১১. কে ওই আমেরিকান

১১.

কে ওই আমেরিকান

বুড়ো জর্জেসকে জেরা করায় সে খুব রেগে গেল। বুড়ো দেখল যে সত্যি জানার জন্য এই লোকটি অত্যন্ত উদগ্রীব এবং কথাটি মিথ্যে হলেও তার মনের মতো হওয়া চাই। জর্জেস বললেন, মাদাম যেদিন ইংল্যাণ্ড যান তার আগের দিন একজন মহিলা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এই ভদ্রমহিলাকে আমি ছবি দেখলে চিনতে পারব এমন কথাও দিতে পারছি না। কারণ চোখে আমি ভালো দেখি না।

পোয়ারো ও ফার্নের এই জেরার ফলে বৃদ্ধ খুব রেগে যাচ্ছেন এটা বুঝতে পেরে বললেন যে তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। জর্জেস খুব রেগে গেছিল, তার মনে হল, মাদাম যদি প্লেনে খুন না হতেন তাহলে জর্জেসকেই খুনী বলে মনে করা হত।

জর্জেসকে জিজ্ঞাসা করা হল ভদ্রমহিলা কি খুব সুন্দরী। জর্জেস একটা ঢোক গিললো। পোয়ারোর ধারণা সাঁতারের পোশাকে তাকে খুব সুন্দর দেখাবে। এই বলে স্কেচ পত্রিকায় সাঁতারের পোশাক পরা দুজন মহিলার ছবি দেখালেন। জর্জেস ছবি দেখে কিছুটা চমকে উঠলেন। পোয়ারো বললেন আমি উত্তর পেয়ে গেছি।

পোয়ারো জর্জেসের কাছে জেরা শেষ করে কালো রং-এর নোটবইটা বের করলেন। ফার্নে পুলিশের দেখা নাই, সকলের গায়ে জ্বর আসে। এই জন্য বেসরকারী গোয়েন্দা পুলিশের চেয়ে অনেক বেশি খবর জোগাড় করতে পারে। আমাদের হাতে সরকারী নথিপত্র আছে, এই বিরাট কর্মকাণ্ডের আসল চাবিকাঠি কিন্তু আমাদের হাতে।

ফার্নে নোটবই বের করে লিখছেন যা সেটা পোয়ারোকে দেখালেন।

C.Z. ৫২। ইংরেজ লর্ডের পত্নী। স্বামী।

R.T. ৩৬২। ডাক্তার, হার্নে কীট।

M.R. ২৪। নকল দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন বস্তু বিক্রেতা।

 x.v.B. ৭২৪। ইংরেজ। তহবিল তছরুপকারী।

 G.F. ৪৫। খুনের চেষ্টা করেছিলেন। ইংরেজ।

পোয়ারো বললেন ফার্নের সঙ্গে তার মনও একদিকে এগিয়ে চলেছে।

তাদের নোটবই-এ দেখে তার গতিবিধি নির্ধারণ করলেন। প্রথম সন্দেহ ইংরেজ লর্ডের পত্নী। ইনি হলেন লেডি হরবেরিল। তিনি যে গিজেলের কাছ থেকে টাকা নেবেন এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। গিজেলের মক্কেলরা সাধারণত ওই ধরনের। কিংবা তার স্বামীর দেনা তিনি শোধ করবেন এটা হতে পারে সংক্ষেপে বলতে গেলে এই দুটোর যে কোনো একটা অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। ফার্নের মতে ইংল্যান্ডে সবার আগে রাত্রে লেডি হরবেরিলর সাথে গিজেল দেখা করেছিলেন। পোয়ারো তার সাথে এ ব্যাপারে একমত। তারা মনে করছেন জর্জেস স্কেচ পত্রিকায় যে ছবি দেখে চমকে উঠেছিলেন তা থেকে এটাই প্রমাণ হয় সেদিন ভদ্রমহিলা লেডি হরবেরিল ছিলেন।

লা পিনেত থেকে প্যারিস পর্যন্ত মাদাম গিজেলের পিছু নিয়েছেন-এর থেকে প্রমাণ হয় তিনি খুব বেপরোয়া। পোয়ারো বললেন, এটা সত্যি হতে পারে।

ফার্নে বললেন যে বেসরকারী চিন্তাভাবনার সঙ্গে এটা খাপ খায় না। তাই তারা দুজনেই আলাদাভাবে চিন্তা করলে এটাই ঠিক হবে। কারণ কোনো কিছু ভুল সূত্র হলে তা বারবার ভুল দিকে নিয়ে যাবে।

ডাক্তার ব্রায়ান সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন। তবে তিনি ইনসপেক্টর জ্যাপের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন না।

মঁসিয়ে দ্যুপ–দুজনের সৎচরিত্রের কথা স্বীকার করলেও উভয়েই এটা মানতে রাজি নয়। একজন জালিয়াতের এক নম্বর পুঁজি হচ্ছে সুনাম, সেক্ষেত্রে এরা দুজন সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।

x.V.B. ৭২৪ এটা খুবই অনিশ্চিত ইংরেজ। তছরুপকারী–ফার্নে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন যে কেউই তছরুপ করতে পারে। যে কেউই চুরি ঢাকার জন্য মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারে।

শেষের নামটি নিয়ে তারা ব্যাপক সুযোগ পাচ্ছেন–সাহিত্যিক, দাঁতের ডাক্তার, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী চুল বাঁধার সহকারিণী, পরিচারক যে কোনো লোক হতে পারে, কারণ তারা সকলেই ইংরেজ, উঁপ দুজনে ফরাসি হবার জন্য এই তালিকা থেকে বাদ।

এরপর তারা দুজন গোয়েন্দা দপ্তরে এলেন। তাদের সামনে ছিলেন সঁসিয়ে গিলস যিনি গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। তিনি পোয়ারোকে সেই মামলায় রুচি আছে জেনে অত্যন্ত প্রীত হলেন।

একটা প্রবাদ আছে, পেট ঠিক থাকলেই সেনারা দৌড়াতে পারে। তারা গিরাদ নামক একজন গোয়েন্দার কথা বললেন। উদ্যমে গিরাদের মতন আর কেউ নেই।

মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, ফার্নের মতো একজন মনস্তত্ব বিশারদ থাকার জন্য খুশী হওয়া উচিত।

গিলস বললেন যে প্লেনের মধ্যে বাঁকানল ছুঁড়ে হত্যা তাও আবার মাদাম গিজেলের মতো পরিচিতা মহিলার এও কি সম্ভব। পোয়ারো হৈ-হৈ করে উঠলেন, এটা ঠিক বলেছেন। ফার্নেকে দেখে পোয়ারো বললেন, তার কাছে নিশ্চয়ই কোনো সংবাদ আছে। ফার্নে বললেন জেরোপুলাস নামে একজন প্রাচীন গ্রীক বস্তুবিক্রেতা জানিয়েছে খুনের তিন দিন আগে সে একটা বাঁকানল আর কটা তীর বিক্রি করেছে। তার প্রস্তাব যে সেই ভদ্রলোককে একবার জেরা করা হোক।

জেরোপুলাসের দোকানটা সেন্ট টলার স্ট্রিটে। খুবই উঁচু মানের দোকান। নানান দেশের মৃৎপাত্র, ব্রোঞ্জের দু-একটা জিনিস, নানারকম পুলিপাথর-গয়না প্রভৃতি হাজারো জিনিসে দোকানটা ঠাসা। জেরোপুলাস নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন, যে সে একটা বাঁকানল আর কটা তীর বিক্রি করেছে যা দক্ষিণ আমেরিকায় দুর্লভ। ওসব জিনিস তিনি কমই বিক্রি করেন। শ্রদ্ধেয় মঁসিয়ে দ্যুপ সব কথা জানেন। তিনি নানারকম জিনিস (সেগুলিকে তিনি বিদেশী জঞ্জাল বলেছেন) নাবিকদের কাছ থেকে একেবারে জলের দরে কেনে।

জেরোপুলাস বললেন যে, এই বাঁকানলটা আর তীরগুলো অনেকদিন ধরে আমার কাছে ছিলোতা ধরুন বছর দুয়েক আছে। ওই যে ওই থালাটার উপর ছিলো–ওর সঙ্গে ছিলো একটি কড়ির মালা, একটা লাল রং-এর ভারতীয় পাগড়ি, দু-একটা কাঠের তৈরি আস্ত হস্তি আর কটা সস্তা জেড পাথর। এই আমেরিকান ভদ্রলোকটি ছাড়া কেউ কখনো জিজ্ঞাসা করেনি ও জিনিসটা কি? ফার্নে ভদ্রলোক আমেরিকান, মানতে চাইলেন না। আমেরিকান সেই ভদ্রলোকটিকে এটা খুব প্রাচীন জিনিস এবং এরকম জিনিস বাজারে না মেলালেই চলে। তিনি দাম জিজ্ঞাসা করতে একটা বড়ো দাম, হাঁকেন। তাতে ভদ্রলোক দরদস্তুর না করে এটা নিয়ে নেন। যখন খুনের কথা তিনি পড়েন তখন তিনি নিজে সন্দিগ্ধ হয়ে পুলিশকে একথা জানান।

ফার্নে নম্রভাবে বললেন, তিনি তার কাছে কৃতজ্ঞ, সেই বাঁকানল এবং তীরটা আপনি চিনতে পারবেন। এখন সেগুলো লন্ডনে রয়েছে, কিন্তু ওগুলো শনাক্ত করার সুযোগ তাকে দেওয়া হবে।

জেরোপুলাস বললেন ডেস্কের ওপর একাট মাপ করে দেখলেন এইরকম মোটা, হালকা রং-এর চারটে তীর ছিলো। যাতে লম্বা লম্বা তীক্ষ্ণ কাটা, ডগাগুলোর একটু রং চটে গেছিল যাতে লাল সিল্কের ফেঁসো জড়ানো ছিলো। ফার্নে বললেন, ওই তীরগুলোর একটাতে কালো ও হলদে রং-এর ফেঁসো জড়ানো ছিল না–আপনি ঠিক বললেন, না মঁসিয়ে, এটা জেরোপুলাস জানালেন। ফার্নে একপলক তাকিয়ে হাসলেন, পোয়ারো হাসির কারণ খুঁজে পেলেন না।

তিনি একটু দোনামনা করে বললেন, খুব সম্ভবত আমাদের মামলার সঙ্গে এই বাঁকানল আর তীরের কোনো সম্পর্ক নেই। পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনা বোধহয় নেই। তবুও ওই আমেরিকান সম্পর্কে যতদূর সম্ভব খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন।

জেরোপুলাস বললেন, অনেক আমেরিকান আসে যায়। তাই তাকে ভালো করে দেখেননি। এবং বললেন সে নাকে কথা বলে। ফরাসি বলতে পারে না। চিউইংগাম চিবোচ্ছিল। কচ্ছপের খোলার চশমা বেশ লম্বা আর বয়স বেশি বলে মনে হল না।

তবে কোনো আসবাবপত্র পাওয়া না গেলে ফার্নে বললেন, আমরা বুনো হাঁসের পেছনে ঘুরে মরছি।

মঁসিয়ে জেরোপুলাসের বক্তব্য থেকে দু-একটা মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। তারা দুজনে ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে যাওয়া ঠিক করেন। পোয়ারোর মত মেনে নিয়ে ফার্নে বলেন যে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্সের অফিস থেকে তারা কিছু কিছু তদন্তের কাজ সেরে রেখেছে। দরকারী কোনো খবরই ওরা দিতে পারেনি।

পোয়ারো ফার্নেকে বললেন, তা বেশ কিন্তু কোনো কিছুর জবাব নির্ভর করে তার প্রশ্নের উপর। কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে তা নিশ্চয়ই জানেন না।

আপনি জানেন কি?

