৯. সীজারের কাছ থেকে মুক্ত

০৯.

ঘড়িতে এখন সকাল চারটে।

ফ্রান্সিসকা নিজেকে সীজারের কাছ থেকে মুক্ত করে যখন উঠে দাঁড়াল; ঠিক সেই মুহূর্তে ডুরেল রোমের কিউ মিসিনো বিমানবন্দরে জেকুমেলার কাছে থেকে প্রচণ্ড দুঃসংবাদ পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। কে সেকসনের কাজ নিয়ে জেকুমেলারকে খুবই ব্যস্ত থাকতে হতো। সে একজন রোমান বিশিষ্ট ভদ্রলোক।

জেকুমেলার এসে জানাল, প্যাসেঞ্জারদের মধ্যে ট্যালবটকে পেলাম না।

তবে কি হলো? প্লেনটা কি মিলানে থেমেছিল? আর ওখান থেকেই অন্য কোথাও চম্পট দিয়েছে। তা হলেও হতে পারে।

ডুরেল বলল, যাইহোক ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে ট্যালবট ইটালী ছেড়ে কিছুতেই যেতে পারবে না। আর দেরী নয়, সী–তুমি এক্ষুনি মিলানের দিকে চলে যাও। সেখানকার হোটেল, ট্যাক্সি, বাস তন্নতন্ন করে খোঁজো। পেতেই হবে তাকে। আর আমি সেন্টসী হোটেলেই থাকব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কাউন্টেস এ্যাপোলিও তার খপ্পরেই আছে। আর বিশ্বাস করে তার কাছেই জমা দিয়ে রেখেছে পেইন্টিংগুলো।

রাত ক্রমশ কেটে ফর্সা হতে লাগল আকাশ। রাস্তাঘাট নির্জন। গাড়ি থেকে নেমে ডুরেল সেন্টসী হোটেলের ভেতর সটান ঢুকে গেল।

ডুরেলের মালপত্র নিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে লাগল লম্বা ছিপছিপে চাপরাশি।

ডুরেল ঠিক সেই অবসরে তার কাছে থেকে সতর্কতার সঙ্গে জেনে নিতে চেষ্টা করল সেন্টসী হোটলের মালিক কি কাউন্ট এ্যাপোলিও?

চাপরাশি বলল, না। কখনো সীজার এখানে আসে না।

তখন ডুরেল যথেষ্ট টাকার লোভ দেখিয়ে বলল, কাউন্টের চাকর-বাকররা থাকে কি?

 সে বলল, আমায় মাপ করবেন। আমি অত খবর বলতে পারবো না।

 ডুরেল বলল, আমি ব্রুনো বেলারিওর একজন বন্ধুই বলতে পারো। এখানে আসবার কথা ছিল। সে একটা ব্যাবসার কাজে বাইরে বাইরে ঘুরছে। আচ্ছা তার নামে কোন পোস্টাল পার্সেল এসেছে কি না, দেখো তো। তার বদলে প্রচুর টাকা তোমায় দেব।

লোকটি বলল, একটু সবুর করুন। দুএক মিনিটের মধ্যে আমি আসছি

তারপর লোকটি ঘুরে এসে বলল, চারশো দু নম্বর রুম বুক হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনো পার্সেল-টার্সেল নেই।

তুমি ঠিক দেখে বলছো তো।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল ডুরেল।

ভাবল ব্রুনোর শেষ পরিণতি কোথায় কে জানে। আর হ্যানসন।

নীচে নেমে এসে একটা চলন্ত ট্যাক্সি ধরে স্থানীয় কাগজের অফিসের কাছ বরাবর ট্যাক্সি থামিয়ে সেখানে নামল। হেডলাইন দেখল। তারপর কিছু কাহিনী পড়ল এ্যাপোলিওর। কিন্তু এমন প্রয়োজনীয় বিশেষ তেমন কিছু চোখে পড়ল না।

সে চেষ্টা করল এক বিস্মৃতির বিবর্ণ কয়েকটা মাস পেছিয়ে যেতে।

এখানকার সব খবর সম্পর্কে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল এবং শক্তিশালী।

সেন্টসীতে একটা ফোন করল কাগজের পাতা থেকে চোখ ফিরিয়ে।

কাকে চান? সিগনোরিনা পাডগেট দাদ্রে? একটু ধরুন।

দাদ্রে বলল, কে? স্যাম। আরে তুমি এখানে?

 ডুরেল বলল, তুমি ব্যাংককে থাক আমি জানতাম।

দিন কয়েকরে জন্যে এখানে এসেছ।

 হ্যাঁ, দিন তিনেক হবে সেন্টসীতে আছি।

হ্যাঁ, কাগজে এইমাত্র খবর দেখে ফোন করলাম

দাদ্রে বলল, দীর্ঘকাল তোমার পথ চেয়ে আমি বসে আছি। যত তাড়াতাড়ি পার সেন্টসীতে চলে এসো। এখন আমি ব্যালকনিতে বসে আছি, প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছে তোমার জন্য।

ডুরেল বলল, ঠিক আছে। নিশ্চয়ই আমি এক্ষুনি যাবো।

তোমার কাউন্টেস এ্যাপোলিওকে মনে আছে?

সে সহসা বলল, ওহো। সে তো এখন নেপলসে, মন্টিকালোতে তার ভিলা। সোবরান্টোর খুব কাছে। তুমি কি যেতে চাও

ডুরেল বলল, না। তোমার সাহায্য আমি শুধু চাই। দাদ্রে বলল, স্যাম সত্যি কথা বলতে কি জানো, আমরা আজ একটা নতুন ছবির শুটিংয়ে এখানে এসেছি। ডুরেল জানাল, আমার ধারণা কাউন্টের অনুমতি ছাড়া ঐ দ্বীপে কেউই ঢুকতে পারে না

দাদ্রে বলল, ওটা ঠিক কথা নয়। এ্যাপোলিওর ক্ষমতার আধিপত্যও কম নয়। তবে এটা ঠিক এ্যাপোলিওর দাপট থেকে তা বাঁচানো খুবই কঠিন।

কিছুক্ষণের মধ্যে ডুরেল দ্রুত সেন্টসীতে পৌঁছে সোজা পাঁচতলায় চারশো দুনম্বর কামরার সামনে এসে উপস্থিত হলো। বিছানার ওপর সাদা একটা ব্যাগ লক্ষ্য করল।

সোজা এগোলো ডুরেল। কাউন্টেস এ্যপোলিও ছাড়া কেউ নয়। সমস্ত ঘটনার সূত্রগুলো মিলে যাচ্ছে, একটার পর একটা।

ডুরেল বলল, কে আপনি?

 কাউন্টেস এ্যাপোলিও? আপনি কে?

 ডুরেল বলল, ভয় পাবেন না। আপনি কি ব্রুনোকে খুঁজছেন?

 হা।

ডুরেল বলল, সে এখনও ফেরেনি?

কাউন্টেস হেসে বলল, যতদূর মনে হচ্ছে আপনি একজন আমেরিকান। আপনি ব্রুনোকে জানেন কি ভাবে।

ডুরেল বলল, আপনার সঙ্গে ওর ছাড়াছাড়ি হবার পরেই জেনেভাতে

কিন্তু আমি তো জেনেভাতে কোনদিনই ছিলাম না–

আমার চোখ নিশ্চয়ই ভুল দেখেনি ম্যাডাম।

ডুরেল আর বিলম্ব না করে এক আঘাতেই মাটিতে ফেলে দিল। তার শরীরের পারফিউমের গন্ধ সেই রাতে বুনোর চুলেও লেগেছিল। এখন কি সব সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে।

ডুরেল বলল, তোমাকে জানতে আমার বাকী নেই মিশরীয় ফ্রান্সী স্মিথ।

কে তুমি? ব্রুনো এখন কোথায়?

