৪. ফর্মুলা উদ্ধার

ফর্মুলা উদ্ধার

হের এবারহোর্ডের মুখ দিয়ে আর কথা সরছে না। যেন অ্যানিমিয়া হয়েছে।

জর্জ এ ব্যাপারের জন্য সরাসরি দায়ী করলেন ব্যাটলকে।

-ব্যাটল, তোমার হাতেই আমি সব ছেড়ে দিয়েছিলাম, এটা তুমি অস্বীকার করতে পারো না? ব্যা

টলের কঠিন মুখের কোনো পরিবর্তন হলো না।

-সত্যিই তাহলে কাগজগুলো উধাও হয়ে গেছে, তাই বলতে চাও।

 সুপারিন্টেন্ডেন্ট মাথা নাড়লেন। তিনি এগিয়ে গেলেন লোরেনের কাছে, তখনও তার হাতে বাদামী খামটা ধরা ছিল।

মিঃ লোম্যাক্স, আশা করি আপনার হারিয়ে যাওয়া জিনিষ সব এর মধ্যেই আছে। তবে এর কৃতিত্ব পাওয়ার কথা এই তরুণীর, এতে আমার কোনো ভাগ নেই।

জর্জ খামটা নেওয়ার আগে স্যার স্ট্যানলি ডিগবি চঞ্চল হাতে খামটা নিয়ে নিলেন। খুলে ফেললেন। স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠলো তার মুখে।

তিনি লোরেনের দুহাত ধরে আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললেন, প্রিয় মিস, আপনার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

–অবশ্যই! জর্জ বললেন।

তিনি তখন লোরেনের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারণ মেয়েটিকে তিনি মোটেও চেনেন না।

লোরেন এই দৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জিমির দিকে তাকালো।

জিমি পরিচয় দিলো।

–এ হল মিস ওয়েড। মানে, জোরাল্ড ওয়েডের বোন।

জর্জ খুশী হয়ে লোরেনের হাতে চাপ দিয়ে বললেন, প্রিয় মিস ওয়েড, আপনাকে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারছি না, কিন্তু আপনি কিভাবে

সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল এগিয়ে এসে বললেন, আমার মনে হয়, এটা আপাততঃ চাপা থাকাই ভালো।

প্রসঙ্গ পাল্টে মিঃ বেটম্যান বললেন, একজন ডাক্তার ডেকে আনার জন্য। মিঃ ও’রুরকে একবার দেখা উচিত।

জর্জের নির্দেশ মতো বিল বেরিয়ে পড়লো ডাঃ কার্টরাইটের উদ্দেশ্যে।

জর্জ বললেন, চলো ডাক্তার আসার আগে কি করা যায় দেখা যাক।

তিনি অসহায় ভাবে রিউপার্ট বেটম্যানের দিকে তাকাতেই পঙ্গো মুশকিল আসান করলো। বললো, স্যার, আমি সঙ্গে আসবো।

তিনজনে চলে যেতেই লেডি কুটও তাদের পেছন পেছন গেলেন।

–আমি ভাবছিলাম স্যার অসওয়াল্ড এই মুহূর্তে কোথায়?

লোরেন কেঁপে উঠলো–তাহলে তিনি কি খুন হয়েছেন?

-বাজে কথা বলার দরকার নেই। ব্যাটল একটু ধমকের সুরে বললেন।

বাইরে ভারী পায়ের শব্দ শোনা গেল। ঘরে এসে ঢুকলেন বিরাট চেহারার এক পুরুষ। তিনি চকিতে ঘরের চারদিকে তাকিয়ে নিয়ে বললেন–অফিসার, এখানে কি ঘটেছে?

–চুরির চেষ্টা, স্যার। তবে এই তরুণী মিস ওয়েডের জন্য চোর সফল হয়নি।

 তিনি অপরিচিত লোরেনের দিকে লক্ষ্য করলেন। ব্যান্ডেজ বাঁধা জিমির দিকেও দেখলেন। তারপর একটা মাউসার পিস্তল দেখিয়ে বললেন–এটা কি অফিসার? বাইরের লনে পেয়েছি। চোর সম্ভবত পালানোর সময় ফেলে রেখে গেছে। আপনি হাতের ছাপ পরীক্ষা করবেন নিশ্চয়ই। আমি তাই সাবধানে এনেছি।

–আপনার সবদিকেই নজর থাকে, স্যার অসওয়াল্ড।

ব্যাটল আলতো ভাবে পিস্তলটা নিয়ে টেবিলের ওপর জিমির অটোমেটিকের পাশে রেখে দিলেন।

এবার রাতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তৃত বিবরণ দিলেন ব্যাটল।

–হুম, স্যার অসওয়াল্ড সব কিছু শুনে বললেন, তবু আমার মনে হয় একটু খোঁজ করা উচিত ছিল। কাউকে পাহারাতেও রাখা দরকার ছিল।

তিনজনকে রাখা হয়েছিল নিচে, ক্লান্তস্বরে ব্যাটল বললেন। স্যার অসওয়াল্ড একটু আশ্চর্য হলেন, আটকানোর আদেশ ছিল।

–তা সত্ত্বেও তা করেনি?

-না, করেনি, ব্যাটল গম্ভীর ভাবে বললেন। স্যার, আমি ভাবছি অন্য কথা, অবশ্য অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে সে ভাবনা কোথাও না পৌঁছে দিলে তা নিয়ে আলোচনা নিষ্ফল।

–আপনার আপত্তি না থাকলে আপনার কথা আমাকে বলতে পারেন, সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল।

-স্যার, এ ব্যাপারে আইভিলতার ভূমিকা বেশি। মাফ করবেন, আপনার কোটেও কিছু লেগে আছে।

স্যার অসওয়াল্ড অবাক হলেন। কিছু বলবার আগেই রিউপার্ট বেটম্যান এসে ঢুকলো।

-স্যার, আপনি এখানে। আপনাকে না দেখতে পেয়ে লেডি কুট ভেঙে পড়েছেন। আপনি দয়া করে গিয়ে ওকে একটু শান্ত করুন।

তিনি সেক্রেটারিকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।

–খুব পাকা সেক্রেটারি। ব্যাটল মন্তব্য করলেন।

-হ্যাঁ, আমি ওর সঙ্গে স্কুলে পড়তাম। ডাক নাম পঙ্গো। ও বরাবার গাধাই রয়ে গেল। বড্ড বাস্তববাদী, রসকস একদম নেই।

ব্যাটল বললেন–কোনো ভদ্রলোকের নীরস হওয়া বড্ড খারাপ। তাতে গোলমালও হতে পারে।

-পঙ্গো গোলমাল করছে ভাবতে পারি না। জিমি বললো, বুড়ো কুটের সঙ্গে নিজেকে বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছে। চাকরিটাও পাকা হয়েছে।

—-সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, বান্ডল বলে উঠলো, স্যার অসওয়াল্ড এত রাতে বাগানে কি করছিলেন, তা তো জানতে চাইলেন না?