তা–আমার একটা নির্দিষ্ট চিন্তা আছে। ফার্নে বললেন–এর বেশি আর কিছু বলতে তিনি রাজি নন।

যথাসময়ে তারা ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে পৌঁছে গেলেন। এই অফিসটি ছোটো। একজন ছোটো ছেলে বসে টাইপ করছে ও একজন চটপটে লোক বসে কাজ করছে। ফার্নে পরিচয় দিলে সেই ভদ্রলোক, জ্বলে পরো উঠে দাঁড়ালেন। ছেলেটিকে সরিয়ে দেওয়া হল। পোয়ারো তার কাছে কিছু গোপনীয় কথা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্বলেপোরোকে মাদামের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন এ প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন। কিন্তু তবুও তিনি বললেন যে মাদাম ১৭ তারিখ টেলিফোন করে আসন সংরক্ষণ করেন। তিনি সকাল ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনের টিকিট চেয়েছিলেন কিন্তু প্লেনে আর জায়গা ছিল না বলে তাকে ১২ টার প্লেনের টিকিট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হয়।

আমার এক বন্ধু কয়েক মিনিটের সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ড যাওয়া মনস্থ করেছিল। আর ওই ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনেই সে ইংল্যান্ডে গিয়েছিল। প্লেনের অর্ধেক আসন খালি ছিলো সেদিন। মিঃ পোয়ারো খাতাপত্র ঘেঁটে বললেন, সম্ভবতঃ আপনার বন্ধু দিনটা ভুল করেছেন। আগের দিন বা তার আগের দিন হলে

মোটেই না। এটা ওই খুনের দিনই। কারণ আমার বন্ধু বলেছিল যে, সে যদি সকালের প্লেনে জায়গা না পেত, তাহলে সেই প্রমিথিউস বিমানের একজন যাত্রী হতে পারত।

এটা শুনে মিঃ পোরোর রহস্যময় মনে হয়। তিনি এটা জানার জন্য লা বুর্জেতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান কারণ তার মতে ওরা সবসময় নির্ভুল কাজ করে না।

পোয়ারোর সন্ধানী দৃষ্টিতে পোরো বেশ অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। তার কথা পোয়ারোর বিশ্বাস হল না।

পোয়ারো তাকে পরিষ্কার ভোলাখুলি বলতে বললেন। তিনি বললেন, তার কথা তিনি ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। মিঃ পোয়রাকে বলা হল তিনি যদি কোনো কথা চেপে যান বা মিথ্যে বলেন তাহলে তিনি ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন তা ধরা হবে।

এটা শুনে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। পোয়ারো বললেন যে, কত টাকা আপনি পেয়েছেন। কে দিয়েছে। কোনো ক্ষতি হবে ভাবিনি-মানে আমার ধারণাই ছিলো না–একবারও বুঝতে পারিনি যে–কত টাকা এবং কে দিয়েছে, ও পা-পাঁচ হাজার ফ্রা। লোকটাকে আগে কখনও দেখিনি। আমি…আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল।…মিঃ পোরো বললো।

পোয়ারো বলল, একজন লোক ভেতরে এসে বলল যে সে ইংল্যান্ডে যাবে। সে মাদাম গিজেলের কাছে ধার নিতে যায়। সে কিছু না জানিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তার বক্তব্য এতে সে ভালো ফল পাবে। সে বলল সে জানে যে মাদাম পরের দিন ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। তাকে শুধু এটুকু কাজ করতে হবে মাদামকে জানাতে হবে যে সকালের সব আসন ভর্তি এবং প্রমিথিউস বিমানের দু-নম্বর আসনটা তাকে দিতে হবে। সে শপথ করে বলছে, মঁসিয়ে এতে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে সে বোঝেনি। এতে আর অসুবিধে কি? এই কথা সে ভেবেছিল। আমেরিকানরা ওইরকম হয় এরকম উদ্ভট কাজের রীতি ওদের।

আমেরিকান ভদ্রলোকের চেহারার বর্ণনা জানালেন–লম্বা, একটু কোল কুঁজো, পশুর শিং এর ফ্রেমওয়ালা চশমা আর অল্প ছাগলদাড়ি।

তার আসনটা মাদামের আসনের পাশে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ভদ্রলোকের নাম ছিল সাইলাস হারলার।

কাগজে দেখা গেছিল ওই নামে কোনো লোক প্লেনে ছিল না। তাই মিঃ পোয়রা আর এই কথাটা পুলিশকে বলেনি।

মঁসিয়ে পোয়ারো জানালেন যে তিনি যে এই তথ্যটা পেয়েছেন কিভাবে। প্রথমতঃ তিনি আজ সকালে শুনেছেন একজন লোক খুনের দিন প্রায় ফাঁকা প্লেনে লন্ডন গেছেন আবার এলিস বলেছিলো সকালের প্লেনে কোনো জায়গা নেই। এই পরস্পর বিরোধী মন্তব্য তার মনে আছে। প্রমিথিউস বিমানের পরিচারিকাটি বলেছিলো যে এর আগে মাদাম গিজেলকে সকালের প্লেনে যেতে দেখেছে–সুতরাং সকাল ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনে যাওয়াই তার অভ্যাস ছিল। কিন্তু কেউ একজন চেয়েছিলো তিনি, ১২টার প্লেনে যান। এমন কেউ যে আগে প্রমিথিউস যাবার ঠিক করে রেখেছিল। কেন ওই কেরানীটি বললেন যে, সকালেই সব আসন ভর্তি হয়ে গেছে? ভুল না ইচ্ছাকৃত মিথ্যে? আমি শেষেরটাকে বেছে নিয়েছিলাম আর সম্পূর্ণ সঠিক আমি।

ফার্নে বললেন মামলাটা ক্রমশই ঘোরালো হয়ে উঠেছে। একজন মহিলার পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে এক আমেরিকানকে পাওয়া গেল। পোয়ারো বললেন, এখানে আমেরিকান সাজা খুব সোজা।

সাঁতারের পোশাক পরা ছবিটা পোয়ারো বারবার দেখতে লাগলেন এবং বললেন যে তিনি অভিনয় করতেন বটে–তবে এইরকম ভূমিকায় একজন মহিলার অভিনয় করা সম্ভব নয়।

.

১২.

 হরবেরিল চেজ-এ

লর্ড হরবেরিল খাবার টেবিল আঁকড়ে ধরে আত্মসংবরণ করার চেষ্টা করছিল। তার বয়স সাতাশ। দেখলে মনে হয় তেমন বুদ্ধি নেই, দরদী মন, রুচিজ্ঞানের কিছুটা বাড়াবাড়ি আছে, দারুণ কর্তব্য পরায়ণ আর ভীষণ একগুঁয়ে। তার খাওয়া হয়ে গেলে তিনি মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে চিন্তা করে ওপরে উঠে গেলেন। তারপর তিনি ওপরে একটা ঘরের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলেন। যতক্ষণ না ঘরের ভিতর থেকে সিসিলি হরবেরী তাকে ঢুকতে বললেন।

সিসিলি হরবেরিল বসে বসে সকালের জলখাবার খাচ্ছিলেন। তিনি শুয়ে শুয়ে চিঠির খাম খুলছিলেন। লর্ড স্টিফেন তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলেন। লেডি তার পরিচারিকা ম্যাডেলিনকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। লর্ড হরবেরিল তাঁর স্বামী, তিন বছর আগে তিনি তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন এখানে আবার কেন সে ফিরে এসেছে, কেননা তার পেছনে কোনো কারণ আছে। লর্ডের স্ত্রী বললেন যে ও-কারণ। লর্ড হরবেরিল মনে করেন তাদের দুজনের যা সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে তাতে একসঙ্গে থাকার কোনো মানে হয় না। শহরের বাড়িটা আর প্রচুর অর্থ সে পাবে। একটা নির্দিষ্ট পর্যন্ত সে তার ইচ্ছামতো চলতে পারবে তাহলে হঠাৎ সে ফিরল কেন?

সিসিলি বলল, তার মনে হয়েছে এটাই ভালো। তার মানে আমার ধারণা তুমি টাকার কথা বলতে চাইছো। হায় ভগবান তোমাকে কি বলে ঘৃণা দেখাবো। তোমার মতো নীচ লোক দুনিয়ায় দুটো নেই। নীচকর..তা ঠিক তুমি আর তোমার কাণ্ডজ্ঞানহীন অপচয়ের ফলে হরবেরিলর জমিদারী যখন বাঁধা রাখতে হয়েছে, তখন নীচ তো আমায় বলবেই।

সিসিলি বলেছেন যে হরবেরিলর চাষীদের নিয়ে তার যত মাথা ব্যথা। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে খুব ঝগড়া হল। এ থেকে এ জানা গেল সিসিলি হরবেরিল বাজে খরচায় বিরক্ত হলে লর্ড হরবেরিল তাকে সহ্য করতে পারেন না। লর্ড হরবেরিল তার থেকে মুক্তি পেতে চান। কিন্তু সিসিলি তা দিতে চান না। সিসিলির ব্যাবসা তার ধারদেনার জন্য লর্ড যে দায়ী থাকবেন না এটা কেন তিনি খবরের কাগজে জানিয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি স্বীকার করে লর্ড বললেন যে, তিনি কেন আবার হরবেরিলতে ফিরে এলেন। সিসিলে মনে করেন এই মুহূর্তে এটাই ভালো বলে মনে হয়েছে।

লর্ড হরবেরিল তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন তিনি মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন কিনা? মাদাম সিসিলি এটা অস্বীকার করতে চান এবং বললেন যে এটা ঠিক না। লর্ড বললেন, সত্যিই তিনি যদি টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে যেন স্বীকার করেন–তদন্ত হচ্ছে। মহিলাটি লেনদেনের নথিপত্র থেকে যদি বেরিয়ে পড়ে যাতে তুমি জড়িয়ে পড়। তার জন্য আগে থেকে আইনী পরামর্শ নিতে হবে।

সিসিলি বললেন, আমি কি আদালতে দাঁড়িয়ে বলিনি যে, ওই মহিলাটির নামও আমি কখনও কানে শুনিনি। তাতে বেশি কিছু প্রমাণ হয় বলে আমি মনে করি না। যদি তুমি এই গিজেলের সঙ্গে লেনদেন করে থাকো, পুলিশ তা খুঁজে বার করবেই, এ বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো।

সিসিলি ভয়ানক রেগে গেল এবং সে যে খুন করেনি এটা বলল। লর্ড বললেন যে, তিনি পারিবারিক সুনাম নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত তাই সিসিলি হরবেরিল যদি এরকম কোনো কাজ করেন তাহলে তার পারিবারিক সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। লেডি মনে করেন যে, এই ভদ্রলোক তিনি মারা গেলে খুব খুশীই হবেন।

লর্ড হরবেরিলর মাথায় চিন্তা ঘুরতে লাগল, তিনি মনে করেন…ও যদি কালকেই মারা যায় আমি খুশী হবো? হ্যাঁ, তবেই তো জেল থেকে বেরোনো লোকের মতো স্বস্তি পাবো আমি। প্রথম যখন লেডির সঙ্গে তার দেখা হয় তিনি তার শিশুর মতো পবিত্রতায় ভুলে গেছিলেন আর…এখন…ও একটা ইতর, দুশ্চরিত্র, বদমাইশ, মাথামোটা…যে রূপ আমার চোখে পড়ে না।

তিনি রাস্তায় বেরোলেন। একটি সরু গলির মধ্যে ভেনেসিয়ার সঙ্গে দেখা। ভেনেসিয়াকে তিনি বললেন যে, সিসিলি এখানে আছে। শুনে ভেনেসিয়া আশ্চর্য হলেন। লর্ড স্টিফেন হরবেরিল তার কাছে মামলার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। ভেনেসিয়া বলল, না কেউ তেমন মুখ খুলছে না। আশাকরি আমি কি বলছি বুঝতে পারছ।

ভেনেসিয়া একটু হেসে স্টিফেনের প্রশ্নের উত্তরে জানালো আর যেই হোক সিসিলি খুনী নয় কারণ উভয়ে উভয়ের দিকে নজর রেখেছিল। স্টিফেন ভেনেসিয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সঙ্গে তো অনেক কালের চেনা পরিচয় তাই না?