ব্রুনো-ডুরেল বলল, দ্যাখো গে এতক্ষণে জেনেভার হ্রদের তলায় জলের পোকারা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে।

ডুরেল বলল, ট্যালবট কোথায়? পেইন্টিং স্ক্রলগুলো কোথায় জমা রেখেছো?

 আমি জানি না।

 হঠাৎ সব নিস্তব্ধতা ভেঙে আকস্মিকভাবে ট্যালবটের আবির্ভাব ঘটল।

ভয়ে চিৎকার করে উঠল ফ্রান্সিসকা। ট্যালবট ডুরেলকে জোরালো এক ঘুসি মারতেই ঘটনা অন্যদিকে ঘুরে গেল।

ট্যালবট বলল, বেলারিও কোথায়? ফ্রান্সিসকা কোথায় তাকে খুঁজতে যাচ্ছে। তুমি সুইজারল্যাণ্ড থেকে আসছো? সরকারী লোক।কে সেকসনে কাজ করো। তাহলে তোমাকে খুন করতেই হবে।

ডুরেল বলল, তাহলেই কি তুমি স্ক্রল পেইন্টিংগুলো পেয়ে যাবে। আমার মনে হয় মেজর প্যাসেক সেসব এতক্ষণে হাতিয়ে নিয়েছে।

ট্যালবট বলল, প্যাসেক যে আমার সঙ্গে ধোঁকাবাজী খেলছে এখন স্পষ্ট বুঝতে পারছি

ডুরেল সেই মুহূর্তে মূৰ্ছা যাবার ভান করল। আর ঐ অসহায় ভাবের মূর্ঘনায় ট্যালবট অসতর্ক হতেই ডুরেল মাথা নিচু করে তার তলপেটে একটা বড় রকমের ঘুষি মারলো।

ট্যালবটের পিস্তলটাও সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠল।

গলা ঘেঁষে বুলেটটা বেরিয়ে গেলো। তার বেশি কিছু নয়।

.

১০.

 তুমি কি কাউন্টেসকে দেখেছো?

ভয়ে বেলবয়ের চোখদুটো ছোট হয়ে গেলো।

পনেরো মিনিট আগে লবিতে মেলব্যাগ ঘাটাঘাটি করছিল।

 তাতে কি ধরনের পার্সেল দেখলে?

বেশ বড়োসড়ো। তাকে আরো কিছু লিরা দিয়ে ডুরেল ডেক্স ক্লার্কের কাছে এসে জানাল, ফ্লান্সিসকা কয়েক মিনিট আগেই বেরিয়ে গেছে। আর ট্যালবটের কোন হদিসই সে জানে না। কে জানে তার গতি কোথায়?

দাদ্রে ডুরেলের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু একঘণ্টা পার হয়ে গেলো।

 কোথায় ডুরেল, কোথায় কে।

কামরা থেকে দাদ্রে বেরিয়ে পড়লো। শান্তা লুসিয়ে বীচের দিকে সেই রেস্তোরাঁয় একটা দেশীয় নৌকোতে জনা কয়েক ভদ্রলোক আর মহিলাকে ছবি তুলতে দেখলো।

তীরভূমির নীচে ডুরেল নামতে লাগলো। সেখানে যদি দাদ্রের দেখা পায়, বলা যায় না। কি তাই।

ডুরেল এগুতে থাকলো। দাদ্রে বলল, কি ব্যাপার স্যাম। তোমার কানে চোট লাগল কিসে?

ওসব কথা থাক। চলো কোথাও গিয়ে দুদণ্ড বসে প্রাণখুলে কথা বলি।

তারা একসময় একটা পানশালায় ঢুকে গেলো।

 দাদ্রে বলল, এবার বলো তো আমার কাছে তুমি কি চাও।

ডুরেল বলল, তুমি কি কাউন্টেস এ্যাপোলিওকে চেনো।

 দাদ্রে জানালো, শিগগিরি পরিচয় ঘটলেও ঘটে যেতে পারে।

 ডুরেল বলল, এ্যাপোলিওর আস্ক পোনালাস আর্টকালেক্টরকে তুমি কি জানো।

সে তো একটা পাকা চোর আমি জানি। কোন ঘটনাই বলছে না অথচ সাহায্য চাইছ। তবে ওটা ঠিক তোমাকে একা ফিলিবেনো দ্বীপে এ্যপোলিওর ওখানে কিছুতেই আমি যেতে দেবো না। যেতেই হয় আমার সঙ্গে যাবে।

এমন সময় ডুরেল বুঝল তার ঠিক পেছনের চেয়ারে সে এসে নিঃশব্দে বসল সে আর মেজর প্যাসেক ছাড়া আর কেউ নয়।

.

১১.

রাশিয়ায় তৈরী স্যুট পরে প্যাসেক। ডুরেলকে স্যালুট করলো।

দাদ্রে বলল, লোকটা কি রাশিয়ান। ও কি তোমাকে চেনে?

ডুরেল বলল, আমাকে তো নিশ্চয়ই চেনে। তোমাকেও এবার চিনলো। এমন একটা ভাব দেখাবে যেন নতুন আলাপ। এর জন্যই হয়তো ওকে মেরে ফেলতে হবে।

ওরা দুজন চকিতে পানশালার থেকে বেরিয়ে সমুদ্রের ধারে পৌঁছে গেলো।

তারপর ডুরেল দাদ্রেকে বিদায় দিলো।

ডুরেল নেপলস ছেড়ে মন্টিক্যাপোলিতে ঠিক সোয়ান্টোর কাছে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করলো। পুরো জায়গাটা মৎস্যজীবীর ডেরা। সে আপাতত সবচেয়ে উঁচুতলার বাড়িটার দিকে এগোতে থাকলো। সারা টবে ফুটে আছে অসংখ্য রঙিন ফুল। নিঃসন্দেহে এইটাই কাউন্ট এ্যাপোলিওর মনোরম বাসস্থান।

প্রথমে ডুরেল পথের মুখে অপেক্ষমান দারোয়ানকে তার নামের স্লিপ দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

প্রবেশ অনুমতি মিলল।

এ্যাপোলিও যেন বলে উঠল, মিস্টার ডুরেল,ভদ্রতাসূচক সাক্ষাৎকারের সময় খুবই সংক্ষিপ্ত। তবে এটা ঠিক, আপনার উদ্দেশ্য আমার জানা আছে। ফিলিবেনো দ্বীপের বুনো বেলারিও বলে যে লোকটির মৃতদেহ জেনেভার লেকে সনাক্ত করা হয়েছে বলে প্রমাণিত তার সম্পর্কে কোন তথ্য

ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই জানি। আপনার বিলক্ষণ শত্রু ছিল লোকটা।

কাউন্ট বললেন, আপনি আমার স্ত্রীকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছেন। এই আস্পর্ধা পরিত্যাগ করে জেনেভায় ফিরে যান। জানবেন এটা ইটালী, আর ইটালী মানেই কাউন্ট এ্যাপোলিওর এক্তিয়ার

ডুরেল বলল, একটিবার অনুরোধ, আমি কেন এসেছি সেটুকু জানবেন কি? ব্রুনোর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো একটা হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর সেই সঙ্গে চুরি গেছে স্ক্রল পেইন্টিংগুলো।

আপনার কি ধারণা আমি ঐ চোরাই ছবিগুলো কিনেছি।

 ঐ ব্যাপারে যতদূর জানি আপনার স্ত্রী আর ট্যালবট দুজনেই যুক্ত

 অর্থাৎ কি বলতে চান?

