১৭০. পাণ্ডবগণের সহিত অঙ্গারপর্ণ গন্ধর্বের বিরোধ, গন্ধর্বসহ অর্জুনের যুদ্ধ, গন্ধর্বসহ অর্জুনের সখ্য

১৭০. পাণ্ডবগণের সহিত অঙ্গারপর্ণ গন্ধর্বের বিরোধ, গন্ধর্বসহ অর্জুনের যুদ্ধ, গন্ধর্বসহ অর্জুনের সখ্য

সপ্তত্যধিকশততম অধ্যায়।

বৈশম্পায়ন কহিলেন,—মহারাজ! মহর্ষি ব্যাস তথা হইতে প্রস্থান করিলে পাণ্ডবেরা সন্তুষ্টচিত্তে জননী কুন্তীকে অগ্রে লইয়া অবন্ধুর মা অরলম্বনপূর্বক উত্তরাভিমুখে যাত্রা করিলেন তাহারা দিবারাত্ৰিমধ্যে সোমাশ্রয়ায়ণ নামক এক তীর্থে গমন করিয়া জাহ্নবীতীরে উপনীত হইলেন। অর্জুন সর্বাগ্রে এক প্রদীপ্ত আলোক লইয়া প্রকাশার্থে ও আত্মরক্ষার্থে তথায় গমন করিলেন।

এক মহাবল পরাক্রান্ত গন্ধর্বরাজ ঐ পবিত্র ও রমণীয় গঙ্গাজলে অঙ্গনাপরিবৃত হইয়া বিহার করিতেছিলেন; এই অবসরে তিনি গঙ্গাতীরসন্নিহিত পাণ্ডবৃগণের পদশব্দ শ্রবণ করিলেন। শ্রবণ করিবামাত্র অতিশয় ক্রোধাবিষ্ট হইলেন। তিনি ক্রোধাবিষ্ট হইয়া ইতস্ততঃ দৃষ্টিপাত করিতেছেন, এই সময়ে জননীসমভিব্যাহারী পাণ্ডবগণকে তথায় আগমন করিতে দেখিয়া ধনু গুণ আস্ফালনপূর্বক কছিলেন, সন্ধ্যার কিঞ্চিৎকাল পূৰ্বাবধি সমস্ত রজনী কামচারী যক্ষ, গন্ধর্ব ও রাক্ষসদিগের মুহূর্ত, অবশিষ্টকাল মনুষ্যদিগের কাৰ্য্য সাধনাৰ্থে নিয়মিত আছে। তোমরা লোভপরতন্ত্র হইয়া রাক্ষসীবেলায় পরিভ্রমণ করিতেছ, অতএব তোমরা নিতান্ত অনভিজ্ঞ, সুতরাং আমরা রাক্ষসগণসমভিব্যাহারে তোমাদিগকে সংহার করিব। রাত্রিকালে নদীকূলসন্নিহিত হইলে মনুষ্যদিগকে ব্ৰহ্মবিৎ ব্যক্তিরা অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা করেন, অধিক কি, এই সময়ে মহাবল পরাক্রান্ত ভূপালদিগেরও নদীকূলে আগমন করা নিষিদ্ধ। তোমরা আর কেন দুরে রহিয়াছ? সত্বরে আমার সন্নিহিত হও। আমি জলবিহার করিবার নিমিত্ত গঙ্গায় অবগাহন করিয়াছি, ইহা কি তোমর পূর্বে অবগত হইতে পার নাই? আমার নাম অঙ্গারপর্ণ; আমি স্বকীয় বলবীর্যের উপর নির্ভর করিয়া থাকি। আমি অতিশয় অভিমানী, ঈর্ষাপরায়ণ ও কুবেরের প্রিয় সখা। আর অগ্রে যে বন দেখিতেছ, উহা অঙ্গারপর্ণ নামে প্রখ্যাত। আমি যদৃচ্ছাক্রমে ভাগীরথীতীরে সঞ্চরণ করিয়া ঐ স্থলে বিহার করিয়া থাকি। এই স্থানে রাক্ষস, শৃঙ্গী, দেবতা বা মনুষ্যেরা অগমন করিতে পারে না, তবে তোমরা কি কারণে এই স্থানে উপনীত হইলে বল?