–হু! সেই ছোটোবেলায় আমরা নাচের স্কুলে যেতাম, তোমার মনে আছে!

 মনে আবার নেই, ভেনেসিয়া, তোমাকে কটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে

বল–সিসিলি সম্পর্কে তাই না?

হা। আচ্ছা ভেনেসিয়া, সিসিলির কি ওই গিজেল মহিলাটির সঙ্গে কোনো জানাশোনা ছিলো। ভেনেসিয়া বললেন, তিনি জানেন না। তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে ছিলেন। তিনি এখনও লা পিনেতের গল্প শোনেননি।

ভেনেসিয়া বললেন, যে স্ত্রী-হারা স্টিফেন একা একা জীবন কাটিয়েছে, তাহলে এ ব্যাপারে সে কেন আগ্রহী?

আসলে স্টিফেন তার বিবাহিতা স্ত্রীকে এখনও বিচ্ছেদ দেয়নি বলেই তার চিন্তা।

ভেনেসিয়া জিজ্ঞাসা করল, কেন সে বিচ্ছেদে রাজি নয়।

আসলে সিসিলি তাকে বিচ্ছেদ দিতে চায় না, সে কিন্তু কারণ থাকলে বিচ্ছেদে রাজি। যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে ভেনেসিয়া স্টিফেনকে বিয়ে করতে চায়। স্টিফেন জানে তারা দুজনে সুখী জীবন কাটাতে পারবে।

স্টিফেন একটা সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল। ভেনেসিয়া তাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে চাইল। স্টিফেন তীব্র প্রতিবাদ করে উঠল।

ভেনেসিয়া বিদায় নিল। মুখ ঘুরিয়ে স্টিফেনকে বিদায় জানাতে গিয়ে দুজনের দৃষ্টিতে অনেক না বলা কথা বলা হয়ে গেল।

গলি থেকে বেরোনোর মুখে তার হাত থেকে চাবুকটা পড়ে যেতে একটা লোক তাকে তা তুলে দিল। সে একটু আনমনা ছিল কিন্তু বাড়িতে গিয়ে মনে হল লোকটাকে সে চেনে। ওই বেঁটে লোকটাই প্লেনে তাকে তার আসনটা ছেড়ে দিয়েছিলো। আদালতে ওরা বলাবলি করছিল–ও নাকি গোয়েন্দা। এই চিন্তার সঙ্গে সঙ্গেই তার একটা চিন্তা মাথায় আছড়ে পড়লো। ওই লোকটা এখানে কি করতে এসেছে।

.

১৩.

 অ্যান্টোয়েনের দোকানে

বিচারবিভাগীয় তদন্তের পরের দিন সকালে জেন বেশ ভীতভাবে দোকানে ঢুকল যিনি নিজেকে অ্যান্টোয়েন বলে পরিচয় দেন, তার নাম আর্নল্ড লীচ। তিনি জেনকে অত্যন্ত ভৎর্সনা করলেন। অনেক বকুনি খেয়ে জেন রেহাই পেল। বাইরে এসে দেখল তার বন্ধু গ্ল্যাডিস তাকে ডাকছে।

গ্ল্যাডিস তাকে ভরসা দিল। সে ঘরে ঢুকতেই একজন মেহেদী রং-এর চুলওয়ালা মহিলা তার নিজের মুখটা কুৎসিত দেখাচ্ছে এটা বারবার বলছিলেন। মহিলাটির চুল বাঁধার জন্য জেন এলো এবং তিনি কি করতে চান। ভদ্রমহিলা জেনের কাছে তার প্লেনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। জেন কে নানারকম প্রশ্ন করে ভদ্রমহিলা জানালেন সেটা কি ঘটেছিল।

এরপর সেই আসত জেনের কাছে গল্প শোনার জন্য উদ্যোগী হয়ে চুল বাঁধতে আসত। একসপ্তাহে ধরে এই গল্প বলে জেন হাঁফিয়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝে মনে হত কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে তাকে কয়েক ঘা কষিয়ে দেবে।

শান্তি পাবার উপায় খুঁজে না পেয়ে জেন তার প্রভুর কাছে মাইনে বাড়ানোর কথা বলল। তিনি বললেন খুনের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার পরেও তাকে যে কাজে রাখা হয়েছে এটাই বড়ো কথা। জেন এত রেগে গেল এবং বলল যে সে অন্য জায়গাতে কাজ পেতে পারে। তার প্রভু বলল, তুমি যে ওখানে আছ তা লোকে জানবে কি করে, এমন কিছু তালেবর তুমি নও। সে বলল, আদালতে কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তাদের একবার বললে তারা খবরটা ছাপিয়ে দেবে।

জেনের দাবী মানা হল, জেনে এরপর ঘটনাটিতে রং চড়িয়ে বলল। নরম্যান গেলের সঙ্গে তার আলাপ বাড়তে লাগল। তাদের দুজনের মধ্যে অনেক মিলই একরকম মনে হতে লাগল। তার বন্ধু গ্ল্যাডিস একদিন তার ব্যাগ থেকে গেলের একটা চিঠি উদ্ধার করল। জেন বলতে বাধ্য হল সে একটা দাঁতের ডাক্তার, যার সঙ্গে তার লা পিনেতে দেখা হয়েছিল। গ্ল্যাডিস জেনের সঙ্গে গেলের সম্পর্ক জেনে খুব আনন্দ পেল, নানারকম ঠাট্টা তামাশা করল।

ওই চিঠিটার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় ডিনার খাবার অনুরোধ করেছিলো। জেন হোটেলে খেতে গিয়ে তার একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। প্রথমে জেন তাকে চিনতে পারেনি। তারপর জানা গেল যে ওটি জ্যা জ্যাপ। গ্ল্যাডিস একটা নীতিবাক্য তাকে শুনিয়েছিল–যদি তোমার পিছনে একজন ঘোরে দেখবে নিশ্চিত আরো একজন আসছে। জেন ফরাসিদের একবারে বিশ্বাস করে না।

আপনি এখনও ইংল্যান্ডে আছেন তাহলে, জেন বললো, তার নিজের বিশ্রী ধারণার কথা ভেবে নিজেকেই অভিসম্পাত দিতে লাগলো। হ্যাঁ, বাবা এডিনবরায় গিয়েছেন একটা বক্তৃতা দিতে তাই বন্ধুবাবন্ধবদের সঙ্গে আমাকেও থাকতে হলো। কিন্তু আগামীকাল আমরা ফ্রান্সে ফিরে যাবো।

ও আচ্ছা।

আচ্ছা পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, তাই না। জা জ্যাপ বললো।

না কাগজে তো কিছু লেখেনি। হয়তো ওরা হাল ছেড়ে দিয়েছে। জ্যা জ্যাপ বললো, না, না, ওরা এতো সহজে ছাড়বে না। নিঃশব্দে কাজ করে ওরা অন্ধকারে কাজ সারে। জা দুপ বললেন, যে খুনের কথা ভাবলে খারাপ লাগে। জ্যাঁ জ্যাপ বললেন কে এই কাজ করেছে সেটা তিনি ভাবেননি কারণ ভদ্রমহিলাকে কুৎসিত বললে কম বলা হয়।

জেন বললো, আপনি একজন সুন্দরী মেয়ের চেয়ে একজন কুৎসিত মহিলাকে খুন করতেই বেশি ভালোবাসেন। মোটেই না, একজন মহিলা যদি সুন্দর হয়–আপনার তাকে ভালো লাগবে– সে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে–হিংসেয় পাগল করে তুলবে। আপনি তখন হয়তো বলবেন, দাঁড়াও ওকে আমি খুন করবো, তবে শান্তি।

এতে শান্তি পাওয়া যাবে? তা তো আমি জানি না, মাদমোয়াজেল কোনদিন কুৎসিত বুড়ীকে কে খুন করতে যাবে।

মেয়েদের নিয়ে জ্যাঁ জ্যাপ আলোচনা করছিলেন। তার মতে ইংরেজরা তার স্ত্রীর প্রতি নজর কম দেয়। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে করতে তিনি বললেন যে লেডি হরবেরিল তার ধাত আমাদের জানা আছে। যেমন সুন্দর–তেমন খরচসাপেক্ষ। জুয়ার টেবিলে এদের বেশি দেখা যায়–উত্তেজনা ভালোবাসেন এরা। যাই হোক, ওঁকে দেখে আমার খুব ভালো লাগেনি। মিয়কার একেবারে পাক্কা ইংরেজ। সুন্দর ছাঁটের পোশাক অবশ্য একটু পুরুষালি ঢঙের। এমনভাবে হাঁটেন, যেন তারা দুনিয়াটাকে কিনে রেখেছেন। ইংল্যান্ডের কে কোথায় থাকে সব নখদর্পণে। আর জেনকে তার খুব ভালো লেগেছে। তার মনে হয় যে ভগবান মাঝে মাঝেই এইরকম যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন।

জেনের সঙ্গে নানা দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদ আলোচনা করতে লাগল। জা জ্যাপ যখন ডিনারের ব্যবস্থা করলেন তখন জেনের অন্য লোকের সঙ্গে কথা দেওয়া আছে এটা বললেন। তিনি আবার জেন কবে প্যারিসে যাবেন জিজ্ঞাসা করলেন। জেন বলল, খুব শীঘ্রই যাওয়া হবে না। জা জ্যাপ বললেন যে তিনি যে কবে লন্ডন আসবেন জানি না। আশা করবো খুব শীঘ্রই আবার আমাদের দেখা হবে, শেষ কথাটা এমনভাবে বললো যেন দেখা হওয়ার কথা ঠিক হয়েই আছে।

.

১৪.