ডুরেল বলল, আপনার স্ত্রী এখন এই মুহূর্তে আপনার এখানেই আছেন, আপনি কি নিশ্চিত?

বিশ্বাস করুন, আপনার স্ত্রীর সমূহ বিপদ।

কাউন্ট বললেন, আপনি এখন আসতে পারেন

ডুরেল বলল, হ্যাঁ আমি যাব। আবার নিশ্চয়ই একদিন দেখা হবেই হবে

ডুরেল আর অপেক্ষা করল না।

.

১২.

সবে লিফট ছেড়ে করিডোরের বাঁকে পা রাখতেই সাইলাসের ফোন: নীচের লবিতে আমি আছি।

তুমি কি একা?

 ডুরেল বলল, না। কয়েকজনের সঙ্গেই।

দাদ্রে এসে ডুরেলের হাত চেপে ধরল।

একটু দাঁড়াও

একটু অপেক্ষা কর। নীচে সাইলাস রয়েছে।

সাইলাস। কেন আমার কি কোন কদর নেই স্যাম–তুমি কি চাকরীতে ইস্তফা দিতে পারো না

কোনদিন হয়তো দেবো।

আমি যখন থাকবো না তখন দরজা বন্ধ করে রেখোতাকে বিদায় জানিয়ে ডুরেল নেমে এল।

নৌকাটার কোণে দাঁড়িয়ে ছিল সাইলাস। তারপর দুজনে অদূরে হোটেলে গিয়ে দাঁড়াল।

প্যাসেককে আমরা খুঁজে পাইনি তুমি বিশ্বাস করো। ট্যালবটও হাপিস

এখানেই ওরা দুজনে আছে। কাউন্টেস কি তার ভিলা ছেড়ে চলে গেছে।

সাইলাস বলল, সে ছবির লোকদের সঙ্গে চলে গেছে নৌকো করে, ফিলিবেনো তার স্বামীর কাছে যাবে। দাদ্রে এল জীবন্ত, নিঃশব্দে। ট্যালবটের দেখা পাওয়া পর্যন্ত এক ঘণ্টা কেটে গেলো।

ট্যালবট ভাবল, দাদ্রে যা চেয়েছিল তা পেয়েছে, কিন্তু তার ক্ষমা করা উচিত ছিল কিন্তু সে অক্ষম। ডুরেলকে খুন করতে পারলে সব ল্যাটা চুকে যায়। কিন্তু তার ছবিটা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কোন ঘটনাই ঘটছে না। তাই অপেক্ষা করতে লাগলো।

ফিসফিস করে সাইলাস বলল, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ স্যাম?

হ্যাঁ—

 আমাদের স্ক্রলটা চাই–চাই

আমরা কোথায় আছি সে জানে না–এবং সে অপেক্ষা করছেও মেয়েটার জন্য। সীজার তাই। মনে কর তাদের দেখা হলো না–তুমি কি করে জানলে তারা আসবে।

আমার মনে হচ্ছে এখনও সুযোগ হয়নি সীজারকে দেবার মতো। সেন্টসী থেকে ওগুলো নিয়েছে। এবং এ্যাপোলিওর ভিলায় ওগুলো নিয়ে চলে যাবে।

ডুরেল বলল, আমরা যদি না পাই, সীজার ঐ স্ক্রলগুলো লুকিয়ে ফেলে, তাহলে আর এক সপ্তাহের আগে পাবো না। যুবরাজ সুভানা ফঙ কমোডিয়ায় ততদিনে চলে আসবে।

.

১৩.

ঐ পথ ধরে ফ্রানি এগিয়ে এলো। নিটোল নির্জনতায় মগ্ন মদিরতায় ঢাকা সেই মন মন্দিরে। একটিবার তার এ্যপোলিওর কথাও মনে হলো। যা হোক, এখন সীজারের সঙ্গে আজকের ব্যাপারটা পাকাপাকি হয়ে গেলে আর সে কাউন্টের কাছে ফিরে না।

কেন যেন অকস্মাৎ রক্তের প্রবাহ অন্য কথা মনে করিয়ে দিলো। সারা শরীর ছমছম করে উঠলো।

সীজার দার নেই।

নাম ধরে ডাকতে লাগলো সীজার, সীজার, সীজার। কোথাও কোনো অস্তিত্বের চিহ্ন নেই।

এমন সময় ডুরেল পেছন থেকে এসে বলল, সহজ হবার চেষ্টা করো ফ্রান্সি। সীজার কোথায় বলল।

ফ্রান্সিসকার মুখে কোন রা নেই।

আবার ডুরেল বলল, তোমার জানা উচিত ছিল এখানে ট্যালবট তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। একদম চেঁচাবে না–

ফ্রান্সিসকা বলল, জ্যাক কোথায়?

ডুরেল বলল, নীচে বেদির আড়ালে তোমার জন্য সময় গুনছে। তুমি কি সীজারের কাছে এসেছো? ওর হেপাজতেই কি পেইন্টিংগুলো আছে? দ্যাখো ফ্রান্সি আমি তোমার বয়ফ্রেণ্ড সীজারকে চাই না। চাই শুধু পেইন্টিংগুলো

একটা সাংকেতিক শব্দ হঠাৎ-বাজল। কোন দিক থেকে তা বুঝতে পারা গেলো না।

ডুরেল বলে উঠল, সীজারের আবির্ভাব নিশ্চয়ই।

ফ্রান্সি জানাল না। পেছনের দরজা দিয়ে সীজার আসে

ডুরেল বলল, তোমার মরণ অবধারিত ট্যালবটের হাতে। নড়বার চেষ্টা করো না। সহসা নীচে পায়ের শব্দে সব নীরবতা ভেঙ্গে দিল। ডুরেলের দিকে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে এল। মাথায় ওপর বন্দুকের নল। অপরপ্রান্তে ছুটে এসে দেওয়ালে বিধল ধারালো অস্ত্র। ছিটকে গেলো লৌহখণ্ড। জ্বলন্ত সীসার বুলেট।

ডুরেল আচম্বিতে আততায়ীকে প্রবল আঘাতে কাবু করে দিতেই ফ্রান্সিসকা চিৎকার তুলল।

.

১৪.

 ডুরেল বলল, তোমার কি হয়েছে সাইলাস?

 সে জানাল, যাক, আপতত তুমি যে বেঁচে গেছ। আশ্বস্ত হলাম। তোমাকে একটা বিরাট পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল লোকটা।

কে বলো তো লোকটা?

 মনে হয় ট্যালবট।

ডুয়েল বলল, অন্যদিকে থেকে আর-একজন ধারালো ছুরি ছোঁড়ে। হাতের টিপ দারুণ।

সে বলল, মনে হচ্ছে ওটা নির্ঘাৎ সীজারের অস্ত্র। এখান থেকে আমরা এক্ষুনি চলো বেরিয়ে পড়তে চাই। অতঃপর তারা তিনজন এই অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ল।

হঠাৎ ফ্রান্সিসকা বলে উঠল, সত্যি, সীজার যে অবস্থায় আমাকে ফেলে রেখে পালাল ভাবতেই পারছি না–

বীরপুরুষ। ডুরেল বলল–বুঝলে, এই হচ্ছে ইটালীয়ান প্রেমের ধরন।

সবাই এক সঙ্গে অন্ধকার পথ ধরে হোটেলের পথে এগিয়ে চলল।

ফ্রান্সিসকে ডুরেল তার ঘরের নম্বর আর চাবি দিয়ে পনাশালার নির্দিষ্ট কামরায় ঢুকতে যাবার আগে কে যেন তার নাম ধরে ডাকল।

ডুরেল চারপাশে তাকাল।

মেজর প্যাসেক অদূরে দাঁড়িয়ে। বলল, কাত রাতটা মনে হচ্ছে ভালো কাটেনি?