তিনি হলেন সত্যিকার মস্ত বড় মানুষ। ব্যাটল বললেন, এঁরা জানেন কোনো ব্যাখ্যা জানতে না চাইলে তা দেওয়া উচিত নয় এবং চাওয়া উচিত নয়। তিনি ব্যাখ্যা করা বা মার্জনা চাওয়া পছন্দ করেন না। তিমি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বলতে পারেন, বুঝেছেন।

এ প্রসঙ্গে বান্ডল আর কোনো কথা বললো না।

-এবার আমার বন্ধুর মত শুনতে পারবো। মিস ওয়েড কি করে এখানে এসে হাজির হলেন? ব্যাটল মজার গলায় কথাটা বললেন।

–আমাকে সব কিছুর বাইরে রাখা হয় কেন? জোরের সঙ্গে বান্ডল বললো। প্রথম দিনেই যখন আমায় তোমরা বলেছিলে ঘরে চুপ করে বসে থাকতে, তখনই আমি মন স্থির করে নিয়েছিলাম।

-তোমার ভীরু ভাব দেখে তখনই আমার বোঝা উচিত ছিল, লোরেন বললো।

–তুমি যে এতো বোকা, তা আমি জানতাম না, বান্ডল বললো।

–আমি তোমাকে বিবেচক বলেই জানতাম, জিমি বললো।

প্রিয় জিমি, তোমাকে ঠকানো খুব সোজা, লোরেন বললো। তুমি যখন ফোনে জানালে যে এ কাজে ঝুঁকি আছে, তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, কিছু করবোই। তাই হ্যাঁরোডে গিয়ে একটা পিস্তল কিনলাম, সাহস বাড়ানোর জন্য ওটার প্রয়োজন ছিল।

একটা ছোট্ট পিস্তল বের করে দেখালো লোরেন। আবার বলতে শুরু করলো, এখানে কি ঘটেছে সেটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, তাই লতাগাছ বেয়ে বারান্দায় আসি। কি করবো এখন সেটা ভাবার মধ্যে পায়ের কাছে এসে পড়লো একটা বাদামী রঙের প্যাকেট। ওটা তুলে ওপরের দিকে তাকালাম। দেখি একটা লোক লতা ধরে নামছে। আমি সেখান থেকে ছুটলাম।

লোকটার চেহারার বর্ণনা লোরেন বিশেষ কিছু দিতে পারলো না। কারণ অন্ধকারে বিরাট চোহারা বলেই মনে হয়েছে, এই পর্যন্ত।

ব্যাটল এবার জিমির কাছে জানতে চাইলেন।

–লোকটার গায়ে অসম্ভব জোর। এইটুকুই বলতে পারি, যখন ওর গলা টিপে ধরি তখন সে চাপাকণ্ঠে কয়েকটা শব্দ করে আমাকে ছেড়ে দাও গোছের। লোকটাকে অশিক্ষিত বলেই মনে হয়েছে।

–প্যাকেটটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিলো কেন, বুঝতে পারছি না, লোরেন বললো।

-লোকটা ইচ্ছে করেই আপনাকে দেয়। ব্যাটল বললেন, আমার বিশ্বাস চোর আপনাকে যে মানুষ ভেবেছিল তাকে।

–ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে ঠেকছে, জিমি বললো।

–মিঃ থেসিজার, এ ঘরে আপনি আলো জ্বালান?

–হ্যাঁ।

–ঘরে তখন কেউ ছিল না?

–না, কেউ না।

আলো নিভিয়ে আপনি আবার দরজা বন্ধ করেন? বলতে বলতে সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল একটা স্পেনীয় চামড়ার পরদা টাঙানো দেখে এগিয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে ওটার পেছনে উঁকি দিলেন। অস্ফুট একটা আওয়াজ তার গলা দিয়ে বেরিয়ে এলো।

ব্যাটলকে লক্ষ্য করে বাকিরা ছুটে গেল।

 কাউন্টেস র‍্যাডকি মেঝের ওপর অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছেন।

.

কাউন্টেস র‍্যাডকির কাহিনী

অনেক কসরত করার পর কাউন্টেস র‍্যাডকির জ্ঞান ফিরে এলো। অস্ফুট স্বরে কিছু বলে উঠলেন।

ঠিক তখনই ঝড়ের বেগে ঢুকলো বিল। কাউন্টেসের মুখের সামনে ঝুঁকে পড়ে বোকার মত বলতে লাগলো।

কাউন্টেস, আমি বলছি, ভয়ের কিছু নেই। একটা আঘাত পেয়েছেন, কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে। সুস্থ হয়ে তারপর যা বলার বলবেন। একটু জল খাবেন? বান্ডল, একটু ব্র্যাণ্ডি…

দয়া করে ওকে চুপ করে থাকতে দাও বান্ডল বেশ রেগেই বললো, উনি ঠিক আছেন।

বান্ডল আবার কিছুটা জল কাউন্টেসের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিলো। উনি ধড়মড় করে উঠে বসলেন। তিনি তার পাতলা রাতপোষাকটা ভালো করে জড়িয়ে নিলেন।

-সব মনে পড়ছে, বিড় বিড় করে বললেন, তিনি সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের মুখের দিকে তাকালেন, কারো চোখে সহানুভূতির স্পর্শ পেলেন না, একমাত্র বিল ছাড়া।

বিলকে লক্ষ্য করে কাউন্টেস বললেন, চিন্তা করবেন না, আমি ভালো আছি, আমাদের হাঙ্গেরিয়দের স্নায়ু ইস্পাতের মত মজবুত।

-এবার বলুন তো কি হয়েছিল? ব্যাটল প্রশ্ন করলেন।

এতক্ষণে তিনি দীর্ঘদেহী সুপারিন্টেন্ডেন্টের দিকে নজর দিলেন।

–আপনার ঘরে অমি গিয়েছিলাম। বান্ডল বললো, আপনি ঘরে ছিলেন না, বিছানাতেও শোননি

-হা হা, মনে পড়ছে, কাউন্টেস বললেন। কি ভয়ঙ্কর ঘটনা!

