৩৮. যুদ্ধার্থ শিশুপালের মন্ত্রণা

যুদ্ধার্থ শিশুপালের মন্ত্রণা

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহাবল ভীষ্ম এই কথা বলিয়া নিবৃত্ত হইলে পর সহদেব কহিতে লাগিলেন, “কেশিনিহন্তা কেশব অমিত পরাক্রমশালী। তিনি আমাদিগের পরম পূজনীয়। যে সকল নৃপাধ্যমেরা কৃষ্ণের পূজা সহ্য করিতে না পারে, আমি তাহাদিগের মস্তকে পদার্পণ করি। যদি তাহাদিগের ক্ষমতা থাকে, সমুচিত করিতে সমর্থ, সেই নৃপোত্তমেরা অবশ্যই কৃষ্ণপূজা করিতে অনুজ্ঞা করিবেন।” সহদেব উক্তপ্রকার গর্ব্বপ্রদর্শনপূর্ব্বক পাদোত্তোলন করিলে সেই সকল অভিমানপূর্ণ মহাবল রাজগণের মধ্যে কেহই বাঙনিম্পত্তি করিতে পারিলেন না। অনন্তর সহদেবের মস্তকে পুষ্পবৃষ্টি পতিত হইল এবং আকাশবাণী তাঁহাকে সাধুবাদ করিতে লাগিল। সর্ব্বজ্ঞ সর্ব্বসংশয়চ্ছেদী নারদ সর্ব্বসমক্ষে কহিলেন, “যাহারা পদ্মাপলাশলোচন কৃষ্ণের আরাধনায় পরাভূখ, সেই নরাধমেরা জীবন্মৃত, তাহাদিগের সহিত বাক্যালাপ করিতে নাই।” ব্রাহ্মণ-ক্ষত্ৰিয় বিশেষজ্ঞ সহদেব পূজার্হ জনগণের পূজা করিয়া কর্ম্ম সম্পন্ন করিলেন। কৃষ্ণ অৰ্চিত হইলেন দেখিয়া সুনীথনামা এক মহাবল-পরাক্রান্ত বীরপুরুষ ক্ৰোধে কম্পান্বিতকলেবর ও আরক্তনেত্ৰ হইয়া সকল রাজগণকে সম্বোধনপূর্ব্বক কহিলেন, “আমি পূর্ব্বে সেনাপতি ছিলাম, সম্প্রতি যাদব ও পাণ্ডুকুলের সমূলোন্মূলন করিবার নিমিত্ত অবশ্যই সমরসাগরে অবগাহন করিব।” চেদিরাজ শিশুপাল মহীপালগণের অবিচলিত উৎসাহসন্দর্শনে প্রোৎসাহিত হইয়া যজ্ঞের ব্যাঘাত জন্মাইবার নিমিত্ত তাহাদিগের সহিত মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন; “যাহাতে যুধিষ্ঠিরের অভিষেক এবং কৃষ্ণের পূজা না হয়, তাহা আমাদিগের সর্ব্বতোভাবে কর্তব্য।” রাজারা নির্ব্বেদপ্রযুক্ত ক্ৰোধপরবশ হইয়া মন্ত্রণা করিতেছেন দেখিয়া কৃষ্ণ স্পষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে, তাহারা যুদ্ধার্থ পরামর্শ করিতেছেন।

অর্ঘ্যাভিহরণপৰ্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।