২৩. ধৃতরাষ্ট্রদর্শনার্থ সপরিবার যুধিষ্ঠিরের যাত্রা

ধৃতরাষ্ট্রদর্শনার্থ সপরিবার যুধিষ্ঠিরের যাত্রা

বৈশম্পায়ন বলিলেন, অনন্তর ষষ্ঠ দিবস উপস্থিত হইলে, ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির লোকপালসদৃশ অৰ্জ্জুন প্রভৃতি ভ্রাতৃগণকর্ত্তৃক সুরক্ষিত সৈন্যদিগকে বনগমন করিতে আদেশ করিবামাত্র সৈন্যগণমধ্যে ‘অশ্বযোজনা কর, রথযোজনা কর’ এইরূপ ঘোরতর কোলাহল-শব্দ সমুত্থিত হইল। অনন্তর ধৃতরাষ্ট্রের দর্শনাকাঙ্ক্ষী পুরবাসী ও জনপদবাসী লোকসমুদয় কেহ কেহ প্রজ্বলিত হুতাশনসদৃশ কনকময় রথে, কেহ কেহ হস্তিপৃষ্ঠে ও কেহ কেহ উষ্ট্রে আরোহণ করিয়া অরণ্যাভিমুখে গমন করিতে লাগিল। এবং অনেকে পাদচারেই ধাবমান হইল।

মহাবীর যুযুৎসু ও পুরোহিত ধৌম্য ধৰ্ম্মরাজের আজ্ঞানুসারে আশ্রম-গমনে ক্ষান্ত হইয়া পুররক্ষায় নিযুক্ত হইলেন। দ্বিজবর কৃপাচার্য্য যুধিষ্ঠিরের আদেশানুসারে সৈন্যসমভিব্যাহারে যাত্রা করিলেন। ঐ সময় রাজা যুধিষ্ঠির রথারোহণপূৰ্ব্বক ব্রাহ্মণগণে পরিবেষ্টিত হইয়া আশ্রমাভিমুখে যাত্রা করিলে ভৃত্যগণ তাঁহার মস্তকে শ্বেতচ্ছত্র ধারণ করিল; সূত, মাগধ ও বন্দিগণ তাঁহার স্তবপাঠ করিতে লাগিল এবং অসংখ্য রথারোহী সৈন্য তাঁহার সমভিব্যাহারে ধাবমান হইল।

ভীমকৰ্ম্মা ভীমসেন অস্ত্রশস্ত্রগ্রহণপূৰ্ব্বক পতাকার হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া বহুসংখ্যক গজারোহী সৈন্যসমভিব্যাহারে আশ্ৰমাভিমুখে যাত্রা করিলেন। মহাবীর অর্জ্জুন শ্বেতাশ্বসংযুক্ত অনলসঙ্কাশ দিব্যরথে আরোহণ করিয়া যুধিষ্ঠিরের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করিতে লাগিলেন। মাদ্ৰীতনয় নকুল ও সহদেব উভয়ে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করিয়া ধৰ্ম্মরাজের অনুগমন করিতে প্রবৃত্ত হইলেন এবং দ্ৰৌপদী প্রভৃতি কুলকামিনীগণ অন্তঃপুরাধ্যক্ষ ব্যক্তিগণকর্ত্তৃক পরিরক্ষিত হইয়া শিবিকায় আরোহণপূৰ্ব্বক অপরিমিত ধনদান করিতে করিতে গমন করিতে লাগিলেন। তৎকালে সেই বীণাবেণুনিনাদযুক্ত হস্তী, অশ্ব ও রথসঙ্কুল পাণ্ডবসৈন্যের শোভার আর পরিসীমা রহিল না। পাণ্ডবগণ সেই সৈন্যগণসমভিব্যাহারে রমণীয় নদীতীরে ও সরোবরসমীপে বাস করিয়া গমন করিতে লাগিলেন। অনন্তর তাঁহারা ক্রমে ক্রমে কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া পবিত্রতোয়া যমুনানদী অতিক্রমপূৰ্ব্বক দূর হইতে রাজর্ষি ধৃতরাষ্ট্র ও শতযূপের আশ্রম দর্শন করিলেন। ঐ আশ্রমদ্বয় দর্শনে তাঁহাদের ও তাঁহাদের সমভিব্যাহারী ব্যক্তিগণের আহ্লাদের আর পরিসীমা রহিল না। তখন তাঁহারা সকলেই মহাকোলাহল করিতে করিতে সেই তপোবনে প্রবেশ করিতে লাগিলেন।