ডুরেল বলল, এমন সময়ে এ জায়গায় কি মনে করে

প্যাসেক বলল, পেইন্টিংগুলো হাতানো গেল না

ডুরেল দেরী না করে তার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলো।

ডুরেল তার নিজের ঘরে ঢুকতেই দেখলো বাথরুমে নগ্ন ফ্রান্সিসকা তোয়ালেতে মুখ মুছছে। বলল, তোমাকে সমুদ্রের পরী বলে মনে হচ্ছে–

সে বলল, এসো না আমরা মিলেমিশে থাকি।

দুজনে দুজনের অতি নিবিড় স্পর্শ ছুঁড়ে দিয়ে ডুরেলই আবার প্রথম কথা বলল, আচ্ছা পেইন্টিংগুলো ঠিক কোথায় বলতে পারো? আর সীজার ওগুলো নিয়ে আসলে কি করতে চায়?

আমার মনে হয় সেগুলো এখন ওর কাছেই। কিন্তু সে কি করবে। আর বেচবেই বা কোথায়?

ফ্রান্সি বলল, কোথায় আর, শেষমেষ কাউন্টের কাছেই আসবে

ডুরেল বলল, নিশ্চয়ই আমি তোমার সাহায্য পেতে পারি ফ্রান্সি, সীজার কি ফিলিবেনো দ্বীপে যাচ্ছে। আজ কি কাল। তুমি কি স্বামীর কাছে তার আগেই পৌঁছে যেতে চাও

ঠিক এই সময় দাদ্রের আবির্ভাব হল। ফ্রান্সিসকা বলে উঠল, তুমি যা ভাবছো তা নয়। এখানে কাজের কথাই হচ্ছে।

তবুও দাদ্রে ডুরেলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে একপলক চেয়ে রইলো।

দাদ্রে বলল, আশাকরি ফিলিবেনোতে আবার কোন না কোনদিন দেখা হবে

 দাদ্রে বলল, মেয়েরা এইভাবে তোমাকে ফেলে পালায়?

ডুরেল হাসল–মনে করো তাই।

গত কয়েক বছর ধরেই তুমি আমাকে নিয়ে ঘর বাঁধবে শুধু বলে এলে। সে কি শুধু স্তোক। নাকি আমার সাহায্য পাবার খাতিরে খালি ফিকির।

ফিলিবেনো যেতে আমাকে সাহায্য করে। আর কিছু চাই না। আর চাই কাউন্ট এ্যাপোলিওকে।

দাদ্রেকে জানাল পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ডন এঞ্জেলোকে। ও আমার সব কথাই রাখে। তোমার ফিলিবেনো যাবার সব ব্যবস্থাই নিশ্চিয়ই সে করে দেবে–কারণ, এঞ্জেলো আমাকে প্রায়ই বিয়ে করতে চায়।

ডুরেল পরদিন সকাল ঠিক দশটা নাগাদ এঞ্জেলোর সঙ্গে ফিলিবেনো দ্বীপে পৌঁছে গেছে।

ছোট্ট দ্বীপ। কাছে, দূরে অনেক ছোটখাটো নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। আঙুল দেখিয়ে ডুরেল জিজ্ঞেস করল ঐ যে দূরে যে বোটটা দেখা যাচ্ছে ওটা কি কাউন্টেস-এর?

না। ওটা সীজারের। তাকে নিয়ে সমস্যা নয়। যত ঝামেলা ঐ কাউন্ট এ্যাপোলিও।

এঞ্জেলো চুপ করে থাকল কিছুক্ষণ। জিজ্ঞেস করল, চেনেন নাকি সীজারকে।

হা। গতরাতেই দেখা হয়েছে এ্যাপোলিওর অভিন্ন হৃদয়েষু।

কাউন্টের বাড়ি দূর পাহাড়ের শেষ মাথায়।

 ট্যালবট অথবা প্যাসেক কারুর কোন হদিশ নেই। সমুদ্র, পাহাড় তার মধ্যে একদিক দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে। সেই পথ ধরে ডুরেল একা এগুতে থাকলো। আরো কিছুদূরে হাঁটতেই এক সময় সীজারের অতি মনোরম বোটের প্রায় কাছাকাছি এসে পড়লো।

কিছুটা এগিয়ে পেছন থেকে ঢুকে গেলো বোটের ভেতর। স্থলভাগের দিকে একবার তাকালো। না, কোথাও তেমন ভয়ের কিছু নেই।

অথচ গুলির শব্দে আবার চারপাশ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। ডুরেল পেছন দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে ছুটতে আরম্ভ করল। ছুটতে ছুটতে একটা চার্চের কাছে এসে হাঁফ ছাড়ল। দাদ্রে সেখানে কোথা থেকে এল তা মনে করার প্রয়োজন হল না। তারা দুজন দ্রুত সামনে এগুতে থাকল। হঠাৎ প্যাসেকের কণ্ঠস্বর সে শুনলো।

সে পরিত্রাহী দাদ্রের নাম ধরে ডাকছে।

 এই যে এদিকে মিস দাদ্রে

তার প্রায় সামনাসামনি ডুরেল থমকে পড়ল। প্যাসেক বলল, কি, আপনাকে যে আজকাল আর বড় একটা দেখাই যায় না।

দাদ্রে তখন ডুরেলকে ফিসফিসিয়ে বলল, এই সেই লোকটা না। নেপলসের বারে যাকে দেখেছিলাম?

বলল, হ্যাঁ, মেজর প্যাসেক। ও সবই জানে। আর তোমাকেও দারুণভাবে নজর রেখেছে। সামনে বাড়িতে চলল। ওটা আমার চেনা জানা

এক বুড়ো ডুরেলকে বলল, দুঃখিত। এটা তো টুরিস্টদের থাকবার জায়গা নয়।

আমি সীজারের কাছে এসেছি।

 তা হলে ভেতরে আসুন।

বৃদ্ধ বলল, আপনারা কি পুলিশ দফতর থেকে এসেছেন? আসলে ব্যাপারটা কি, যতই হোক সীজার আমার ভাই।

তাকে আমার বলবার কিছুই নেই। যদিও সে সব ঘটনাতেই লিপ্ত, বুঝতে পারলেন এবার ব্যাপারটা।

বৃদ্ধ বলল, তার মাথায় সবমসয় খুন চেপেই থাকে, খুন আর খুন

ডুরেল বলল, বুঝতে পারলাম। ওর কাছে আপনি কি কোন পেইন্টিং দেখেছেন ওহো, নিশ্চয়ই–এই তত আধঘণ্টা আগেই সীজার তো সেগুলো নিয়ে গেলো। অন্য কোন জায়গায় তোমরা এক্ষুণি লুকিয়ে পড়ো নইলে বিপদ।

ডুরেল বলল, দাদ্রে, আমার এই বুড়োকে বিশ্বাস আছে। অন্তত এই বয়সের লোকেরা মিথ্যে বলবে না। তুমি এখানেই থাকবে আমি না ফেরা অব্দি। বুঝলে, এখন জীবনমরণের দরজা এই বুড়োই।

.

১৫.

 পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ফ্রান্সি এগিয়ে চলতে লাগলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে সে সমুদ্র সৈকতে এসে গেলো।

মুহূর্তে আকস্মিক আঘাতে ফ্রান্সি সাদাবালির ওপর লুটিয়ে পড়লো। সে দেখলো, সামনে মূর্তিমান জ্যাক। এখানে তুমি কী করে এলে?

কেন? নৌকায়? জেনে রেখো আজ তোমার শেষ দিন।

জ্যাক বলল, তোমার মতন বেইমান মেয়েমানুষকে আমি দুনিয়া থেকে একেবারে সরিয়ে দেবো। মাটিতে ধরাশায়ী ফ্রান্সির সুবর্তুল স্তনাগ্রে জুতোর কেপ সোলর মারাত্মক চাপ দিয়ে বলল, এখনও সময় আছে। ছবিগুলো কোথায়?

ঝাঁকিয়ে ফ্রান্সি বলল, সীজারের কাছে

সীজারের কাছে–তীব্র ভর্ৎসনা করলো জ্যাক।

প্লীজ জ্যাক, আমাকে তুমি সত্যি মেরে ফেলল। এখন আমি মরে বাঁচতে চাই।

জ্যাক কি মনে করে জানি অত্যন্ত বিচলিত মনে আর কোন দিকে না তাকিয়ে ফ্রান্সিকে পালিয়ে যেতে সুযোগ দিলো।

উলঙ্গ ফ্রান্সি তীরভূমি লক্ষ্য করে ছুটল, সমস্ত শরীর থেকে সহস্রধারায় রক্তকণা ছুটতে শুরু করলো। কিন্তু সে কোথায় যাবে।

অবশেষে এক সময় দুটো পাহাড়ের মাঝখানে সংকীর্ণ একটা জায়গায় এসে ফ্রান্সি দেখলো কোথাও কেউ নেই। এইটুকু জায়গাই আত্মগোপনের জন্য যথেষ্ট। এতক্ষণ পরে বুঝতে পারলো সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ। বুকের ভেতর থেকে একটা চাপা কান্না উঠে এলো। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে সে দুহাত দিয়ে নগ্নতা ঢাকতে চেষ্টা করলো।

.

১৬.

 ঠিক সেই সময় ডুরেল ডন এঞ্জেলোর ভিলাতে বসে ছিল।

প্যাসেক বা ট্যালবট কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। একজন উদো পুরুষ শিকারের সন্ধানে পানসী ভিড়িয়ে দিলো।

এঞ্জেলো এক সময় বলল, ঐ লোকটাকে চেনো?

হ্যাঁ চিনি। ডুরেল যেন নিজেকে কাছেই স্বগত করলো।

এই মুহূর্তে ট্যালবট যে পথ দিয়ে চলে গেছে বলে বুঝতে পারলো, ডুরেল ঠিক পরমুহূর্তে সেই দিকে দ্রুত পা বাড়াতেই শুনল বন্য জন্তুর বিকট চিৎকার, না অন্য কোন আর্তনাদ।

সেই দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে ডুরেল পৌঁছল যেখান থেকে আসছে সেই মর্মাহত আতাঁরব।

একি ফ্যান্সিসকা—

 ফ্রান্সি শরীরের গোন অংশ কোটরের ফাঁক থেকে আড়াল করে অবিরাম কাঁদতে লাগলো।

আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না। জ্যাক নিশ্চয়ই এতক্ষণ সীজারকে পাকড়াও করেছে।

সীজারকে জ্যাক খুন করবেই, আমাকে তুমি সাহায্য করো।

পেইন্টিংগুলো কোথায় সত্যি করে বলো? সীজারের কাছে কি?

 হা।

 কাউন্টের কাছে সত্যি বিক্রি করবে তো?

 হ্যাঁ, নিশ্চয়ই করবে।

প্যাসেককে তুমি নিশ্চয়ই জানো?

 ফ্রান্সি ঘৃণা ভরা মুখ নিয়ে বলল, ঐ নামে আমি কাউকে জানি না।

 ডুরেল বলল, বুঝেছি, এবার আমার পক্ষে তোমার স্বামীর কাছে যাওয়াই উচিত।

 কেন?

আর কেন। তোমার স্বামীর কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বলাই ভালো।

 ফ্রান্সি বলল, একি বলছো তুমি! আমি সেখানে কি মুখে ফিরে যাবো।

 জানি না।

.

১৭.

 ডুরেল আর দেরী না করে বেলারিও ভবনের দিকে ছুটে চলল। এখানে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে পেছনের সিঁড়ি ঢুকে পড়লো। ডুরেল কয়েকবার তার নাম ধরে ডাকল, রাফেল। রাফেল

আরো একটা করিডোর পেরোতেই রাফেলকে রক্তাক্ত এবং অচৈতন্য দেখতে পেয়ে শরীরের সমস্ত রোমকূপ খাড়া হয়ে উঠলো। একি!

ডুরেল বলল, কে তোমায় এভাবে মারল। দাদ্রে কোথায়?

একটা পালোয়ান তোমার দাদ্রেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

 বুঝেছি। ট্যালবট। সে ছাড়া একাজ আর কেউ করতে পারেনা।

ডুরেল বলল, প্রথম লোকটা কি চাইছিল?

সীজার, সীরাজকে চায় বলেই তো মনে হলো। কিন্তু সে তো এ্যাপোলিওর কাছে গেছে। তারা দাদ্রেকে নিয়ে গেলো কেন?

হ্যাঁ, এবার সব বুঝতে পারছি। ডুরেল বলল, তুমি নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবে। আমি থাকতে পারলে ভালোই হতো। কিন্তু আমার কাজের বড় তাড়া।

ঠিক আছে। শুধু দুঃখ বয়ে গেলো দাদ্রে, আমরা দাদ্রেকে হারালাম।

.

১৮.

 অধৈর্যের সঙ্গে কাউন্ট এ্যাপেলিও অপেক্ষা করছেন। ভৃত্য ল্যাম্বার্ডো খবর দেবার পর তাকে নিজের ঘরে চলে যেতে বললনে কাউন্ট।

সীজার বিলম্ব ঘটলেও ঠিক ঠিক এসে পৌঁছেছে পেইন্টিংগুলো নিয়ে।

কাউন্ট স্বাগত জানিয়ে বললেন, পেইন্টিংগুলো ঠিক আছে। সীজার জানালো, হ্যাঁ। সব ঠিক আর নিশ্চয়ই আপনার টাকাটাও প্রস্তুত।

কাউন্ট বলল, ভালো কথা নিশ্চয়ই জেনেভার ব্রুনোকে জানো?

 সীজার বলল, জানি বোধহয়।

পেইন্টিং-এর প্যাকেজ খুলতেই কাউন্টের মুখের চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো। অপূর্ব! তুলনাহীন! স্ত্রীর প্রতি সীজারের বিশ্বাসঘাতকতার কথা আর মনে হলো না একটিবারের জন্যেও।

সীজার বলল, কি দেখলেন? এবার টাকাটা দেখান

 এ্যাপোলিও ড্রয়ার টেনে বার করলো খামভর্তি নোটের তাড়া। তার পাশে একটা হাতীর দাঁতের বাঁট।

সীজার অনুমান করলো সেটা কোনো ধারালো অস্ত্র।

কাউন্ট বললেন, কি, চুপ করে রইলে যে। গুনতে চাও কি?