 ব্যাটল বলে উঠলেন–যদি বলেন?

বিল সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, সুস্থ না মনে করলে এখন বলতে হবে না।

সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটলের দৃষ্টিকে কাউন্টেস অগ্রাহ্য করতে পারলেন না।

-আমার ঘুম আসছিল না। তাই বই নিয়ে বসলাম। কিন্তু পড়ায় মন বসলো না। বাড়িটা আমার কেমন যেন লাগছিল। তাই বাইরে বেরোলাম। নিচে নেমে এলাম। নিস্তব্ধ নিঝুম বাড়ি। নিঃশব্দে লাইব্রেরি ঘরে ঢুকে পড়লাম।

–নিঃশব্দে?

-হ্যাঁ, আমি কাউকে জাগাতে চাইনি। আলো জ্বেলে একটা বই খুঁজতে লাগলাম। আচমকা একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেলাম। চাপা পায়ের শব্দ। ভয়াল সে পায়ের আওয়াজ এগিয়ে আসছিল। অমি আলো নিভিয়ে পর্দার আড়ালে আত্মগোপন করলাম। ঘরে ঢুকলো কেউ, সুইচ টিপে আলো জ্বাললো।

-হ্যাঁ কিন্তু, জিমি বলতে গিয়ে বাধা পেলো। ব্যাটল তাকে চুপ করার ইঙ্গিত করলেন

–নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইলাম, ভয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার উপক্রম। লোকটাও একটু থেমে শুনতে চাইলো। আবার পায়ের আওয়াজ।

জিমি আবার কিছু বলার চেষ্টা করলো।

কাউন্টেস বলে চললেন–সে জানলার কাছে গিয়ে মাথা বের করে কি দেখলো। তারপর ফিরে এসে আলো নিভিয়ে দরজা বন্ধ করলো। ঘরের মধ্যে লোকটা নিঃশব্দে ঘুরছে। আমি ভয়ে মরছি। যদি আমার অস্তিত্ব সে টের পায়। সে জানলার কাছে আবার গেল। আবার সব নিস্তব্ধ। ভাবলাম লোকটা চলে গেছে। তাই টর্চ জ্বালার উপক্রম করতেই ব্যাপারটা সেই মুহূর্তে ঘটে গেল।

-তারপর?

–জীবনে কোনোদিন ভুলবো না এ দৃশ্য। দুজন লোকের মধ্যে প্রচণ্ড মারামারি হচ্ছে। ওরা পরস্পরকে খুন করতে চাইছে। জিনিষপত্র লণ্ডভণ্ড হলো। কোথাও কোনো মেয়ে যেন চিৎকার করে উঠলো। লোকটা কেবল কর্কশ ও চাপা গলায় বলছিল, আমাকে ছেড়ে দাও। ইংরেজের মত গলার আওয়াজ।

-তারপর? ব্যাটল বললেন।

-তারপর গুলির শব্দ। আমার পাশের বইয়ের আলমারিতে গুলিটা লাগলো। আমি যে কখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি জানি না।

কাউন্টেসের কথামত সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল বইয়ের আলমারির কাছে এগিয়ে গেলেন এবং মেঝে থেকে কিছু কুড়িয়ে নিলেন।

–এটা বুলেট নয়, কাউন্টেস। ব্যাটল বললেন, বুলেটের খোল। মিঃ থেইজার, গুলি করার সময় আপনি কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন?

জানলার কাছে গিয়ে একটা জায়গা দেখলো জিমি।

-তাহলে গুলিটা আলমারির গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে জানলা দিয়ে। যদি আক্রমণকারীরা সেটা না নিয়ে পালায়, তাহলে কাল সকালে পেয়ে যাবো।

–আপনার হাতে ব্যান্ডেজ। কাউন্টেস সপ্রশংস দৃষ্টিতে জিমির দিকে তাকালেন, তাহলে আপনিই কি কিন্তু কি হয়েছিল সেটা আমি জানতে চাই।

ব্যাটল বললেন–স্যার স্ট্যানলি ডিগবির কাছ থেকে কিছু দরকারী রাজনীতি সংক্রান্ত কাগজ নিয়ে চোর পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু এই তরুণীটিকে ধন্যবাদ। চোরেরা তা পারেনি, তিনি লোরেনকে দেখালেন।

কাউন্টেস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন–শরীরটা আবার খারাপ লাগছে।

তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য বিল তার হাত ধরলো। বান্ডলের হঠাৎ নজর কাড়লো কাউন্টেসের কাঁধের ওপর ছোট্ট কালো একটা আঁচিল যা তার পাতলা রাত্রিবাসের পোষাকের ওপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। বান্ডল প্রায় কাঠ হয়ে গেল।

-এবার ঘর বন্ধ করে চাবি দিয়ে দেবো। সুপারিন্টেন্ডেন্ট বললেন, লেডি এইলিন, আপনি কিছু বলবেন?

-হ্যাঁ, এখুনি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

এই সময় ঘরে এসে ঢুকলেন জর্জ লোম্যাক্স ও ডঃ কার্টরাইট।

–শোন ব্যাটল, ও’রুরকের বিশেষ কিছু হয়নি। কড়া ইনজেকশান তাকে দেওয়া হয়েছিল। কাল সকালেই ভালো হয়ে যাবেন।

ডাক্তারের সঙ্গে জিমি আর লোরেন চলে গেল।ব্যাটলের দিকে বান্ডল কাতর চোখে তাকালো।

ব্যাটল আগ্রহান্বিত হয়ে বললেন, স্যার স্ট্যানলি ডিগবির সঙ্গে একটু আড়ালে কথা বলা । যাবে কি?

