে মনে হয় না। এখানে খুচরো বিক্রির প্রশ্ন নেই, হোল সেল বিক্রির চুক্তি এবং অনুবাদের শর্ত বিনিময় হয়। বাংলা বইয়ের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত সেরকম কিছু ঘটেছে বলে শুনিনি।

প্রায় ছেলেবেলা থেকেই আমি বইয়ের জগতের সঙ্গে জড়িত, মাছ যেমন জলের মধ্যে সাবলীল থাকে, সেই রকমই এত নতুন বইয়ের প্রদর্শনী আমাকে মুগ্ধ করে রাখে, যে-সব ভাষারও বইয়ের মলাট দেখে দেখে সময় কাটাই।

অনেক দেশের বড়-বড় প্রকাশকরা কিছু-কিছু উপহারও দেয়। যেমন কলম কিংবা পেপার ওয়েট কিংবা নানা রকম ঝোলানো ব্যাগ। ব্যাগের আকর্ষণই বেশি। বিনা পয়সায় কিছু পেতে শুধু যে আমাদের মতন গরিবদেশের মানুষদেরই উৎসাহ তাই-ই নয়, সচ্ছল শ্বেতাঙ্গরাও ঘুরে ফিরে সেই সব সংগ্রহ করে, কোনও-কোনও স্টলের অতি সুদৃশ্য ব্যাগ কেউ-কেউ নানা ছলে একাধিকও সংগ্রহ করে।

ভারতীয় কোনও স্টলেই কোনও উপহার নেই, বইয়ের মলাট ও ছাপা-বাঁধা পশ্চিমি প্রকাশকদের তুলনায় ম্লান, তাই এই তল্লাটে ভিড়ও কম।

এক সময় এসে পড়লাম পেঙ্গুইন স্টলের সামনে। এবারে পেঙ্গুইন যেন কিছুটা আত্মগোপন করে আছে। ভাইকিং-এর সঙ্গে ভাগাভাগি করে একটা মাঝারি আকারের স্টলে বইগুলি সাজানো, কর্মীদের মুখে চোখে চাপা উদ্বেগ। কাছাকাছি সেপাই সান্ত্রিদের জমায়েত না দেখে একটু অবাক লাগছিল, পরে দেখি যে অনেক সশস্ত্র পরী-প্রহরী এখানে সেখানে আত্মগোপন করে আছে।

পেঙ্গুইনের ওপর একটা আক্রমণের হুমকি সর্বক্ষণই রয়েছে। যদিও এঁরা সালমন রুশদির বিতর্কিত বইটি এবার রাখেননি।

মানুষের সভ্যতার ইতিহাসে একখানি বই ও তার লেখককে নিয়ে এত আলোড়ন আগে কখনো ঘটেনি। এই লেখকের মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা প্রকাশ্যে ঘোষিত হয়েছে, আততায়ীকে বিপুল পুরস্কার দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তি। অনেকগুলি দেশের রাষ্ট্রনায়ক এই লেখকের পক্ষে বা বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন, কূটনৈতিক সম্পর্কে বিপন্ন বা ছিন্ন হয়েছে এই একখানি বইকে কেন্দ্র করে। এক বছরেরও অধিককাল সেই লেখক প্রাণভয়ে আত্মগোপন করে আছেন।

এবারের বইমেলার প্রবেশ দ্বারে সিকিউরিটির এত কড়াকড়ির মর্ম ক্রমশ জানা গেল।

স্যাটানিক ভার্সেস বইটির জার্মান অনুবাদ এই সময়ে প্রকাশের কথা ছিল। পশ্চিম জার্মানির সরকার গোলমালের আশঙ্কায় এই অনুবাদের প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ওসব গণতান্ত্রিক দেশে কোনও বই নিষিদ্ধ করা সহজ কথা নয়। জার্মান প্রকাশকদের সংস্থা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়, বাক-স্বাধীনতার ওপর এই হস্তক্ষেপ আদালতে গ্রাহ্য হয়নি। মামলায় জিতে সেই অনুবাদের প্রকাশক বইটি এবারের বইমেলাতেই সাড়ম্বরে উদ্বোধন করতে চেয়েছিলেন।