 মাসওয়াল পাহাড়ে

ঠিক যে সময়ে জেন অ্যান্টোয়ানের দোকান থেকে বেরোচ্ছে এদিকে নরম্যান গেল তার রোগীদের চিকিৎসা করছেন। নরম্যান গোলের সহকারিণী বলেছেন (মিস রগ) লেডি হিগিনসন ফোন করেছিলেন–আসছে সপ্তায় আসতে পারবেন না। পরে একসময় আসবেন; আর হ্যাঁ, কর্ণেল ব্লান্ট বৃহস্পতিবার আসতে পারছেন না, জানিয়েছেন।

নরম্যান গেল মাথা নাড়লো। প্রতিদিন এক ব্যাপার। এক একজন রোগী ফোন করছে আর বলছে, আসতে পারবে না। এছাড়া নানা কারণ। ওরা যাই বলুক, আসল কারণটা কিন্তু নরম্যান গেল নির্ভুলভাবে বুঝেছে। আসলে খুনের ঘটনায় সবাই তার প্রতি ভীত হয়ে পড়েছে।

তাই তার সহকারিণী বললেন, ভালোই হয়েছে আপনি একটু বিশ্রাম নিতে পারবেন।

এই গ্রীষ্মের গোড়ার দিকটা যা খাটুনি খেটেছেন।

নরম্যান কতগুলো যন্ত্রপাতি গরমজলে ফেলে গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো। তার মনে হয় সে যেন ডুবতে বসেছে। পুলিস যদি হরবেরিল নামের রোগীকে গ্রেপ্তার করে তাহলে কি হবে? তার রোগীরা আবার দলে দলে ফিরে আসবে। সে কিছুই পরোয়া করে না কিন্তু জেনের জন্য তার চিন্তা হয়। গেলের মনে হয় সে কানাডায় চলে যাবে এবং সেখানেই রোজগার করবে।

মিস লাবী ফোন করেছিলেন, এটা বললেন, মিস বস তিনি আসতে পারছেন না। খুব বিরক্ত হলেন মিঃ গেল। তিনি তার ব্যাবসার পাট হঠাতে দিন। কিন্তু বস তাকে একা ফেলে যেতে চান না।

মিঃ বস বলতে চান পুলিশ চেষ্টা করছেন খুনীকে ধরার। নরম্যান গোলের পুলিশের প্রতি আস্থা নেই তাই তিনি নিজে চেষ্টা করতে চান।

সন্ধেবেলা ডিনার খাবার সময় জেন গেলের অন্যমনস্কতা ধরে ফেলল। নরম্যানকে জিজ্ঞাসা করল তার কাজকর্ম ঠিকঠাক ভাবে চলছে কি? গেল বলল যে, বছরের এ সময়টা ভালো যায় না। জেন তা মানতে চাইল না। জেন বলল, এটা ঠিক যে জেন খুনের ব্যাপারে চিন্তিত। গেল বলল, যে সে খুনের জন্য বিরক্ত। আসলে তার মনে হয় তার রোগীরা তাকে খুনী ভাবছে।

জেন মনে করেন ওটা ওদের বদমায়েশী। এর জন্য একটা কিছু করা উচিত। গেল বলল যে মিস বসও তাই বললেন। তিনি যদি সম্ভাব্য খুনী না হতেন তাহলে একটা সূত্র খুঁজে বের করতেন। জেন হঠাৎ ক্ল্যান্সিকে দেওয়ালের ধারে বসে থাকতে দেখলেন। গেলেরি অমত সত্ত্বেও তাকে রাজি করিয়ে তাকে অনুসরণ করতে লাগল।

তারা তাড়াতাড়ি মিঃ ক্ল্যান্সিকে অনুসরণ করার জন্য আগ্রহী হলেন।

মিঃ ক্ল্যান্সি লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি অসংলগ্নভাবে ঘুরছিলেন। তার পিছনে তারা দুজনে ঘুরছিলেন। জেন বলল, যে পাছে কেউ অনুসরণ করে তাই তিনি এভাবে হাঁটছেন। তাদের পথ গুলিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। মিঃ ক্ল্যান্সি একটা জিনিসের দোকানের সামনে দাঁড়ালেন, সেটা বন্ধ ছিল। তারপর তিনি ছোটো বই বার করে কি লিখলেন। তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন।– তিনি আনমনা হয়ে হাঁটছিলেন। রাস্তা পার হবার জন্য তিনি যখন এলেন তখন জেন গেল তার পাশাপাশি হয়ে গেল। দেখা গেল ভদ্রলোক একা একা কথা বলছেন। মিঃ ক্ল্যান্সি তার ওভারকোট লুটোতে লুটোতে একটা বাড়ির সামনে এসে পৌঁছলেন। ওটা তার নিজের বাড়ি ছিল। তিনি বলেছিলেন যে একজন মহিলা যে কথা বলে না। এটা তিনি আনমনে বলেছিলেন–এটা জেন গেলের কাছে রহস্য মনে হল।

পেছনে অন্ধকার থেকে কে যেন বলে উঠল, শুভ সন্ধ্যা। এটা এরকুল পোয়ারো ছিলেন। পেছু নেওয়ার পক্ষে সন্ধেটা চমৎকার, তাই না?

.

১৫.

 লুমসংবেরীতে

 দারুণ চমকে ওঠা যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রথম নরম্যান গেল কথা বললেন যে, পোয়ারো এখনও চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ও আমাদের সেই কথাবার্তা এখনও মনে করে রেখেছেন? আর তাই এই বেচারা মিঃ ক্ল্যান্সিকে সন্দেহ করে ঘুরছেন।

জেন বলল যে তিনিও নিশ্চয়ই তাই করছেন না হলে এখানে আসতেন না। পোয়ারোর কথার প্রসঙ্গে জেন জানালেন খুন সম্পর্কে উনি একেবারেই আগ্রহী নয় কিন্তু এটা পোয়ারো জানতে চাইলেন না। তিনি বললেন, এখন এ নিয়ে তিনি মাথা ঘামাচ্ছেন এই খুন তাকেও স্পর্শ করেছে। তিনি জেনকে জিজ্ঞাসা করছেন তিনি খুনের মামলায় কি সবার আগে প্রয়োজনীয় মনে করবেন। জেন বললো, খুনীকে খুঁজে বের করা। নরম্যাল গেল চাইল ন্যায়বিচার।

পোয়ারো বললেন, খুনীকে খুঁজে বের করার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। আর ন্যায়বিচার কথাটা চমৎকার কিন্তু এটা অধিক মানে কি বোঝাতে চাইছে, সেটা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। সবার থেকে প্রয়োজনীয় হল নিরপরাধকে মুক্ত করা।

পোয়ারোর মতে যতক্ষণ না মামলা শেষ হচ্ছে অভিযুক্তদের বিভিন্নভাবে পীড়ন সহ্য করতে হয়। নরম্যান গেল জোর গলায় সেটা স্বীকার করলে। পোয়ারো জেন ও গেলের সঙ্গে হাত মেলালেন এবং বললেন, আমি সবেমাত্র আমাদের বন্ধু মিঃ ক্ল্যান্সিকে ডাকতে যাচ্ছি। তিনি প্রস্তাব করবেন মাদমোয়াজেল তার সেক্রেটারির ছদ্মবেশে তার সাথে আসবেন। তিনি জেনকে একটা নোট বইও পেনসিল দিলেন।

জেন শর্টহ্যান্ড লিখতে পারে না বলে তিনি বললেন যে, তার সাহস আছে বুদ্ধি করে নোটবইয়ে কিছু আঁকজোঁক নিশ্চয় করতে পারবেন। আর আপনি ঘণ্টাখানেক পর তার সঙ্গে দেখা করবেন। প্রিন্স হোটেলের দোতালায়, ঠিক আছে, তখন আমরা নোটবই মিলিয়ে দেখব।

জেন তাকে অনুসরণ করলে গেল প্রতিবাদ করতে গিয়েও একঘণ্টা পরে প্রিন্স হোটেলে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিল।

মিঃ ক্ল্যান্সির বাড়িতে তারা দেখলে তার ঘর প্রচণ্ড অগোছালো। মিঃ ক্ল্যান্সি একটা ক্যামেরা ও ফিল্ম নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। অতিথির নাম শুনে তিনি চোখ তুলে তাকালেন এবং চট করে ক্যামেরা আর না পরানো ফিল্মটা মেঝেয় ফেলে দুহাত বাড়িয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান।

তিনি জেনকে তার সেক্রেটারি মিস গ্রে বলে পরিচয় দিলেন। এতে খানিকটা অবাক হলেন ক্ল্যান্সি। তার মনে হয় তিনি একজন চুলবাছার দোকানের সঙ্গে যুক্ত। পোয়ারো বললেন একজন দক্ষ সেক্রেটারি হিসেবে মিস গ্রেকে অমায়িকভাবে নানা ধরনের কাজ করতে হয়।

মিঃ ক্ল্যান্সি তার ভুল স্বীকার করে নিলেন এবং তিনি যে একজন বেসরকারী গোয়েন্দা তাই তার তারিফ করলেন।

তিনি তার রচনায় গোয়েন্দা উইলব্রাহাম রাইসের কথা বললেন। তিনি বললেন এই ঘটনায় তিনি রোমাঞ্চিত। তিনি মামলাটা নিয়ে অনেক ভেবেছেন। যদিও এই ঘটনাটা খুব দুঃখের, তবুও তার কাছে স্বীকার করতে বাধা নেই এটি তার পেশায় সাহায্য করেছে। তার কপালে শুধু সন্দেহ জুটেছে, যে ইনসপেক্টর বা বিচার যার কাছেই হোক, তিনি তদন্তে সাহায্য করতে চান, তাহলে ওরা তাকে সন্দেহ করবে।

এতে এরকুল পোয়ারো বললেন তাতে ওর কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। ক্ল্যান্সি বলে চললো যে, ইনসপেক্টরকে তিনি তার পরের বইতে নাকানিচোবানি খাওয়াবেন। এই খুন তার কাছে ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে তিনি ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি এই বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করেছেন। গল্পের নাম দিয়েছেন আকাশযানে হত্যা রহস্য। জেন বললো, মানহানি বা ওইরকম কোনো মামলায় পড়বেন না তো?

মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, সেটা বইয়ের কঠিন অধ্যায় সম্পূর্ণ অভাবিত সমাধান থাকবে একেবারে শেষ অধ্যায়ে।

পোয়ারোর উৎসুকতার জবাবে মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, প্লেনের চালক সেজে একটি মেয়ে লা বুর্জেত থেকে বিমানে উঠবে আর সাফল্যের সঙ্গে মাদাম গিজেলের আসনের নিচে লুকিয়ে থাকবে। তার সঙ্গে থাকবে এক শিশি অতি আধুনিক গ্যাস। এই শিশিটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সব যাত্রী অচেতন হয়ে পড়বে মাত্র তিন মিনিটের জন্যে সেই সময়ে সে আসনের নীচ থেকে বেরিয়ে আসবে, আর বিষাক্ত তীরটা ছুঁড়ে দেবে, তারপর প্যারাসুট খুলে পেছনের দরজা দিয়ে লাফিয়ে পড়বে। জেন বললো, কোনো আসনের নিচে কেউ বসতে পারে না। জায়গায় কুলোবে না যে।

মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, আমার প্লেনে জায়গা থাকবে। চমৎকার–পোয়ারো বললেন। আচ্ছা মহিলাটির উদ্দেশ্য কি? এখনও পুরোপুরি ঠিক করিনি। সম্ভবতঃ গিজেলও ওই মেয়েটির প্রেমিককে সর্বস্বান্ত করলো।

মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, মেয়েটি সাপুড়ে, সে তার পোষা পাইথনের বিষ নিংড়ে নিয়েছিলো।

পোয়ারো বললেন যে, মিঃ ক্ল্যান্সি, পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন মনে করলেও তার সঙ্গে পোয়ারো আলোচনা করতে চান। মিঃ ক্ল্যান্সিকে জিজ্ঞাসা করা হল, তার মতে কে এই অপরাধ করেছে। তিনি বললেন, গল্প লেখার সময় যাকে খুশী অপরাধী করা যায় কিন্তু যখন ব্যাপারটা বাস্তবে ঘটে তখন সত্যিকারের একজন কেউ তা করেছে। পোয়ারো দুজনে একসঙ্গে কাজ করতে চান। তবে তার মতে ফরাসি দুজনের একজন খুনী কারণ ওরা মহিলাটির মতো ফরাসি এবং তারা মহিলাটির কাছে এসে বসেছিলো।

এটা খুনের উদ্দেশ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে, পোয়ারো নিশ্চিতভাবে বললেন। নিশ্চয়ই। আমার ধারণা, সমস্ত উদ্দেশ্যগুলোই বৈজ্ঞানিকভাবে নথিভুক্ত করেছেন?