নিশ্চয়। জর্জ বললেন, আমি ওকে ডেকে আনছি।

সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটল বান্ডলকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন এবং ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।

বান্ডল সংক্ষেপে ওর সেভেন ডায়ালস-এ যাওয়া, সেখানে কি কি কথা শুনেছে, সব বলে গেল। শুনে ব্যাটলের একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো। এই প্রথম তার কঠিন মুখে শিথিলতা ফুটে উঠলো।

-আপনার মত মেয়েদের কোনা পূর্বাভাস দেওয়া বিপজ্জনক। আমি কল্পনা করতে পারিনি যে এতদূর আপনি এগোবেন।

–ঠিক আছে, আমার মৃত্যু আপনাকে ঝামেলায় ফেলতে চায়নি।

এখনও পর্যন্ত নয়। একটু থেমে ব্যাটল কি ভাবলেন। তারপর বললেন, জিমি থেসিজারের কাজটা বুঝলাম না, আপনাকে এরকম বিপদে ঠেলে দিলেন কেন, বুঝতে পারছি না।

-আগে ও জানতো না। বান্ডল বললো, তাছাড়া মিস ওয়েডকে নিয়েই সে ব্যস্ত।

-তাই নাকি? ব্যাটল একটু হাসলেন। তাহলে বিল এভারসেলকে বলবো, আপনার ওপর নজর রাখতে।

সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, আপনি আমার কথার শেষটুকু শোনেননি। যে মহিলাকে দেখলাম–একনম্বর, উনি হলেন কাউন্টেস র‍্যাডকি।কাউন্টেসেরকাঁধেরআঁচিলেরকথা বান্ডল বললো।

ব্যাটল কেবল হাই তুললেন, কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য না করে বান্ডল বিস্মিত হলো।

গালে হাত বোলাতে বোলাতে ব্যাটল বললেন–দেখুন লেডি এইলিন, কাউন্টেসের ব্যবহার সন্দেহজনক, আপনাকে বিশ্বাস করে কথাটা বললাম। খুবই সন্দেহজনক, এ ব্যাপারে আপনার এবং আমার মত এক। দূতাবাসের সঙ্গে কোনো অপ্রিয় ব্যাপার ঘটানো ঠিক নয়। তাই আমাদের অত্যন্ত পা মেপে এগোতে হবে। পুঁটি মাছদের দিয়েই রুই কাতলা ধরা যাবে। অতএব চূড়ামণি একদিন ধরা পড়বেই।

.

সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল দায়িত্ব নিলেন

 সকাল ছটা থেকে সুপারিন্টেন্ডন্ট ব্যাটল লাইব্রেরি ঘরে কাজ করলেন, তারই অনুরোধে বেলা দশটা নাগাদ ঘরে এসে ঢুকলেন স্যার অসওয়াল্ড কুট, জর্জ লোম্যাক্স এবং জিমি থেসিজার।

পাশের টেবিলে সাজানো রয়েছে নানা জিনিষপত্র যেগুলো পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জিমির লিওপোল্ড-ও আছে।

–সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, জর্জ বললেন। ভাবছিলাম কতখানি কাজ এগোলো। লোকটার হদিস পাওয়া গেল?

-ধরা সে পড়বেন, তবে সময় লাগবে। ব্যাটল জোরের সঙ্গে বললেন, দুটো বুলেট আমরা পেয়েছি। বড়টা সেডার গাছে বেঁধা অবস্থায়। ৪.৫৫ পেয়েছি যেটি মিঃ থেসিজারের কোল্ট থেকে বেরিয়েছিল। আর মাউসার-২৫ থেকে ছোটটা বেরিয়েছে। ওটা মিঃ থেসিজারের হাতের মধ্যে দিয়ে ঐ আরাম কেদারায় আটকায়।

পিস্তলে কোনো হাতের ছাপ পেয়েছেন? খুব আগ্রহ ভরে স্যার অসওয়াল্ড জানতে চাইলেন।

না, অপরাধীদের হাতে দস্তানা ছিল। আমি কি ঠিক বলছি, যে অসওয়াল্ড পিস্তলটা সিঁড়ির বিশ গজ দূরে পেয়েছিলেন?

জানলার দিকে মুখ রেখে স্যার অসওয়াল্ড বললেন–হবে হয় তো।

-স্যার, কিছু মনে করবেন না, পিস্তলটা যেখানে ছিল সেখানে ফেলে রাখলেই ভালো করতেন।

-আমি দুঃখিত, স্যার অসওয়াল্ড কাঠ হয়ে বললেন।

–আমি সবটাই পর্যালোচনা করেছি। বাগান থেকে আসা আপনার পায়ের ছাপ দেখেছি, নিচু হয়ে পিস্তলটা তোলায় ওখানকার ঘাসগুলো লেপ্টে গেছে। স্যার, আপনি কি বলতে পারেন, পিস্তলটা ওখানে গেল কেন?

-মনে হয় পালানোর সময় লোকটা ফেলে গেছে।

ব্যাটল মাথা নাড়লেন–সে ফেলে যায়নি। কারণ খামের ওপর একটা পায়ের ছাপ আছে সেটা আপনার স্যার।

-বুঝেছি, স্যার ওসওয়াল্ডকে চিন্তিত দেখালো।

–তুমি নিশ্চিত হয়ে বলছে, ব্যাটল, জর্জ প্রশ্ন করলেন।

হ্যাঁ, আর একটু দূরে আর এটা পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে যেটা মিস ওয়েডের। সম্ভবতঃ পিস্তলটা ছুঁড়ে ফেলে।

কিন্তু মাটি দেখে মনে হয় লোকটা এই বারান্দা থেকে পিস্তলটা ছুঁড়েছিল। জর্জ বললেন, এর কি কোনো বিশেষ তাৎপর্য আছে?

