১১. যুধিষ্ঠিরের প্রতি কৃষ্ণ-উপদেশ—জীবাহঙ্কার-কথা

যুধিষ্ঠিরের প্রতি কৃষ্ণ-উপদেশ—জীবাহঙ্কার-কথা

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! অদ্ভুতকর্ম্মা মহর্ষি বেদব্যাস যুধিষ্ঠিরকে এইরূপ উপদেশ প্রদান করিয়া মৌনাবলম্বন করিলে বৃষ্ণিবংশাবতংস বাসুদেব রাহুগ্রস্ত দিবাকরের ন্যায়, সধূম অনলের ন্যায়, নিতান্ত নিষ্প্রভ, দুঃখিতচিত্ত ধৰ্ম্মরাজকে আশ্বাস প্রদানপূৰ্ব্বক কহিতে লাগিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! ‘কুটিলতাই মৃত্যুর এবং সরলতাই ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির কারণ’, এই বাক্যটি বিশেষরূপে বোধগম্য হইলেই যথার্থ জ্ঞান প্রাপ্ত হওয়া যায়। ইহা ভিন্ন আর যত বাক্য, সকলই প্রলাপ মাত্র। আপনার কোন কাৰ্য্যই সমাহিত হয় নাই। আপনার এখনও শত্রু অবশিষ্ট আছে। আপনার শরীরের অভ্যন্তরে যে অহঙ্কাররূপ দুর্জ্জয় শত্রু রহিয়াছে, তাহা কি আপনি নিরীক্ষণ করিতেছেন না? হে মহারাজ! এক্ষণে আমি জীবের সহিত অহঙ্কারের যেরূপ যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন।

“পূৰ্ব্বকালে অহঙ্কার পৃথিবীসমুৎপন্ন ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে বশীভূত করিয়া জীবাত্মাকে সুগন্ধ আঘ্রাণরূপ বিষয়ভোগে নিতান্ত উৎসুক করিয়াছিল। তখন জীবাত্মা নিতান্ত ক্রুদ্ধ হইয়া অহঙ্কারের প্রতি বিবেকরূপ অস্ত্র নিক্ষেপপূৰ্ব্বক তাহাকে দূরীভূত করিলেন। অনন্তর অহঙ্কার জলসমুৎপন্ন রসনেন্দ্রিয়কে বশীভূত করিয়া জীবাত্মাকে রসাস্বাদনে সমুৎসুক করিল। তদ্দর্শনে জীবাত্মা অহঙ্কারের প্রতি পুনরায় বিবেকাস্ত্র নিক্ষেপপূৰ্ব্বক তাহাকে দূরীভূত করিলেন। তখন অহঙ্কার জ্যোতিঃসমুৎপন্ন নয়নেন্দ্রিয় অধিকার করিয়া জীবাত্মাকে বস্তুদর্শনে সমুৎসুক করিল। তদ্দর্শনে জীবাত্মা অহঙ্কারের প্রতি বিবেকরূপ অস্ত্র নিক্ষেপপূৰ্ব্বক তাহাকে অপসারিত করিলেন। অনন্তর অহঙ্কার বায়ুসমুৎপন্ন ত্বগিন্দ্রিয়কে বশীভূত করিয়া জীবকে স্পর্শানুভবে সমুৎসুক করিল। তদ্দর্শনে জীবাত্মা পুনরায় তাহার প্রতি বিবেকাস্ত্র নিক্ষেপপূৰ্ব্বক তাহাকে দূরীভূত করিলেন। পরে অহঙ্কার আকাশসম্ভূত কর্ণেন্দ্রিয় অধিকার করিয়া জীবাত্মাকে শব্দশ্রবণে সমুৎসুক করিল। তখন জীবাত্মা ক্রোধভরে পুনরায় বিবেকরূপ অস্ত্র নিক্ষেপ করিলেন। পরিশেষে অহঙ্কার গত্যন্তর না দেখিয়া জীবাত্মার মধ্যে প্রবিষ্ট হইল। অহঙ্কার প্রবেশ করিবামাত্র জীবাত্মা মোহে একান্ত অভিভূত হইলেন। ঐ সময় গুরু তাঁহাকে তত্তজ্ঞানপ্রভাবে প্রতিবোধিত করিলেন। তখন জীবাত্মা সেই তত্ত্বজ্ঞানরূপ বজ্ৰদ্বারা অহঙ্কারকে এককালে বিনষ্ট করিয়া ফেলিলেন।

“হে ধৰ্ম্মরাজ! পূর্ব্বে দেবরাজ ইন্দ্র ঋষিগণের নিকট ও তৎপরে ঋষিগণ আমার নিকট এই রহস্য কীৰ্ত্তন করিয়াছিলেন।”