তদীয় এতাদৃশ উদ্ধতবাক্যে উত্তেজিত হইয়া অর্জুন কহিলেন, হে দুর্মতে! সমুদ্র, হিমালয়ের পার্শ্বদেশ, আর এই নদীকূল, এই তিনটি প্রদেশ দিব, রাত্রি বা সন্ধ্যাকালে কাহারও অধিকৃত নহে। হে গগনচর! ভুক্ত হউক বা অভুক্তই হউক, দিবস বা রজনী হউক, গঙ্গায় গমন করিতে কালনিয়ম নাই। আর আমরাও মহাবল পরাক্রান্ত; অতএব তোমাকে অকালে কালসদনে প্রেরণ করিব। নিতান্ত দুর্বল মনিবেরাই রণক্ষেত্রে তোমাদিগকে সংকার করিয়া থাকে। পূর্বকালে এই গঙ্গ। হিমালয়ের হেমময় উত্তঙ্গ শৃঙ্গ হইতে নিঃসৃত হইয়া গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, রথস্থা, সর, গোমতী ও গণ্ডকী, এই সপ্তনদীরূপে সমুদ্রজলে মিলিত হন। এই সপ্ত স্রোতসতীর জলোপসবনে লোকে বিগতপাপ হইয়া থাকে। পরম পবিত্র গঙ্গ। আকাশপথগামিনী হইয়া দেবলোকে অলকানন্দা নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছেন। ভগবান বাদরাণি কহেন, এই গঙ্গা পিতৃলোক উদ্ধার করিবার নিমিত্ত বৈতরণীরূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে। পাপাচার লোকেরা ঐ নদী পার হইতে পারে। সকলেই এই স্বর্গফলদায়িনী দেবনদীতে অবাধে অবগাহন করিয়া থাকে। তুমি সেই সনাতন ধর্মের অপলাপ করিয়া কেন প্রতিষেধ করিতেছ? ভাগীরথীর জল অতি পবিত্র, আমরা স্বেচ্ছাক্রমে এই পবিত্র জল স্পর্শ করিব; ইহাতে কোনরূপ বাধা মানিব না।

এই কথা শুনিবামাত্র অঙ্গারপর্ণ অতিশয় রোয়পরবশ হইয়া শরাসন আকর্ষণপূর্বক মহাবিদ অশীবিষ সদৃশ সুতীক্ষ্ণ শর সকল নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। ধনঞ্জয় হস্তস্থিত অলোক ও চর্ম বিঘূর্ণিত করিয়া তৎক্ষণাৎ তদীয় সমস্ত শরজাল নিরাস করিলেন এবং কহিলেন, হে গন্ধর্ব! অস্ত্রবিদ্যা বিশারদ বীরের নিকটে এরূপ বিভীষিকা প্রদর্শন করা নিতান্ত অনুপযুক্ত; প্রদর্শিত হইলে ফেণের ন্যায় বিলীন হইয়া যায়। মানুষীশক্তি সর্বতে। ভাবে সকল গন্ধর্বদিগকে পরাভব করিতে পারে, এক্ষণে ইহাই লক্ষিত হইতেছে; অতএব আইস, তোমার সহিত অস্ত্রবুদ্ধ করিব। মায়াযুদ্ধে প্রয়োজন নাই। পূর্বকালে দেবরাজ ইন্দ্রের মান্য ও পূজনীয় বৃহস্পতি ভরদ্বাজকে এই আগ্নেয়াস্ত্র প্রদান করিয়াছিলেন। তৎপরে ভরদ্বাজ অগ্নিবেশ্যকে, পরে অগ্নিবেশ মদীয় গুরু দ্রোণকে সমর্পণ করেন। অনন্তর দ্রোণাচাৰ্য্য অতি উৎকৃষ্ট বোধে ঐ অস্ত্র আমাকেই প্রদান করিয়াছেন। এই কথা বলিয়া অর্জুন ক্রোধভরে গন্ধর্বের প্রতি সেই প্রদীপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র প্রয়োগ করিলেন। প্রয়োগ করিবামাত্র তৎক্ষণাৎ তদীয় রথ ভস্মসাৎ হইল। তখন বিরহ, বিপন্ন ও অস্ত্রতেজে বিমোহিত গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণকে অধোমুখে ভূতলে পতিত দেখিয়ে অর্জুন দিব্যমালাঙ্কৃত তদীয় কেশপাশ ধারণ করিলে এবং বিচেতনাবস্থায় কেশাকর্ষণপূর্বক তাঁহাকে অপন ভ্রাতৃসন্নিধানে লইয়া গেলেন।