–হয়তো নেই। ব্যাটল বললেন, স্যার অসওয়াল্ড আপনি জানলায় দাঁড়িয়ে পিস্তলটা একবার ছুঁড়ে ফেলবেন।

স্যার অসওয়াল্ড কাজটি করলেন।

দেখুন মাটিতে সেই একই দাগ পড়েছে। ব্যাটল বললেন।

 এমন সময় দরজায় এসে দাঁড়ালেন লেডি কুট, হাতে জলের গ্লাস।

–অসওয়াল্ড, তুমি ওষুধ খেতে ভুলে গেছে। আমি জানি, নিজের হাতে না দিলে তুমি ওষুধ খেতে না, নাও, খেয়ে নাও। লেডি কুট বললেন।

স্যার অসওয়াল্ড ছোট ছেলের মত ওষুধটা খেয়ে নিলেন।

লেডি কুট ঘরের চারপাশে তাকিয়ে ক্ষণিকের জন্য চোখ বুজলেন, উঃ কি ভয়ঙ্কর সব পিস্তল। তারপর চোখ খুলে বললেন, কাল সারারাত কি আতঙ্কে যে কেটেছে। শেষ পর্যন্ত মিঃ বেটম্যান বললেন, অসওয়াল্ড বাইরে গেছে।

-স্যার অসওয়াল্ড বুঝি ঘুমোতে পারেননি? ব্যালট জানতে চাইলেন।

-আমার ঘুম এমনি স্বাভাবিক, স্যার অসওয়াল্ড বললেন। কিন্তগত রাতে ঘুম না আসাতে একটু বাইরে বেরিয়েছিলাম।

–আপনি এই জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসেন?

স্যার অসওয়াল্ড উত্তর দিতে চাইছিলেন না চট করে। কি ভেবে বললেন-হা।

-পুরু জুতোটা না পরে। লেডি কুট কান্না ভোজা কণ্ঠে বললেন, আমি না থাকলে তুমি যে কি করবে?

–মারিয়া, আমরা এখন ব্যস্ত আছি, তুমি এখন যাও।

লেডি কুট বিদায় নিলেন।

–লোকটা তাহলে মিঃ থেসিজারকে গুলি করে পিস্তলটা ছুঁড়ে ফেলে বারান্দা দিয়ে পালায়, জর্জ লোম্যাক্স বললেন।

–আমার পাহারাদারদের হাতে লোকটা ধরা পড়ার কথা, ব্যাটল বললেন।

–তোমার পাহারাদার। তোমাদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে জানা আছে। তাহলে মিস ওয়েড তোমাদের চোখে ধুলো দিয়ে কি করে ভেতরে ঢুকলো?

লোকটা বোধহয় অত্যন্ত ধড়িবাজ। ব্যাটল হাসি মুখে বললেন। কথাটা বলছি এই কারণে যখন গুলি ছোঁড়া হয় তার পঞ্চাশ সেকেন্ডের মধ্যে সেখানে গিয়ে হাজির হই। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে লোকটা বেপাত্তা হয়ে গেল।

-ব্যাটল, তোমার কথা স্পষ্ট হচ্ছে না আমার কাছে। হয়তো তোমার নিজস্ব মত থাকতে পারে, যেটা আমার জানা নেই। লোকটা বাগান পেরিয়ে বা পথ দিয়ে যায়নি। তাহলে লোকটা গেল কোথায়?

মিঃ লোম্যাক্স, লোকটার যদি পালানোর ইচ্ছে থাকতো তাহলে সে বাড়িতে ঢুকতো না। তার পক্ষে এই বাড়িই নিরাপদ।

-কিন্তু যখন আমরা আসি তখন মিঃ ও’রুরকের ঘর ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।

–স্যার স্ট্যানলির ঘরের মধ্যে দিয়ে যে যাবে। দরজার হাতল নাড়তে দেখেছেন লেডি এইলিন। তখনই প্রথমবার আমাদের এই বন্ধু ঘরের মধ্যে ছিলেন। দ্বিতীয়বার বেরিয়েছে স্যার স্ট্যানলির ঘরের মধ্যে দিয়ে, তখন ওটা খালি ছিল। কারণ তখন সবাই লাইব্রেরির দিকে ছুটেছিল। অতএব লোকটির রাস্তাও পরিষ্কার।

-তবে লোকটি গেল কোথায়?

সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল তার শক্ত চওড়া কাঁধ ঝাঁকালেন–বেরোবার পথ আছে অনেক। কিন্তু যে ভেতরের সে কি বাইরে বেরোবার চেষ্টা করবে?

জর্জ বিস্ময়ে হতবাক হলো।

–ভীষণ ঝামেলায় পড়লাম। ব্যাটল, আমার পরিচারকেরা সকলেই বিশ্বাসী। তাদের সন্দেহ করার মত কিছু নেই। জিমি তার নজর কাড়ার জন্য টেবিলের দিকে তাকালো।

–এ জিনিষটা কি? ও বললো।

–এ হলো এক্সিবিট নং-জেড, ব্যাটল বললেন। এটাই শেষ, আর একটা দস্তানা।

–কোথায় পেয়েছেন? স্যার অসওয়াল্ড জানতে চাইলেন।

-আধপোড়া অবস্থায় ঐ চুল্লীর মধ্যে থেকে পেয়েছি। ব্যাটল বললেন। যেন কুকুরে চিবিয়েছে।

মিস ওয়েডের অনেক কুকুর আছে। মনে হয় এটা তার।

জিমি দস্তানাটা হাতে পরে নিলো।

-না, আপনার হাতেও বড়।

স্যার অসওয়াল্ড নিস্পৃহ গলায় বললেন, এ সবের কোনো গুরুত্ব আছে?