বইমেলা কর্তৃপক্ষ পড়ে যান বিপদে। বহু ফ্যানাটিক সংস্থা এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইরান এখনও প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য উন্মুখ। বইমেলার মধ্যে বোমাবাজি হলে সাংঘাতিক ভয়ের ব্যাপার, চতুর্দিক কাগজের সমুদ্র, একবার আগুন লেগে গেলে সেই বহূৎসব হবে পৃথিবীর সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা।

মেলাকর্তৃপক্ষ সেইজন্য জার্মান প্রকাশকদের সঙ্গে একটা আপোসে এসেছেন। স্যাটানিক ভার্সেস-এর জার্মান অনুবাদ মেলার মধ্যে উদ্বোধন করা হবে না, পরে যে কোনও একদিন হতে পারে। এর বিনিময়ে, কর্তৃপক্ষ এই মেলা থেকে ইরানকে বিতাড়িত করেছেন। ইরান যতদিন না একজন লেখকের ওপর থেকে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা তুলে নেয়, ততদিন ইরানকে বিশ্ব বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।

তবু চোরাগোপ্তা আক্রমণের ভীতি রয়ে গেছে। তা ছাড়া গোপন সূত্রে বাকি খবর পাওয়া গেছে যে পুরুষের বদলে সশস্ত্র নারী গেরিলারা এবার পেঙ্গুইন বা অন্য স্টলের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। তাই ঢোকার মুখে এবার মেয়েদেরই বেশি তল্লাশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন হলেও মেয়ে-পুলিশদের প্রাধান্য।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনও আক্রমণের উদ্যম দেখা যায়নি। তবে একটি স্টল দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। নরওয়ে’র স্টলে পৃথিবীর বহু লেখকের ছবি টাঙানো রয়েছে, তার মধ্যে রুশদির ছবি! বহু বিতর্কিত বইটির নরওয়েজিয়ান অনুবাদও অকুতোভয়ে তাঁরা সাজিয়ে রেখেছেন। কোনও-কোনও দেশে যেমন যখন তখন বই নিষিদ্ধ করা হয়, তেমনই বিপরীত ভাবে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলিতে বাক স্বাধীনতা কিংবা যা খুশি লেখার ও পড়ার অধিকারের দাবি অত্যন্ত উগ্র।

এক-একসময় ক্লান্ত হয়ে বাংলা বইয়ের স্টলে এসে বসি। অন্য দেশীয়দের জনস্রোত পাশ দিয়ে চলে যায়, বাংলা বইয়ের র‍্যাকগুলির দিকে তাদের চোখ থামে না। বাংলা ভাষা কিংবা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে যেন কারুর কোনও আগ্রহ নেই। অন্যদের আকৃষ্ট করার মতন তেমন উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ইংরিজি ও জার্মান ভাষায় উল্লেখযোগ্য বাংলা বইগুলির সিনপসিস, লেখক-পরিচিতি কিংবা সাধারণভাবে বাংলা সাহিত্য নিয়ে ভালোভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত সমবেতভাবে বাংলা প্রকাশকদের। আনন্দ পাবলিশার্স একটি ইংরিজি ক্যাটালগ এনেছেন। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়। আরও অনেক তথ্যপূর্ণ চকচকে, ঝকঝকে তালিকার প্রয়োজন।

কচিৎ দু-একজন বাংলা-জানা জার্মান আসেন, কিংবা অন্য কোনও দেশের প্রকাশক সত্যজিৎ রায়ের বইয়ের অনুবাদের জন্য আগ্রহ দেখান। পশ্চিম বাংলার কোনও কোনও বাঙালি আসেন আড্ডা দিতে আত্মীয়-বন্ধুদের খোঁজ নিতে, আর আসেন বাংলাদেশীয়রা।