 নিশ্চয়ই। আমি এবং আপনি তো প্রায় একরকমই বলা চলে।

তাই বলে নিশ্চয়ই পরস্ত্রী হরণ করে থাকি না। মুহূর্তে কাউন্ট মরিয়া হয়ে বলে উঠল, তোমার কুকীর্তির জন্যে আমার হাতে তোমার মৃত্যু আজ কেউ ঠেকাতে পারবে না। তোমার ব্রাদার ব্রুনো আমার মনুষ্যত্বকে অনেকদিন আগে খুন করেছে। তুমি আমার স্ত্রীর পবিত্র পতিব্রতাকে খতম করেছে–পার অস্বীকার করতে? আমাকে তুমি একটা উঁচড়ে পরিণত করতে চাও। এ রকমও শুনেছি, ডন স্ক্রলের জন্যে বাজারে ওয়েট করবেন। আপনি তাকে বলেছেন স্ক্রলগুলো চুরি করবার জন্যে আমার সঙ্গে আপনি ষড়যন্ত্র করছেন।

হ্যাঁ। সত্যি সত্যি কি আমাকে খুন করতে চান।

 নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন এ্যাপোলিও। তোমার প্ল্যানটা আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকে স্ক্রলগুলো বিক্রি করে পুলিশকে জানিয়ে বেইজ্জৎ করতে চাও। তাই না?

হা, ওটাই আমার প্ল্যান ছিল ঠিকই

সীজার বলল, সে আমায় ভালোবাসে। এক সঙ্গে বিছানায় রাত কাটিয়ে তার সবটা আমার জানা আছে।

বুঝলাম। এতদিন আলেয়ার মতো কাজ করে গেছে আমার অনুমান। তুমি ছাড়া অন্য কেউ হলে বাধা দিতাম না।

সীজার হেসে উঠলো, আমি বুঝতে পারছি। আমাকে তুমি খুন করতে পারবে না। যেহেতু আমি এক বিছানায় ফ্রান্সির সঙ্গে শুয়েছি। আপনার তাতে বদনামই হবে। এবং পুলিশের কাছে গালগল্প বানিয়ে আমার সব দোষকে খতম করে দেবেন

হ্যাঁ, সব ব্যবস্থাই প্রস্তুত।

কিন্তু আমার সঙ্গে ফ্রান্সিসকার সম্পর্কের কথাটা কাগজে লেখা থাকবে না, সেটা আমার একমাত্র হত্যার কারণ হবে

আস্তে আস্তে বল।

আপনি কি মনে করেন চুপ করে থাকবে ফ্রান্সি।

তুমি কি সন্দেহ করো নাকি। তুমি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে ফ্রান্সি একটা ভালো বউ সেজেই আমার কাছেই থাকবে। সীজার অকস্মাৎ ঘামতে শুরু করলো। আর তাকে উদ্ধত দেখাল না তার পেছনে মাটিতে গড়িয়ে পড়েছেন ডন স্ক্রল। মুখ তুলে সে তাকালো। এ্যাপোলিওর পিস্তল তার দিকে তাহলে একটা ফাঁদই ছিল।

হ্যাঁ। যেমন তুমি ভেবেছিলে আমাকে প্রতারিত করে ছবিটা পুলিশের হাতে তুলে দেবে।

সীজার বলল, বেশ আমাকে তুমি গুলি করো। আমি মারা গেলে ফ্রান্সি আমেরিকানদের কাছে যাবে, অথবা ট্যাবটের সঙ্গে একটা ফয়সালা করবে? যে আদতে প্রথমে চুরি করেছিল।

উঠে দাঁড়ালো এ্যাপোলিও।

সীজার দরজার দিকে যাও। সীজার বুঝতে পারলো সে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গেছে।

সে তখন পিস্তল লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়ে পড়ল এ্যাপোলিও ওপর।

সে লাফ দিতেই তার চোখ কালো বোরটার ওপরে স্থির। এ্যাপোলিও যেখানে টাকা গোনার সময় ছবিটা রেখেছিল। এ্যাপোলিও পালাবার জন্য ডেস্ক থেকে পিস্তলটা হাতে তুলে বেঁকে গিয়েছিল। তখন সীজারের হাতে ছুরি। সে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এ্যাপোলিওর কণ্ঠস্বর সে শুনতে পেলো। যখন ছুরির ফলা তার শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে।

ফিরে দাঁড়িয়ে সীজার নিঃশব্দে ঘর থেকে পা মেপে মেপে বেরিয়ে গেলো।

.

১৯.

 মিনিট পনেরো পরে ডুরেল এ্যাপোলিওর বাড়িতে এসে গেলো। কিন্ত মহলের ভেতরে একটা চাপা গুঞ্জন ঘুরপাক খাচ্ছে।

এ্যাপোলিও বাঁ হাত পেটের ওপর আর ডান হাতের তালুতে পিস্তল অনেকখানি ভয়ার্ত করে তুলল অন্ধকারকে। ডুরেল একি দেখছে। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আততায়ী আত্মরক্ষা করেছে।

মিস্টার ডুরেল, কাউন্ট জানালেন, জানতাম না আপনি ফিলিবেনো দ্বীপে অবস্থান করছেন।

ডুরেল তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি সীরাজকে চাই

ডুরেলের দিকে তাকিয়ে কাউন্ট বললেন, নিশ্চয়ই পেইন্টিংয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তা হলে আমার সঙ্গে আসুন। কিন্তু একটা কথা।

বলুন

এখন আমার স্ত্রী কোথায়? এবং কেমন আছে?

 ফ্রান্সিসকা ভালোই আছে। কিন্তু সীজার এখন কোথায় যেতে পারে?

নিশ্চয়ই বেলারিওদের সেই ভাঙ্গা বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে সে, আমরা সেই আণ্ডারগ্রাউণ্ড পোড়ো জমির মধ্যে পাবই পাবো।

প্রতিটি কথা ডুরেল মন্ত্রমুগ্ধের মতো গিলে যেতে থাকলো। আর তেমনি কাউন্ট তার আহত শরীরটা পাহাড়ের কোল বেয়ে টেনে উঠছে যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা দূরে থাক ভাবাই যায় না।

কাউন্ট বললেন, আমার প্ল্যান ভেস্তে গেছে এ যে কি চরম ব্যর্থতা। যা নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই না। ওকে চুরির দায়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মরে গেলেও আত্মার শান্তি হতো

না। ডুরেল বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি। কেন ফ্রান্সিসকাকে কাউন্টেস করেছিলেন?

কাউন্ট আবেগভরা গলায় বলতে লাগলেন প্রথম যুদ্ধের পর যখন আমার বংশে বাতি দেবার আর কেউ রইলো না, তেমন এক নিঃসঙ্গ জীবনের দুযযাগে বাঁচার জন্যে জীবনের ভালোবাসাকে স্রেফ বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই ওকে আলমারীতে সাজিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম কাউন্টেস করে। হ্যাঁ, টাকা, শুধু টাকা, টাকা চেয়েছিল। তাকে তেমনি অগুণতি অর্থ দিয়েছি কিন্তু কিছুতেই এক বিছানায় বিভোর থাকতে পারতাম না। আসলে কেন জানি না মন চাইতো না। তাইতো সে সীজারের সঙ্গে গোপনে প্রেমে মশগুল হয়ে পড়লো।

ফ্রান্সিকে আপনি কি এখনো ভালোবাসেন?

হ্যাঁ, এখনও বাসি।

 যাক, আর রক্ত পড়ছে কি?

না। আপাতত এখন ভালোই মনে হচ্ছে–

এখন আপনি হাঁটবেন না–বরং আমি একাই যাই। আপনি শুধু পথের নির্দেশটা দিন। তারপর কাছ থেকে বিদায় নিল।

.

২০.