এই অবসরে শরণার্থিনী কুম্ভীনসীনাম্নী তদীয় সহধর্মিণী পতির প্রাণরক্ষার্থে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের শরণাগত হইলেন। তিনি কহিলেন, হে মহাভাগ। আমি গন্ধর্বরাজমহিষ কুম্ভানসী, অনুকম্পা করিয়া আপনি আমার ভর্তাকে পরিত্যাগ করুন; আমি আপনকার শরণাপন্ন হইলাম। তখন যুধিষ্ঠির কহিলেন, হে অরিনিসূদন অর্জন! যশোহীন, স্ত্রীসহায়, নিতান্ত দুৰ্বল ও যুদ্ধে পরাজিত শত্রুকে বিনাশ করা কর্তব্য; অতএব ইঁহাকে অবিলম্বে পরিত্যাগ কর। অর্জুন তাহাকে কহিলেন, হে গন্ধর্ব : অদ্য কুরুরাজ যুধিষ্ঠির তোমাকে অভয় দান করিলেন, অতএব তুমি জীবন লইয়া প্রস্থান কর; আর কোন দুঃখ করিও না। তখন গন্ধর্বরাজ কহিলেন, হে সৌম্য। আমি পরাজিত হইলাম, এক্ষণে আমার পূর্বনাম অঙ্গীরপর্ণ ছিল, তাহা পরিত্যাগ করিতেছি; আমি জনসমাজে বলবীৰ্য্য ও নামদ্বারা শ্লাঘা করি না; কিন্তু এই আমার পরম লাভ যে, দিব্যাস্ত্রধারী অর্জুনকে গন্ধমায়ায় অধিকৃত করিব। আমার এই বিচিত্র রথ অস্ত্রাগ্নিদ্বারা ভস্মসাৎ হইয়াছে; অতএব আমি চিত্ররথ নামের পরিবর্তে দগ্ধরথ বলিয়া প্রখ্যাত হইলাম। পূর্বে আমি তপোবলে যে বিদ্যা লাভ করিয়াছিলাম, অদ্য প্রাণপ্রদ মহাত্মা অর্জুনকে সেই বিদ্যা প্রদান করিব। যিনি বলদ্বার শত্রুকে স্তম্ভিত করিয়া, পরাজিত ও শরণাগত শত্রুকে প্রাণদান করেন, তিনি সর্বকল্যাণেরই ভাজন হইতে পারেন। আমি যে বিদ্যা প্রদান করিব, ইহার নাম চাক্ষুষী বিদ্যা। ভগবান্ মনু সোমকে ইহা সমর্পণ করেন। সোম হইতে বিশ্বাবসু ও বিশ্বাবসু হইতে এই বিদ্যা আমিই প্রাপ্ত হইয়াছি। এই গুরুপ্রদত্ত বিদ্যা কাপুরুষগামিনী হইয়া বিনষ্ট হইতেছে; হে বীর! এই বিদ্যাপ্রাপ্তিবৃত্তান্ত আদ্যোপান্তু সমুদায় নিবেদন করিলাম, এক্ষণে ইহার কিরূপ প্রভাব, তাহাও অবগত করাইতেছি, অবধান কর। এই ত্রিলোক মধ্যে যে বস্তু অবলোকন করিতে অভিলাষ করিবে, এই বিদ্যাপ্রভাবে তাহা তৎক্ষণাৎ দেখিতে পাইবে। যাহার যাদৃশী বাসনা, তিনি তদনুসারে সকল বিষয়ই নেত্রগোচর করিতে পারিকেন। নিরবচ্ছিন্ন ছয় মাস একপদে দণ্ডায়জান থাকিয়া এই বিদ্যা লাভ করিতে হয়; অতএব ব্ৰত অনুষ্ঠিত না হইলেও আমি তোমার নিমিত্ত সেই বিদ্যাকে প্রসন্ন করিব। হে মহারাজ! আমরা এই বিদ্যাপ্রভাবে মনুষ্য হইতে অপেক্ষাকৃত উৎকর্ষ লাভ করিয়াছি এবং দেবগণের সমকক্ষ হইয়া গগনমার্গে সঞ্চরণপ্রভৃতি অতি অদ্ভুত ব্যাপার সমুদায় সম্পাদন করিয়া থাকি। এক্ষণে তোমাকে ও তোমার ভ্রাতাদিগকে অ। এক এক শত গন্ধ ধ্বজ অঙ্গ প্রদান করিব। সেই সমস্ত গন্ধর্বজ অশ্বের বর্ণ অতি মনোহর, বেগও মন অপেক্ষাও খরতর। ইহারা কখন তরুণ বা জীর্ণ হয় না, ইহাদিগের গমনবেগ কদাচ হীন হইবার নহে। পূর্বকালে বৃত্রাসুর সংহারার্থ দেবরাজ ইন্দ্রের বজ নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। উহা বৃত্রাসুর-শিরে দশধা ও শসা চূর্ণ হইয়া যায়। তদনন্তর দেবতারা শতভাগে বিভক্ত ঐ বজ্রভাগসকলের উপাসনা করেন। সেই সকল বাংশের অংশে এই গন্ধর্বজ অশ্বগণ জন্মগ্রহণ করে, এই নিমিত্ত ইহারা অবধ্য; কামবর্ণ, কামজব ও কামতঃ সমুপস্থিত গন্ধর্বজ অশ্বগণ তোমার অভিলাষ সফল করিবে। অর্জুন কহিলেন, হে গন্ধর্ব! তুমি প্রীত হইয়া বা প্রাণসঙ্কট উপস্থিত দেখিয়া আমাকে এই বিদ্যাধন অৰ্পণ করিতেছ? যদি প্রতি প্রদান না হয়, তবে তাহাতে আমার প্রয়োজন নাই। গন্ধর্বরাজ কহিলেন, হে অর্জুন! সাধু লোকের সহিত সমাগম হইলে স্বভাবতই প্রীত হইতে হয়; কিন্তু তুমি আমার প্রাণ দান করিয়াছ, এই নিমিত্ত আমি সাতিশয় প্রীত হইয়া এই বিদ্যাদানে উদ্যত হইয়াছি। আর আমি তোম৷ হইতে অত্যুৎকৃষ্ট অগ্নেয়াস্ত্র ও বৃদ্ধিনামক ঔষধ এই দুইটি এককালে গ্রহণ করিব। অর্জুন কহিলেন, হে গন্ধৰ্বরাজ! আমি ব্ৰহ্মাস্ত্র প্রদান করিয়া তোমা হইতে গন্ধর্বজ অশ্ব গ্রহণ করিব; কিন্তু আমার নিতান্ত ইচ্ছা যে, সর্বদা আমাদিগের সমাগম হয়। হে সখে! তোমাদিগের হইতে যে কারণে ভয় উৎপন্ন হয় এবং আমরা বেদবে ও সাধুচরিত্র হইলেও রাত্রিকালে আগমন করিয়া যে কারণে এই রূপ তিরস্কৃত ও অবমানিত হইলাম, তাহার কারণ কি, সমুদায় বল।