প্রবাসে বাংলা সাহিত্যপ্রেমী

হট বানহফ অর্থাৎ প্রধান রেল স্টেশনের সিঁড়ি দিয়ে একদিন উঠে আসছি, একটি যুবক আমার পাশে এসে ইংরিজিতে বিনীতভাবে জিগ্যেস করল, আপনার নাম কি অমুক? নিশ্চিত হয়ে সে অতি উৎসাহের সঙ্গে ডেকে আনল তার বন্ধুদের, এবং প্রায় জোর করেই আমাকে, বাদল বসুকে এবং ফার্মা কে এল-এর রণজিৎ মুখার্জিকে নিয়ে গেল তার বাড়িতে।

ছেলেটির নাম বাবুল। সে এবং তার অতি তরুণী স্ত্রী থাকে বইমেলার কাছে এক অ্যাপার্টমেন্টে। বাবুল ও তার বন্ধুরা আমাদের রান্নাবান্না করে খাওয়াল। এবং কয়েকটা দিন হইচই ও আড্ডায় মাতিয়ে রাখল। এই বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত, কেউ ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ফটোগ্রাফার, কেউ বা হোটেলে কাজ করে। কিন্তু বাংলা সাহিত্য নিয়ে তাদের উৎসাহ সবসময় টগবগ করছে। সেই তুলনায় পশ্চিমবাংলার বাঙালিরা দুর্গা পূজা কিংবা গান বাজনার জলসায় যতটা আগ্রহী, সাহিত্য সম্পর্কে তেমন নয়। একজন ফিল্ম স্টার কিংবা গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে তাঁরা মাতামাতি করতে পারেন, কিন্তু সাহিত্যিকদের খোঁজ খবর বিশেষ রাখে বলে মনে হয় না। পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলিতে এমন অনেক বাঙলি থাকেন, তাঁদের অবস্থাও মোটামুটি সচ্ছল, কিন্তু তাঁরা সাহিত্য নিয়ে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন, এমন ক’টা শোনা যায়?

বাবুল ও তার বন্ধুরা আমাদের সঙ্গে এমন আন্তরিক ব্যবহার করতে লাগল, যেন আমরা তাদের অনেক কালের আত্মীয়। আমরা তিনজনেই উঠেছিলাম এক জার্মান পরিবারে পেয়িং গেস্ট হয়ে, কিন্তু বাবুলরা এমন করতে লাগল, যেন আমাদের খাওয়ানো পরানোর দায়িত্বও ওদের। প্রত্যেকের বাড়িতেই বেশ কিছু বাংলা বই রয়েছে, বাংলা পত্রিকা রাখে, কথায়-কথায় বাঙলা সাহিত্য থেকে নানা রকম উদ্ধৃতি দেয়, প্রবাসী হয়েও মাতৃভাষার সেবা ও সম্মান করতে তারা একটুও ভোলেনি।

হাইডেনবার্গের কাছাকাছি হিসবার্গ শহরে থাকেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। ইনি বহুকাল ও-দেশবাসী হলেও দেশের সঙ্গে পুরোপুরি সংযোগ রেখেছেন, প্রত্যেক বছর কলকাতায় এসে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে যান। এখানকার কোন লিটল ম্যাগাজিনে কী লেখা বেরিয়েছে, সে সম্পর্কে অলোকরঞ্জন জার্মানিতে অক্লান্তভাবে বাংলা সাহিত্যের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সেমিনারে তিনি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে বলেন, নিজে অনেক অনুবাদ করেছেন এবং আমাদের অনুবাদে উদ্বুদ্ধ করাচ্ছেন এ সবই অলোকরঞ্জনের ভালোবাসার পরিশ্রম।

অলোকরঞ্জন আমাকে ও বাদল বসুকে ধরে নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। সেখানে তাঁর পত্নী টুডবার্টার আদরযত্ন এবং তাঁর জননীর স্নেহচ্ছায়ায় আমার অবস্থা যেন অতি প্রশ্রয় পাওয়া কোনও বালকের মতন। টুডবার্টা এক অসাধারণ রমণী যেমন বিদুষী ও বুদ্ধিমতী, তেমনি তাঁর কর্মক্ষমতা। তিনি চারবেলা নানা রকম রান্নাবান্না করে আমাদের খাওয়াচ্ছেন, তারই মধ্যে আমাদের সঙ্গে গল্প করছেন, আবার কখনো গাড়ি চালিয়ে আমাদের নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। টুডবার্টা বাংলা সাহিত্য সম্পর্কেও অনেক খবর রাখেন, বাংলা গান ও ভারতীয় মার্গসঙ্গীত তাঁর প্রিয়, গাড়ি চালাতে-চালাতে সেই সব গান-বাজনা শোনেন।