 ডুরেল চলতে শুরু করল সব সংকীর্ণতার আবরণ ভেঙে দুমদাম পা ফেলে। চারদিকে বীভৎসভাবে জমে রয়েছে চুন, বালী, সুরকী। কোথাও কোন প্রাণের সাড়া নেই। জায়গা যত সাংঘাতিক তার থেকেও মৃত্যুফঁদ ততখানি গভীর বলে মনে হতে লাগলো।

তবু দাদ্রেকে তাকে রক্ষা করতেই হবে। একথা ভাবতে ভাবতে দ্রুত এগুতেই হঠাৎ কোন এক অতল গহ্বর ভয়ার্ত রব ভেসে উঠল।

দাদ্রে। আমি এখানে।

 ডুরেল চিৎকার তুলতে বিকট বন্দুকের গুলি দেওয়াল বিদীর্ণ করল!

 স্যাম এখানে আমি।

-পিস্তল খাড়া করে ডুরেল বলল, জ্যাক। তারপর আবার স্বর তুলল দাদ্রে

চারদিকে থেকে সেই মৃত্যুদূতের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক ধোঁয়া ধুলোবালি সমেত ঘোর আচ্ছন্নতা ঘিরে ফেলতে লাগলো।

সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। শুনতে পাচ্ছে না। সে বুঝতে পারলো আর কোথাও পালাবার পথ নেই। সেখানে পরাক্রম ট্যালবট সামনাসামনি চিৎকার করে ডাকল, ডুরেল। দাদ্রের মাথা আমার রাইফেলের পয়েন্টের মধ্যেই আছে।

ট্যালবট জানালো, পেইন্টিংগুলো। কোথায়? সীজারই বা কোথায়?

ডুরেল বলল, সীজারের কথা বলতে পারি না। কিন্তু প্যাকেট আমার হেপাজতে। আমার কথা কি দাদ্রে শুনতে পাচ্ছে? ট্যালবট বলল, বিলক্ষণ শুনতে পাচ্ছে।

ডুরেল বলল, দাদ্রেকে ছেড়ে দাও।

 ট্যালবট বলল, তাহলে আগে তোমার সাইলেন্সারের মুখ নামিয়ে দাও—

ডুরেল কিছুটা শব্দ করে মাটিতে নামিয়ে রাখলো।

ট্যালবট বিশ্বাসঘাতকতার ভূমিকা পালন করতে বিলম্ব করলো না। ট্যালবট তার দিকে রাইফেল উঁচিয়ে ধরতেই ডুরেল পকেটে হাত ঢুকিয়ে ৩৮ বোরের পিস্তলটা বাগিয়ে ধরলো।

দাদ্রে বলল, স্যাম। পালিয়ে যাও আমার অনুরোধ। শ্বাসরোধকারী মুহূর্তে ট্যালবট প্রাণের আকুলি জানিয়ে উৎকট কাশতে শুরু করতেই সেই প্রাণান্তক অবস্থার সুযোগে ডুরেলের হাতের আঙুলে গর্জে উঠলো ট্রিগার। ট্যালবটের রাইফেল মুহূর্তে ততোধিক পরিমাণে শব্দ তুলতে অন্ধকার আর ধোঁয়ার মধ্যে সমস্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।

প্রথমে আর্তনাদ উঠল ট্যালবটের।

 ডুরেল বুঝতে পারলো তার লক্ষ্যভেদ তখন নিখুঁত।

ডুরেল বলল, দাদ্রে তুমি কেমন আছ

খুব ভালো আছি-স্যাম

ট্যালবট তখন মাটিতে পড়ে গুমরে উঠলো মিস্টার ডুরেল, আমাকে এই নোংরা কাজে লাগিয়েছিল শয়তান প্যাসেক। ঠিক সেই মুহূর্তে ডুরেল পিছন ফিরতেই দেখলো মেজর প্যাসেক নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।

.

২১.

 প্যাসেক উদ্ভট গলায় বলল, আশাকরি মেহমান এবার বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে নিজেকে সংযত করবেন।

ডুরেল বলল, এ্যালেনকে খুন করেছিল কে?

প্যাসেক জানালো, আমি। সে কথা থাক। এখন পেইন্টিংগুলো কোথায়?

ডুরেল বলল, আমার ঠিকই জানা আছে। যদি কিছু টাকার দরকার থাকে তা এক্ষুনি নিতে পারেন।

প্যাসেক বলল, চুপ করুন।

খানিকক্ষণ নীরবতার পর প্যাসেক ট্যালবটের দিকে চেয়ে বলল, এখন নিশ্চিত এ্যাপোলিওর প্রাসাদেই পেইন্টিংগুলো আছে। শেষ কাজ তোমাকেই শেষ করতে হবে ট্যালবট যেনতেনপ্রকারেণ আমার পেইন্টিংগুলো চাই-ই।

ট্যালবট শুধু তার দিকে তাকালো কিন্তু কোনো কথা বলল না।

আগামীকাল আমরা এখানেই সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকব। তারপর যতদূর জানি সুভানা ফঙের সঙ্গে আমেরিকানদের চুক্তির শর্ত শেষ হয়ে যাবে। তার তারপরই আমার জেনেভা মিশন। আর টিনখনি চুক্তি

ট্যালবট বলল, সবই ঠিক আছে কিন্তু আমি নিজের হাতে ঐ হতচ্ছাড়া লোকটাকে খুন করতে চাই।

প্যাসেক বলল, আর এই যুবতী তন্বীটি কে–চিরকালের মতো ওকেও স্তব্ধ করতে পারলেই আমার পথ চলা সহজ হবে। সুস্থ হয়ে তুমি আবার আগের মতো কাজে নেমে পড়বে। আমি তোমার কাছে চিরঋণী ট্যালবট। আমি ঐ চিত্রকলা নিতে সব সময় রাজী আছি। জেনে রেখো তার জন্য সুইস ব্যাঙ্কে সব রকম অ্যাকাউন্ট বহাল রয়েছে, যা তোমার খুশি রেখে দিও।

এবার ট্যালবট মুখ তুলে তাকাতে চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না।

সে সব যাক গে। এখন ফ্ৰীমন্ট গোয়েন্দাদের নামগুলো রাখলে দেখি। কোথায় সেগুলো? এ্যালেনের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে এসেছিল। এখান থেকে আমি এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে চাই।

অবাক বিস্ময়ে ডুরেল তাকিয়ে দেখলো।

আর দেরী নয়। প্যাসেকের মনের পরিবর্তনের জন্য অনেক আগেই আগ্নেয়াস্ত্র নামিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে কতক্ষণই বা অপেক্ষা করবে। সীজারকে অকস্মাৎ অনেক দূর থেকেই আবিষ্কার করল সে।

একটা শক্তিশালী রাইফেল সীজারের হাতে।

ট্যালবটকে প্যাসেক অবিরাম ফ্ৰীমন্ট গোয়েন্দা দপ্তরের ডাটা দেবার জন্য জবরদস্তি শুরু করলো। নাছোড়বান্দা। ট্যালবটও কিছুতেই রাজী নয় মুখ খুলতে।

এমন সময় একটা জ্বলন্ত অঙ্গারের টুকরো সমস্ত পরিবেশকে এক নাটকীয় দৃশ্যে পরিণত করলো। চিৎকার করে ডুরেল ট্রিগারে আঙ্গুল টিপলো। শেষ করতেই হবে শত্রুকে। এই চরম সুযোগ।

