২১.
স্থানীয় থানার অফিসার মিঃ ওয়াকার পোয়ারোর বিশেষ পরিচিত। পোয়ারোকে দেখে তিনি বলেন–আরে মিঃ পোয়ারো বসুন? কেমন আছেন?
–ভাল। আপনি?
–চলে যাচ্ছে। তা ব্যাপার কী বলুন?
বছর পনেরো আগে এখানকার অফিসার আপনি ছিলেন? সেই সময়ে একটা কেসের ব্যাপারে এসেছি।
–হ্যাঁ, আবার গত দুবছর হল এসেছি। মনে হচ্ছে পুরোনো ঘটনা নিয়ে আপনার মনে কিছু আছে। তা ঘটনাটা কী?
–বছক পনেরো আগে এক ভদ্রলোক মিঃ রবার্ট ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মারা যান।
–কোথায় বলুন তো?
ভিক্টোরিয়া টার্মিনাসে। বাড়িতে একটা চাকর ছিল জোন্স। রবার্ট মারা যাবার পর সে রবার্টের শিশুকন্যাকে নিয়ে সর্বস্ব বিক্রি করে কোথায় চলে যায়। আমি তার খবর চাই।
–এতদিনের পুরোনো ব্যাপার…তা জোন্সের কোনো ছবি আছে?
–না।
–কোথায় যেতে পারে বলে আপনার ধারণা?
–ওর দেশের বাড়িতে।
–ওর দেশের বাড়ি কোথায়?
–সেটা জানার জন্যই তো এখানে এসেছি।
–অবশেষে বহু খুঁজে জোন্সের দেশের নাম আর ঠিকানা পাওয়া গেল। ছবিও পাওয়া গেল। রবার্ট সবকিছু জানিয়ে গিয়েছিল। পোয়ারো সব টুকে ওয়াকারকে অনুরোধ করে ছবি নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে চার্লস।
চার্লস বলে–কোথায় থাক আজকাল?
–আগে একটু গলা ভিজিয়ে নিই। তুমিও পাবে।
ইতিমধ্যে পানীয় এসে যায়। পোয়ারো তাতে চুমুক দেয়।
–কাজে দারুণ ফেসে গেছি।
সেতো দেখছি। মেরী-শার্লট রহস্য কতদূর?
–একটু-আধটু ঘুরেছি তবে কেসে সেরকম মেরিট নেই, তাই এগোইনি।
চার্লস চুমুক দিয়ে তুমি তো এতো দায়িত্বহীন নও। যাক তোমার ব্যাপার। আমি উঠি।
–উঠবে? তাহলে আর আটকাবো না। পোয়ারো বুঝতে পারে চার্লস তার উত্তরে খুশী
হয়নি। চার্লস যাবার পর পোয়ারো ফোনে জয়েন করে।
–হ্যালো! মিঃ এমিট কথা বলছেন?
-হ্যাঁ।
–আমি পোয়ারো।
–বলুন স্যার, অনেকদিন পরে আপনার ফোন পেলাম।
–এ কদিন তেমন কোনো কাজ ছিল না হঠাৎ একটা..যাক আপনি ফ্রি আছেন?
–আপনার জন্য সবসময় ফ্রি স্যার।
–তাহলে এখুনি আমার অ্যাপার্টমেন্টে চলে আসুন।
–এক্ষুনি যাচ্ছি স্যার।
থ্যাঙ্ক ইউ।
দুইজনে মুখোখুখি বসে, হাতে পানীয়। এমিটের বয়স ষাটের কাছে। লম্বাটে ধরনের চেহারা এবং উপস্থিত বুদ্ধি আছে। সে পোয়ারো এবং অন্য গোয়েন্দাদের নানা তথ্য সংগ্রহ করে দেয়। এ ব্যাপারে তার সুনাম আছে। আগে পুলিশে কাজ করার জন্য একাজে তার অসুবিধা হয় না।
জোন্সের ব্যাপারে পোয়ারো এমিটকে সব বুঝিয়ে বলে–জোন্সের বয়স সাতান্ন হবে, তার সাথে একটা আঠারো বছরের মেয়ের থাকার কথা। সেই মেয়েটি কী করছে? আর জোন্সই বা কীভাবে জীবনযাপন করছে সবই আমার জানা দরকার।
-ঠিক আছে স্যার, তাহলে উঠি।
এমিট দিনতিনেক পরে ফিরে এসে জানায়–ওখানকার লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানা গেছে ওটা জোন্সের দেশ তবে ওরা বলেছে জোন্স এখানে থাকে না। শহরে কাজ করে। সমস্ত গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে পাওয়া যায়নি।
–তাহলে নিশ্চিন্ত যে জোন্স দেশে নেই।
–একেবারে ঠিক কথা স্যার।
–ঠিক আছে, আপনার বিলটা দিয়ে যাবেন।
–এরকম কাজ মাঝেমধ্যে পেলে খুশী হবো স্যার।
.