ট্রুডবার্টার সেবা যত্নেরও তুলনা নেই। আবার শীতে কষ্ট হবে, ঠান্ডা লেগে যাবে ভেবে (শীত লাগছিল না) তিনি প্রায় জোর করেই তাঁর ক্লোসেট থেকে একটি ওভারকোট আমাকে পরিয়ে দিলেন। মাসিমার পায়ে ব্যথা, সেই জন্য ট্রুডবার্টা হাঁটু গেড়ে বসে তাঁর শ্বাশুড়ির পায়ে একদিন জুতো পরিয়ে দিচ্ছিলেন, সেই দৃশ্যটি দেখে আমার মনে হচ্ছিল, শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে এরকম বর্ণনা পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু ইদানীং এমন দৃশ্য দুর্লভ।

ওই বাড়িতে একদিন মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন লোথার লুৎসে। ইনি শুধু আমার নন, অনেক ভারতীয় লেখকেরই পূর্ব পরিচিত। লোথার হিন্দি খুব ভালো জানেন, বাংলা জ্ঞানও যথেষ্ট। ভরাট স্বাস্থ্য, উৎসাহে সর্বক্ষণ টগবগ করছেন, ইনি দাশগুপ্ত পরিবারের একজন বিশিষ্ট বন্ধু।

এক বিশেষ ধরনের সুস্বাদু জার্মান স্যুপে চুমুক দিতে দিতে লোথার আমাকে জিগ্যেস করলেন, সুনীল, তুমি তোমার কোন বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসেছ?

আমি বললাম, সে রকম কিছু না তো! আমার কোনও বইয়ের অনুবাদ তো বেরুচ্ছে না।

লোথার জিগ্যেস করলেন, তা হলে তুমি এ সময় ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেছ কেন?

আমি বললাম, এমনিই। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে।

লোথার আমার দিকে বিমূঢ়ভাবে তাকিয়ে রইলেন।

ফ্রান্স ও ইংল্যন্ডে আমার কিছু কাজ আছে, যাবার পথে আমি ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলা ঘুরে যাচ্ছি, কারণ, এতে অতিরিক্ত বিমান ভাড়া লাগবে না। শুধু এই কারণে এসেছি, তা লোথার লুৎসের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় লেখকরা বিশেষভাবে আমন্ত্রিত না হলে আসেন না। কোনও কোনও প্রকাশক নতুন বই প্রকাশ উপলক্ষে সেই লেখককে নিয়ে আসেন, তাঁকে নিয়ে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রচার মাধ্যমগুলির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। বাংলা বইয়ের লেখকদের নিয়ে সে রকম কোনও অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নেই এখানে, বাংলা বইয়ের অনুবাদও হয় কদাচিৎ, তাও অনেকটা যেন উপরোধে ঢেকি গেলার মতন। অনুবাদ বেরুলেও বিক্রি হবে কেন? বাংলাসাহিত্য সম্পর্কে অন্যান্য দেশের পাঠকদের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চারের কোনও ব্যবস্থা নেই। বাংলাভাষার নামই এখানে অনেকে জানে না।

লোথার লুৎসে বইমেলাতে একদিনও যাননি, তার কারণ, ওই মেলায় বাণিজ্যই প্রধান। নতুন বই বিক্রিরও কোনও ব্যবস্থা নেই।

সত্যি, ফ্রাঙ্কফুর্টের বিশ্ব বইমেলা দেখলে মনে হয়, মোটর গাড়ি, ফ্রিজ, টি ভি ইত্যাদির মতন বই নিয়েও এক বিশাল বাণিজ্য চলছে। সেই বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরিই পশ্চিমি প্রকাশকদের আওতায়। তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির (এই তৃতীয় আখ্যাটা শুনলেই আমার গা জ্বলে যায়)। প্রকাশকদের অবস্থা যেন নেমন্তন্ন বাড়িতে হরিজনদের মতন।

