০১০. ঋষিগণকর্ত্তৃক নহুষের ইন্দ্ররাজ্যে অভিষেক

১০ম অধ্যায়

ঋষিগণকর্ত্তৃক নহুষের ইন্দ্ররাজ্যে অভিষেক

“অনন্তর দেব, ঋষি ও পিতৃগণ অতি তেজস্বী, যশস্বী এবং পরমধার্মিক নহুষরাজকে দেবরাজ্যে অভিষেক করিবার পরামর্শ করিয়া সকলে তাঁহার নিকট গমনপূর্ব্বক কহিলেন, “হে নরনাথ! আপনি দেবরাজ্যের ভার গ্রহণ করুন।”

“নহুষ কহিলেন, “বলবান ব্যক্তিরই রাজ্যভার গ্রহণ করা উচিত; দেবরাজ ইন্দ্র মহাবলপরাক্রান্ত, আমি নিতান্ত দুর্ব্বল, আপনাদিগের প্রতিপালনে অসমর্থ।” তখন ঋষিপ্রমুখ দেবগণ কহিলেন, “মহারাজ! আমরা সাতিশয় ভীত হইয়াছি; আপনি আমাদিগের তপোবল আশ্রয় করিয়া সুরলোকের অধিরাজ হউন। আপনি দর্শনমাত্র দেব, দানব, যক্ষ, ঋষি, পিতৃগণ, গন্ধর্ব্ব ও অন্যান্য ভূতগণের তেজঃ হরণ করিয়া অপ্রতিহতবলসম্পন্ন হইবেন; আপনি ধর্ম্মানুসারে সর্ব্বলোকের উপর আধিপত্য করুন এবং ব্রহ্মর্ষি ও দেবগণের রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান হউন।” অনন্তর রাজা নহুষ সুররাজ্যে অভিষিক্ত হইয়া ধৰ্মপথ অবলম্বনপূর্ব্বক সকল লোকের উপর আধিপত্য করিতে লাগিলেন।

এইরূপে রাজা সুদুর্লভ বর ও অসুলভ ত্ৰিদিবরাজ্য [স্বৰ্গরাজ্য] অধিকার করিয়া স্বাভিলাষ চরিতার্থ করিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন। তিনি কখন দেবোদ্যানে, কখন নন্দনবনে, কখন কৈলাসে, কখন হিমালয়ে, কখন শ্বেতাচলে, কখন মন্দরে, কখন মহেন্দ্রে, কখন সহ্যে, কখন মালয়ে, কখন সাগরে, কখন বা সরোবরে অপ্সরা ও দেবকন্যা সমভিব্যাহারে ক্রীড়া কৌতুকে কালব্যাপন করিতে লাগিলেন। তিনি কখন শ্রবণমনোরম বিবিধ কথাপ্রসঙ্গে কাল অতিবাহিত, কখন বা বাদিত্রসহকৃত [বাদ্য] বিশুদ্ধতানিলয়সংযুক্ত সুমধুর সঙ্গীত শ্ৰবণে শ্রবণেন্দ্ৰিয় চরিতার্থ করিতেন। বিশ্বাবসু, নারদ, গন্ধর্ব্ব ও অপ্সরাগণ এবং মূর্ত্তিমান ছয় ঋতু তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া সেবা করিতে লাগিলেন। শীতল সুগন্ধ গন্ধবহ মন্দ মন্দ প্রবাহিত হইতে লাগিল।

নহুষের শচীকে মহিষীরূপে পাইবার ইচ্ছা

“এইরূপে অবিচ্ছিন্ন সুখসম্ভোগে কিয়ৎকাল অতীত হইলে পর একদা দুরাত্মা নহুষ ইন্দ্রমহিষী শচীদেবীকে নয়নগোচর করিয়া কহিল, “হে সভাসদগণ! আমি ইন্দ্র; দেবলোক ও নরলোকের অধীশ্বর হইয়াছি; অতএব শচী কি নিমিত্ত আমার সেবা করেন না? আজি অবিলম্বে আমার নিকট তাহাকে আগমন করিতে হইবে।” “ইন্দ্রমহিষী নহুষবাক্যশ্রবণে অতিশয় উদ্বিগ্ন হইয়া বৃহস্পতিকে কহিলেন, “হে ব্ৰহ্মন! আমি আপনার শরণাগত; দুরাত্মা নহুষ আমার ধর্ম্মনাশ করিতে উদ্যত হইয়াছে; এক্ষণে আপনি আমাকে রক্ষা করুন। আপনার বাক্য কদাচ মিথ্যা হইবার নহে, আপনি পূর্ব্বে কহিয়াছিলেন, “তুমি দেবরাজের দয়িতা, অত্যন্ত সুখভাগিনী, একপতিক ও পতিব্ৰতা; তোমাকে কদাচ বৈধব্যযন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে না; তুমি স্বামীর পূর্ব্বেই লোকান্তর গমন করিবে”, এক্ষণে আপনার এই সকল বাক্য যেন সত্য হয়।”

“বৃহস্পতি কহিলেন, “দেবি! আমার বাক্য কদাচ মিথ্যা হইবার নহে; তুমি অচিরকালমধ্যেই দেবরাজের সাক্ষাৎকারলাভ করিবে; নহুষ হইতে তোমার কিছুমাত্র ভয় নাই।” ইন্দ্রাণী বৃহস্পতির শরণাগত হইয়াছেন শুনিয়া রাজা নহুষ সাতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন।”