গন্ধর্বরাজ কহিলেন, হে অর্জুন! তোমরা অনগ্নি ও অনাহূত এবং কোন ব্রাহ্মণ ও তোমাদিগের পুরোবর্তী নহেন; এই কারণে আমি তোমাদিগকে তিরস্কার ও অবমাননা করিয়াছিলাম। যক্ষ, রাক্ষস, গন্ধর্ব, পিশাচ, উরগ ও দানবের! কুরুবংশবিস্তার কীৰ্তন করিয়া থাকেন। আর নারদ প্রভৃতি দেবর্ষিমুখেও আমি তোমার পূর্বপুরুষদিগের গুণানুবাদ শ্রবণ করিয়াছি। অধিক কি, এই সসাগরা পরা পৰ্যটনপ্রসঙ্গে আমি স্বয়ংই তোমার সদ্বংশের ভূয়িষ্ঠ প্রভাব অবগত হইয়াছিলাম। ত্রিলোকপ্রখ্যাত মহাযশাঃ দ্রোণ, যাহার নিকটে তুমি বেদ ও ধনুর্বেদে উপদিষ্ট হইয়ছি, তিনিও আমার পরিচিত; দেবপ্রধান ধর্ম, বায়ু, ইন্দ্র ও যমজ অশ্বিনীকুমার; আর নরশ্রেষ্ঠ পাণ্ডু এই ছয় জন, কুরুবংশবিবর্ধন ও তোমাদিগের জন্মদাতা পিতা। আমি তাহাদিগের সকলকেই সবিশেষ জ্ঞাত আছি; তোমরা অতি সচ্চরিত্র, মহাত্মা ও মহাবীর। তোমাদিগের মনে সংকল্প ও অধ্যবসায় সম্যক অবগত হইয়াও আমি তোমাদিগকে তিরস্কার ও অবমাননা করিয়াছিলাম। বিশেষতঃ বাহুবলসম্পন্ন, বীরপুরুষেরা স্ত্রীসন্নিধানে অপমানিত হইলে কখনই ক্ষমা প্রদর্শন করিতে পারে না; আমি সস্ত্রীক ছিলাম, রাত্রিকালে আমাদিগের বলবীৰ্য্য দ্বিগুণতর পরিবর্ধিত হইয়া থাকে, এই সমস্ত কারণে আমার অন্তঃকরণে ক্রোধের সঞ্চার হইয়াছিল। হে অর্জুন! তুমি আমাকে যুদ্ধে পরাজয় করিয়াছ, অতএব যে কারণে জয়ী হইলে, বিধানানুসারে তাহা কাৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর।