লণ্ডনে বাংলা সাহিত্য

অন্য কোনও দেশে যাওয়া-আসার পথে লন্ডনে থেকে যাওয়া সহজ। তা ছাড়া আমার খুব ছেলেবেলার বন্ধু ভাস্কর দত্ত এখানে থাকেন, তাঁর সঙ্গে একবার দেখা না করে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না, সেই জন্য আমি বেশ কয়েকবার লন্ডনে গেছি।

এই প্রথম আমি লন্ডনে এলাম আমন্ত্রিত হয়ে! না, ঠিক প্রথম নয়, বহুকাল আগে একবার এসেছিলাম, ইংলন্ডেশ্বরীর আমন্ত্রণে, শুনতে গালভারী শোনালেও সেটা আসলে অতি ফর্মাল ব্যাপার ছিল। এবারে এসেছি বাংলা ভাষাভাষীদের ডাকে।

এবারে যেন দেখলাম এক নতুন লন্ডন। আমার কাছে এক সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। এখানকার ক’জনই বা জানেন যে কলকাতা ও ঢাকার পর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের তৃতীয় কেন্দ্র এখন লন্ডন।

‘বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ নামে একটি সংস্থা নেমন্তন্ন করেছেন শামসুর রাহমান এবং কে। তিন দিনের সাহিত্য সম্মেলন এবং একদিন টেমস নদীতে বজরা ভ্রমণের ব্যবস্থা। এই সংস্থার সভাপতি কাদের মাহমুদ এবং সম্পাদক সৈয়দ শাহীন।

প্যারিস থেকে ভাস্কর, বাদল বসু ও আমার লন্ডনে পৌঁছনোর কথা সকাল সাড়ে নটায়, বিমানের গণ্ডগোলে আমরা হিথরো এয়ারপোর্টে পা দিলাম বিকেল পাঁচটায়। সেই সকাল নটা থেকে সৈয়দ শাহীন ও তার বন্ধু বেলাল এয়ারপোর্টে ঠায় বসে আছে। তাদের অকৃত্রিম আন্তরিকতার সেই প্রথম পরিচয়।

ভাস্কর তার বাড়িতে আমাকে নিয়ে যাবেই। কিন্তু শাহীনদের দাবি, তারা আমাকে আমন্ত্রণ করেছে, সুতরাং এবার তাদের কাছেই আতিথ্য নিতে হবে। দু-একদিন পরে গিয়ে অবশ্যই থাকব, এই কথা দিয়ে সেদিনকার মতন ছাড়া পাওয়া গেল।

অন্যান্যবার লন্ডনে এসে পরিচিত ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কিছু কিছু বাঙালি গোষ্ঠী যে সানডে স্কুল বা রবিবারের বাংলা স্কুল খুলেছেন, সে খবরও আমি জানি ভাস্করের সঙ্গে গিয়ে একটা স্কুল দেখেওছি। এখানে আছে টেগোর সোসাইটি ও টেগোরিয়ান নামে সংস্থা। দেশ থেকে গান-বাজনা-নাচের দল প্রায়ই ইংলন্ডে গিয়ে অনুষ্ঠান করে আসেন। কিন্তু আধুনিক বাংলাসাহিত্য নিয়ে বড় ধরনের কোনও অনুষ্ঠান কিংবা কবি সম্মেলনের ব্যবস্থা লন্ডনে বাঙালিরা কখনও করেছেন বলে শুনিনি।

লন্ডনে পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের তুলনায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের উপস্থিতি সর্বত্র টের পাওয়া যায়, দক্ষিণ লন্ডনের কোনও-কোনও পাড়ায় সিলেটিদের পাড়া বলা যেতে পারে। সেখানকার স্কুলগুলিতে বাংলা পড়ানো হয়, অনেক জায়গায় বিভিন্ন সরকারি নোটিশ লেখা থাকে বাংলায়।

