৩৩. ভীষ্মপ্রমুখ কৌরবগণের আগমন

ভীষ্মপ্রমুখ কৌরবগণের আগমন

বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! নকুল হস্তিনাপুরে যাইয়া বিনয়নম্রবচনে পরমসৎকারপূর্ব্বক ভীষ্ম, ধৃতরাষ্ট্র ও আচাৰ্য্যপ্রমুখ বিপ্ৰগণকে নিমন্ত্ৰণ করিলেন। তাঁহারা প্রীতমনে নিমন্ত্রণ স্বীকারপূর্ব্বক যজ্ঞদর্শনার্থ গমন করিলেন। যজ্ঞের সমারোহ শ্রবণে কৌতুহলোক্রান্ত হইয়া নানা দিগন্তনিবাসী ক্ষত্ৰিয়গণ তাঁহাদিগের সমভিব্যহারে চলিলেন। ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম, মহামতি বিদুর, দুৰ্য্যোধন কৰ্ণ, শল্য, বাহ্লীক, সোমদত্ত, ভূরিশ্রবাঃ, শাল, অশ্বত্থামা, কৃপাচাৰ্য্য, দ্রোণাচাৰ্য্য, সিন্ধুদ্দেশাধিপতি জয়দ্ৰথ, সপুত্ৰ যজ্ঞসেন, ভগদত্ত, মহাসাগরের উপকূলনিবাসী স্লেচ্ছগণ, পার্ব্বতীয় ভূপালবৃন্দ, রাজা বৃহদ্বল, পৌণ্ডক, বাসুদেব, বঙ্গ ও কলিঙ্গাধিপতি, আকর্ষ, কুন্তল, মালবদেশীয় ভূপালসকল, অন্ধকগণ, দ্রাবিড়রাজ্যাধিপতি, সিংহলেশ্বর, কাশ্মীরদেশীয় রাজা, কুন্তীভোজ, গৌরবাহন, বাহ্লীকদেশীয় অপরাপর রাজগণ, বিরাটভূপতি এবং তাহার পুত্রদ্বয়, সপুত্র শিশুপাল এবং অন্যান্য নানাজনপদেশ্বর ও রাজপুত্রেরা সকলে বিবিধ রত্নজাত গ্রহণপূর্ব্বক ধর্ম্মরাজের যজ্ঞসন্দর্শনে আগমন করিলেন।

বলরাম, অনিরুদ্ধ, গদ, প্রদ্যুম্ন, শাম্ব, বীর্যবান্‌, চারুদেষ্ণ, কঙ্ক, উন্মুক, নিশঠ, মহাবীর অঙ্গবাহ প্রভৃতি নিখিল যাদব এবং মধ্যদেশীয় রাজগণ পরমানন্দে মহাসমৃদ্ধ রাজসূয় যজ্ঞে সমাগত হইলেন।

ধর্ম্মরাজ সমাগত রাজগণের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শনপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে পৃথক পৃথক বাসস্থান প্রদান করিতে অনুমতি করিলেন। সকল গৃহই নানাপ্রকার ভক্ষ্য দ্রব্যে পরিপূর্ণ এবং রমণীয় দীঘিকা ও পাদপসমূহে সুশোভিত ছিল। সেই প্রাসাদমালা কৈলাসশিখরের ন্যায় উন্নত, শুভ্র ও মণিময় কুট্টিমে অলঙ্কৃত। তাহার চতুর্দিকে সুধাধবলিত অত্যুচ্চ প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত, তাহার গবাক্ষসকল সুবর্ণজালে জড়িত, দ্বারসকল সমসূত্রপাতে বিন্যস্ত, ভিত্তি অশেষপ্রকার ধাতুতে সুগঠিত এবং সোপানপংক্তি এমন সুসংগঠিত যে, আরোহণ ও অবরোহণ করিতে কিছুমাত্ৰ কষ্টবোধ হইত না। তথায় মহার্হ আসন সকল বির্স্তীর্ণ ছিল। সমুদয় গৃহ অতি মনোহর রাজোপকরণে সুসজ্জিত এবং কুসুমমালায় বিভূষিত হওয়াতে তাহার শোভার আর পরিসীমা ছিল না। সুরভি অগুরুগন্ধে চতুর্দিক আমোদিত হইয়াছিল। রাজগণ তথায় প্রবেশমাত্র গতক্লম হইয়া সভার পরামরমণীয় শোভা এবং সদস্যগণ, ব্রহ্মর্ষিগণ ও রাজর্ষি-সমূহে পরিবৃত রাজা যুধিষ্ঠিরকে সন্দর্শন করিতে লাগিলেন।