আমার পদ্ধতি সেকেলে। আমি পুরানো প্রবচন মেনে চলি। অপরাধ করে কে লাভবান হচ্ছে খুঁজে বের করো। মিঃ ক্ল্যান্সি বলেন, খুব দামী কথা এটা কিন্তু এক্ষেত্রে এটা ঠিকমতো প্রয়োগ করা শক্ত। আমি শুনেছি মহিলাটির এক মেয়ে আছে, যে তার টাকাকড়ি পাবে। কিন্তু আরও অনেকেই হয়তো আরও লাভবান হবে, কারণ এটুকু আমরা জানি তাতে হয়তো এমন কেউ ছিলো যে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলো এবং সেই টাকা শোধ দিতে চাইছিলো না। পোয়ারো মনে করেন যে তাকে কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল এটা তিনি জানতেন। ক্ল্যান্সির মনে হয় এখন দেখতে হবে, যদি কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল যদি হয় তাহলে আমাদের সবদিক চিন্তা করতে হবে তবে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা পর্যন্ত এই চিন্তাটা সুবিধার নয়।

মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, যে তিনি চ্যারিং ক্রশ রোজের থেকে বাঁকানল কিনেছিলেন, সেটা স্যরসোলেম দোকান বা মিচেল অ্যান্ডে স্মিথও হতে পারে, তবে সেটা তিনি ইনসপেক্টরকে বলেছেন।

পোয়ারো বাঁকানল কিনে দেখতে চাইলেন সেই দোকান থেকে। ক্ল্যান্সি বললেন, যে এটা পাওয়া শক্ত কারণ জিনিসটি দুর্লভ, পোয়ারো দোকানের নাম দুটো লিখতে বললো। মিস গ্রে তার খাতায় লেখার ভান করে নাম দুটো লিখে রাখলেন। পোয়ারো ও মিঃ ক্লান্সি অতিথিপরায়ণতায় খুশী হয়ে বিদায় গ্রহণ করতে চাইলেন।

মিঃ ক্ল্যান্সি যাবার আগে তাকে লাল পাগড়ির রহস্য বলে একটি বই দিলেন যাতে তীরের বিষ আর আদিবাসীদের তীর সম্পর্কে লেখা ছিল। তিনি জেনকে বললেন যে তিনি পিটম্যানের শর্টহ্যাণ্ডের নিয়ম মানেন না, জেনকে পোয়ারো বাঁচিয়ে দিলেন এই বলে তিনি চেকোশ্লোভাকিয়ার নিয়ম মেনে চলেন।

.

১৬.

 প্রচারের কৌশল

মিঃ ক্ল্যান্সি বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে প্রিন্স হোটেলে এলেন। নরম্যান জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন কাজ হল।

মিস গ্রে বললেন যে, তার লেখা মিঃ ক্ল্যান্সি দেখেছেন। যতটা ভালোমানুষ ও ভুললামন মনে করা হয় ততটা নয়।

আপনি কি সত্যিসত্যিই ওই ঠিকানাগুলো চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, মিঃ পোয়ারোর ধারণাগুলো কাজে লাগিয়ে, পুলিশ ওইগুলো সম্পর্কে খবর নেবেন না। আসলে ওই প্লেনে যে একজন আমেরিকান ভদ্রলোক ছিলেন সে সম্পর্কে পুলিশ অন্ধকারে। আসলে জেন ও গেল এই সম্পর্কে জানে না, তার জন্য আর একজন আমেরিকান এসে পড়ায় ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পোয়ারোর মতে বাঁকানল নতুন করে আর মিঃ ক্ল্যান্সি কেনেননি। তাই তার খুনের সন্দেহ থেকে যায়। আসলে তিনি অনেককেই সন্দেহ করছেন। খুনের উদ্দেশ্যের উপর এটা নির্ভর করছে। এ বিষয়ে গেল জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন যে তিনি সরকারী গোপনীয়তার মধ্যে হাত দিতে চান না। কারণ ভদ্রমহিলার লেনদেনের সমস্ত কাগজপত্র পুড়ে গেছে।

তার মতে গিজেল কারও কোনো সাংঘাতিক অপরাধের কথা জানতেন, ধরুন–কোনো লোক হয়তো খুনের চেষ্টা করেছিলো বা এইরকম কিছু জানতেন। পোয়ারোর মতে এটি একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ, কারণ ওর কাছে প্রমাণ আছে। এই খুনের ঘটনা দুজনের মধ্যে কি প্রভাব ফেলেছে। আসলে পোয়ারোর মতে জেনের কথা অনুযায়ী উত্তেজনা খুবই তাড়াতাড়িই নিভে যায়, কিন্তু ভয় অনেকদিন টিকে থাকে।

আপনি কি ভাবছেন, এই নিয়ে আমাকে লেগে পড়ে থাকতে হবে। আর কোনো পরিকল্পনা আছে নাকি আপনার। হ্যাঁ আছে, সবকিছুই আমি ছুঁড়ে ফেলে দেবো। তারপর কানাডা আর কোথাও গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করবো। আমি নিশ্চিত সেটা দুঃখের কারণ-ই হবে–জেন দৃঢ়স্বরে বলল।

পোয়ারো নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাস রাখেনি। তিনি মনে করেন তিনি রহস্য সমাধান করবেন। পোয়ারো বললেন যে ঠিকমতো সাহায্য পেলে খুব চটপট সমস্যা সমাধান করতে পারেন। পোয়ারো কয়েক দিন মিঃ গেলের সাহায্যে কাজ করতে চান। তিনি চান এমন লোক যিনি ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে পারবে, এজন্য তিনি মিঃ গেলের সাহায্য চান। গেল হতবুদ্ধি হতে চান কিন্তু তাকে কেন এটা বললেন। তিনি চুপ করে রইলেন। তারপর পোয়ারো বললেন, তিনি তার জন্য একটা নক্সা তৈরি করবেন। তার মানে উনি একটা চিঠি লিখবেন। আর সেটা নকল করে মিঃ গেল মিঃ হরবেরিলর কাছে পাঠাবেন। যার ওপর লেখা থাকবে ব্যক্তিগত। চিঠিতে সাক্ষাৎকারের কথা লেখা থাকবে। তিনি তাকে এক বিশেষ উপলক্ষ্যে প্লেনে করে ইংল্যান্ডে আমার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। মাদাম গিজেলের কিছু কিছু লেনদেন যে তার হাত দিয়ে হয়েছে একথা উনি উল্লেখ করবেন।

তারপর মিঃ গেল সেই আমন্ত্রণ পাবেন, তিনি যাবেন এবং নির্দিষ্ট কতগুলো কথা বলবেন। কথাগুলো আমি আপনাকে শিখিয়ে দেব। কিন্তু মিঃ গেল ভয় পেলেন যদি হরবেরিল পুলিশে খবর দেন, মিঃ পোয়ারো তাকে ভরসা দিলেন যে, তিনি তা করবেন না। আসলে দশ হাজার পাউন্ড যদি হরবেরিলর কাছে ধার চাইতে যাওয়া হয় সেটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার হবে। এতে পোয়ারো বললেন, লেডি হরবেরিল পুলিশের কাছে যাবেন না এবং স্বামীকে কিছু বলবেন না। পোয়ারো বলতে চান, তার স্বভাবজাত বিরোধিতা হয়েছে এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক। আবার অন্যদিকে অন্যকে সাহায্য করার মনোভাব রয়েছে। লেডি হরবেরিল একজন জঘন্য চীজ।

 গেলের ভাষায় হরবেরিল খুনী নন। কেননা জেন ও তিনি তার উল্টোদিকে বসেছিলেন। পোয়ারো সব কিছু ভোলা চেখে দেখতে চান। এবং সেজন্য সব কিছু তাকে বলতে হবে।

গেল বললেন যে একজন মহিলাকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার চিন্তা ভালো লাগছে না। আসলে পোয়ারো তাকে ব্ল্যাকমেল করতে বলছেন না। একটা সঠিক প্রভাব সৃষ্টি করতে বলছেন। সেটা তৈরি হলে তিনি গিয়ে হাজির হবেন। নরম্যান গেল নিমরাজী হলেও এই অভিনয় করতে বাধ্য হলেন।

জেনকে নিয়ে পোয়ারো কোনোদিন থিয়েটারে গিয়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করলেন।

জেন অনেকবার গেছেন। বললেন। অতলতলে নাটকের হ্যারির চরিত্র যে মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লো অভিনয় করেছিলেন, তার অভিনয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। পোয়ারো সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করতে চান। জেনকে এই অস্থিরচিত্ত মানুষের সঙ্গে কেমন যেন লাগছিল।

পোয়ারো তা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, আমি আমার কর্মপন্থায় যথাযথ নিয়ম এবং পদ্ধতি যুক্তিযুক্তভাবে করতে চেষ্টা করি। তিনি কিছু কিছু সিদ্ধান্ত বাদ দিতে চান।

জেন বললেন, এজন্য তিনি মিঃ ক্ল্যান্সি, হরবেরিল, জেন ও গেলকে বাদ দিয়েছেন। জেনের হঠাৎ খুন করার চেষ্টা মনে পড়ে গেল।

আপনি খুব চটপট বুঝে ফেললেন মাদাম, হ্যাঁ ওটা আমার পদ্ধতির একটা অংশ। খুন করার চেষ্টা কথাটির সাথে সাথে আমি মিঃ ক্ল্যান্সি, গেল ও আপনাকে লক্ষ্য করেছি কিন্তু চোখের পাতার কোণ কাঁপান। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি খুনী যখন আগে থেকে বুঝতে পারে, তখন সে আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হতে পারে। কিন্তু ছোটো একটা নোট বই-এর এই কথাটা আপনাদের কারোর জানা কথা নয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমি সন্তুষ্ট। জেন তার চুতরতার প্রশংসা করল এবং বলল যে কোনো জিনিস খোঁজার জন্য তিনি চতুরতম পন্থা অবলম্বন করেন। পোয়ারো তার জন্য লোকজনদের মন খুলে কথা বলাকে মনে করেন।

জেন কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তিনি অনাথআশ্রমে মানুষ হয়েছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডে ডাবলিনের কাছে বাস করতেন।

পোয়ারো বাড়ি ফিরে এগারোজনের নামের একটা তালিকা বের করে চারজনের নামের পাশে দাগ দিলেন এবং বিড়বিড় করে বললেন তিনি জানতে পেরেছেন কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে।

.