২২.
ডেইলি হারল্ড একটি নামকরা পত্রিকা। সারা পৃথিবীতে এদের প্রতিনিধি রয়েছে। এই অফিসে মিস লরেন্স কাজ করে। বয়স পঁচিশের নিচে হলেও কাজে দক্ষ। কাজে গাফিলতি নেই, যথেষ্ট আগ্রহের সঙ্গে মিষ্টি হাসি দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়।
পোয়ারো এই লরেন্সের কাছে গেল। এর কাছ থেকে পোয়ারো যে কত সাহায্য পেয়েছে তা বলার নয়। পোয়ারো তিনতলার ঘরের সামনে গিয়ে দেখে লরেন্স একটা ফাইলে ডুবে আছে।
লরেন্স পোয়ারোর উপস্থিতি টের পেয়ে ফাইলের থেকে দৃষ্টি পোয়ারোর দিকে করে। লরেন্সের পরনে মিনি স্কার্ট উপরে হাইনেকের সাদা সোয়েটার। মাথায় একরাশ ধূসর বব চুল।
লরেন্স হাসে–কী খবর।
-তুমি অমন করে হাসবে না তো, যাদু আছে।
–যাদু? তাও তো ম্যানেজ করতে পারলাম না।
–একথা মনে থাকবে।
–থাকবে না। আসল কথাটা বলুন। আপনি তো আমার সঙ্গে গল্প করতে আসেননি।
অমন বলল না ব্যথা লাগে।
–কোথায়?
–বুকে। আজ ডিনারে কোথায় যাবে?
-নাইট ডিউটি ছেড়ে আমি যে আপনার সঙ্গে যাবো না তা জানেন বলেই এই অফারটা দিলেন।
–তাহলে একদিন লাঞ্চের অফার রইল।
–তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারলেন না।
–আই অ্যাম সো সরি।
–এবার আপনার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারলে ভালো হত।
-ধন্যবাদ, শোনো, বছর পনেরো আগে মিঃ রবার্ট নামে এক ভদ্রলোক ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। আমি জানতে চাই তোমাদের কাগজে সেই সম্বন্ধে কী বেরিয়েছে।
–এক মিনিট। ইনডেক্স কার্ড থেকে নির্দিষ্ট কার্ডটা বার করে পোয়ারোকে দেয়।
তাতে লেখা রয়েছে–কর্মরত অবস্থায় সিটি ব্যাঙ্কের অফিসার মিঃ রবার্ট চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। তবে এটা আত্মহত্যা কিনা তা নিয়ে পুলিশ সন্দেহ প্রকাশ করেছে আর তা নিয়ে খোঁজও চলছে।
–এরপর কোনো রিপোর্ট বেরিয়েছে?
লরেন্স রেফারেন্স কার্ডটা দেখে এসে জানায়, না। পুলিশ নিশ্চয় সন্দেহ করেনি। করলে…
-আমারও তাই মনে হয়। তাহলে উঠি।
–লাঞ্চটা? লরেন্স মিটি মিটি হাসে।
–পরের বারের জন্য তোলা রইল।
.
২৩.
সিটি ব্যাঙ্কের অফিসার ছিল রবার্ট। এই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে পোয়ারার আলাপ নেই। তবে একজন এজেন্ট নাম ওয়েড বয়স পঁয়তাল্লিশ, বেশ ভারিকি ধরনের চেহারা তার সাথে পোয়ারোর আলাপ আছে। তারা একই স্কুলে পড়ত। ওয়েড তার ঘরে কাজে ব্যস্ত। মৃদু করাঘাতে পোয়ারো তার ঘরে প্রবেশ করে।
-আরে পোয়ারো যে; কী ব্যাপার?
–তোমাদের চাকরিটাই বেশ, তার সংসার ধর্ম করাই দেখছি ভালো।
–সংসার করবে নাকি?
–তেমন পাত্রী তোমার হাতে আছে নাকি?
–আছে। সদ্য বিধবা প্রচুর সম্পত্তির মালিক।
–তা তুমি একবার লড়ে যাবে নাকি?