এখানকার বাংলাদেশি লেখকদের মধ্যে কয়েকজন আমার বন্ধু স্থানীয়, বি বি সি-র বাংলা বিভাগের অনেকের সঙ্গে আড্ডা হয় বুশ হাউজে গেলে। কিন্তু বাংলাদেশিরা যে বাংলা নিয়ে এখানে এত কর্মকান্ড ঘটিয়ে চলেছেন, সে সম্পর্কে আমার বিশেষ ধারণা ছিল না।

এখন ইংল্যান্ড থেকে সাতখানি বাংলা পত্রিকা বেরোয় নিয়মিত। সেগুলি সখের পত্রিকা কিংবা লিটল ম্যাগাজিন নয়, রীতিমতো ব্যাবসায়িকভাবে চলে, অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে কাজ করে, সেটাই তাদের জীবিকা। লন্ডনে বাংলা ছাপারও কোনও অসুবিধে নেই আর, এই সব পত্রিকা মূলত রাজনীতি এবং সংবাদমূলক, সাহিত্যের জন্য আলাদা পৃষ্ঠাও বরাদ্দ আছে। অদূর ভবিষ্যতে লন্ডন থেকে কোনও বাংলা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই।

লন্ডন থেকে বাংলা বই ছাপাও শুরু হয়ে গেছে। ওখানকার লেখকদের আর কলকাতা কিংবা ঢাকার ওপর নির্ভর না করলেও চলবে। এর মধ্যে প্রায় ষাটখানি বাংলা বই প্রকাশিত হয়েছে লন্ডন থেকে। প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, উপন্যাস জাতীয় কয়েকটি বই আমি দেখেছি, ছাপা-টাপা বেশ ভালো। পশ্চিমবাংলা ও বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মের কিছু কিছু লেখকের বইও প্রকাশিত হতে পারে লন্ডন থেকে।

এই সব কিছুরই উদ্যম বাংলাদেশিদের। পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের কেমন যেন উদাসীন মনে হয়। অনেকেই বাংলা বইটই পড়েন না। তবে, তাঁরা কিছুই করছেন না, এটা বলাও ঠিক নয়। হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ‘সাগর পারে’ একটি সুপরিচিত পত্রিকা, আরও কয়েকজন বই লিখে লন্ডন থেকে প্রকাশ করছেন।

বন্ধুবর আবদুল গাফফর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হল অনেকদিন পর। তিনি সহৃদয়ভাবে আলিঙ্গন করলেন আমাকে। আমি বললাম, আপনি ‘পূর্ব-পশ্চিম’ উপন্যাসের একটি চরিত্র, তিনি বললেন, আমিও আপনাকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছি; দেখা হল প্রাবন্ধিক হাসন মুরশেদ এবং সম্পাদক সফিক রেহমান এবং আরও অনেকের সঙ্গে। নতুন পরিচিত বহু অল্পবয়েসি ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেখে আমি মুগ্ধ। কয়েকজন কী চমৎকার আবৃত্তি করে। বাইশ থেকে তিরিশ বছর বয়স্ক প্রবাসী পশ্চিমবঙ্গীয়রা অনেকেই ভালো করে বাংলায় কথাই বলতে পারে না, বাংলা কবিতা পাঠ তো দূরের কথা।

প্রথম অনুষ্ঠানটি হল লন্ডন ইউনিভার্সিটির ম্যানিং হলে। প্রেক্ষাগৃহটি বিশেষ বড় নয়, কিন্তু এক সময় সব আসন পূর্ণ, কিছু কিছু লোকজন দাঁড়িয়েও ছিল। আজকাল বিদেশের সাহিত্য অনুষ্ঠানগুলিতে লোকজন বিশেষ হয় না, এখানে এই জনসমাগম দেখে হকচকিয়ে যাওরার মতন অবস্থা। গোটা অনুষ্ঠানটি আগাগোড়া বাংলা, দু-একজন সাহেব আলো মাইক ঠিক করছিল, না হলে বোঝবারই উপায় নেই যে ব্যাপারটা লন্ডন শহরে ঘটছে।