১৭.

 ওয়ার্ডসওয়ার্থে

মিঃ হরবেরিল মিচেল নৈশাহারে বসতে যাবে এমন সময় এক অতিথি তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি মিঃ পোয়ারো। মিচেল বললেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বোধহয় মামলা নিয়ে এগোতে পারছে না। এই মামলা নিয়ে মিচেল খুবই চিন্তিত। আসলে মিচেল মনে করে তার কোম্পানি ভালো বলেই, নইলে তার চারকি চলে যাবে। আসলে হেনরি ব্যাপারটি নিয়ে নিজেকে অপরাধী মনে করছে।

 মিচেলের মত তার আগেই তার লক্ষ্য করা উচিত ছিল ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। এতে কিছু হেরফের হত না পোয়ারো মনে করেন। আসলে মিসেস মিচেল মনে করেন ব্রিটিশ প্লেনে একটা নোংরা কেলেঙ্কারী করার জন্য এটা করেছে। মাদাম গিজেলের কথা প্রসঙ্গে জানালেন যে তিনি ডরমেন্টে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে তার পূর্ব পুরুষরা প্রায় ২০ বছর ধরে বাস করছে।

মিচেলকে পোয়রো একটা কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে মারা যাবার আগে মাদাম গিজেলের টেবিলে কাঁটা চামচ, নুন বাটি কি দেখেছেন। সে বলল, ওরকম কিছু সে দেখেনি তবে পুলিশ এ বিষয়ে বলতে পারে। তিনি এ বিষয়ে ডেভিসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন।

মিচেল মনে করেন যে ডেভিসের সঙ্গী তার এই খুনে জড়িয়ে পড়াকে সমর্থন করবে না।

ডেভিসকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, সে বলল, যে সেরকম কিছু দেখেনি। তার দুটি কফির চামচ ছিল। একটি ডিসে দুটো চামচ থাকা মানে নাকি বিয়ের সম্ভাবনা।

পোয়ারো তাকে ফরাসি মেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ডেভিস বললো, তার পক্ষে ইংরেজ মেয়েরাই ভালো। এটা তামাশা ছিল।

.

১৮.

 রাণী ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে

মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো মিঃ রাইজারের সঙ্গে দেখা করল। তিনি বললেন যে, তিনি জানতেন না মাদাম ওই প্লেনে খুন হবেন নইলে তিনি ও প্লেনে যেতেন না। তিনি বলেন যে, তিনি এমনিই জ্বলে পুড়ে মরছেন। কেন পুলিশ ডাঃ হার্বার্ড বা ব্রায়ানকে জ্বালাতন করতে যাচ্ছে না। তার মনে হয় ডাক্তাররা সাংঘাতিক বিষ জোগাড় করতেন।

মিঃ পোয়ারোকে তিনি বললেন যে এর একটাই সুবিধে তিনি খবরের কাগজ থেকে কিছু টাকা পাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ হিসাবে। তবে তার দেখার থেকে সাংবাদিকের ভাবনা বেশি স্থান পচ্ছে।

পোয়ারো বললেন যে, এতে তিনি বেশ কিছু টাকা পেয়ে গেলেন। এতে তার সুবিধে হল কারণ এতে তিনি তার ধারের টাকাটা পেলেন।

এটা শুনে রাইজার রেগে উঠলেন। তিনি কি করে জানলেন এটা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে যেমন করেই পান না কেন এটা ঠিক যে তিনি ব্যাপারটা গোপন রাখবেন। রাইজার পোয়ারো কেন দেখা করতে এসেছিলেন তাই জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে পেশার খাতিরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাদাম গিজেলের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়েছে। রাইজার তা জানতে চাইলেন না। তিনি বললেন মহিলার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। এটা একটা জঘন্য কুৎসা।

পোয়ারো এই ব্যাপারটা খুঁজতে চান। তিনি বললেন, এ ব্যাপারটা খোঁজ করতে হচ্ছে। রাইজার বললেন, তারও সুদখোরদের পাল্লায় পড়েছি বলে তারা গুলিয়ে দেয়। সমাজের যতসব উঁচুতলার মহিলারা জুয়া খেলে দেনায় ডোবে। তারা এক শিকার হয়।

পোয়ারো ভুল খবর দেওয়ার জন্য ক্ষমা প্রদর্শন করলেন। তিনি বললেন, ডাঃ ব্রায়নকে ডাঃ হার্বার্ড কেন বলেছেন। রাইজার উত্তরে জানালেন এটা একটা কবিতা থেকে পেয়েছেন। তিনি মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিচার করতে চান।

.

১৯.

 মিঃ রবিনসন এলেন আর গেলেন

 হরবেরিল কাউন্টেস তার ৩১৫ নং গ্রসনেভর স্কোয়ারের বাড়িতে তার শোবার ঘরে সাজের টেবিলের সামনে বসেছিনে। তিনি একটা চিঠি পড়ছিলেন।

হরবেরিল কাউন্টেস মহাশয়া—

 প্রিয় মাদাম,
বিষয়, মাদাম গিজেল, সম্প্রতি মৃত, আমি এই মৃত মহিলার কতগুলো দলিলের উত্তরাধিকারী। আপনি অথবা মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লো যদি এই ব্যাপারে উৎসাহী হন, তাহলে এই সম্পর্কে আলোচনার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আমি খুশি হবো। কোনো জবাব না পেলে, বুঝবো, আপনি এই ব্যাপারটা আপনার স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেবার জন্যই আমাকে বলেছেন।
আপনার একান্ত
জন রবিনসন।

তিনি চিঠিটা বারবার পড়তে লাগলেন। তিনি হাত বাড়িয়ে খামদুটো তুলে নিলেন ব্যক্তিগত ও একান্ত গোপনীয়, তার বলা ছিল হঠাৎ যদি মৃত্যু হয় তার খদ্দেররা যাতে বিপদে না পড়ে তার ব্যবস্থা করা আছে। তিনি ভাবছিলেন যে তার মোটেই ভালো ঠেকছে না। তিনি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি এই লোকটির সঙ্গে দেখা করাটাই মনস্থ করলেন।

তিনি লেখার টেবিলে গিয়ে আঁকাবাঁকা অক্ষরে বড়ো বড় করে লিখলেন।

হরবেরিল কাউন্টেস, মিঃ জন রবিনসনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন এবং আগামীকাল সকাল ১১টায় তিনি যদি এখানে আসেন তাহলে তার সাথে দেখা করবেন।

নরম্যান কালো দাড়ি, পরচুলো ও দাঁতে আঠালো পাটি লাগিয়ে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন তা দেখে এরকুল পোয়ারো রেগে উঠলেন। তিনি বললেন যে, নিজেকে কি মনে হচ্ছে, বাচ্চাদের হাসবার জন্য নিজেকে ভাড় ভাড় মনে হচ্ছে না…কিন্তু ওটা কি দাড়ি হয়েছে? দেখেই বোঝা যাচ্ছে বন্ধু, ওটা কাঁচা হাতে লাগানো আণ্ডাদাড়ি, তার উপরে আবার সুদ। আচ্ছা–আপনার পরচুলো পরার বদঅভ্যাস আছে নাকি? যে আঠা দিয়ে ওটা লাগিয়েছেন, তার গন্ধ তো দশ গজ দূরে থেকেও নাকে আসছে। আর দাঁতে যে একটা আঠালো পাটি লাগিয়েছেন এটা কেউ বুঝতে পারবে না মনে করবেন না। বন্ধু এ আপনার দ্বারা হবে না–এই অভিনয় করা আপনার কাজ নয়।

একসময় তিনি যে শখের থিয়েটার করতেন এটা তিনি জানালেন। পোয়ারো জানালেন যে তাকে তারা মেকআপ সম্পর্কে কিছু শেখাননি। এই ছদ্মবেশ মঞ্চের অন্ধকারে চেনা যাবে। গ্রসনেভর স্কোয়ারে দিনের আলোয় চেনা অবশ্যই সম্ভব। তিনি চান সেই ভদ্রমহিলা তাকে দেখে হেসে খুন না হয়ে ভয় পান। তিনি নরম্যানের হাতে কয়েকটা শিশি বোতল দিলেন, সেগুলি দিয়ে তিনি মিনিট পনেরো পর স্নানঘর থেকে যখন বেরিয়ে এলেন তখন তার মুখে ইট-রঙা চমৎকার লালচে ছাপ।

পোয়ারো বললেন যে বেশ হয়েছে, এগিয়ে যান, আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক। পোয়ারো ভরসা দিলেন যে তাকে মারমুখো স্বামী আর কজোড়া পুলিশের মুখোমুখি পড়তে হবে না। গ্রসনেভর স্কোয়ারে দোতলায় একটা ছোট্ট ঘরে লেডি হরবেরিল এসে ঢুকলেন।

মিঃ রবিনসন রূপী নরম্যানকে লেডী হরবেরিল বললেন তার চিঠি পেয়েছেন। তিনি উদ্ভুতভাবে সিসিলিকে বললেন–পাবেন বইকি–তা এ ব্যাপারে কি করছেন লেডি হরবেরিল।

আপনি কি বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না। আসছি আসছি, সে কথাতেই আসছি। তার কথায় সমুদ্রের ধারে ছুটি কাটাতে সবার ভালো লাগে। তিনি নিশ্চয়ই জানেন লেডি হরবেরিল যে ঠিকানাটা নিয়ে এই প্রমাণ তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধা গিজেল চমৎকার মহিলা ছিলেন, সবসময়ে প্রমাণগুলো ধরে রাখতেন, হোটেলের সাক্ষ্য প্রমাণ ইত্যাদি খুবই উঁচুদরের হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারণটা কার বেশি দরকার-আপনার না লেডি হরবেরিলর; হ্যাঁ, এটাই আমার জানার দরকার।

লেডি হরবেরিল খুব ভয় পেলেন। নরম্যান নিজেকে একজন বিক্রেতা হিসেবে বলতে চান, তার কাছে যে প্রমাণগুলো আছে সেগুলো দশহাজার পাউন্ডের বিনিময়ে মাদামকে দিতে চান। যদি তিনি লেনদেন করতে রাজি হন তাহলে তিনি সেটা দেখাতে রাজি। ভদ্রমহিলা বলতে চান তিনি এমন কিছু অন্যায় কাজ করেননি যার জন্য তাকে এত টাকা দিতে হবে।

মিঃ রবিনসন বললেন যে, যদি তাই তিনি না দিতে চান তাহলে লেডি হরবেরিল তিনি জানান, তিনি বলতে চান একটা কথা বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না একজন পরিত্যক্তা স্ত্রী কোনো ভাতা পান না। আর মিঃ ব্যারাক্লো যদিও বেশ সম্ভাবনাপূর্ণ অভিনেতা, কিন্তু তার এখনও বেশি টাকাকড়ি হয়নি। এখন এর বেশি একটাও কথা তিনি বললেন না। তাকে চিন্তা করার সুযোগ তিনি দিচ্ছেন আর এসব কথা তিনি সত্যি বলেছেন এটা দাবী করলেন।