ইচ্ছা তো ছিল। বুড়িবউ আর ছেলে-মেয়েরা গলার কাছে অক্টোপাসের মতো আটকে আছে।
–তা বুড়ি হল কীসে?
–দশ বছরের পুরোনো বউ বুড়ি নয়?
–ও, আচ্ছা ওয়েড, এখানে তোমার কত বছর চাকরি?
–তা পনেরো-কুড়ি বছর হবে।
–তুমি রবার্ট বলে কাউকে চেনো?
–রবার্ট…হঠাৎ মনে পড়ে যায়।
-হ্যাঁ, আমি তখন প্রথম জয়েন করেছি। শুনলাম আগের অফিসার, কাজে যাচ্ছিল সেই সময় চলন্ত ট্রেনের থেকে পড়ে মারা যায়। তা বন্ধু তোমার এ কৌতূহল কেন? নিশ্চয়ই এমনই এত বছরের পুরোনো ঘটনা তুমি জানতে চাইছ না?
–একটু দরকার ছিল। আচ্ছা ওর সঙ্গে যারা কাজ করত তাদের নাম বলতে পারবে?
দাঁড়াও ভাবতে হবে। আগে একটু কফি খাও দেখি। তারপর বলে-ম্যানেজার মিঃ উইলসন, মিঃ রবার্টের সহকর্মী।
-তাহলে উঠি।
–বাঃ। কাজের বেলা কাজী, কাজ ফুরোলেই পাজী?
-বাঃ, সেই বিধবা পাত্রীটার সঙ্গে দেখা করতে হবে না? যাই মিঃ উইলসনের সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। তার কাছে আমার আসল পরিচয়টা গোপন রাখাই ভালো।
-তথাস্তু। কিন্তু বন্ধু কোনো কারণে আবার ফেঁসে যাবে না তো? তোমার ব্যাপারে আমার বড্ড ভয় হয়।
-তুমি যে মহা ভীতু, চলি এবারে।
একজন বেয়ারাকে জিজ্ঞাসা করে পোয়ারো মিঃ উইলসনের কামরায় টোকা মেরে দরজা ফাঁক করে বলল–ভেতরে আসতে পারি।
উইলসন ইন্টারকমে কার সঙ্গে কথা বলছিল। তাই ইশারায় পোয়ারোকে বসতে বলে। তার বয়স পঞ্চাশের কাছে, ঝকঝকে চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত মুখ, মাঝারি গড়ন, পরনে নিখুঁত স্যুট।
উইলসন ফোনটা নামিয়ে রাখতেই পোয়ারো বলল-আপনাকে একটু বিরক্ত করব। কথাটা কিন্তু ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নয়।
-তাতে কী আছে? কারো ব্যক্তিগত প্রয়োজনও থাকতে পারে।
-ধন্যবাদ, আচ্ছা মিঃ রবার্টের কথা মনে আছে? তারপর ম্যানেজার জানায় রবার্টকে কখনও ভোলা যায় না, সে তার অনেক উপকার করেছে আর দুজনে একই সঙ্গে অফিসার হয়েছে। তার কাছ থেকে রবার্টের বাড়ি কেনার শখের কথা জানা যায়। তার স্ত্রী বেঁচে থাকাকালীন কিছু টাকা তার কাছে ছিল বাকি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তোলে বাড়ি কেনার জন্য। কিন্তু সেই টাকা কিছুদিন পর আবার ব্যাঙ্কে ফেলে দেয়। কয়েকদিন পর আবার সেই টাকা তোলে কিন্তু আর ব্যাঙ্কে রাখেনি। কার কাছে রেখেছে তা ম্যানেজার বলতে পারল না।
–আচ্ছা, রবার্টের ব্যাপারে পুলিশি তদন্ত হয়?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা, সেদিন কী মিঃ রবার্টের কাছে টাকাকড়ি ছিল?
–না।
-আচ্ছা, এটা কী আত্মহত্যা হতে পারে।
–তা হয়তো না, তবে স্ত্রী মারা যেতে ও ভীষণ আপসেট হয়ে পড়ে।
–ও কী অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসত?
–ও ওর স্ত্রীকেই ভীষণ ভালোবাসত।
–মিস জুলিয়েটের সঙ্গে ওর সম্পর্ক কেমন ছিল?