ট্যালবট বলল, আমাকে তুমি নিশ্চয়ই মারবে না।

 হ্যাঁ, পতঙ্গের মতো। নামগুলো আমি চাই।

 তারা মিলানে আছে।

না, তারা মিলানে নেই।

তোমার পকেটেই খবরগুলো আছে। ওগুলো আমাকে দাও।

ডুরেল জানে যা সার্জেন প্যাসেক মনে করবে তা সে করবেই।

 প্যাসেক তাকে আর দাদ্রেকে সম্ভবত ট্যালবটকেও মেরে ফেলতে পারে।

ডুরেলের সঙ্গে ছিল ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। সেই জ্যাকের অস্ত্রটিকে সে প্যাসেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবার জন্যে দূরে ছুঁড়ে দিলো।

কিন্তু সে এখানে ছায়ায় ছায়ায় ঢুকে পড়েছে। প্যাসেক ট্যালবটের সঙ্গে কথা বলছিল।

সে সেই ডাটাগুলো চায়।

কেউই সীজারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো না। সীজার দাঁড়াল কেউই দেখলো না। পাহাড়ে হেলান দিয়ে নিজেকে স্থির করলো, বন্দুক ছুঁড়ল তারপর।

প্রথম সাবধান বাণী।

কিন্তু সন্দেহজনক ট্যালবট এটা শুনেছে কিনা।

প্যাসেকের সঙ্গে তর্ক করছিল সেই বিরাট লম্বা লোকটা। ডাটাগুলো যে তার কাছে নেই সেটা প্রমাণ করবার জন্যে সে প্রচুর চেষ্টা করলো।

প্যাসেক তার দ্রুতগামী বিরাট দেহটা কিছুটা নাড়িয়ে সীজারের দিকে গুলি ছুড়লো।

 প্যাসেকের তিনটি গুলি লক্ষ্য অনুযায়ী গেলো।

কেবল একবার ডুরেল প্যাসেককে সতর্ক করে দিল।

তারপর তার বন্দুকের গুলি শত্রুদের দিকে বন্দুক নিয়ে প্যাসেক প্রস্তুত, কিন্তু অন্য কোন উপায় ডুরেলের ছিল না। সে একবারই গুলি করলো। দ্বিতীয়বার আর গুলি ছুঁড়তে হলো না।

ডুরেল তার বন্দুকটা নামাল।

দাদ্রে

আমি ঠিক আছি স্যাম।

আমি ভাবতেই পারিনি যে এমন হতে পারে।

 যাক গে।

ভুলে যাও ব্যাপারটা।

এস্টান প্যাসেক তাকে পৌঁছে দিলো।

সীজার বলল নিঃশব্দে, আমি মারা যাচ্ছি। প্রথমে এ্যাপোলিও তারপর এই লোকটি আমাকে মেরে ফেলার জোগাড় করেছে–আমি প্রতারিত হয়েছি ফ্রান্সিসকা।

আর কোন বিপদ নেই ফ্রান্সিসকা।

জ্যাক ট্যালবটের পকেট উল্টেপাল্টে দেখলো। তারই পকেটের মধ্যে সেগুলো ছিল।

 মিথ্যে কথা বলেছিল ট্যালবট।

ঠিকই ছিল ফ্ৰীমন্ট ডাটাগুলো। এবং ইস্যুরেন্স কাগজগুলো ছিল। কোডচিহ্ন দেওয়া ছিল একটা কালো ডায়েরীর মধ্যে।

পকেট বইটা ডুরেল রাখল। এবং যেখানে দাদ্রে দাঁড়িয়েছিল, সেখানে গেল। এমনভাবে তার দিকে তাকাল যেন সে একজন বিদেশী স্পাই। সে সম্ভবত সেই সময় তাই ছিল।

কোন কিছু অনুরোধ ডুরেলকে করতে হলো না। আরো কিছুক্ষণ বাদে পেন্টিংগুলো ফেরৎ দিয়ে দিল তাকে অতি অনায়াসে।

জিজ্ঞেস করল ডুরেল, কেমন আছেন এ্যাপোলিও?

আগের চেয়ে এখন ভালোই আছেন।

চোখর পাতা বন্ধ করে কাউন্টেস বলল, এখন আমি সেই বিশ্রী ফুলের মতো পাকরী। আর কেউই আমাকে ভাল মনে ঘরের আলমারীতে তুলে রাখবে না।

ডুরেল বলল, কেন চেষ্টা করে দ্যাখো। তাকে তো ফিরেও পেতে পারো।

সে উত্তরে বলল, দেখি, তোমার কথাটা হয়তো ফলেও যেতে পারে।

ডুরেল তারপর পরিধান অতি দ্রুত পাল্টে পেন্টিংয়ের প্যাকেটটা নিয়ে একেবারে দাদ্রের পাশে বসলো।

রওনা হবার একরকম সব প্রস্তুতি পর্ব শেষ।

সত্যি কি তুমি যাচ্ছো স্যাম?

না, যাবার মুখে

 তোমার কি সব কাজ শেষ

ডুরেল বলল, হ্যাঁ। সবই প্রায় শেষ।

 প্রথম কোথায় যেতে চাও।

কোথায় আর! ছকেবাঁধা জীবন। ওয়াশিংটন নির্দেশ দিলেই রাজী। পা বাড়ালেই রাস্তা।

দাদ্রে বলল, আমি সেইদিন সব চেয়ে বেশী সুখী হবো যদি কখনো তোমার পাশে থেকে সাহায্য করতে পারি। আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো স্যাম।

চলো। নিয়ে যাই এখান থেকে।

.

২২.

 হোটেল কন্টেকোপালতে বয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া। ডুরেল তার ঘরে ফিরে গেল।

ডুরেল ভোরের আলো না ফুটতেই জেনেভাতে ফোন করে প্রিন্স সুভানাকে পেন্টিং উদ্ধারের কাহিনী বর্ণনা করতে ভুললো না। আপতত টিনখানি চুক্তির স্বাক্ষর আর কোনো দ্বিধা সংশয় থাকবার কথা নয়।

খানিক পরে ডুরেল দাদ্রেকে সঙ্গে করে এ্যাপোলের কাছে গেলো।

 ডুরেল আবেগ পুলকিত শিহরণে দাদ্রেকে উত্তেজিত করে তুললো।

মুহূর্তের মধ্যে ডুরেল বলল, যাই এক্ষুণি আবার দেখা করতে হবে হ্যানসনের সঙ্গে।

নেপলস্ থেকে লোকটা ট্রেনে বোম, রোম থেকে সোজা জেনেভা।

সর্ব প্রথম সুভানার সঙ্গে দেখা করে তার চিত্রশিল্পগুলোকে ফেরত দিতে হবে।

ডুরেল বলল, দাদ্রে, এখন আমায় ছেড়ে দাও। বিশ্বাস করো লক্ষ্মীটি, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি

স্যাম আমার কাছে এইটুকুই যথেষ্ট।

আর কোন উত্তর দিল না ডুরেল।

 ডুরেল বলল, আমরা নিশ্চয়ই আবার এক সঙ্গে মিলতে পারবো।

এখন আর কোন কথা নয়।

 সমস্তই বিস্তারিত বিবরণ লিখে পাঠাতে হবে ওয়াশিংটনে। আর কতক্ষণই বা সময় লাগবে ক্রীমন্ট গোয়েন্দা সংগঠন আর কে সেকসনের লোকদের নতুন করে ঘোর পাল্টিয়ে আনতে। তারপর, সুস্থ জীবনে চর্যাপদ উঠে আসবে দিনের মধ্যেই। তারপর শুধু ব্রুশ, দাদ্রে আর বুশ।

তারা একসময় পাশাপাশি দুজনে রোম স্টেশনের দিকে এগুতে থাকল। আর এই এলো বলে রোমের ট্রেন।