ব্রহ্মচর্য পরমোৎকৃষ্ট ধর্ম। তুমি সেই ধর্মাক্রান্ত বলিয়া আমাকে বুদ্ধে পরাজয় করিয়াছ। যে ক্ষত্রিয় কমিপরায়ণ, তিনি রাত্রিকালে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলে কদাচ জীবন রক্ষা করিতে পারেন না। আর সস্ত্রীক হইলেও যিনি সনাতন বেদশাস্ত্র সম্মুখে রাখিয়া পুরোহিতের উপর কাৰ্যভার অর্পণপূর্বক যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন, তিনি নিশ্চয়ই সমস্ত নিশাচরকে পরাস্ত করিতে পারেন। অতএব হে তাপত্য! ইহলোকে যে যে বিষয়ে মনুষ্যের শ্রেয়েলাভের সম্ভাবনা, তৎসমুদয় বিষয়ে ইন্দ্রিয়দমনশীল পুরোহিতকে নিয়োগ করা কর্তব্য। ষড়ঙ্গবেদপারগ, অতি পবিত্র, সত্যবাদী, ধর্মাত্মা ও সুধীর ব্রাহ্মণই রাজাদিগের পুরোহিত হয়েন। যে ভূপতির এতাদৃশ, সদ্গুণসম্পন্ন পুরোহিত বিদ্যমান আছেন, তাহার ইহলোকে জয় ও পরলোকে স্বর্গলাভ হইয়া থাকে। অর্থোপার্জন ও উপার্জিত অর্থ রক্ষা করিবার নিমিত্ত এক গুণবান্ পুরোহিত নিয়োগ করা অতিমাত্ৰ শ্ৰেয়ংকল্প। যে রাজা এই সসাগরা পৃথিবী অধিকার করিতে ইচ্ছা করেন, যিনি সর্বসম্পদ লাভের অভিলাষী হয়েন, তাহার পুরোহিতের হিতকারিণী বুদ্ধির আশ্রয় লওয়া বিধেয়। যে রাজার পুরোহিত নাই, তিনি কদাচ অভিজন ও শৌৰ্য্য প্রভাবে ভূমিসম্পত্তি অধিকার করিতে পারেন না; অতএব হে কুরুবংশবর্ধন অর্জুন! এক্ষণে ইহাই প্রতিপন্ন হইল যে, রাজার। পুরোহিতের সাহায্য গ্রহণ করিলে বহুকাল রাজ্যপালন করিতে পারেন।