–ভালোই। ওকে আমি রবার্টের মেয়েকে পড়ানোর জন্য দিই।
–তবু একটু খুলে বলুন।
–একজন ভদ্রমহিলার প্রতি যতটা সম্মান দেখানোর সে দেখাতে। স্ত্রী মারা যাবার পর তাকে এড়িয়ে চলত।
–আচ্ছা, রবার্টের কোনো লইয়ার বন্ধু ছিল?
–যতদূর জানি, না, এখানে অন্তত আসেনি। ওর একটাই কাছের বন্ধু ডিনসমেড এখানে এসেছে বহুবার।
–টাকাটা কী অন্তরঙ্গ বন্ধুর কাছে রেখেছে?
–না, রাখলে আমার পরামর্শ চাইত। আমি তাহলে না বলতাম। কার মনে কী আছে আগে থেকে বোঝা যায় না। আর টাকা? বউ মরে যাবার পর ও ভাবত যে ও কোনোদিন মরে যাবে।
-ওর মেয়ের খবর কিছু জানেন?
–শুনেছি জোন্স আর জুলিয়েটের কাছে মানুষ হচ্ছিল।
–জোন্স মিঃ রবার্টের অ্যাপার্টমেন্ট বেচে মেয়ে নিয়ে উধাও হয়।
–হ্যাঁ, খবরটা শুনে গিয়ে দেখি সত্যি।
–আচ্ছা এমনও তো হতে পারে টাকাটা জোন্সের কাছে ছিল?
হতেও পারে কারণ রবার্ট শেষের দিকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল।
–আচ্ছা, ওর মেয়ের নামটা মনে আছে?
–না, আসলে যে যার প্রিয় নামে ওকে ডাকত।
–আচ্ছা, সেই মেয়েকে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন?
–একবার না, বহুবার। স্ত্রী, মেয়ে নিয়ে ও বহুবার আমার বাড়ি গেছে।
–মেয়েটির গায়ে কোনো চিহ্ন ছিল?
–না।
–আচ্ছা মিঃ রবার্ট মিস জুলিয়েটের কাছেও তো টাকা রাখতে পারে?
জানি না, কিন্তু কার উপর ভিত্তি করে একথা বলছেন?
–কারণ মিস জুলিয়েট যে একটা স্কুলে টেম্পোরারি কাজ করত আজ সে একটা কিণ্ডার গার্ডেনের মালিক।
–হয়তো নিজের টাকা আবার লোনও তুলতে পারে।
–ভাবছি মিস জুলিয়েটের প্রতি রবার্টের দুর্বলতা ছিল। কারণ ওর বয়সও তখন তরুণ। তাই…। ঠিক আছে মিঃ উইলসন, পরে দেখা হবে। বিরক্ত করার জন্য মাফ চাইছি।
-আরে না না।
.
২৪.
বাড়িতে গিয়ে পোয়ারো এমিটকে ফোন করে। সে ফ্রি জেনে তাকে পোয়ারো তার ফ্ল্যাটে আসতে বলে। এমিট জানায় পনেরো মিনিটের মধ্যে সে পৌঁছোবে।
বেলা সাড়ে এগারোটায় পোয়ারোর বৈঠকখানায় পোয়ারো আর এমিট পানীয় হাতে কথা বলছে।
–মিঃ এমিট এখন আপনার একমাত্র কাজ জুলিয়েটকে ফলো করা।
–ঠিক আছে।
–তাকে অন্তত দিন তিনেক ওয়াচ করবেন। আর দেখবেন সে যেন আপনাকে সন্দেহ না করে। সে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে কথা বলছে, স্কুলে থাকাকালীন কী করছে? কে দেখা করতে আসছে সমস্ত।
–হুঁ। এমিট পানীয়ে চুমুক দেয়।
-আর একটা কথা। পরবর্তী কাজের কথা জানিয়ে বলে–এসব কাজে গোপনীয়তা রেখে চলবেন। তাহলে ঐ কথাই রইল।
–ঠিক আছে, এমিট বিদায় নেয়।
বেলা একটায় এমিট সানরাইজ স্কুলে ঢোকে। এক মিসেস-এর সঙ্গে দেখা হলে তার কাছ থেকে জেনে নেয় জুলিয়েটের ঘর এবং তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জুলিয়েটের ঘরে যায়। সেখানে জুলিয়েট এক ছাত্রীর মার সাথে কথা বলছিল। এমিট ভিতরে ঢুকলে, জুলিয়েট ছাত্রীর মার সঙ্গে কথা শেষ করে তাকে বিদায় দেয়।
-বলুন।
–আমি হেডমিস্ট্রেসের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
–আমিই।
–নমস্কার।
–নমস্কার।
–আমি ইনকাম ট্যাক্স থেকে আসছি।
–ও! জুলিয়েট একটু ভয় পেয়ে যায়।
–আপনার স্কুল কতদিনের? এমিট যেন ভারিকি চালে বলে।
–এই দশ পনেরো বছরের।
–সে তো অনেক দিনের ব্যাপার। তা কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়ানো হয়?