মহিলাটি কোনো উত্তর দেবার আগে তিনি দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। একবার রাস্তায় বেরিয়ে ঘাম মুছে সে বললো, কপাল ভালো যে ঝামেলা চুকাতে পেরেছি।

পরে এক সময়ে লেডি হরবেরিল বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, একজন চাকর একটা কার্ড নিয়ে হাজির হলে তাতে পোয়ারোর নাম লেখা ছিল।

এটা আবার কে বলে তিনি যখন কার্ডটা ছুঁড়ে ফেললেন তখন পরিচারক বললেন যে মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লোর কাছ থেকে আসছেন।

মাদামের কাছে বেশ সেজেগুজে পোয়ারো এসেছেন। তিনি মাদামকে বন্ধুর মতন ভাবতেন এবং আপনাকে পরামর্শ দিতে এসেছি। তিনি বললেন তিনি জানেন উনি বিপদগ্রস্ত। তিনি নিজেকে একজন গোয়েন্দা বলে পরিচয় দিলেন। ম্যাডাম তাকে চিনতে পারলেন। তিনি বললেন তিনি সব গোপন কথা জানেন। তাই তিনি কোনো গোপন কথা ফাঁস করতে বলছেন না। তিনি নিজেই যা বলার বলছেন। তিনি বললেন সকালে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন তিনি আপনাকে ভয় দেখিয়ে কতকগুলো টাকা আদায় করতে এসেছিলেন, তার কাছে কতগুলো তথ্য প্রমাণ আছে। সেগুলি আগে মাদাম গিজেলের কাছে ছিলো। তিনি আপনার কাছ থেকে সাত আট হাজার টাকা চেয়েছেন।

কিন্তু আট হাজার টাকা যে মাদামের দেওয়া সম্ভব নয় তা তিনি বললেন কারণ উনি এখন দেনায় ডুবে আছেন, তিনি তাকে সাহায্য করতে এসেছেন, বলেন এরকুল পোয়ারো এবং তিনি মিঃ রবিনসনের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন।

রুক্ষভাবে মাদাম জানালেন এরজন্য তাকে কত দিতে হবে। তিনি বললেন যে মাদামের একটা সই করা ছবি দিতে হবে।

সিসিলি কেঁদে ফেললেন। তিনি এরকুল পোয়ারোর কাছে প্রশ্নের উত্তরে বললেন, তিনি আঠারো মাস আগে খুব বিপদে পড়েছিলেন। জুয়াখেলায় তিনি তখন মাদামের কাছ থেকে টাকা চান। মিঃ ব্যারাক্লো বলেছিলেন যে, তিনি উঁচুতলার মহিলাদের টাকা দেন। তিনি প্রথমে একশ টাকা ধার দেন। এর আগেই মিঃ ব্যায়োক্রোর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি তার স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট এবং তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ চান না; কারণ তিনি তার সম্মানের আসন কিছু টাকা দেবার প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঠেছিল, মাদাম বললেন, হ্যাঁ এবং তিনি টাকা শোধ দিতে পারেননি। মাদাম ঘুরে খোঁজ নিয়েছিলেন।

তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ছিলেন, পোয়ারো বললেন। তিনি শাসিয়েছিলেন যে যদি টাকা দিতে না পারেন তাহলে তা লেডি হরবেরিলকে বলে দেবেন। আসলে মাদামের মৃত্যু হরবেরিলর সুবিধা করে দিয়েছে। কিন্তু তিনি একমাত্র প্লেনে ছিলেন যার মৃত্যু কামনায় একটা উদ্দেশ্য ছিল তিনি একটু বিচলিত হয়েছেন।

লেডি হরবেরিল বললেন এটা খুবই অদ্ভুত। এ ব্যাপারে তিনি দারুণভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে যখন আপনি তার মৃত্যুর ঠিক আগের রাত্রে তার সঙ্গে বেশ খানিক বচসা হয়েছিল। তিনি মহিলাটির সম্পর্কে উত্মা প্রকাশ করলেন।

তবুও তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যে তিনি মহিলাকে চেনেন না। এর কারণ ভদ্রলোককে তিনি কিছু বলেননি। আসলে তিনি নিজে জানার চেষ্টা করেছেন। আসলে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি ভেবেছেন যদি কিছু হবার থাকে সেটা ফাঁস হয়ে যেত। এমনকি গতকালের চিঠি পাওয়ার পরও তিনি একটু ভয় পাননি। কারণ তিনি তার মৃত্যু কামনা করলেও তাকে খুন করেননি। তিনি এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।

তিনি (পোয়ারো) বললেন, তাকে তিনি সন্দেহ করেন না কারণ তিনি নারী। তাকে জিজ্ঞাসা করতে বললেন তিনি মিঃ ব্যারাক্লোর সঙ্গে ডিনার করেছেন, তার একবারই মহিলার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। তার আগে অভিসারী হিসাবে নাম ছিল সিসিলি ব্ল্যান্ড। তার আসল নাম মাথা জেব। তিনি টাকা পয়সার বিনিময়ে লেডি হরবেরিলকে বিচ্ছেদ করতে বলেন, পোয়ারো বললেন, যে মিঃ রবিনসন যেন তাকে বিরক্ত না করে তিনি তা দেখবেন।

গোয়েন্দা ইনসপেক্টর জ্যাপ হলে স্ট্রিট ধরে এগিয়ে গিয়ে একটা দরজার সামনে দাঁড়ালেন। ডাঃ ব্রায়ানের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি একটা কার্ডে দেখা করতে চাইলেন এবং বললেন যে সময় নেবেন। পরিচারক বললেন, ডাক্তারবাবু রোগী দেখতে ব্যস্ত তিনি যেন একটু অপেক্ষা করেন। ডাঃ ব্রায়ানোর অন্য রোগীরা তখন তার সম্পর্কে আলোচনা করছিল। এ থেকে জ্যাপ বুঝতে পারলেন তার পেশা বেশ ভালোই। তাই দেখে মনে হয় তার ধার করার দরকার হয় না। কিন্তু বদনাম হলে সব খান খান করে ভেঙ্গে পড়বে। ডাক্তার হবার এই মুশকিল।

১৫ মিনিট পর ব্রায়ান এলেন এবং তিনি দেরি করার জন্য মাপ চাইলেন। এবং প্লেনের সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্যাপ বললেন, হ্যাঁ এবং বললেন যে কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করার জন্যই আমি এসেছি। সেই মার্গের বিষের ব্যাপারটি। আমার ঠিক মাথায় আসছে না।

ডাঃ ব্রায়ান বললেন যে তিনি বিষ বিশেষজ্ঞ নয় এটা উইন্টারস্পুন একজন বিশেষজ্ঞ বিশেষজ্ঞ কেমন হন তা নিশ্চয় আপনার অজানা নয়। কিন্তু আমি যতদূর বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে এ ব্যাপারে ডাক্তারের দিকটাও নেহাত কম নয়।

এ বিষয়ে ডাক্তারের ভাবনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন খুন করার এক অভাবনীয় পদ্ধতি এবং খুনী খুব সাহসী নাহলে সে এমনভাবে খুন করল যে কেউ দেখতে পেলে না।

মিঃ পোয়ারো বললেন বুমস্যাভের নামের কোনো বস্তুর কথা হাজারে একজন লোকও শুনেছে। তার চেয়েও অনেক কমলোক এই মাপের বিষ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। উনি নিজে ডাক্তার হলেও উনি কোনোদিনও জিনিসটা নাড়াচাড়া করেননি।

ডাক্তার বললেন তার এক বন্ধুর গবেষণাগারে অনেক রকম শুকনো মাপের বিষের নমুনা আছে। তার মধ্যে কেউটে সাপের বিষ আছে–কিন্তু বুম্যাঙের কোনো নমুনা আছে বলে তিনি মনে করতে পারছেন না। তিনি কয়েকজনের নাম ডাক্তারকে বললেন যে প্রথমে তিনি কেনেডিকে সামান্য চেনেন। হেইডসারকে ভালো করেই চেনেন এবং কারমাইকেন এডিনবরা, তার তিনি নাম শুনেছেন। চেনেন না। তার মধ্যে হেইডলার তাকে সাহায্য করতে পারেন।

জ্যাপ তার কাছ থেকে এগুলি জেনে খুব প্রীত হলেন। বাইরে বেরিয়ে তিনি নিজের কৌশলগুলি ভেবে খুবই হাসছিলেন।

.

২০.

 তিনটি সূত্র

জ্যাপ যখন স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে ফিরে আসলেন তখন তার জন্য এরকুল পোয়ারো অপেক্ষা করছিলেন।

পোয়ারো জানালেন সে প্যারিসের দোকানদার বাঁকানলটিকে সনাক্ত করেছেন। পরিচারকদের জেরা করে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি কারণ তারা কোনো চমকপ্রদ ঘটনা ঘটতে দেখেনি। তিনি সব যাত্রীদের প্রশ্ন করেও কিছু মিথ্যা পাননি।

জ্যাপ বলছেন সকলেই মিথ্যে বলেছে। তিনি তার ওপরতলা থেকে ধমকানি খাচ্ছেন। তিনি ইচ্ছে করলে ফরাসিদের ঘাড়ে চাপতে পারেন–আমরা বলব ওটা ফরাসিদের কাজ। আর প্যারিস বলবে ওটা ইংরেজের কাজ। আসলে জ্যাপ ফরাসি উঁপ দুজনকে সন্দেহ করেন না। তারা তাদের নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদদের কেউ একাজ করেনি। তার মতে মিঃ ক্ল্যাণ্ডিন এটা করতে পারে না। ওনার কিছু মতলব থাকতে পারে। তার মনে হল সেই কালো বইয়ের সি২৫২ হচ্ছে লেডি হরবেরিল। ওই মহিলাটির বেশ কঠিন ঠাই। এ আপনাকে বলে রাখছি।

জ্যাপ ডঃ ব্রায়ান সম্পর্কে তিনি সন্দেহ করছেন। তার এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এর ক্ষেত্রে আর.টি, ৩৬২টা মিলে যাচ্ছে। তিনি কোথা থেকে সাপের বিষ জোগাড় করেছেন তা তিনি জানেন। তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যাই হোক তখন সবটাই আমার অনুমান কোনোটাই ঠিক ঘটনা নয়। এই মামলাটির সঠিক ঘটনা খুঁজে বের করে সন্দেহ করাও চলে না। তিনি বলেছেন তিনি প্যারিস গিয়েছিলেন ধারের টাকা জোগাড় করতে, তিনি পাননি। যে নাম-ঠিকানা দিয়েছিলেন সবই পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন তার ব্যাবসা দেউলিয়া হতে চলেছিলো কিন্তু কোনোরকমে চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানেও আপনাকে হতাশ হতে হচ্ছে।