–কখন যে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কেউ বলতে পারে না।

এমন সময় দরজায় আওয়াজ করে ঘরে ঢুকলো বান্ডল।

–আপনাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। বান্ডল বললো, বাবা আমাকে এখুনি ফিরে যেতে বললেন। মনে হলো, এর সঙ্গে এখানকার কোনো যোগাযোগ আছে। তাই আপনাদেরকে জানালাম যে আমাদের একজন ফুটম্যান গতরাতে বেরিয়ে আর ফেরেনি। বাবা খুব চিন্তায় আছেন।

–লোকটার নাম কি? জর্জ প্রশ্ন করলেন।

 –জন বাওয়ার। আমার ধারণা ও জার্মান। অবশ্য ভলো ইংরেজি বলে।

–লোকটি কতদিন চিমনিতে ছিল? হিস হিস করে উঠলেন অসওয়াল্ড।

–এক মাসের কিছু কম।

অন্য দুজনের দিকে তাকিয়ে স্যার ওসওয়াল্ড বললেন, লোম্যাক্স তুমি নিশ্চয় জানো, কত বিদেশী সরকার এই জিনিষটার পেছনে ঘুরছে। এই সেই হারিয়ে যাওয়া লোক। আমরা চলে যাওয়ার পনেরো দিন আগে আসে। নতুন চাকর এলে এখানে খোঁজখবর নেওয়া হয়। কিন্তু চিমনিতে তা হতো না।

–তার মানে পরিকল্পনা আগেই তৈরি হয়?

-বাওয়ার নিশ্চয়ই চিমনিতে আমার গোপন কাগজপত্র ঘেঁটেছে। লক্ষ লক্ষ টাকা ছড়িয়ে আছে ঐ ফর্মুলার সঙ্গে। বাড়ির ভেতরে তার কোনো লোক আছে যে মিঃ ও’রুরকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। আইভি লতা বেয়ে বাওয়ারকেই উঠতে দেখেন মিস ওয়েড।

.

বান্ডলের চিন্তাধারা

 স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দক্ষ গোয়েন্দা যে একটু আশ্চর্য হলেন সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

জর্জ বললেন, স্যার অসওয়াল্ড, ঠিকই বলেছেন। ঐ লোকটাই সেই লোক। তাকে ধরা যাবে?

–সেটাই স্বাভাবিক। অবশ্য লোকটি যদি চিমনিতে ফিরে আসে। যদি বাওয়ার হয়, তাহলে সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে সে এখানে এলো কি করে?

–তবে আপনার লোকেরা সব অপদার্থ। আপনাকে অবশ্য দোষ দেবো না।

-বুঝেছি। ব্যাটল বললেন। যাই, আমাকে এখুনি টেলিফোন করতে হবে। তিনি দ্রুত পায়ে চলে গেলেন।

বান্ডল আর জিমি বাগানে চলে এলো।

–জিমি বান্ডলকে পিস্তল ছুঁড়ে ফেলার ঘটনা বললো।

-বান্ডল, গভীর জলের মাছ হলেন সুপিরেন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল। কিছু একটা আন্দাজ করেছেন নিশ্চয়।

বান্ডল গত রাতের কথা জানালো জিমিকে।

-তাহলে এক নম্বর হলেন কাউন্টেস এবং দুই নম্বর চিমনি থেকে আসা বাওয়ার। তার মানে ওদের পরিকল্পনা ছিল এইরকম, কাউন্টেস ওষুধ খাইয়ে ও’রুরকে অচৈতন্য করে রাখবে। বাওয়ার তখন ঘরে ঢুকে কাগজপত্রগুলো আত্মসাৎ করবে এবং জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে কাউন্টসের দিকে। কাউন্টেস সেগুলো নিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসবেন। আর বাওয়ার ভালো মানুষের মত বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ওদের ছক উল্টে যায় আমার জন্য। আমার পায়ের শব্দ পেয়ে কাউন্টেস পর্দার আড়ালে গিয়ে লুকোন। তার সহকারীকে যে সতর্ক করবেন তার সুযোগও পাননি তিনি। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী বাওয়ার কাগজপত্রগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেয়। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা লোরেনের দিকে, কাউন্টেস মনে করে। তারপর আইভি লতা বেয়ে নামতে গিয়ে আমার মুখোমুখি হয়ে যায়। অবশ্য কাউন্টেস গল্পটা বেশ জব্বর বানিয়েছেন।

-কিন্তু সাত নম্বরের খবর কি? নক্ষত্রদের লোকটিকে নাকি কখনো দেখা যায় না। আমার বিশ্বাস, ঐ নম্বরটি এই বাড়িতেই আছে।

–বিল কি ভাবছে?

–আহ, ওর কথা বাদ দাও। বান্ডল নিরুত্তর কণ্ঠে বললো।

–আমার মনে হয় ওকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত। নতুবা কাউন্টেসকে সব ভুর ভুর করে বলে দেবে।

–কাউন্টেসের বিরুদ্ধে কোনো কথা ওরা কানে যাবে না। ও একটা গাধা। ওকে তাই আঁচিলের কথাটা বলা দরকার।

-ওসব বাদ দাও। জিমি বললো, ব্যাটল, চাইছেন, কাউন্টেসকে যেন এ ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন না করি, তাই তো?

-হ্যাঁ।

–তার মানে, কাউন্টেস হলেন তার টোপ। ঐ টোপ ফেলেই উনি মাছ গাঁথবেন ছিপে।

হতে পারে।

এমন সময় জর্জ লোম্যাক্স হাজির হলেন। জিমি দ্রুত ওখান থেকে সরে পড়লো।

জর্জ বান্ডলের পাশে বসলেন।–প্রিয় এইলিন, তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছে।

-হ্যাঁ, বাবা খুব চিন্তায় আছেন।

 বান্ডলের হাত নিজের হাতে নিয়ে জর্জ বললেন, উচ্চ এই হাতদুটি আমার প্রিয়। তোমার মতকে আমি অসম্মান করি না। বর্তমানের এই পরিবর্তিত অবস্থায়

নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে-বান্ডল ভাবলো।

–আমি পুরানো মূল্যবোধের কথা বলছি। জর্জ আবার বলতে লাগলেন, তোমার যৌবনের সুবিধাকে আমি হিংসা করি। আমি চাই তুমি নানা বিষয়ে পড়াশোনা কর। আমার সম্পর্কে তোমার যেন কোন ভয় না থাকে, সেটাও আমি চাই।

-ধন্যবাদ। বান্ডল বললো।

–প্রিয় এইলিন, তুমি আমাকে ভয় পেয়ো না। এটা আমার অনুরোধ। আমাকে তোমার রাজনৈতিক গুরু ভাবতে পারো। তোমার বিখ্যাত কাকিমা লেডি কেটারহ্যামের নীতি তুমি হয়ত অনুসরণ করতে পারো।