–কিন্ডার গার্ডেন থেকে স্ট্যান্ডর্ড-টু পর্যন্ত আছে।
–তাহলে তো মোটামুটি বড়োই স্কুল।
–আরো কয়েকটা ঘর হলে ভালো হত।
–হ্যাঁ ঢোকার মুখে একই ঘরে অনেক ছাত্র-ছাত্রী দেখলাম। তা আপনি কী এখানেই থাকেন?
–হ্যাঁ। এরই সংলগ্ন বাড়িতে।
অন্য মিস্ট্রেসরা।
–অন্যত্র থাকে।
–বাড়িটা তৈরি করা না কিনেছেন?
–কিনেছি।
–কত টাকা? তা কাগজপত্র আছে তো?
–হ্যাঁ, লাখ টাকা দিয়ে।
–টাকা কোথায় পেলেন?
–আমার ছিল। একটু কফি আনতে বলি?
–মাফ করবেন আমি ডিউটিতে এসে কিছু খাই না। আপনার কাছে টাকাটা কী করে ছিল?
–আমি প্রথম জীবনে কয়েক বছর কাজ করেছি।
–কোথায় কাজ করতেন?
বেশ কয়েক বছর গভর্নের্স ছিলাম, তারপর স্কুলে কাজ করেছি আর আমার স্বামীও কিছু দিয়েছে।
–আমরা খবর পেয়েছি আপনি মাস দুয়েক মিঃ রবার্টের বাড়িতে গভর্নেস ছিলেন, তারপর কয়েকটা স্কুলে টেম্পোরারি চাকরি করতে করতে মিঃ স্মিথকে বিয়ে করেন, তাই না?
-হ্যাঁ, জড়তার সঙ্গে বলে।
-মিঃ স্মিথ একটা সামান্য কারখানায় কাজ করতেন, তিনি দেখতে সুপুরুষ বলে আপনি তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু সে বিয়ে সুখের হয়নি, শেষে বিচ্ছেদ হয়। পোয়ারোর শেখানো কথা এমিট গড়গড় করে বলতে থাকে।
–হ্যাঁ বাকি টাকা ধার করেছি।
–কোথা থেকে? ব্যাঙ্ক?
–না, মানে…জুলিয়েট ইতস্তত করতে থাকে।
–বলুন, চুপ করলেন কেন?
–আমার এক বন্ধু দিয়েছে।
বন্ধু? তার নাম ঠিকানা জানাবেন?
–জানাতে অসুবিধা নেই, তবে সে আর বেঁচে নেই।
–কত বছর আগে মারা গেছেন?
-বেশ কয়েকবছর আগে। দয়া করে আমায় তার নাম জিজ্ঞাসা করবেন না। জুলিয়েটের গলা ভারী হয়।
–আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু, কর্তব্যের খাতিরে নামটা আমায় জানতেই হবে।
–মিঃ রবার্ট।
–মিঃ রবার্ট। তা উনি কত টাকা দেন?
–প্রায় হাজার ত্রিশ।
–তার রিসিট নিশ্চয়ই আপনার কাছে আছে?
হ্যাঁ, তবে লকারে আছে। জুলিয়েট নিরুপায় হয়ে মিথ্যে বলে।
–ও! আর বাকি টাকাটা?
–বললাম যে..
.–আপনার রিটার্ন সাবমিট করেন?
–না, লসে রান করছি। কী আর করবো?
–লস? তা স্কুলের অবস্থা দেখে তো মনে হয় না।
–উপর উপর ভালো। ভেতরটা ফাঁপা।
–তবু আপনার কথাটা মানতে পারছি না। এতদিন রিটার্ন সাবমিট না করে অন্যায় করেছেন। এবার থেকে করবেন।
-তার জন্য আমি লজ্জিত।
–ও কথা বললে হবে না। তার জন্য আপনাকে কিছু পেনাল্টি দিতে হবে। খুব সহজে ছাড়া পাবেন না।
-স্কুল লসে রান করছে, তা সত্ত্বেও?
-সেটা প্রমাণ সাপেক্ষ। যখন ইনকাম ট্যাক্স কল করবে তখন সব কাগজপত্র নিয়ে অ্যাপিয়ার হবেন।
-ঠিক আছে।
উঠি।
জুলিয়েট এমিটকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয় তারপর দারুণ অস্বস্তি বোধ করে।
এমিট বাড়ি গিয়ে দ্রুত পোশাক পাল্টে নেয়। এখন তার পরনে ময়লা জামাকাপড়, গালে কাঁচা-পাকা দাড়ি, জুতোর ওপর একপ্রস্থ ধুলো মানে খুব পরিচিত মানুষও হট করে তাকে চিনতে পারবে না। এমিট আবার জুলিয়েটের স্কুলে অদূরে দাঁড়িয়ে সব লক্ষ্য করতে থাকে।
.
২৫.
-হ্যালো।
–হ্যালো। আমি পোয়ারো বলছি।
–স্যার, আমি উড বলছি।
–তুমি কোথা থেকে আমায় ফোন করছ?
স্থানীয় একটা টেলিফোন বুথ থেকে।
–ঠিক আছে ওদের ফোন কখনও ব্যবহার করবে না। তা তোমায় কেউ সন্দেহ করছে না তো?
–আদৌ নয় স্যার।
–বল কী খবর?
–স্যার, মিঃ ডিনসমেডকে কদিন বেশ গম্ভীর দেখছি।
–কারণ কি? তোমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছে?
–মন্দ নয়। তবে মাঝেমধ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
–ক্ষিপ্ত? কেন?
ব্যাবসা নাকি আরো খারাপের দিকে চলছে। ও আর ওর স্ত্রী সংসার সামলাতে নাজেহাল। আর একটা কথা লক্ষ্যণীয়–স্বামী-স্ত্রী যখন কথা বলে তখন সেখানে কেউ থাকে না। ছেলে-মেয়েও না।
–আর ওদের কথার মধ্যে কেউ হাজির হলে?
সঙ্গে সঙ্গে সজাগ হয়ে যায় আর প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলে অন্য কথা বলে।
—তারা কী ধরনের আলোচনা করে শুনতে পেয়েছ?
-না, আসলে ওরা তখন খুব চাপা স্বরে কথা বলে। নানাভাবে চেষ্টা করেছি আবার বেশি সাহসেও কুলোয় না, পাছে ধরা পড়ে যাই।
–ঠিক বলেছ। খুব সাবধানে কাজ করতে হবে।
–ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে অত্যন্ত মামুলি কথা বলে, যেন কথাগুলি আগে থেকেই স্থির করা।
–জর্জের খরব কী?
–জর্জ তো এখন আমার খেলার সাথী।
–এখনও কী ল্যাববারেটরি নিয়ে মেতে থাকে?
–না, আগের মতো না। এখন পড়ার পর বেশিরভাগ সময় আমার সাথেই কাটায়।
–মেরী নিয়মিত কলেজ যাচ্ছে?
–হ্যাঁ স্যার।
–ওকে নিয়ে মিঃ ডিনসমেড কোথাও বেরিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, একা ওকে নিয়েই গিয়েছিল। কথাচ্ছলে আমি মিস মেরীকে জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারি ও বাবার সঙ্গে বাবার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল।
–আর মিস শার্লট কী এখনও পরচুলা পরেন?
–প্রথম দেখেছি তবে এখন আর পরেন না।
–কেন?
–হয়তো প্রথমে ভেবেছে আমি কে দেখা দরকার তারপর নিশ্চিত হয়েই…
–আচ্ছা সে নিয়মিত কলেজ যাচ্ছে?
–হ্যাঁ, দুবোন একই সাথে যায়।
–আর কোনো খবর আছে?
–না স্যার, তবে মিস শার্লটকে কেমন নির্জীব দেখাচ্ছে।
নির্জীব? কেন বলো তো?
–ঠিক বুঝতে পারছি না।
-ঠিক আছে তুমি ভালো করে ওয়াচ করে যাও। আর প্রয়োজন হলেই টেলিফোন করবে। আর ঝট করে বুথ থেকে বেরিয়ে দেখো তো কেউ তোমায় ফলো করছে কি না।
–দেখছি স্যার।
এমিট রিসিভার নামিয়ে হট করে বাইরে বেরিয়ে দেখে কেউ নেই। রিসিভার তুলে জানায়–না স্যার, কেউ নেই। সব ঠিক আছে।
-তাহলে ঐ কথাই রইল।
–আচ্ছা স্যার।