৫. প্রধানতঃ গলফের কথা

প্রধানতঃ গলফের কথা

 এক সপ্তাহ ধরে লোরেন চিমনিতে রয়েছে। লর্ড কেটারহ্যামের কাছে গলফ খেলা শিখে সে প্রশংসা অর্জন করেছে।

-বান্ডল, লর্ড কেটারহ্যাম বললেন, লোরেন খুব ভালো মেয়ে।

 গলফ খেলায় লর্ড কেটারহ্যাম ভীষণ পারদর্শী। গলফ বলে শট নেওয়া তার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে পড়ে।

-জানিস তো, ওকে ভালো করে খেলাটা শেখাচ্ছি। কটা যা শট মেরেছে, দারুণ। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন।

-বাবা, ম্যাকডোনাল্ড কুটদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার জন্য বেশ শাস্তি ভোগ করেছে। বান্ডল অন্য প্রসঙ্গে এলো।

-কেন? আমার বাগানে আমি ইচ্ছেমত কাজ করতে পারি না? আমার ইচ্ছেটাই মাকডোনাল্ড প্রাধান্য দেয়। গলফের ব্যাপারে ঐ কুটরাও মন্দ নয়।

এমন সময় ট্রেডওয়েল এসে জানালো, মিঃ থেসিজার বান্ডলের সঙ্গে কথা বলতে চান ফোনে।

লোরেনকে সঙ্গে নিয়ে বান্ডল ছুটলো ফোনের কাছে।

-হ্যালো, জিমি নাকি?

–হ্যালো, কেমন আছো?

–খুব ভালো।

–লোরেনের খবর কি?

–দারুণ। কথা বলবে? ও এখানেই আছে।

-ওর সঙ্গে পরে কথা বলছি। শোন বান্ডল, আগামী সপ্তাহের শেষে আমি কুটদের বাড়িতে যাচ্ছি সময় কাটাতে। তুমি কি বলতে পারবে, সব-খোল চাবি কোথায় পাবো?

–তুমি কি ওদের বাড়ি সব-খোল চাবি নিয়ে যাবে? কিন্তু এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।

–এটার দরকার হতে পারে। ভাবলাম, তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি। একটা উপায় বাতলে দিতে পারো। তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এখন দেখছি স্টিভেনসকে বলতে হবে। আমি অপরাধ জগতের সঙ্গে মিশে গেছি, এটা হয়তো ও ভাববে।

–জিমি, একটা কথা মনে রেখো, সব সময় হুশিয়ার হয়ে থাকতে হবে। ঐ সব-খোল চাবি নিয়ে তোমাকে ঘোরাফেরা করতে দেখলে স্যার অসওয়াল্ড ব্যাপারটা খুব জটিল করে দিতে পারেন।

–মেনে নিলাম তোমার কথা। কিন্তু পঙ্গো যেমন বেড়ালের মতো নিঃশব্দে সব জায়গায় হঠাৎ আবির্ভূত হয়, তাই ভয়টা ওকে নিয়েই বেশি আমার।

-বেশ ত তোমার ওপর নজরদারি করার জন্য আমি আর লোরেন ওখানে যেতে পারি।

-ধন্যবাদ। কিন্তু আমার একটা পরিকল্পনা আছে। মনে করো, লেদারবাড়ির কাছে তোমাদের দুজনের একটা গাড়ি দুর্ঘটনা হলো। ওটা কতটা দূরে হবে?

–চল্লিশ মাইল। এমন কিছু নয়।

-বেশ, তোমরা বারোটা, সাড়ে বারোটা নাগাদ কাজটা সারবে। দেখো, লোরেনের মৃত্যু যেন না হয়। ও আমার ভালোবাসা।

তার মানে, তুমি বলতে চাইছে তাহলে ওরা আমাদের লাঞ্চের জন্য নেমন্তন্ন করবে?

–ঠিক ধরেছে। ও’রুরকেও থাকছেন সেখানে। জানো শকসের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।

–আচ্ছা জিমি, তোমার কি ধারণা

সন্দেহের দৃষ্টি থেকে কাউকে বাদ দিতে নেই, বুঝেছো। গোপন সভায় তিনি থাকতে পারেন। তিনি এবং কাউন্টেস একজোট হতে পারেন। গত বছর তিনি হাঙ্গেরিতে গিয়েছিলেন।

-ফর্মুলাটা তো তিনি যখন খুশী নিজের হাতের মধ্যে নিতে পারতেন?

-যাতে কেউ তাকে সন্দেহ না করে, এমন ভাবে নেওয়া সম্ভব হতো না তার পক্ষে। শোন, তোমাদের মত সুন্দরীদের পক্ষে কোনো কাজ অসম্ভব নয়। তোমরা দুজনে মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত পঙ্গো আর ও’রুরকে আটকে রাখবে।

-বুঝলাম। এবার লোরেনের সঙ্গে কথা বলো জিমি।

.

রাতের অ্যাডভেঞ্চার

রোদ ঝলমল করা এক বিকেল। জিমি হাজির হলো লেদারবাড়িতে। লেডি কুট এগিয়ে এসে অভ্যর্থনা জানালেন। ঠান্ডা বিতৃষ্ণা ফুটে উঠেছে স্যার অসওয়ার্ল্ডের দৃষ্টিতে।

জিমি নিজেকে আদর্শবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করলো শকস ডেভেনট্রির কাছে।

ও’রুরকে ভীষণ খুশীতে ছিলেন। তিনি সে রাতের অ্যাবীর ঘটনার ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করে গেলেও শকসের প্রশ্নের দাপটে এমনভাবে বর্ণনা দিলেন যে কোনটা সত্যি, আর কোনটা মিথ্যে সেটা উদ্ধার করা কষ্টকর ব্যাপার।

–চারজন মুখোস পরা লোক! তাদের হাতে একটা করে রিভলবাস? বাপরে! শকসের মূৰ্ছা যাওয়ার উপক্রম।

–প্রায় ছজন লোক আমাকে চেপে ধরেছিল মনে পড়ছে। জোর করে আমাকে হাঁ করিয়ে কিছু দেওয়া চেষ্টা করছিল। ভাবলাম বিষ, মৃত্যু আমার শিয়রে নিশ্চিত।

–কি খোয়া গেল?

-ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডে জমা দেওয়ার জন্য মিঃ লোম্যাক্সকে পাঠানো রাশিয়ার রত্ন ছাড়া আর কি?

–আপনি ভীষণ মিথ্যে কথা বলেন। শকস জোরালো অভিযোগ করলো।

-আমি মিথ্যে বলছি? যা বলছি সম্পূর্ণ গোপন ইতিহাস। আচ্ছা, বিশ্বাস না হয় মিঃ থেসিজারকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে। অবশ্য ও যদি অন্য কিছু বলে তার জন্য আমি দায়ী নই।

–মিঃ লোম্যাক্স তার নকল দাঁত না পরেই নিচে নেমে আসেন, এটা কি সত্য? শকস জানতে চাইলো।

–দুটো রিভলবারও ছিল। লেডি কুট ফোড়ন দিলেন। কি ভয়ঙ্কর দেখতে।

–ফাঁসিতে ঝোলার জন্য আমার জন্ম। জিমি বললো।

-একজন রুশী কাউন্টেস নাকি ছিলেন, শকস বললো, বেশ সুন্দরী। বিলকে সহজে কবজা করে নিয়েছিলেন।

–হাতটা কেমন আছে? লেডি কুট জানতে চাইলেন।

 –বেশ ভালোই। বাঁ-হাতে আপাততঃ কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।

–সব বাচ্চাকেই দুহাত ব্যবহার করা শেখানো উচিত। স্যার অসওয়াল্ড বলে উঠলেন।

–সরকারী অফিসে ডান হাত বাঁ হাতের কথা না জানলে ভালো হতো, মিঃ ও’রুরকে

জানালেন।

–আপনি দুহাত ব্যবহার করেন?

–না, আমি ডান হাতে কাজ করি।

–কিন্তু আমি সেদিন দেখলাম আপনি বাঁ হাতে তাস বাঁটছেন, মিঃ বেটম্যান বলে উঠলেন।

–সেটা আলাদা ব্যাপার। মিঃ ওরুকে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলেন।

রাতের খাওয়া-দাওয়ার পরে আসর বসলো ব্রিজ খেলার।

এরপর কেটে গেল দুটি ঘণ্টা।

জিমি পায়ে কোনো আওয়াজ না করে সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে এলো। রান্নাঘরে একবার উঁকি দিলো। তারপর সোজা পা চালালো স্যার অসওয়াল্ডের স্টাডিরুমের দিকে। টেবিলের ড্রয়ার টেনে দেখলো। কয়েকটা তালা লাগানো। ও একটা তার লাগিয়ে সহজেই ড্রয়ারগুলি খুলে ফেললো৷ কাগজপত্রগুলো ঘেঁটে দেখলো। তারপর আবার জায়গামত গুছিয়ে রেখে দিলো।

জিমি খুঁজছিল সেই তথ্য, হের এবার হোর্ডের সেই ফর্মুলার কোনো উল্লেখ যার সাহায্যে রহস্যময় সাত নম্বরের পরিচয় জানা যায়। কিন্তু কিছু না পেয়ে সে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ করলো। সেই সময় কানে এলো একটা চাপা শব্দ; বুঝলো, হল ঘরে দ্বিতীয় একজন আছে, এটা নিঃসন্দেহে। হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল তার। সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আলো জ্বালালো ঘরের মধ্যে তীব্র আলোয় ও চোখের সামনে দেখতে পেলো মাত্র কহাত দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে রিউপার্ট বেটম্যান।

-হা ভগবান। জিমি নিজেকে সামলে নিলো পঙ্গো তুমি অন্ধকারে এভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছো?

–একটা শব্দ শুনে দেখতে এলাম চোর ঢুকেছে ভেবে। বেটম্যানের পায়ে রবার সোলের জুতো জিমির দৃষ্টি এড়ালো না।

–সর্বত্র তোমার চোখ দুটি বিচরণ করে দেখছি। ওর পকেটের দিকে লক্ষ্য করে জিমি বললো, মারাত্মক অস্ত্রও সঙ্গে আছে।

-কখন কোন বিপদে পড়বো, আগে থেকে তৈরি থাকা ভালো।

–ভাগ্যিস, তুমি গুলি করোনি।

–হ্যাঁ, তোমার কপাল ভালো, তাই বেঁচে গেলে এ যাত্রা।

-তাহলে আর একটু হলেই একজন নিরীহ অতিথিকে খুন করছিলে, এটা আইনত অপরাধ। মনে রেখো আর ভবিষ্যতে আরো সাবধানী হয়ো।

–তুমি এখানে কি করছিলে? পঙ্গো প্রশ্ন করলো।

-ভীষণ খিদে পেয়েছে। তাই ভাবলাম, এখানে কিছু বিস্কুট পাওয়া যায় কিনা। অবশ্য আমার বিছানার পাশে একটা বিস্কুটের কৌটো আছে যার উপরে রয়েছে উপোসী অতিথিদের জন্য। অথচ খুললে দেখবো, টিন খালি। অগত্যা নিচে নেমে এলাম।

জিমি ওর ড্রেসিং গাউনের পকেট থেকে বেশ কিছু বিস্কুট বের করে ওকে দেখালো। মুখে ওর মিষ্টি হাসি, চোখে বুদ্ধির পরিচয়।

শিং-এর ফ্রেমের মধ্যে দিয়ে পঙ্গো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জিমিকে লক্ষ্য করলো।

 জিমি যেন ওকে তোয়াক্কা করে না এমন একটা ভঙ্গী করে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। বেটম্যানও তার পেছন পেছন হাঁটা দিলো।

নিজের ঘরের দরজার কাছে এসে জিমি বললো, শুভরাত্রি পঙ্গো।

–বিস্কুটের ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন গোলমেলে ঠেকছে, বেটম্যান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, যদি দেখি বেচাল কিছু তাহলে?

–নিশ্চয়ই, দেখো।

 বেটম্যান জিমির ঘরে ঢুকে বিস্কুটের টিন দেখে হাঁ। ভেতর ফাঁকা।

-কি বিশ্বাস হলো। জিমি বললো, এবার শুভরাত্রি।

বেটম্যান ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। জিমি তার বিছানায় বসে কান পেতে রইলো।

-খুব সন্দেহ ঐ পঙ্গোর। জিমি নিজের মনে উচ্চারণ করলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। রাত্রি বেলা না ঘুমিয়ে রিভলবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এক বাজে অভ্যাস।

এবার সে বিছানা থেকে নামলো। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে কাগজপত্রের মধ্যে থেকে কতগুলো বিস্কুট বের করলো।

এখন ইচ্ছে না থাকলেও এগুলো পেটে চালান করতে হবে। নতুনবা কাল সকালে পঙ্গো যদি এসে দেখে

বেজার মুখে সে বিস্কুট একটা একটা করে চিবোতে লাগলো।

.

সন্দেহ

বান্ডল ওর হিসপানোকে একটা গ্যারেজে রেখে ঠিক বারোটার সময় পার্কের গেট দিয়ে লোরেনকে নিয়ে ঢুকলো।

লেটি কুট ওদের দুজনকে বেশ অবাক হয়ে অভ্যর্থনা করলেন। বেশ খুশী মনেই তিনি ওদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করলেন।

একটা বিশাল আরাম কেদারায় মিঃ ও’রুরকে শুয়েছিলেন। তিনি লোরেনের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠলেন। কিন্তু লোরেনের কান রয়েছে অন্য জায়গায়। সে শুনতে পেলো, বান্ডলের গাড়িতে কি ধরনের গণ্ডগোল হয়েছে তার ব্যাখ্যা করছে সে নিজে।

–গাড়িটা বিগড়ে যেতেই একটুও চিন্তা হলো না। বান্ডল বলে চললো। এ বাড়ির কাছে খারাপ হয়েছে অতএব ভাবনা কিসের। একবার কি ঝামেলায় পড়েছিলাম। সেদিন ছিল রবিবার। পাহাড়ের কাছে লিট স্পেড়লিংটন নামে একটা জায়গায় গাড়ি গেল খারাপ হয়ে। যেমন জমি তেমনি জায়গা।

–ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য। ও’রুরকে মন্তব্য করলেন।

–মিঃ থেসিজারকে দেখছি না। লেডি কুট বললেন।

–মনে হয় বিলিয়ার্ড রুমে। আমি দেখছি। কথাটা শকস বলে চলে গেল।

 ঠিক তখনই গম্ভীর মুখে এসে ঢুকলো রিউপার্ট ব্যেটম্যান।

লেডি কুট, আপনি আমায় ডাকছেন? তারপর বান্ডলের দিকে তাকিয়ে বললো, কেমন আছেন লেডি এইলিন?

মিঃ বেটম্যান, আপনি এখানে এসে ভালোই করেছেন। লোরেন বললো, কুকুরের থাবায় ঘা হলে কি করতে হয় আপনি সেদিন জানতে চেয়েছিলেন না?

-না, আমি না। বেটম্যান ঘাড় নাড়লো, উত্তরটা আমার জানা আছে।

–কত খবর আপনাকে রাখতে হয়?

আজকাল সব খবর রাখতেই হয়। বেটম্যান জবাব দিলো। কুকুরের পায়ে

বান্ডলকে একটু আড়াল নিয়ে মিঃ ও’রুরকে বলললেন, এই ধরনের লোকেরাই খবরের কাগজে নানা বিষয়ে লেখে। যেমন, পেতলের জিনিষ কিভাবে চকচকে হয় নতুনবা সিংহলী ভারতীয়দের বিয়েরে আচার হলো–ইত্যাদি। অবশ্য আমার এরকম কোনো জ্ঞান নেই, সেজন্য ভগবানকে ধন্যবাদ জানাই। আমি শিক্ষিত মানুষ।

-এখানে গলফ খেলা যায়? বান্ডল গলফের স্টিক লক্ষ করে লেডি কুটকে প্রশ্ন করলো।

–লেডি এই লিন, আপনি আমার সঙ্গে গলফ খেলতে যাবেন? ও’রুরকে বললেন।

-খুব ভালো, আমরা চারজনে খেলবো। বান্ডল উৎসাহিত হয়ে বললো। আমি আর মিঃ ও’রুরকে আর লোরেন ও বেটম্যান খেলবে।

বেটম্যানকে ইতস্ততঃ করতে দেখে লেডি কুট বললেন, যান, খেলে আসুন। আপনাকে নিশ্চয়ই আপনার স্যার এখন খুঁজবেন না।

–বেশ কায়দা করে কাজ শেষ করা গেছে। চাপা কণ্ঠে বান্ডল লোরেনকে বললো।

 বেটম্যান আর লোরেন জয়ী হয়ে একটা নাগাদ খেলা সাঙ্গ হলো।

–আমরা যে খারাপ খেলেছি তা নয়, পার্টনার। পিছিয়ে পড়া বান্ডলকে লক্ষ্য করে ও’রুরকে বললেন। পঙ্গো কোনো ঝুঁকি নিতে নারাজ। খুব মেপে খেলে। তবে আমার মত একেবারে উল্টো। ফলে বহুবার ঝামেলায় পড়েছি। কিন্তু কায়দা করে বেরিয়ে এসেছি। আরে আমি ক্ষমতা রাখি। আমাকে ফাসাবে। আমি হলাম টেরেন্স ও’রুরকে।

ঠিক তখনই জিমি থেসিজার বেরিয়ে এলো বাড়ির কোণ থেকে।

–আশ্চর্য এরা আবার কোথা থেকে এলো? জিমি অবাক হওয়ার ভান করলো।

বান্ডল গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনা জিমিকে বললো।

গাড়ি সারাতে তো সময় নেবে। মধ্যাহ্নভোজের পর আমিই পৌঁছে দেবো। দুপুরের খাওয়ার ঘন্টা পড়তেই সকলে ভেতরে চলে গেল। বান্ডল জিমির গলার আওয়াজ লক্ষ্য করছিল নিখুঁত ভাবে, বুঝলো কাজ হাসিল হয়েছে।

মধ্যাহ্নভোজন শেষ হলো।

জিমি তার গাড়িতে বান্ডল আর লোরেনকে তুলে নিলো, কারণ ওদের গাড়ি পড়ে আছে গ্যারেজে।

এই সময় দুজনেই অর্থাৎ বান্ডল আর লোরেন একসঙ্গে বলে উঠলো।

-তারপর?

 জিমি ওদের আশ্বাস দিলো–সব ভালো। তবে বেশি মাত্রায় বিস্কুট খাওয়ায় হজম ঠিক হয়নি।

-কি হলো তাই বলো না?

–বলছি।

 জিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে লোরেন আবার অনুযোগ করলো।

–ওঃ জিমি, বলো না।

 জিমি নরম হলো–কি জানতে চাও?

–সবকিছু। আমাদের কাজটা কেমন হয়েছে বলো? বেটম্যান আর মিঃ ও’রুরকে আমরাই তো কায়দা করে খেলতে নিয়ে গিয়েছিলাম।

-পঙ্গোকে নিয়ে বেশি ভয়। ওকেসামলানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। পঙ্গো আর ওককের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। পঙ্গো হলো সর্বত্র বিরাজমান। যেখানেই যাও না কেন, ও দেখবে ঠিক চোরের মতো সেখানে হাজির। এত নিঃশব্দে ওর চলাফেরা যে আগে থেকে আঁচ করা যায় না।

–তুমি কি ওকে বিপজ্জনক বলে মনে করছো?

-না, কখনোই নয়। ওকে বিপজ্জনক ভাবলে হাসি পায়। ও একটা গাধা। একটা নোংরা জীব। নিশাচর প্রাণীর মত রাতে জেগে থাকে।

সন্ধ্যার ঘটনাগুলো জিমি শোনালো।

–তোমার যে কি মতলব জানি না।

 –সাত নম্বরকে আমার চাই। ওকে জানার চেষ্টা করছি মাত্র।

 –এই বাড়িতে কি ওকে পাবে?

–কোনো তথ্য পাবো ভেবেছিলাম।

–সেটা পেয়েছো?

 –গত রাতে পাইনি।

–আজ সকালে? লোরেন বলে উঠলো, তুমি আজ সকালে কিছু যে পেয়েছে, সেটা তোমার মুখ দেখলে বোঝা যাচ্ছে।

–একে কিছু পাওয়া বলে কিনা জানি না। বাড়ির এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে এই জিনিষটা পেয়েছি, একটা ছোট্ট বোতল জিমি ওদের দেখালো, সেটি সাদা গুড়ো পাউডারে ভর্তি।

–এটা কি হতে পারে? বান্ডল বললো।

–সাদা দানা। জিমি বললো, গোয়েন্দা কাহিনীতে আকছার পড়া যায় এরকম। অবশ্য জিনিষটা যদি কোনো নতুন ধরনের মাজন হয় তাহলে ভালো হবে না।

 কিন্তু শিশিটা কোথায় পেয়েছে সেটা জানাতে রাজী হলো না জিমি।

ওরা দুজন জানার জন্য অনেক কায়দা করলো, অপমান পর্যন্ত করলো, কিন্তু জিমি মুখ খুললো না।

ইতিমধ্যে ওরা গ্যারেজে পৌঁছে গেল। গ্যারেজের লোকটা একটা বিল ধরিয়ে দিলো বান্ডলকে। সে মিষ্টি হেসে বিলের টাকা মিটিয়ে দিলো।

তিনজনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

–জিমি, তোমার মনে আছে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল একটা আধপোড়া দস্তানা পেয়েছিলেন? যেটা তোমাকে পরেতে বলেছিলেন? বান্ডল বললো।

-হ্যাঁ, মনে আছে। জিমি উত্তর দিলো। আমার ওটা বড় ছিল। দেখে মনে হয়েছিল কোন বিরাট লোকেরই এটা হবে।

–সে যাক, ওটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নয়। বান্ডল বললো, তুমি এবার বলল, ঐ সময় স্যার অসওয়াল্ড আর জর্জ দুজনেই ছিলেন কিনা?

-হ্যাঁ, দুজনেই ছিলেন।

–তাহলে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল ওদের দুজনকে ওটা পরতে দিলেন না কেন?

–হ্যাঁ, সেটা দিতে পারতেন, কিন্তু

–কিন্তু তিনি তা না করে উল্টে তোমায় বলেছিলেন, জিমি এর মানে বুঝতে পারছো?

জিমি থেসিজার আশ্চর্য হয়ে তাকালেন।

-বান্ডল আমি বুঝতে পারিছি না। আমার দুর্বল মস্তিষ্ক। দুঃখিত। তুমি যদি বুঝিয়ে বলো।

–লোরেন, তোমার কিছু ধারণা আছে?

লোরেনের জানা নেই এই প্রশ্নের জবাব। সে বোবার মত মাথা নাড়লো।

–আচ্ছা, তখন জিমির ডান হাত বাঁধা ছিলো না? বান্ডল বললো।

–আরে, এটা তো ভুলে গিয়েছিলাম, জিমি লাফিয়ে উঠলো। দস্তানাটা বাঁ হাতের তাই ব্যাটল কিছু বলেননি।

–তার সেটা ইচ্ছাও ছিল না। তোমাকে দস্তানাটা হাতে পড়তে বলে অন্য সকলের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সে লোক তোমাকে গুলি করেছিল সে যে বাঁ হাতি সেটা নিশ্চিত।

-তাহলে আমাদের বাঁ হাতি লোককে এবার থেকে খুঁজতে হবে। লোরেন বললো।

–হ্যাঁ, তাছাড়া ব্যাটল চান গলফ ক্লাবগুলি ঘুরে এইধরনের লোকের হদিস করতে।

-একটা কথা মনে পড়েছে। জিমি বললো, গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভাববার বিষয়। জেরি যে রাতে মারা গেল, তার আগে চিমনিতে ব্রিজ খেলার আসর বসেছিল। তখন দেখেছিলাম স্যার অসওয়াল্ডকে বাঁ হাতে তাস বাঁটতে।

কথাটা ঠিক মনে ধরলো না লোরেনের। প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, ওর মত একজন মানুষ। না না, এটা সম্ভব নয়।

–অসম্ভব বলে মনে হয়। তবু–জিমি বললো।

বান্ডল শান্ত ভাবে বললো–নিজস্ব কাজের ধারা সাত নম্বরের আছে। স্যার অসওয়াল্ডের মধ্যে যদি সেই আচরণ লক্ষ্য করা যায়? স্যার অসওয়াল্ড এই ভাবেই সৌভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন?

ফর্মুলা যখন নিজের হাতের মধ্যে তাহলে অ্যাবীতে ঐ ধরনের গল্প ফাদার ওর কি দরকার ছিল।

–প্রয়োজন ছিল। লোরেন সায় দিলো। নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো।

–বাওয়ার আর কাউন্টেসকে সন্দেহ করা হচ্ছে। বান্ডল বললো, স্যার অসওয়াল্ডের মত লোককে কে সন্দেহ করবে?

-ব্যাটলের মনে এই সন্দেহ ঢুকেছে কিনা জানি না। জিমি বললো।

মুহূর্তের মধ্যে বান্ডলের চোখে সামনে ভেসে উঠলো স্যার অসওয়াল্ডের বিশাল চেহারা। সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল সেই কোটিপোতি মানুষের কোট থেকে আবিষ্কার করলেন একটা আইভি লতার পাতা।

.

জর্জ লোম্যাক্সের বিচিত্র ব্যবহার

নিঃশব্দে ঘরে এসে ঢুকলেন ট্রেডওয়েল।

-মাই লর্ড, মিঃ লোম্যাক্স আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

লর্ড কেটারহ্যাম নিজের বাঁ হাতের কব্জি দেখায় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একটু চমকে উঠলেন। তিনি রেগে গেলেন না। একটু ব্যথিত কণ্ঠে বললেন–আজ সকালে আমি ব্যস্ত থাকবো এটা তোমাকে প্রাতঃরাশের সময়ে জানিয়েছি।

–হ্যাঁ, মাই লর্ড। কিন্তু

-যাও, তুমি মিঃ লোম্যাক্সকে জানিয়ে দাও যে তোমার ভুল হয়ে গেছে। তুমি তাকে বলল যে আমি বাড়ি নেই বা বলল হাতে কষ্ট পাচ্ছি। তবুও যদি না শোনে তাহলে বলল আমি মরে গেছি।

–মাই লর্ড, একথা এখন বলা যাবে না। উনি আপনাকে বাগানে পলকের জন্য দেখে ফেলেছেন।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লর্ড কেটারহ্যাম বললেন, অগত্যা আর কি করা। তুমি যাও, আমি আসছি।

লর্ড কেটারহ্যাম চরিত্রটি বড় বিচিত্র। মনে ঘা থাকলেও আচরণে সেটা প্রকাশ করেন না।

অত্যন্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন–আরে বন্ধু যে, আপনাকে দেখে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। বসুন বসুন। আজ কিছু পান করতেই হবে।

বড় আরাম কেদারায় বসালেন জর্জ লোম্যাক্সকে।

–একটা বিশেষ দরকারে আপনার কাছে এলাম। জর্জ বললেন।

–তাই নাকি, লর্ড কেটারহ্যাম তলিয়ে ভাবতে লাগলেন, এই কথার পেছনে কি আছে।

বিশেষ দরকার ছিল। জর্জ বললেন।

লর্ড কেটারহ্যাম ভেতরে ভেতরে চুপসে গেলেন। তার মানে আরো সাংঘাতিক কিছু মনে হয়।

-এইলিন কি বাড়িতে?

-হ্যাঁ, বান্ডল বাড়িতে আছে। ওর সঙ্গে ওয়েড় মেয়েটা আছে। লর্ড কেটারহ্যাম স্বভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেন। জানেন মেয়েটা ভারী ভালো। দেখবেন ও একদিন গলফ খেলায়

জর্জ তাকে আর বলতে না দিয়ে থামিয়ে দিলেন-বান্ডলের সঙ্গে এখনই দেখা করা প্রয়োজন।

–নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। কিন্তু

–কোনো কিন্তু নেই। জর্জ বললেন, এইলিন আর ছোট্ট মেয়েটি নেই, এটা নিশ্চয়ই আপনার খেয়াল আছে। সে একজন বুদ্ধিমতী এবং সুন্দরী মহিলা হয়ে উঠেছে। যে ওকে ভালোবাসবে সে নিজেকে গর্বিত মনে করবে। আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না সে হবে খুবই ভাগ্যবান ব্যক্তি।

–কথাটা আপনি ভুল বলেননি, কিন্তু ও বড় চঞ্চল। একজায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। অবশ্য অজকালকার ছেলেরা এসব গুরুত্ব দেয় না।

-সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। আধুনিক সমস্যা ওকে চিন্তিত করে তোলে। মনকেও আধুনিক করতে চায়।

লর্ড কেটারহ্যাম বিস্মিত হয়ে তাকালেন জর্জের দিকে। এসব কি বলছেন? অথচ তার নিজের ধারণা, বান্ডল এসবের বিপরীত। আধুনিক জীবনের ক্ষেত্রেও তাই।

–আপনি কি ঠিক বলছেন?

–উড়িয়ে দেওয়ার মত কথা আমি বলিনি লর্ড কেটারহ্যাম। আমার এখানে ছুটে আসার উদ্দেশ্য আশাকরি খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমি নতুন দায়িত্ব নিতে রাজী হয়েছি, যা আমার মত লোক সহজে করে না। বংশমর্যাদা, রুচির ব্যাপার, ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা, এমন নানা বিষয় নিয়ে আমি ভেবেছি। আমি আমার স্ত্রীকে সমাজে এমন প্রতিষ্ঠা দিতে পারি যা তাচ্ছিল্য করার মত নয়।

…এইলিন আমার বংশমর্যাদা এবং প্রতিষ্ঠার সম্পূর্ণ উপযুক্ত। চমৎকার ভাবে ও এটা মানিয়ে নিতে পারবে। আমার আশা, ওর বুদ্ধি, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা, এসব আমার প্রতিষ্ঠাকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করবে। তবে বলতে পারেন, আমি এইলিনের থেকে বয়সে অনেক বড়। তবে মনে করবেন না, বয়সের সাথে সাথে আমার মধ্যে প্রাণ-প্রাচুর্যের অভাব আছে। বয়স কোনো ব্যাপার নয়। আমার মত প্রতিষ্ঠিত মানুষকে বিয়ে করা

…লর্ড কেটারহ্যাম, আপনি দেখে নেবেন, যৌবনমতী এইলিনের কোনো সম্মান নষ্ট হবে না।

কথাটা এত দেরিতে বুঝেছি বলে আফসোস হচ্ছে। আগে কেন বুঝিনি।

জর্জ লোম্যাক্স সম্মতির জন্য অপেক্ষা করলেন।

তার মানে, ইয়ে, লর্ড কেটারহ্যাম কেমন অসহায় বোধ করলেন, তুমি তাহলে বান্ডলকে বিয়ে করতে চাও?

আশ্চর্য হচ্ছেন? তাহলে কি বান্ডলের সঙ্গে কথা বলতে পারবো না?

কথা বলতে পারবে। তুমি যদি অনুমতি চাও আমি বাধা দেবো না। তবে একটা কথা জেনে রাখো, তোমার জায়গায় আমি হলে, এ প্রস্তাব করতাম না। আমি বলি বাড়ি যাও, এক থেকে কুড়ি গুনতে গুনতে বার বার ভাবো। বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বোকা বনে যাওয়ার চেয়ে ওটা ঢের বেশি মঙ্গলের হবে।

–আপনি যে হৃদয় থেকে কথাটা বললেন, সেটা মনে হলো না। আপনার কথাগুলো কেমন অদ্ভুত শোনালো, তবু আমি একবার আমার ভাগ্য পরীক্ষা করবোই। আমি কি এইলিনের সঙ্গে দেখা করতে পারি?

এ ব্যাপারে আমার মতামত খাটবে না। লর্ড কেটারহ্যাম উঠে দাঁড়ালেন, বান্ডল তার নিজের ব্যাপারে কারো কর্তৃত্ব পছন্দ করে না, ও যদি কাল এসে বলে, বাড়ির সোফারকে বিয়ে করবে তাহলেও আমি আপত্তি করবো না। ছেলেমেয়েদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করলে নিজের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। এটা আজকালকার নিয়ম। আমি তাই বান্ডলকে জানিয়ে রেখেছি–যে এমন কোনো কাজ কখনো করিস না, যা আমাকে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে। সত্যি কথা বলতে কি, এ পর্যন্ত আমার কথা রেখেছে।

জর্জ যেন প্রতিজ্ঞা করেই এসেছে। এমন ভঙ্গীতে উঠে দাঁড়ালো।

-কোথায় পাবো ওকে?

-বলতে পারবো না। লর্ড কেটারহ্যাম চটপট জবাব দিল। আগেই বলেছি ও স্থির হয়ে থাকে না। ওর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। ও যে কোনো জায়গায় থাকতে পারে।

–লর্ড কেটারহ্যাম, আপনি যদি বাটলারকে ডেকে বলেন যে একবার এইলিনকে ডেকে দিতে, আমি তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। তাহলে খুব ভালো হয়।

ঘন্টা ধ্বনি শুনে ট্রেডওয়েল ঘরে এসে ঢুকলো। লর্ড কেটারহ্যাম তাকে বললেন, লেডি এইলিনকে ড্রইংরুমে পাঠিয়ে দিতে, মিঃ লোম্যাক্স ওর সঙ্গে কথা বলতে চান।

জর্জ লোম্যাক্স আহ্লাদে ডগমগ হয়ে উঠলেন। লর্ড কেটারহ্যামের হাত ধরে বললেন, অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি ভালো খবর দিতে পারবো। জর্জ দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলেন।

লর্ড কেটারহ্যাম নিজের মনে বললেন, বান্ডল যে কি করছে কে জানে।

একটু পরেই দরজা খুলে কলো ট্রেডওয়েল–মিঃ বিল এভারসলে এসেছেন, মাই লর্ড।

লর্ড কেটারহ্যাম বিলের হাতটা জড়িয়ে ধরে বললেন, হ্যালো বিল, তুমি কি জর্জের খোঁজে এসেছো? তুমি আমার একটা উপকার করলে খুশী হবো। ড্রইংরুমে লোম্যাক্সকে পাবে। তাকে জানাবে যে ক্যাবিনেটের জরুরী সভায় তার ডাক পড়েছে। নতুনবা তোমার যেমন খুশী বলে ওকে বিদায় দাও। একটা যুবতী মেয়ের পাল্লায় পড়ে এমন একজন বুড়ো লোককে হেনস্থায় ফেলা উচিত নয়।

–আমি বান্ডলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বিল বলনো। জর্জ লোম্যাক্স যে এখানে এসেছেন আমি তা জানি না। তার খোঁজে আমি আসিনি। বান্ডল কোথায়? ধারে কাছে আছে কি?

-ওর সঙ্গে তোমার এই মুহূর্তে দেখা হবে না। ও জর্জের সঙ্গে কথা বলছে। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন।

-তাতে কি ক্ষতি হবে?

–হবে, অনেক কিছুই। এতক্ষণে সব মনে হয় গুবলেট করে দিয়েছে। ব্যাপারটা ওর পক্ষে আরো খারাপ করে না দেওয়াই ভালো।

–কিন্তু ওর বক্তব্য কি?