পোয়ারো বললেন, তিনি তার মত কিছু জানতে পারেননি। তিনি নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে একটা পা বাড়িয়েছেন। তাকে অনেক দূর যেতে হবে। তিনি বলেছেন, খুন হচ্ছে এমনই একটা কাজ, যা নির্দিষ্ট কোনো ফলোভের জন্য করা হয়। তার মতে যদি কোনো টাকা যদি কারোর কাছে থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার কথা থাকে তাহলে তাকে খুন করলে টাকা ও উত্তরাধিকার হিসেবে তার ফল দুই-ই পাওয়া যায়। পোয়ারো বলতে চান তার কাজের ফল হিসেবে যা তিনি পেয়েছেন তা হল ২১ শে জুনের ক্ষেত্রে এই ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তিনি কাগজটি মেলে তা দেখালেন।

নিম সাময়িক উন্নতি। বেতনবৃদ্ধি নিম্ গেলকল যার হয়েছে। লেডি হরবেরিল ফল ভালো, যদি তিনিই সি-২৫২ হন। নিম কার ফল খারাপ যেহেতু সিমেলের মৃত্যুতে লেডি হরবেরিলর পক্ষে তার স্ত্রীকে ত্যাগ করার যথার্থ কারণ যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়বে। মিঃ ক্ল্যাডিস বলে ভালো। এই খুনের ব্যাপারে বই লিখে কিছু রোজগারের আশা রাখেন। ডঃ ব্রায়ানকে ফল ভালো, যদি তিনি আর.টি. ৩৬২ হন।

মিঃ রাইজার ফল ভালো। এই খুনের উপর প্রবন্ধ লিখে কিছু টাকা পেয়েছেন যাতে তার ব্যাবসা একটা দারুণ দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছে, রাইজার যদি এক্স-বি.আর.জি.জেড-৮ হন তবু ফল ভালো, বল কেমন প্রতিক্রিয়া হয়নি। মজা-একটাই।

মিচেল-ফল কোনো প্রভাব পড়েনি। ডেভিসফল একই। জ্যাপ সন্দেহভাবে বললেন, আপনি ভাবছেন এটা আপনাকে সাহায্য করবে। জ্যাপ মনে করেন, এর চেয়ে আমি কিছু বলতে পারি না লিখলে একই ব্যাপার হত। পোয়ারো বললেন যে, চারজন ক্ষেত্রে মিঃ ক্ল্যান্সি, মিঃ গ্রে, মিঃ রাইজার আর লেডি হরবেরিলর ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি যে, ফলাফল জমার ঘরে বসেছে। নিম্নগোত্রীয় মিস কারের ক্ষেত্রে ফলাফল খরচের ঘরে। আর চারজনের ক্ষেত্রে যতদূর আমরা জেনেছি, জমাখরচ কোনো ফলই নেই, মানে ডাঃ ব্রায়ানের ক্ষেত্রে কোনো ফলই নেই। কিংবা পরীক্ষা লাভের পথ আছে। জ্যাপের মনে হয় বিটার কাছ থেকে ফার্নের চেয়ে বেশি খবর আদায় করতেন।

পোয়ারো মনে করেন যে, তার সব থেকে আকর্ষণ লাগে, যে মহিলা জীবনে প্রথম ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছিলেন কিন্তু জীবন যন্ত্রণা পেয়ে জীবনের সমস্ত কোমলবৃত্তি বিসর্জন এলিয়ে এক কঠিন জীবনযাপন করেছেন।

জ্যাপ বললেন, আপনি কি ভাবছেন তার অতীত জীবনের কোনো সূত্র রয়ে গেছে?

তিনি বললেন যে মাদাম গিজেলের প্লেটে দুটো চামচ ছিলো, এটাকে বিয়ের সম্ভাবনা বলা হলেও তার ক্ষেত্রে এটা ছিল বিদায়।

জেন নতুন চাকরি নিলো।

নরম্যান গেল-এর সেই ব্ল্যাকমেল অভিযানের পরে নরম্যান, জেন এবং পোরারো নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন। মিঃ রবিনসনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে মিঃ গেল আনন্দ পেলেন। নরম্যান বললেন, যে হরবেরিল গিজেলের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, পোয়ারো আরো বেশি আশা করেছিলেন। তিনি বললেন যে অনেক কিছুই তিনি জানেন।

পোয়ারো বললেন যে বেশিরভাগ লোকই দেখবেন যা আপনাকে বলে তার চেয়ে নিজের মনের ইচ্ছাকে অনেক বেশি পছন্দ করে।

জেনের চুল কাটার চেয়ে বেশি বিদেশ ঘুরতে ইচ্ছে করে। পোয়ারো বললেন যে, আপনি এখনও অনেক যান। এটাই স্বাভাবিক যে, প্রতিটি লোকই জীবনে এটা ওটা পরখ করে দেখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার পছন্দমতো একটা জীবনই বেছে নেয়।

গেল বললেন যে তার দাঁতের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তার কাকার ইচ্ছের জন্য তাকে এই জীবিকায় চলে আসতে হয়। তার নিজের দুনিয়াটাকে জানার ইচ্ছে ছিল।

তিনি (পোয়ারো) বললেন যে, আবার তিনি দাঁতের ডাক্তারি ছেড়ে যাচ্ছেন কেন। আসলে তাকে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।

জেনকে পোয়ারো তার সেক্রেটারির কাজে নিযুক্ত করতে চান। কিন্তু জেন অ্যান্টোয়েনের চাকরি ছাড়তে চায় না। কিন্তু এর জন্য পোয়ারো বেশ ভালো টাকা দিতে চান। তিনি পরের সপ্তাহে প্যারিসে যাচ্ছেন তখন তাকে নিয়ে যেতে চান। প্রথমে জেন অসম্মতি দিলেও জেন পরে এটা করতে চান। তার কারণ সম্পর্কে জানালেন যে আইনটানের সঙ্গে ঝগড়া হয়ে যাওয়াই তার কারণ।

জেনের সাথে পোয়ারোর প্যারিস যাওয়া ঠিক হলো। ক্যালোক থেকে প্যারিস পর্যন্ত তাদের আলাদা কামরার ব্যবস্থা হল। এই সময়ে পোয়ারো জেনকে তার পরিকল্পনার কিছু আভাস দিল। প্যারিসে গিয়ে অনেক লোকের সঙ্গে আমাকে দেখা করতে হবে। সেখানে মাদামের উকিল থিকো আছেন। ফরাসি গোয়েন্দা বিভাগের মঁসিয়ে ফার্নে আছে। তারপর রয়েছেন মঁসিয়ে ট্যুপ। এখন দুজন, যখন আমি বাপের সঙ্গে কথা বলবো তখন আপনি ছেলেকে দেখবেন। আপনি খুব সুন্দরী আকর্ষণীয়া মহিলা–আমার ধারণা মঁসিয়ে উঁপ সেই তদন্তের দিন থেকে আপনাকে মনে রেখেছেন। পরেও জেনের সঙ্গে তার যে দেখা হচ্ছে একথা জেন বলল।

পোয়ারো খুব খুশী হলেন, তিনি বললেন যে মাদাম গিজেলের কথা জ্যাপ কাছে যেতে তিনি না জিজ্ঞাসা করেন, ওদের নিজেদের মাদাম গিজেলের কথা বলতে দিতে হবে। তাকে যেন বলা হয় মাদাম হরবেরিল এই খুনের জন্য সন্দেহভাজন, তার প্যারিসে আসার কারণ মূলতঃ মঁসিয়ে ফার্নের সঙ্গে আলোচনা এবং গিজেলের কথা বলতে দিতে হবে তাদের যেন বলা হয় মাদাম হরবেরিলর কোনো লেনদেন ছিল কিনা তার খোঁজখবর করতে এসেছেন এটাই পোয়ারো জেনকে জানালেন।

বেচারী লেডি হরবেরিল–আপনি তাকে একেবারে শিকারী বানিয়ে ছাড়লেন। তিনি মোটেই প্রশংসাযোগ্য মহিলা নন–তবু একটা ভদ্রলোকের জন্য যদি লাগে তবু ভালো। জেন বললেন যে তিনি জা দুপকে সন্দেহ করেন। আসলে পোয়ারো কিছু খবরের জন্য তাদের দুজনকে জেরা করতে চান।

পোয়ারো জ্যাপের সঙ্গে জেনকে নিয়ে একটু ইয়ার্কি করেন। জেনের মতে তিনি খুব সাধারণ এবং দরদীও। জানালেন নরম্যান কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি তার চেয়ারে এসে বসতে পেরেছে বলে তার মনে হয় না। জেন জানালে তিনি এখন কানাডা যাবার জন্য চেষ্টা করছেন।

পোয়ারো তাকে বললেন যে, তিনি নিউজিল্যান্ডে যাবার চেষ্টা করছেন। পোয়ারো বললেন যে তার মামলা একটি অজানা জিনিসের উপর নির্ভর করছে।

প্যারিসে পৌঁছে দু-দিন এরকুল পোয়ারো এবং তার সেক্রেটারি একটা রেস্তরাঁয় মিলিত হয়েছেন। জ্যাপরা বাপ ও ছেলে তার অতিথি।

জ্যাঁর সঙ্গে ঠিক সেই লন্ডনের মতোই আলাপ শুরু করা গেল। জার ছেলেমানুষী ভরা ব্যক্তিত্ব আগের মতোই তাকে আচ্ছন্ন করছে। জেন কথা বলছিলো, হাসছিলো, কিন্তু কান দুটো তার পোয়ারো কথার দিকে খাড়া ছিলো। পোয়ারো অন্য জিনিস আলোচনা করেছিলেন যাতে খুনের সম্পর্ক ছিল না। কারো ইচ্ছেয় জেন ও জার সিনেমা যাওয়া ঠিক হলো এবং পোয়ারোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হলো পিতার। তিনি মৃৎশিল্প সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহী কিন্তু সে সম্পর্কে অনেকে উৎসাহী নয় বলে তিনি যুদ্ধ করলেন। পোয়ারো বললেন, যদি তার গবেষণায় কিছু উপকার করেন এতে তিনি খুব খুশী হবেন। তিনি বললেন এর বিনিময়ে তিনি মৃৎশিল্পের স্মারক দিতে চান, কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো মিস জেনকে তাদের গবেষণার কাজে তাদের সঙ্গে দিতে চান। মঁসিয়ে উঁপ বললেন, যে এ বিষয়ে তিনি তার ছেলের সঙ্গে একটু পরামর্শ করতে চান, কারণ তার ভাগ্নে ও ভাগ্নে-বউ তার সঙ্গে যাচ্ছে। পোয়ারো বললেন গ্রে-র মৃৎশিল্প সম্পর্কে দারুণ আগ্রহ। এটা আমাদের খুব কাজে লাগবে একথা দুপকে বললেন।

পোয়ারো তার হোটেলে পৌঁছে দেখলেন জেন হলঘরে দাঁড়িয়ে সবেমাত্র জ্যা জ্যাপকে বিদায় জানাচ্ছেন। পোয়ারো জেনকে জানলেন যে আগামী বসন্তে জ্যাপের সঙ্গে পারস্যে যেতে হবে। জেন অবাক হলেন, বললেন, তিনি গেলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সামন্তয়েল পাহাড়ে যেতে চান এবং পোয়ারোর সেক্রেটারি হওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু পোয়ারোর মতে তিনি তা করতে চান বা এটা করতেই হবে কারণ তিনি তাদের এ প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে এখানে যে তারা এটা করতে রাজী তা নয়। তিনি এও জানালেন যে তিনি ওদের বলেছেন তিনি ভালো সেলাই করেন ও সোজা রিপু করতে পারেন।