২৫. ঋষিগণের যুধিষ্ঠিরাদির পরিচয়গ্রহণ

ঋষিগণের যুধিষ্ঠিরাদির পরিচয়গ্রহণ

বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনন্তর ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির মহাবলপরাক্রান্ত ভ্রাতৃগণে পরিবেষ্টিত হইয়া জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রমে উপবিষ্ট হইলে, নানাদেশবাসী মহর্ষিগণ তাঁহাদিগের সহিত সাক্ষাৎ করিবার নিমিত্ত তথায় সমুপস্থিত হইয়া অন্ধরাজকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! আপনার আশ্রমে যেসমুদয় স্ত্রী-পুরুষ অবস্থান করিতেছেন, তাঁহাদিগের মধ্যে কাহার নাম যুধিষ্ঠির, কাহার নাম ভীমসেন, কাহার নাম অর্জ্জুন, কাহার নাম নকুল, কাহার নাম সহদেব ও কাহার নাম দ্রৌপদী, ইহা পরিজ্ঞাত হইতে আমাদিগের নিতান্ত বাসনা হইতেছে।”

মহর্ষিগণ এই কথা কহিলে, মহাত্মা সঞ্জয় পাণ্ডবগণ, দ্রৌপদী ও অন্যান্য কৌরবরমণীদিগের পরিচয়প্রদানার্থ তাঁহাদিগকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিতে লাগিলেন, “মহর্ষিগণ! ঐ যে সুবর্ণের ন্যায় গৌরবর্ণ দীর্ঘনেত্ৰ মহাত্মা সিংহের ন্যায় উপবেশন করিয়া রহিয়াছেন, উহার নাম যুধিষ্ঠির। ঐ যে মত্তগজেন্দ্রগামী, তপ্তকাঞ্চনবর্ণ দীর্ঘবাহু মহাবলপরাক্রান্ত বীরপুরুষ অবস্থান করিতেছেন, উহার নাম বৃকোদর। ঐ মহাবীরের পার্শ্বে যে শ্যামবর্ণ মহাধনুর্দ্ধর মহাবীর উপবিষ্ট রহিয়াছেন, উহার নাম অর্জ্জুন এবং ঐ কুন্তীর সন্নিধানে বিষ্ণু ও ইন্দ্রের ন্যায় যে যুবকদ্বয় অবস্থান করিতেছেন, উঁহাদিগের নাম নকুল ও সহদেব। ঐ দুই বীরপুরুষের তুল্য পরমসুন্দর, বলবান্ ও সচ্চরিত্র আর কেহই নাই।

“ঐ যে পদ্মপলাশাক্ষী শ্যামবর্ণা, পরমসুন্দরী রমণী উপবিষ্টা রহিয়াছেন, উঁহার নাম দ্রৌপদী। ইঁহার পার্শ্বে চন্দ্রপ্রভার ন্যায় গৌরবর্ণা, পরমরূপবতী, বাসুদেবভগিনী সুভদ্রা অবস্থান করিতেছেন। ঐ যে তপ্তকাঞ্চনের ন্যায় গৌরাঙ্গী পরমরূপবতী রমণী উপবিষ্টা রহিয়াছেন, উনি অর্জ্জুনের ভাৰ্য্যা চিত্রাঙ্গদা। উহার অনতিদূরে যে নীলোৎপলবর্ণা রমণী অবস্থান করিতেছেন, উনিই ভীমসেনের কলত্র, উঁহার নাম কালী। এই যে চম্পকদামের ন্যায় গৌরবর্ণা রূপবতী রমণী লক্ষিত হইতেছে, উনি মহারাজ জরাসন্ধের দুহিতা; মাদ্রীর কনিষ্ঠপুত্র সহদেব উহার পাণিগ্রহণ করিয়াছেন। উহার অনতিদূরে মাদ্রীর জ্যেষ্ঠপুত্র নকুলের ভাৰ্য্যা অবস্থান করিতেছেন; উহার নাম করেণুমতী। ঐ যে পরমাসুন্দরী রমণী বালক পুত্রকে ক্রোড়ে করিয়া অবস্থান করিতেছেন, উনি অভিমন্যুর ভাৰ্য্যা বিরাটনন্দিনী উত্তরা। পূৰ্ব্বে দ্ৰোণ প্রভৃতি সপ্তরথী উঁহারই ভর্ত্তাকে অন্যায়-যুদ্ধে নিহত করিয়াছেন। আর ঐ যে শুক্লাম্বরধারিণী সধবাচিহ্নবিবর্জ্জিত রমণীগণকে দর্শন করিতেছেন, উঁহারা এই বৃদ্ধ অন্ধরাজের পুত্রবধূ। উহাদের পতিপুত্রগণ কুরুক্ষেত্রযুদ্ধে নিহত হইয়াছেন।

“হে তপোধনগণ! এই আমি আপনাদিগের নিকট সুবিস্তর ইঁহাদিগের পরিচয় প্রদান করিলাম।”

মহামতি সঞ্জয় এই কথা কহিলে তাপসগণ স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলেন এবং পাণ্ডবগণের সৈন্যসমুদয় বাহন পরিত্যাগপূৰ্ব্বক আশ্রমের অবিদূরে উপবেশন করিল।