এই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের কথা ভেবে বান্ডল ঘাবড়ে গেল। কিন্তু মুখে কিছু বললো না।

-প্রিয় এইলিন, রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে আমি কাজ করছি। তুমি এটা চিমনিতে নিয়ে গিয়ে পড়তে পারো। তারপর এ সম্পর্কে তোমার সঙ্গে আলোচনা করবো।

জর্জ চলে গেলেন। কিন্তু বান্ডলকে একটা আচ্ছন্নতার মধ্যে রেখে গেলেন। বিল আসতে তার চমক ভাঙলো।

কডার্স তোমার হাত নিয়ে কি করছিল? বিল প্রশ্ন করলো, মনে রেখো, ওর নজর যদি তোমার ওপর পড়ে তাহলে ওর রেহাই নেই আমার হাত থেকে।

–দুঃখিত বিল, বান্ডল বললো, তোমার কি ধারণা, জিমি এখানে খুব ঝুঁকি নিয়েছিলো?

–জিমি ফাঁদে পড়লে বুঝতে পারবে।

–ফাঁদে জিমি নয়, আমি পড়েছি। বান্ডল বললো, আমাকে মিসেস মার্কাটার সঙ্গে দেখা করতে হবে, রাজনৈতিক অর্থনীতি পড়তে হবে এবং জর্জের সঙ্গে সে বিষয়ে আলোচনায় বসতে হবে। এর যে পরিণতি কি, তা একমাত্র ঈশ্বর জানেন।

-জর্জ মহিলাদের পার্লামেন্টে যাওয়া পছন্দ করে না। বিল সান্ত্বনা দিলো ওকে। তোমাকেও বক্তৃতা দিতে হবে না। চলো কিছু পান করা যাক।

ওরা এগিয়ে গেল। হলঘরের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে ওরা দাঁড়ালো। পাশের ঘরে ব্যাটল কিছু গলফ খেলার ক্লাব নিবিষ্ট মনে পরীক্ষা করছেন।

–গলফ খেলতে যাচ্ছেন নাকি? সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, বান্ডল প্রশ্ন করলো।

-এর থেকেও খারাপ কিছু করতে পারি, লেডি এইলিন। যে কোনো খেলায় জয়ী হওয়ার গুণ আমার আছে। আর জানেন তো কোনো কিছু শিখতে বয়সের মাপকাঠি থাকে না।

ব্যাটল ওদের সঙ্গে পা মেলালেন।

.

পরিকল্পনা ছকে নিলো জিমি

 জিমি খুব ভেঙে পড়েছিল। তাই সে ইচ্ছে করেই জর্জকে এড়িয়ে চলে এসেছিলো। ওর কাছে এলো লোরেন। ওরা একসঙ্গে বাগানে বেড়াতে বেরোলো।

-লোরেন!

–বল।

-আমি ঠিক সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারি না, জিমি বললো, আমি বলতে চাইছি যে আমরা দুজনে বিয়ে করতে পারি না।

আচমকা জিমির প্রস্তাব শুনে লোরেন কিন্তু ঘাবড়ে গেল না। ও উল্টে হেসে ফেললো।

-তুমি হাসছো কেন, লোরেন। একটা কিছু বলো।

– তোমাকে দেখে মজা লাগছে।

–তুমি অত্যন্ত পাজি মেয়ে।

–না, মোটেও তা নয়।

–যাক, হ্যাঁ কি না বলো।

-এখন এর জবাব দেওয়ার সময় আসেনি জিমি। লোরেন নরম সুরে বললো, আমরা এখনও বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

-জিমির মুখ থমথমে হয়ে উঠলো।-তুমি হয়তো ঠিক বলছো। বান্ডলের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে সাত নম্বরকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত আমরা বিপদের মধ্যে থাকবো।

–আর বাকিরা?

–তাদের চিন্তা আমার করার কথা নয়। সাত নম্বর যে কে জানি না। ওর কাজের গতিবিধিকে ভয় পাচ্ছি।

-জেরির মৃত্যুর পর থেকে আমিও আতঙ্কিত হয়ে আছি।

-তুমি ভয় পেয়ো না লোরেন। ওটা আমার দায়িত্ব। সাত নম্বরকে খুঁজে বের করে বাকিদের ঠিক শায়েস্তা করবো।

–তোমাকে যদি সে ধরে।

–আমি অনেক বেশি চালাক। আমাকে ধরা সম্ভব নয়।

–মনে হয় তোমার কোনো পরিকল্পনা আছে। বলবে?

–উঁহু, তরুণ বীর সবকিছু গোপনে রেখে কাজ হাসিল করে।

–তুমি একটা গর্দভ।

–জানি, অনেকের মুখেই একথা শুনছি। জিমি বললো। তবে অনেকেই মাথা ঘামাচ্ছে। তোমার কোনো মতলব আছে নাকি?

–বান্ডলের সঙ্গে চিমনিতে যেতে বলেছে।

–খুব ভালো। ও যা মেয়ে, কখন কি করে বসবে। ওর ওপর নজর রাখা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে বিল আছে। লোরেন বললো, তুমি ভাবছো, বিল কাউন্টেসকে নিয়ে ব্যস্ত, তা নয়। বান্ডলের ব্যাপারেও আহ্লাদিত। আজ সকালে লক্ষ্য করলাম, মিঃ লোম্যাক্স বান্ডলের হাত ধরে কি যেন বলছিলেন। ব্যাস, বিল ক্ষেপে লাল। ছুটলো ঝড়ের মত।

–মানুষের মন বোঝা দায়। আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিল কাউন্টেসের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। বান্ডলের ধারণাও এক।

-বান্ডলের ভাবা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু আমি বলছি, তুমি সম্পূর্ণ ভুল ভেবেছো।

–তাহলে আসলে কি?