-সেটা ঈশ্বরই জানেন। মনে হয় পাগলের প্রলাপ বকছে। বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না। মেয়েটার হাত ধরো, দেখবে জলের মত এগিয়ে যাচ্ছে ঘটনা।

বিল অবাক হলো।

–কিন্তু স্যার, আমার সময় খুব কম। আমি এখুনি বান্ডলের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

–আমার মনে হয় বেশি সময় তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে না। কাজ মিটে গেলে লোম্যাক্স নিজেই আমার কাছে ফিরে আসবে। তুমি ততক্ষণ আমার কাছে থাকো সেটাই আমি চাই।

-কি কাজ? লোম্যাক্স কি করছে? বিল উগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো।

-সে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে বান্ডলকে। কারণ জানতে চেয়ো না। তবে আমার মনে হয় জর্জের এই বয়সে ভীমরতি হয়েছে। আমার তো আর কিছু মনে আসছে না।

–এই বয়সে বিয়ে? শুয়োর, শয়তান। বিলের মুখ কালো হয়ে গেল।

–জর্জ জানিয়েছে, ওর যৌবনে নাকি ভাঙন ধরেনি। লর্ড কেটারহ্যাম ফিস ফিস করে বললেন।

-লজ্জাশরমের বালাই নেই লোকটার। হতচ্ছাড়া

–ও আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোট।

–বান্ডলের মত মেয়ে? বান্ডল আর কডার্স। এ ব্যাপারে সায় দেওয়া আপনার উচিত হয়নি।

–এসবে আমি নাক গলাই না।

–হা ঈশ্বর! বেশ অনুভূতির সঙ্গে বিল কথাটা বলে উঠলো। আমাকে এখনই যেতে হবে স্যার। আমি চলি।

-না না, তুমি যেও না। তাছাড়া তুমি বান্ডলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।

-এখন থাক। আপনি যা বললেন, শুনে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে। দয়া করে আপনি বলবেন জিমি থেরিজারকে এখন কোথায় পাবো? ও নাকি কুটদের বাড়িতে ছিল, এখনও কি সেখানেই আছে? আপনি জানেন?

–মনে হয় গতকাল সে শহরে ফিরেছে। কারণ বান্ডল আর লোরেনও সেখানেই ছিল, গতকাল ফিরেছে। তুমি যদি ধৈর্য ধরে একটু বসো

বিলের একদম ভালো লাগছিলো না। অসহ্য লাগছিল সবকিছু। সে দ্রুত ঘাড় নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিঃশব্দে হলঘরে ঢুকলেন লর্ড কেটারহ্যাম। নিজের টুপিটা নিয়ে আবার চটপট পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। একটু দূরে বিলকে গাড়িতে উঠতে দেখলেন।

-কোনো দুর্ঘটনা না ঘাটিয়ে বসে ছেলেটা। লর্ড কেটারহ্যাম আপনমনে বললেন।

বিল নিরাপদে পৌঁছে গেলো লন্ডনে। সেন্ট জেমস স্কোয়ারে গাড়ি রেখে জিমির ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো।

বিলকে দেখে জিমি এগিয়ে এলো–হ্যালো বিল, কি খবর? তোমার মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে?

-এমনিতেই দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। বিল বললো, তার ওপর চরম ধাক্কা খেয়েছি।

ব্যাপারটা খুলে বল। দেখি, আমি তোমার দুশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব করতে পারি কিনা? বিল নিরুত্তর। একদৃষ্টে মেঝের কার্পেটের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–উইলিয়াম, অস্বাভাবিক কিছু ঘটেছে? জিমি শান্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করলো।

–এমন অদ্ভুত ব্যাপার, যার মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারছি না।

–তুমি সেভেন ডায়ালস-এর ব্যাপারে চিন্তিত?–হ্যাঁ, আজ সকালে একটা চিঠি এসেছে।

–কি ধরনের চিঠি?

–রনি ডেভেলোর আইনজীবী পাঠিয়েছে।

উঃ ভগবান, এতদিন পরে?

–রনি নির্দেশ ছিল, হঠাৎ যদি ওর মৃত্যু হয় তাহলে একটা খাম ঠিক পনেরো দিন পরে আমার কাছে যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

–তুমি কি খামটা পেয়েছো?

হ্যা।

–খুলে দেখেছ, তাতে কি লেখা ছিল?

–বিল চোখ তুলে জিমির দিকে তাকালো। জিমি চমকে উঠলো ওর ঐ অদ্ভুত বিচিত্র চাউনি দেখে।

–বিল, মনে হয় এটা তোমাকে দারুণ ভাবে চিন্তিত করে তুলেছে। তুমি বরং একটু কিছু পান করে নিজেকে তাজা করে নাও।

হুইস্কি আর সোডা মিশিয়ে জিমি বিলের হাতে গ্লাস তুলে দিলো। কিন্তু বিলের স্বাভাবিকত্ব ফিরে এলো না।

–চিঠির বক্তব্য আমাকে পাগল করে দিয়েছে, বিল বললো। আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য।

–বিল, তুমি একটু শান্ত হও। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা খুলে বলল। দাঁড়াও।

 জিমি বাইরে এসে স্টিভেনসকে ডেকে সিগারেট কেনার জন্য দোকানে পাঠালো।

বাইরের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেয়ে জিমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর জিমি বসার ঘরে ফিরে এলো। এর মধ্যে বিল তার গ্লাসের তরল পানীয় পান করে নিজেকে একটু চাঙ্গা করে নিয়েছে।

-নাও, এবার শুরু করো। জিমি বললো, স্টিভেনসকে বাইরে পাঠিয়েছি। কেউ কোনো কথা শুনতে পাবে না। এবার বলো। -বিল একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিলোহা, তোমাকেই সব বলবো।