পরবর্তী দুটি অনুষ্ঠান বাংলাদেশ সেন্টার ও টয়েনবি হলে। যদিও শনি-রবিবার ছুটির দিযে ব্যবস্থা, কিন্তু ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই সঙ্গে নভেম্বরের শীতল বাতাস। লন্ডনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত বহুদূর, তবু উৎসাহীদের সংখ্যা কম নয়। কলকাতা ও ঢাকা থেকে আমরা দু’জন, আর বিলেতের অনেক লেখক-প্রাবন্ধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করলেন। প্যারিস প্রবাসী বাংলাদেশের মূকাভিনয় শিল্পী পার্থপ্রতিম মজুমদারও দুর্দান্ত মূকাভিনয় দেখালেন একদিন।

লম্বা বক্তৃতার বদলে আমি কিছুটা সময় প্রশ্নোত্তরের প্রস্তাব করেছিলাম। বক্তৃতা দিয়ে সাহিত্যের কোনও সুরাহা হয় না। শ্রোতা ও দর্শকদের মধ্যে থেকে প্রশ্ন এলে বোঝা যায়, তাঁরা সাহিত্য সম্পর্কে কতদূর খোঁজ খবর রাখেন, সাম্প্রতিক লেখা-জোখার সঙ্গে কতটা ওয়াকিবহাল। এখানে অনেকেই বেশ পড়াশুনো করেছেন মনে হল। শামসুর রাহমানের সঙ্গে শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তর বেশ জমে উঠেছিল। শামসুর চমৎকার কবিতা-পাঠ করেন, সুবক্তাও বটে।

অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং অংশগ্রহণকারী অধিকাংশই বাংলাদেশি তো বটে, দর্শক শ্রোতাদের মধ্যেও তাই! অনিন্দ্য য়ায় কিংবা অমলেন্দু বিশ্বাসের মতন দু-একজন কবির যথেষ্ট উৎসাহ আছে বটে কিন্তু অন্য অনেককেই এই সব অনুষ্ঠানে দেখা গেল না। বাংলাদেশিদের সঙ্গে পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের ঝগড়া নেই বটে, ব্যক্তিগতভাবে এদিকের সঙ্গে ওদিকের কারুর-কারুর বন্ধুত্বও আছে, কিন্তু সমবেতভাবে কোনও কিছু করার বিশেষ প্রয়াস দেখা যায় না। আমি অনেক সময় বলি, আর কিছুদিন পর বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারক হবেন বাংলাদেশিরাই, ভারত থেকে বাংলা ক্রমশ মুছে যাবে। এতে অনেকে চটে যান। কিন্তু পৃথিবীতে এখন বাংলা ভাষা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবেই ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠছে, ভারতের এই প্রাদেশিক ভাষা সম্পর্কে অনেকের খেয়াল থাকে না। ভারতীয় বাঙালিরা কতটুকু সময় দান করেছেন মাতৃভাষার জন্য? কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশেই বাংলাদেশিরা মাতৃভাষার জন্য গর্বিত, এই ভাষার প্রসার ও সম্মান বর্ধনের জন্য যত্নশীল। দু-একজন বাংলাদেশী তরুণ অভিমান ভরে আমাকে বলেছেন, ভারতীয় বাঙালিরা তাঁদের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণ জানান না। কিন্তু বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠানে ভারতীয় বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, কার্ড পাঠানো হয়, তবু প্রায় কেউই আসেন না। এই অভিযোগ কতদূর সত্য তা আমি জানি না, আমি কতটুকুই বা দেখেছি। কিন্তু আমার মনে হয়, ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যবধান যাই-ই থাকুক, অন্যান্য ব্যপারে যতই মতবিরোধ ঘটুক, সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুনিয়ার সমস্ত বাংলা ভাষাভাষীদের এককাট্টা হয়ে থাকা উচিত। দুই বাংলার বাঙালিরা একসঙ্গে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধির জন্য প্রয়াস চালালে, বিশ্বের কাছে এই ভাষা সংস্কৃতির গৌরব বর্ধন হবে, তাতে তো সকলেরই লাভ। এটা আমার আশা, সকলে যে মানবেন তার কোনও মানে নেই।