–বিল নিজে কোনো তদন্ত করছে না তো? ওরকম পেশীওয়ালা ছেলে যখন সূক্ষ্ম নয় তখনই সন্দেহ দানা বাঁধে।

–ছাড়ো ওসব কথা। তুমি যা কিছু ভাবো। এখন দয়া করে চিমনিতে গিয়ে বান্ডলের ওপর নজর রাখবে। ও যেন সেভেন ডায়ালস-এ আর না যেতে পারে সেদিকে সতর্ক থাকবে। একটা কথা বলার জন্য এবার আমাকে লেডি কুটের কাছে যেতে হবে।

লেডি কুট বাগানে বসে উলের সোয়েটার বানাচ্ছিলেন। জিমি তার পাশে বসে তার হাতের কাজের প্রশংসা শুরু করলো।

–হাত কেমন আছে? লেডি কুট জানতে চাইলেন।

–ভালো। তবে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে।

-একটু সতর্ক হয়ে চলাফেরা করবেন কিন্তু। লেডি কুট জননী সুলভ কণ্ঠে বললেন আপনারা এবার যাচ্ছেন কোথায়?

ডিউক অ্যানটনের বাড়িটা স্যার অসওয়াল্ড নিয়েছেন। লেডি কুট লম্বা একটা নিশ্বাস ফেললেন। লেদারবাড়িতে ওটা। বোধ হয় এর কথা জানেন আপনি?

–বিশেষ কিছু জানি না। তবে নামী জায়গা বলে শুনেছি।

হতে পারে। তবে মস্ত বড় বাড়ি। ভয়ঙ্কর সব মানুষের গাদা গাদা ছবি আছে গ্যালারিতে।

মিঃ থেসিজার আপনি যদি তখনকার ইয়র্কশায়ারের ছোট বাড়িটা দেখতেন ভারি ভালো লাগতো। তখন স্যার অসওয়াল্ড কেবল মিঃ কুট ছিলেন।

–নিশ্চয়ই, স্যার অসওয়াল্ড নিজেও একখানা বাড়ি কিনবেন! আপনি তখন নিজের খুশী মনে বাড়ি সাজাতে পারবেন।

–মনে হয় সেটার দায়িত্ব কোনো কোম্পানিকে দিচ্ছেন, বিষাদ ভরা গলায় লেডি কুট বললেন।

তিনি স্যার অসওয়াল্ডের সম্পর্কে বলতে ব্যস্ত। বলতে থাকলেন–উনি কেবল নিজের উন্নতির পেছনে ছুটতে জানেন। অথচ দেখুন, স্যার অসওয়াল্ড হলেন ইংল্যান্ডের সেরা ধনী। কাজ করতে করতে কখন যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, ভেবে আমার ভীষণ ভয় হয়। লেডি কুটের চোখে জল এসে গেল। জিমি সবজান্তার মত মাথা দোলালো।

তবে একটু আশ্বাস পাই ঐ মিঃ বেটম্যান আছে বলেন। উনি ওর বিচারবুদ্ধির প্রশংসা করেন। ওর মনে হয় মিঃ বেটম্যান সবসময়েই ঠিক।

জিমি বললো–আপনাদের সঙ্গে চিমনিতে গত সপ্তাহে বেশ আনন্দে কাটিয়েছি। বেচারি জেরি মারা গিয়েই সব

–আচ্ছা, ওখানে এমন কোনো মেয়ে নেই, লেডি কুট আচমকা প্রশ্নটা করলেন, যাকে বিয়ে করে সংসার করতে ইচ্ছে করে আপনার?

লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলো জিমি, একটু ইতস্ততঃ ভাবে ফুটে উঠলো।

–আপনি তো ভেরা ডেভেনট্রির সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন, অবশ্য এটা আমার ধারণা।

–আপনি শকস-এর কথা বলছেন? ওর সঙ্গে আমার দেখা করার ইচ্ছে আছে।

–সে এখানে থাকতে আসছে। আগামী সপ্তাহের শেষে আসবে।

–বাঃ, তাহলে খুব মজা হবে। জিমি উৎফুল্লতা প্রকাশ করলো।

–আপনি আসবেন।

–হ্যাঁ, আসবো। ধন্যবাদ লেডি কুট। জিমি ওখান থেকে সরে পড়লো।

খানিক পরেই স্যার অসওয়াল্ড এসে হাজির হলেন।

-ঐ ছোরা তোমাকে জ্বালাচ্ছিল কেন? ছেলেটিকে আমার একদম পছন্দ হয় না। স্যার অসওয়াল্ড বললেন। সব ব্যাপারে ওস্তাদি করা ওর স্বভাব।

-না, না অসওয়াল্ড, তোমার ধারণা ভুল। লেডি কুট পাল্টা জবাব দিলেন। ও খুব সাহসী। দেখলে না গত রাতে বিপদের মুখোমুখি হয়ে নিজেই কিভাবে আহত হলো।

–ছেলেটি কুড়ের বাদশা। জীবনে প্রথম ভালো কাজ করতে দেখলাম। স্যার অসওয়াল্ড বিরক্তি প্রকাশ করলেন।

গত রাতে তোমার বাইরে বেরোনো উচিত হয়নি। নিউমোনিয়া না হলে বাঁচি। একটা খুনী ঘুড়ে বেড়াচ্ছিল। তোমায় গুলি করতে পারতো। তাই তো ওকে আমি সপ্তাহের শেষে এখানে থাকতে বলেছি।

–মোটেই তুমি এটা ভালো করোনি। স্যার অসওয়াল্ড বললেন। ওকে আমি কিছুতেই এখানে ঢুকতে দেবো না, মরিয়া। বেটম্যানের কাছ থেকে অনেক কিছু শুনেছি ওর সম্বন্ধে। ছেলেটি ওর সঙ্গে একই স্কুলে পড়াশুনা করতো।

–মিঃ বেটম্যানের কাছ থেকে কি শুনেছো? লেডি কুট জানতে চাইলেন।

–ওর ব্যাপারে আমাকে সাবধান করে দিয়েছে। বেটম্যানের কথা আমি এড়াতে পারি না। ওর ওপর আমার বিশ্বাস আছে যথেষ্ট।

–তাহলে ভুল আমি করে বসেছি। আগে যদি জানতাম, লেডি কুট বলতে থাকেন, তাহলে ওকে থাকতে বলতাম না। বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

লেডি কুট এগিয়ে চললেন।

স্যার অসওয়াল্ড তার দিকে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকালেন।

স্বামীকে তিনি খুব ভালোবাসেন কথাটা ভাবতে গিয়ে লেডি কুটের ঠোঁটে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো।