১. বেনামী চিঠি

স্যাড সাইপ্রেস (এরকুল পোয়ারো)

১.১.১

এলিনর কার্লিসল চোখ নামিয়ে বেনামী চিঠিটার দিকে তাকিয়ে খুব অস্বস্তি বোধ করল। লেখাটা বিশ্রী, বানান ভুলে ভরা, সস্তা গোলাপী কাগজে লেখা।

চিঠিতে লেখা–আপনাকে সাবধান করার জন্য কারু নাম বলতে চাই না। কেউ আপনার পিসিকে চুষে খেতে চাইছে, আপনি যদি সাবধান না হন, তা হলে সবকিছু হারাবেন। মেয়েরা বড় ধূর্ত, বিশেষ করে যখন কম বয়েসী মেয়েরা বুড়িদের তোমোদ করে, আমার মতে আপনি নিজে এসে স্বচক্ষে সব কিছু দেখে যান। যা ঘটেছে, তা আপনার পক্ষে ভালো নয়, ঐ কমবয়েসী ভদ্রলোকেরও সব ডুবতে পারে,মেয়েটা ভীষণ ধূর্ত, বুড়ি যেকোন দিন পটল তুলতে করে।
-শুভাকাঙ্ক্ষী।

এলিনর ঐ অদ্ভুত চিঠিটার দিকে তাকিয়েছিল এমন সময় ঝি এসে জানাল, মিঃ ওয়েলম্যান এসেছেন।

এমন সময় ঘরে ঢুকলো রডি–যাকে প্রত্যেকবার দেখলেই এলিনরের বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে, একটা আনন্দের তরঙ্গ বয়ে যায় সারা শরীরে যদিও তার বহিঃপ্রকাশ সে কখনোই পেতে দিত না। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। কারণ রডি এলিনরকে ভালোবাসলেও তেমন কোন বহিঃপ্রকাশ খুঁজে পাওয়া যেত না।

রডি সাধারণ এক যুবক হলেও তাকে দেখলেই এলিনরের সমস্ত জগৎ হিল্লোলিত হয়ে ওঠে, ওর কণ্ঠস্বর এমনকি সামান্যতম শব্দ শুনতেই এলিনরের কাঁদতে ইচ্ছা করে। প্রেম এক অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি–কিন্তু এমন কিছু নয় যা মানুষকে আহত করে…। প্রে

মে পড়লে পুরুষ নিছক শ্রদ্ধা বা প্রশংসায় তৃপ্ত নয়, রডিও নয়।

 এলিনর বললো, হ্যালো, রডি।

রডি উত্তরে বলল, বলো সোনামণি, মুখটা এতো শুকনো কেন? পাওনার তাগাদার চিঠি এল নাকি।

এলিনর মাথা নাড়ল।

রডি বলল, আমারও তাই মনে হয়েছিল, ভরা বসন্তকাল–জানোই তো পরীদের নাচন যখন শুরু হয়, তখনই হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে পাওনাদাররা বিল পাঠাতে শুরু করে নাচের -তালে-তালে।

এটা তার চেয়েও ভয়াবহ জিনিস। একটা বেনামী চিঠি। রডি একটু খুঁতখুঁত স্বভাবের। জ্ব কপালে তুলে অবিশ্বাস ও আশ্চর্যের মাঝামাঝি একটা অভিব্যক্তিতে বলল, তা কি করে হয়?

এলিনর আবার বলল, খুব বিশ্রী ধরনের চিঠি। এটা ছিঁড়ে ফেলাই ভালো।

প্রায় ছিঁড়েই ফেলছিল, কারণ রডি আর বেনামী চিঠি দুজনকে একসঙ্গে রাখা চলে না। কিন্তু কি জানি হঠাৎ ওর হাতে চিঠিটা দিয়ে বলল, পড়ো, প্রথমে পড়ে নাও, তারপর এটা পুড়িয়ে ফেলব। লরা পিসির সম্বন্ধে লেখা এটা…

চিঠিটা পড়ে রডি বেশ বিরক্তির ভাব দেখিয়ে বলল, হ্যাঁ, এটা পুড়িয়ে ফেলাই ভালো, মানুষ কি অদ্ভুতই না হয়।

এলিনর কে হতে পারে জিজ্ঞেস করতে রডি বলল, কে হতে পারে, মানে যার কথা বলা হয়েছে সে কে?

চিন্তান্বিত স্বরে এলিনর বলল, মেরী জেরার্ড-এর নাম। মেরী জেরার্ড মেয়েটাকে?

এলিনর মনে করিয়ে দিল মেরী ওখানকার লজে যারা থাকে তাদেরই একজনের মেয়ে। মেয়েটি যখন খুব বাচ্চা ছিল তখন লরা পিসি ওর লেখাপড়া, পিয়ানো শেখানো, ফ্রেঞ্চ শেখানোর বন্দোবস্ত করেছিলেন।

রডির মনে পড়ল, রোগা রোগা চেহারার সেই বাচ্চা মেয়েটার কথা, মাথায় একরাশ এলোমেলো চুল।

এলিনরের মা, বাবা যখন বিদেশে ছিলেন তখন এলিনররা ওখানে যেত আর তখনই মেয়েটিকে শেষ দেখেছিল রডি। এলিনর জানাল যে কিছুকাল আগে পড়াশুনো করার জন্য মেয়েটি জার্মানিতে গিয়েছিল।

এলিনর আরো জানাল মেরী এখন একজন পুরোদস্তুর সুন্দরী মহিলা, ফলে আউট হাউসে থাকা অন্যান্য চাকর-বাকরদের সঙ্গে ওর বনে না। মেয়ের লেখাপড়া আর ভদ্র আচরণের জন্য ওর বাবা ওকে ব্যঙ্গ করে।

এলিনর বলল, ওখানকার বাড়িতে ওর পজিশন বেশ উঁচুতে। লরা পিসিকে সে কাগজ পড়ে শোনায়। রডির প্রশ্নের উত্তর এলিনরের জানা, নার্সের ও’ব্রায়ানের উচ্চারণ খারাপ হওয়ার দরুণ পিসী মেরীকেই বেশী পছন্দ করেন।

পায়চারি করতে করতে রডি বলে এলিনর আমার তো মনে হয়, আমাদের এখনই ওখানে যাওয়া উচিত। চিঠিটার মতলব ভালো নয়, এর পিছনে হয়তো কোন সত্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া বুড়িও তো বেশ অসুস্থ…?

মুখে প্রসন্ন হাসি ফুটিয়ে রডি বলল, টাকাকড়িও তো তোমার আর আমার কাছে অনেক মূল্য আছে, তাই না এলিনর?

এলিনর সম্মতি জানাতে রডি জানাল, লরা পিসির কথা থেকে এটাই সুস্পষ্ট যে তুমি না হয় আমি, নয়তো দুজনেই ওর সম্পত্তি পাব। তুমি ওঁর আপন ভাই-এর মেয়ে আর আমি ওঁর স্বামীর ভাইপো।

রডি জানাল, হেনরী কাকা লরা পিসিকে বিয়ে করার সময় তার অবস্থা অত্যন্ত সচ্ছল ছিল। লরা পিসি আর এলিনরের বাবাও প্রচুর সম্পত্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু ফাটকা খেলায় এলিনরের বাবা সব খোয়ালেন।

এলিনর জানাল, তার বাবা ব্যবসাপত্র তেমন ভালো বুঝতেন না।

রডি বলল, তোমার বাবার চেয়ে তোমার পিসি অনেক বেশী বুদ্ধি রাখতেন। হেনরী কাকাকে বিয়ে করে তিনি হান্টারবেরীর সম্পত্তি কেনেন এবং সেই পয়সা যাতেই খাঁটিয়েছেন তাতে তার লোকসান কখনোই হয়নি।

হেনরী কাকা মারা যাবার সময় তার সব কিছুই পিসিকে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মারা গেলে পিসিও আর বিয়ে করেননি। রডি একবার বিপদে পড়লে তিনি তাকে আপন ভাইপোর মতই সাহায্য করেছিলেন। রডি বলল, লরা পিসি দারুণ ভালোমানুষ। কিন্তু আমরা দুজনেই আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের তুলনায় বেশী মাত্রায় বাজে খরচ করি।

এলিনর বিরস গলায় জানাল, সব জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া।

রডি বলল, ডারলিং তুমি যেন জলের পদ্মফুল, কোনরকম পরিশ্রম বা ছোটাছুটি তুমি করতে পারো না।

এলিনর ঝাঁঝিয়ে বলল, আমার কি ঐসব করা উচিত বলে তুমি মনে করো রডি?

রডি বলল, তুমি তুমিই, ফুলের মতো কোমল, আবার প্রয়োজনে হুল ফোঁটাতেও পারো। লরা পিসি না থাকলে হয়তো তোমাকে বাধ্য হয়ে আজেবাজে চাকরি করতে হতো। অবশ্য আমার ক্ষেত্রেও তাই। লিউস অ্যাণ্ড হিউমের চাকরীটা করার ফলে আমার আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ আছে। আর লরা পিসির কাছ থেকে আমিও কিছু আশা রাখি আর তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে ততো মাথা ঘামাই না।

রডির কথা শুনে এলিনর নিজেদের মানুষরূপী জোঁকের সঙ্গে তুলনা করলে রডি বলল, একদিন না একদিন আমরা কিছু সম্পত্তি পেতে পারি। এই কথাগুলোর প্রভাব আমাদের আচরণের উপর পড়েছে।

এলিনর বলল, লরা পিসি কখনো সঠিকভাবে বলেননি। কিভাবে উনি ওর সম্পত্তি ভাগ বাঁটোয়ারা করে যাবেন।

রডি বলল, তাতে কিছু এসে যায় না। উনি যদি সম্পত্তি তোমাকে দিয়ে যান, তাতে কিছু ভাববার নেই, কারণ তার ভাগ আমিও পাবো কারণ আমি তো তোমায় বিয়ে করব। আবার বুড়ি ওয়েলম্যান বংশের পুরুষ উত্তরাধিকার হিসাবে বেশীরভাগ সম্পত্তি যদি আমাকেই দেন, তাতেও কিছু হবে না, কারণ তুমি তো আমায় বিয়ে করছে।

রডি বলল, ভাগ্য ভালো যে আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। তুমিও তো আমাকে ভালোবাস, বাসো না এলিনর?

এলিনর শান্ত নিরীহ গলায় উত্তর দিল, হ্যাঁ।

রডি বলল, আশ্চর্য মেয়ে তুমি এলিনর। এই যে তোমার মেজাজ, সব সময় একটা স্বতন্ত্র ভাব, ধরা ছোঁয়ার বাইরে, তোমার এই গুণগুলোর জন্যই তোমায় এত ভালোবাসি।

রডি বলল, কোন কোন মহিলার অধিকারবোধ বড় বেশী, সব কিছু গ্রাস করে ফেলতে চায়, অথচ ভীষণভাবে অনুরক্ত, বিশ্বাসী, সব কিছুকেই তারা যেন ঘিরে থাকে। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা স্বতন্ত্র, যে কোন মুহূর্তে তোমার মেজাজ পাল্টে যেতে পারে, ঐ রকম শীতল নিস্পৃহভাবে তুমি খুব দূরের হয়ে যেতে পারো। খুব শান্ত গলাতেই বলতে পাশে, দ্যাখো আমি আমার মত পাল্টেছি, অদ্ভুত মোহময়ী চরিত্র তোমার এলিনর। জানো আমার মতে আমাদের বিয়েটা খুব ভালো হবে। আমরা দুজনেই দুজনকে যথেষ্ট ভালোবাসি, দুজনেই দুজনের বন্ধু, আমাদের রুচিরও মিল আছে। আমাদের মধ্যে সম্পর্কও আছে, অথচ সে সম্পর্ক বিয়ের ব্যাপারে বাধা নয়। আমাকে হয়তো তোমার বেশীদিন ভালো লাগবে না। কিন্তু তোমার ব্যাপারে আমার আগ্রহ কমবে না।

এলিনর জানাল, তা কখনোই হবে না।

রডি বলল, আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানাবার জন্যই যেন আমরা হান্টারবেরীতে যাচ্ছি, এই অজুহাতে ওখানে যাওয়া যায়।

রডি বলল, দুমাস হতে চলল আমরা ওখানে যাইনি। এখন যাবার সঙ্গে সম্পত্তির কোন সম্পর্ক নেই। স্রেফ মানসিক কারণে যেতে চাইছি।

এলিনর সম্মতি জানাতে রডি চিঠিটা পুড়িয়ে দিল আস্তে আস্তে, এবং চিন্তা করতে লাগল কে এমন চিঠি লিখতে পারে।

এলিনর ঠিক করল সমস্ত ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখে আসাই ভালো।

.

১.১.২

 নার্স ও’ব্রায়ান মিসেস ওয়েলম্যানের ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে ঢোকার মুখে বললেন, কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে এক পেয়ালা গরম চা নার্স হপকিন্সের নিশ্চয় ভালো লাগবে।

নার্স ও’ব্রায়ান বেশ লম্বা, লাল চুল, ত্রিশের কোঠায় বয়েস, ঝকঝকে সাদা দাঁত, মুখে ঘামাচির দাগ, এবং ঠোঁটে সর্বদা হাসি।

সরকারী নার্স হপকিন্স মাঝবয়সী মহিলা, শান্ত চেহারা, গাম্ভীর্য নিয়ে থাকেন, আদবকায়দা বেশ চোস্ত। তিনি প্রতিদিন সকালে মিসেস ওয়েলম্যানের পোশাক বদলানো, বিছানা ঠিক করা, বাথরুমের কাজ, সরানোর কাজে ও’ব্রায়ানকে সাহায্য করেন।

ও’ব্রায়ান জানাল এই বাড়িতে সবকিছুই বেশ নিয়মমাফিক আর ভালোভাবে চলে, যদিও সবই একটু সেকেলে ধরনের। এখানকার ঝি-চাকরগুলোও বেশ নম্র, ভদ্র। মিসেস বিশপ নিজের তদারকি করেন তাদের।

ক্ষুব্ধ সুরে হপকিন্স বললেন, আজকাল মেয়েগুলো একটা দিনও ভালোভাবে সব কাজ করতে পারে না, ও’ব্রায়ান মেরী জেরার্ডের প্রশংসা করলেন এবং হপকিন্স মেরীর জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন।

নার্স ও’ব্রায়ানের ঘরে বসে দুজনে চা খেতে খেতে ও’ব্রায়ান বললেন, আজ টেলিগ্রাম এসেছে মিস কার্লিসল আর মিঃ ওয়েলম্যান এখানে আসছেন। ও’ব্রায়ান জানালেন যে মিঃ ওয়েলম্যান খুব সুন্দর মানুষ, তবে দেখলে একটু অহংকারী মনে হয়।

হপকিন্স জানালেন যে, ঐ মেয়েটার আঁকা ছবি তিনি ট্যাটলার হলে দেখেছেন।

ও’ব্রায়ান নার্স হপকিন্সকে জিজ্ঞেস করলেন যে, এলিনর সুন্দরী কিনা?

হপকিন্স জানালেন যে, মেরী জেরার্ডের ধারে কাছে যেতে পারবে না এলিনর কার্লিসল।

ও’ব্রায়ান চাপা সুরে হপকিন্সকে জানালেন, কাল রাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। রাত প্রায় দুটোর সময় রোগীকে পাশ ফিরিয়ে দিতে গিয়ে দেখেন উনি জেগে আছেন। অথচ যেন স্বপ্ন দেখছেন, কারণ খাটের কাছে যেতেই উনি বললেন, ফটোটা। ফটোটা আমার চাই।

ও’ব্রায়ান কার ফটো জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিউইসের এবং বিছানার পাশে রাখা বক্স থেকে একটা চাবি বের করে ড্রেসিং টেবিলের দ্বিতীয় ড্রয়ারটা খুলতে বলেন। ওর মধ্যে রূপোর ফ্রেমে বাঁধানো দারুণ সুন্দর দেখতে এক ভদ্রলোকের ফটো ছিল। যার তলার দিকে এক কোণে আড়াআড়িভাবে লেখা লিউইস। ফটোটা ওঁর হাতে দিতেই অনেকক্ষণ সেটা দেখে অস্পষ্ট সুরে লিউইসের নাম নিলেন এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফটোটা আবার যথাস্থানে রেখে দিতে বললেন। এবং ও’ব্রায়ান চাবি বন্ধ করে ফিরে এসে দেখেন মিষ্টিমুখে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।

হপকিন্স এক অদ্ভুত আনন্দে চিন্তান্বিত স্বরে বললেন, ধারে-কাছে ঐ নামের কোন লোককে তিনি চেনে না।

ও’ব্রায়ান মনে করিয়ে দিলেন যে, ব্যাপারটা অনেকদিন আগেকার। সম্মতি জানিয়ে হপকিন্স বললেন, তিনি মাত্র কয়েক বছর হল এখানে এসেছেন, তবে

ও’ব্রায়ান বললেন, লিউইস দারুণ রূপবান পুরুষ। দেখলে মনে হয় ঘোড়সওয়ার বাহিনীর একজন বড় অফিসার।

হপকিন্স চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো।

চটুল গলায় ও’ব্রায়ান বললেন, হয়তো ওঁরা পরস্পরকে ভালোবাসতেন, বাবা-মা হয়তো ওদের পথের কাঁটা হয়েছিলেন।

হপকিন্স বিষাদের সুরে বললেন, হয়তো যুদ্ধে মারাও গিয়ে থাকতে পারেন।

.

১.১.৩

 ডিউটি সেরে হপকিন্স যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন মেরী ছুটে এসে বলল, আমি কি আপনার সঙ্গে গ্রাম পর্যন্ত যেতে পারি?

সিস্টার সম্মতি জানাতে মেরী জানাল তার সঙ্গে কথা বলা তার একান্তই দরকার। সব বিষয়ে তার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

একুশ বছরের মেরী জেরার্ড। শাঁখের মতো সুন্দর গলা, হালকা সোনালী চুল, একরাশ ঢেউ খেলানো চুল তার রূপকে আরও মিষ্টি করে তুলেছে। চোখের তারা নীল।

মেরী জানাল যে, সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। এভাবে নিজেকে নষ্ট হতে দেওয়া তার একেবারেই উচিত নয়। সে মিসেস ওয়েলম্যানকে অনেকবার সেকথা বোঝাবার চেষ্টা করে পরাজিত। তিনি খালি বলেন, এতো ব্যস্ততার কি আছে।

হপকিন্স মেরীকে মনে করিয়ে দিলেন যে, মিসেস ওয়েলম্যান অসুস্থ।

লজ্জিত হয়ে মেরী বলল, সে চুপচাপ বসে না থেকে কিছু একটা করতে চায়, কিন্তু কোন কিছুর ট্রেনিং নিতে গেলে অনেক খরচপত্র করতে হবে। অসুস্থ মানুষকে সেবা করতে তার ভালো লাগে। তাই তার ইচ্ছা হাসপাতালে সে নার্সের চাকরী করবে।

হপকিন্স বললেন, তার জন্য শরীর স্বাস্থ্যকে একেবারে পাথরের মতো করা দরকার।

মেরী জানাল সে নার্সিং ভালোবাসে। ওর মাসি নার্স ছিলেন। অতএব ওর পক্ষে কোন অসুবিধা হবে না।

হপকিন্স মেরীকে নরল্যাণ্ডে গিয়ে ম্যাসেজ করা শিখতে পরামর্শ দিলে মেরী বলল, সেও ওকথা চিন্তা করেছিল, কিন্তু তাতে অনেক খরচ। মিসেস ওয়েলম্যান তার জন্য যথেষ্ট খরচ করেছেন।

হপকিন্স মেরীকে মাস্টারি করার পরামর্শ দিলে মেরী বলল, না, অতো মাথা আমার নেই। হপকিন্স বললেন যে, তার দৃঢ় বিশ্বাস মেরীর যাতে চলে যায় তার জন্য মিসেস ওয়েলম্যান কিছু না কিছু করবেনই। ওয়েলম্যান মেরীকে এত স্নেহ করেন যে, তাকে কাছ ছাড়া করতে চান না। পক্ষাঘাতে একটা অঙ্গ তার পড়ে গেছে। তুমিই যা একটু গল্পগুজব করে ওঁকে সঙ্গ দাও। নিজের চারপাশে তোমার মতো এমন একটা তরতাজা মেয়েকে সবসময় দেখতে পেলে মন বেশ আনন্দে ভরে থাকে। তাছাড়া রোগীর সামনে তার আচরণেরও প্রশংসা করলেন হপকিন্স।

কথাগুলো শুনে মেরী খুব খুশি হয়ে বলল, মিসেস ওয়েলম্যানকে তার ভীষণ ভালো লাগে। ওঁর জন্য সে সব কিছু করতে পারে।

হপকিন্স শুকনো গলায় বললেন, তাহলে তোমার উচিত যেখানে আছ সেখানেই থাকা, বেশী দিন লাগবে না…

একথা শুনে মেরী ভয়ে ভয়ে বলল আপনি কি বলতে চান…

হপকিন্স মাথা নেড়ে বললেন, এসব কেসে কি কি হয় তা তার অজানা নয়। বেশ ভালোই লড়ে গেছেন উনি, কিন্তু আর বেশীদিন নয়। এরপরে দ্বিতীয় তারপর তৃতীয় স্ট্রোক হবে। যদি শেষ কটা দিন মেরী বুড়িকে সুখে রাখতে পারে, তবে বাকীগুলোও ঠিকমত হয়ে যাবে।

এই কথা শুনে মেরী কিছু উত্তর দেবার আগেই হপকিন্স বললেন, ঐ তোমার বাবা আসছেন।

নার্স হপকিন্স বেশ হাসি ঝরিয়ে মিঃ জেরার্ডকে সুপ্রভাত জানালেন। প্রত্যুত্তরে ক্রাইম জেরার্ড মুখ দিয়ে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করলেন।

নার্স হপকিন্স বললেন, আজ আবহাওয়াটা বেশ ভালোই, কি বলেন? উত্তরে মিঃ জেরার্ড বললেন আপনার পক্ষে ভালো হতে পারে, আমার জন্য নয়। আমার রাতের ব্যথাটা খুবই কষ্ট দিচ্ছে।

নার্স হপকিন্স প্রত্যুত্তরে কিছু বলতেই তিনি চটে গেলেন এবং নার্সদের আচরণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে লাগলেন। আর মেরীকে লক্ষ্য করে বললেন, নার্স হবার চিন্তা ছেড়ে অন্য কিছু করা যায় কি না চিন্তা করতে।

মেরী কষ্ট করে বলে উঠলো, হাসপাতালের নার্স হতে পারলে তার পক্ষে ভালোই হবে।

একথার জবাবে মিঃ জেরার্ড মেরীকে অহংকারী অলস বললে মেরী বলল, একথা বলার কোন অধিকার তার নেই।

পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য হপকিন্স বেশ ভারী গলায় হালকা সুরে বললেন, মেরী বাবা হিসাবে তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে।

এক বিজাতীয় ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে আপাদমস্তক মেরীকে দেখে নিয়ে জেরার্ড বলল, মেরীর ফরাসী বুকনী, ইতিহাস পড়া আর চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা তার ভালো লাগে না। বলেই আধা-হাউসের ভিতরে ঢুকে গেল।

গল্পে গল্পে অনেকটা সময় কেটে গেছে। মেরীর কাছে বিদায় নিয়ে নার্স হপকিন্স ফিরে চললেন। এক নিঃসঙ্গতাবোধ আচ্ছন্ন করল মেরীকে। মেরী ভাবতে লাগল তাহলে কি করবে।

.

১.২.১

 আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে ছিলেন মিসেস ওয়েলম্যান। ওঁর চোখ জোড়া, গাঢ় নীল, নাকটা বেশ খাড়া, বেশ মোটা ভারী মহিলা, অহংকার ও দৃঢ়তার মূর্ত প্রতীক। সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দৃষ্টি নেমে এল আর জানালার ধারে বসা মেরীর উপর পড়ল। সামান্য থেমে মেরীকে ডাকলেন। মেয়েটি চমকে উঠে একটু লজ্জিত হয়ে পড়ল। মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমার সেবাযত্ন তুমি খুব করো…

মেরী কৃতজ্ঞতার সুরে বলল, তার সব কিছুর মূলেই মিসেস ওয়েলম্যান।

খাটের মধ্যে বেশ চঞ্চল হয়ে উঠলেন মহিলা এবং বললেন, ঠিক তা নয়…ঠিক তা নয়.. ঠিক বুঝতে পারি না…মানুষ যথাসাধ্য করতে চায়, কিন্তু কার পক্ষে কোনটা কত ভালো সেটা বিচার করা বড় মুশকিল হয়ে ওঠে। নিজের ওপর আমার সব সময়ই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল…

মেরী বলে উঠল, না না। আমার তো মনে হয় আপনি কখনো ভুল করেন না।

লরা ওয়েলম্যান কথাটা যেন ঠিক মেনে নিতে পারলেন না-না, আমার খুবই দুশ্চিন্তা হয়। জানো মেরী আমি দারুণ অহংকারী। আর অহংকার সবচেয়ে বড় পাপ। এলিনরেরও একই দশা।

প্রসঙ্গ পাল্টাতে মেরী মিস এলিনর আর মিঃ রডরিকের প্রসঙ্গ তুলল।

স্নেহমাখা সুরে মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, ওরা দুজনেই আমাকে ভালোবাসে। ওদের বললেই চলে আসবে। কিন্তু ঘনঘন আসতে বলতে পারি না। অসুস্থ মানুষ মৃত্যুর পরিবেশে ওদের টেনে এনে আরও পাপের ভাগী হতে চাই না আমি।

আমার তো মনে হয় না ওঁরা ওরকম চিন্তা করতে পারেন।

খানিকটা আত্মগত ভাবে বললেন তার বিশ্বাস ওরা বিয়ে করবে। কিন্তু নিজে উপযাজক হয়ে কথাটা বলা তিনি ঠিক মনে করেননি। ওরা যখন খুব ছোট তখন তার মনে হত এলিনর রডিকে ভালোবাসে। কিন্তু রডি যে ওকে ভালোবাসে সেটা ঠিক বুঝতে পারতেন না। হেনরীও রডির মতোই ছিল অত্যন্ত চাপা, খুঁতখুঁতে…মিসেস ওয়েলম্যানকে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিড়বিড় করে বললেন কততদিন…কতোদিন আগেকার কথা…বিয়ের পাঁচবছর পরেই ও চলে গেলোলা, ডবল নিমোনিয়ায়…বিয়েতে আমরা খুব সুখী হয়েছিলাম কিন্তু সে সুখ স্থায়ী হল না। তখন আমি অদ্ভুত শান্ত মেয়ে ছিলাম…বুদ্ধিসুদ্ধি তখনও পাকেনি, মাথায় তখন নানা চিন্তা, স্বপ্ন কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়াই…বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না…

তার মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে হেনরী চলে যাবার পর মিসেস ওয়েলম্যান খুব নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এখন তার বয়স ষাট। দীর্ঘদিন…তাই না? কণ্ঠস্বর ঈষৎ খাদে নামিয়ে বললেন…আর আজ এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি..

ওয়েলম্যান ও’ব্রায়ানের প্রশংসা করে বললেন, মেরীকে সবসময় পান বলে তিনি খুব সুখে আছেন। সে কাছে থাকলে তার বেশ ভালো লাগে।

হঠাৎ মিসেস ওয়েলম্যান মেরীকে বললেন, মেরীর ভবিষ্যতের ব্যাপারটা তার ওপরই থাক। তিনি এমন ব্যবস্থা করবেন যে, মেরীকে কারুর গলগ্রহ হয়ে থাকতে হবে না। যে কোন পেশা সে ইচ্ছা করলেই নিতে পারবে। তারপর বললেন তার কাছে মেরীর থাকাটার দাম অনেক বেশী।

মেরীকে তিনি বললেন যে তুমি আমার মেয়ের মতো মেরী। এই হান্টারবেরীতে তোমাকে ছোট্ট অবস্থা থেকে বড় হতে দেখেছি, তোমার জন্য আমার গর্ব হয়। আমার একমাত্র আশা, তোমার যাতে মঙ্গল হয় তা যেন করতে পারি।

মেরী জানাল সে মিসেস ওয়েলম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। সে কখন উপার্জন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার কারণ কেউ যেন মনে না ভাবে যে সে মিসেস ওয়েলম্যানকে শুষছে।

লরা ওয়েলম্যানের মেরীকে আশ্বস্ত করে বললেন যে, এ প্রশ্ন কখনই ওঠেনি আর ভবিষ্যতে উঠবেও না। তিনি আর বেশীদিন নেই।

মেরী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, ডাঃ লর্ড বলেছেন তিনি আরো বেশ কয়েক বছর বাঁচবেন। মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, তিনি ডাক্তারকে বলেছিলেন কোন ওষুধ দিয়ে তাকে শেষ করে দিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আর ঐ অভদ্র ছোকরা ডাক্তার তাকে বলে, মিসেস ওয়েলম্যানের জন্য উনি ফাঁসিতে ঝোলবার ঝুঁকি নিতে পারেন যদি তিনি তার সব সম্পত্তি তার নামে লিখে দেন।

মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, ডাক্তার দুর্বিনীত হলেও ওকে তাঁর ভালো লাগে। ওষুধের চেয়ে ডাক্তারের উপস্থিতিই তার বেশী উপকার করে।

মেরী সম্মতি জানাল।

কথা বলতে বলতে হঠাৎ গাড়ির শব্দ শোনা গেল জানালার বাইরে। মেরী জানালা দিয়ে দেখল মিস এলিনর আর মিঃ রডরিক এসেছেন।

.

১.২.২

 মিসেস ওয়েলম্যান, বোনঝি এলিনর আর রডির ব্যাপারটায় খুব খুশী। তারা একসাথে এসেছে দেখে তিনি খুব খুশী হলেন।

বৃদ্ধা ওয়েলম্যান এলিনরকে বললেন, তিনি মনে করেন এলিনর রডিকে একটু বেশী মাত্রায় পছন্দ করে কিন্তু এলিনরের জবাব শুনে খুশী হয়ে বললেন, রডি চায় না ভালোবাসার নামে কেউ ওকে পুরোপুরি কজা করে নিক। আর এলিনরের তুলনায় রডি তাকে বেশী পছন্দ করলেই তারা সুখী হবে বলে মনে করেন মিসেস ওয়েলম্যান।

এলিনর মনে করে ছেলে বন্ধুকে সব সময়ে ধাঁধার মধ্যে রাখা ভালো। এলিনর লরা মাসিকে প্রশ্ন করে ভালোবাসা জিনিসটা কি সত্যিই সুখের?

লরা মাসি এলিনরকে জানান অন্য কোন মানুষকে সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে চাইলে আনন্দের চেয়ে দুঃখই বেশী হয়। তবে এই অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি বাদ দিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না। যে কোন দিন প্রেমে পড়েনি, সে কোনদিন সত্যিকারের জীবন উপভোগ করেনি।

এলিনর মাথা নেড়ে সায় দিয়ে লরা মাসিকে কিছু প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল এমন সময় নার্স ও’ব্রায়ান এসে জানাল ডাক্তারবাবু এসেছেন।

.

১.২.৩

 ডাক্তার লর্ডের বয়স বছর বত্রিশ। চুলের রং বালি-বালি, মুখে ব্রনোর চিহ্ন, চেহারা খুব ভালো না হলে দেখতে মন্দ নয়। চওড়া চোয়াল। চোখের দৃষ্টি-তীক্ষ্ণ, চোখের তারা হাল্কা নীল রঙের, সব কিছু যেন ভেদ করে দেখতে চায়।

ডাক্তার মিসেস ওয়েলম্যানকে সুপ্রভাত জানালেন। প্রত্যুত্তরে মিসেস লরা ওয়েলম্যান ডাক্তারকে সুপ্রভাত জানিয়ে তার বোনঝির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন এবং হাত বাড়িয়ে ডাক্তার এলিনরের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় সারলেন।

এলিনর ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করলে ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য বিছানার দিকে এলেন। কতকগুলো রুটিনমাফিক পরীক্ষা আর প্রশ্নোত্তরের পর ডঃ পিটার লর্ড জানালেন মিসেস ওয়েলম্যান এখন অনেক সুস্থ।

মিসেস ওয়েলম্যান জানতে চাইলেন যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি হেঁটে চলে বেড়াতে পারবেন কিনা।

ডঃ লর্ড বললেন, বেঁচে থাকাটা মানুষের এক স্বাভাবিক অনুভূতি। আমরা যখন মনে করি ঐ লোকটার মরে যাওয়াই ভালো তখন কিন্তু সে লোকটা আদৌ মরতে চায় না। আবার বেঁচে থাকার সব উপকরণ যার হাতের মুঠোয়, দেখা যায় হঠাৎ সেই লোকটা দুম করে মরে গেল।

ডাঃ বললেন, মিসেস ওয়েলম্যান ঐ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে পড়েন যারা মরতে ভয় পায়।

কথার মোড় ফিরিয়ে মিসেস ওয়েলম্যান জিজ্ঞেস করলেন, জায়গাটা তার কেমন লাগছে। সে ডাক্তারীতে আরও পড়াশুনা করে স্পেশালাইসড হতে চায় কিনা?

ডঃ লর্ড জানালেন, তার কোন উচ্চাভিলাষ নেই। সাধারণ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক অসুখবিসুখ সারাতে তার ভালো লাগে। চলতি চিকিৎসাতে কোন পরিবর্তন আনা যায় কিনা তার জন্য হাতে-কলমে গবেষণাও তার ভালো লাগে। সে এখানে থেকেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চায়।

ডঃ চলে যাবার উদ্যোগ নিলে মিসেস ওয়েলম্যান তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার বোনঝিকে ডাক্তারের কেমন লাগল। একথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।

মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, এবার তোমার বিয়ে করা উচিত ডাক্তার।

.

১.২.৪

 বাগানে ঘুরতে ঘুরতে রডির মনে হল এলিনরের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা বোঝা তার পক্ষে বেশ কষ্টকর। এলিনর তার মনের কথা ঠিকমতো প্রকাশ করে না। আবার এলিনরের চরিত্রের এই দিকটাই রডির ভালো লাগে। রডি চিন্তা করে দেখল এলিনরের আচরণ বা ব্যবহারের ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় না, বা মনে আঘাত লাগে না। এলিনর দেখতে সুন্দর, বুদ্ধিমতী। ওকে পেয়ে সে সত্যিই সুখী, সৌভাগ্যবান। এলিনরের মতো মেয়ে কি করে ওকে বিয়ে করতে রাজী হল রডি তাই ভাবে।

মানুষ নিজের অবস্থা সঠিকভাবে মানতে পারলে সুখীই হয়। রডি ভাবল এলিনর যদি বিয়েটা পিছিয়ে না দেয় তবে ওদের শীগগির বিয়েটা হবে। প্রথম দিকে টানাটানি চললেও পরে প্রচুর টাকা হাতে আসবে তার। রডির ইচ্ছা হল ওয়েলম্যান কত টাকা রেখে গেছেন। আর কিভাবেই বা কাকে কি দিয়ে গেছেন।

বাগানের লাগোয়া জঙ্গলে অজস্র-ডাফোডিল ফুটে আছে। মুহূর্তের জন্য তাকে এক চঞ্চলতা গ্রাস করল। ওর মনে হতে লাগল কোথায় কিসের যেন অভাব তার রয়ে গেছে, কি যেন চেয়েছিল, আজও পায়নি সে। আর ঐটাই সে যেন চায়, ভীষণ ভাবে চায়।

সোনালী সবুজ আলো আর মিষ্টি বাতাসের নরম স্পর্শে তার নাড়ীর স্পন্দন বেড়ে গেল। তার সমস্ত-সত্ত্বা চঞ্চল হয়ে উঠল। হঠাৎই তার সামনে একটি অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে এসে দাঁড়াল। আর স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে পড়ল রডি, চোখের সামনে সমগ্র জগৎ যেন ঘূর্ণির মতো পাক খেতে লাগল, কিছুক্ষণ বাদে মেয়েটি নিজের পরিচয় দিয়ে জানাল সে মেরী জেরার্ড।

রডি এতই সম্মোহিত হয়ে পড়েছিল যে এলিনরের পায়ের শব্দ তার কানেই গেল না। এলিনর জানাল, ও’ব্রায়ান মেরীকে খুঁজছে মিসেস ওয়েলম্যানকে তুলতে সাহায্য করার জন্য। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে মেরী ছুটে গেল হরিণীর মতো।

রডি বলল, ঠিক যেন অ্যাটল্যান্টা…

এলিনর জবাব না দিয়ে বলল, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, তাদের ফেরা দরকার। তারা ফেরার জন্য পা বাড়াল।

.

১.২.৫

 গ্রেটা গার্বোর ছবি দেখবার নিমন্ত্রণ জানাল টেড, কিন্তু মেরী জানাল কিছুতেই সে এখন সিনেমায় যেতে পারবে না।

টেড রাগ দেখিয়ে বলল, মেরী জার্মানী থেকে পড়ে আসার পর অনেক বদলে গেছে।

মেরী জানাল, সে কিছুমাত্র বদলায়নি।

টেড ও মেরীর কথোপকথনের মাঝখানে হঠাৎ এক মহিলা আবির্ভূত হয়ে তীব্র দৃষ্টিতে দুজনকে দেখলেন। টেড দুপা পিছিয়ে মিসেস বিশপকে গুড আফটারনুন জানাল। মিসেস বিশপও প্রত্যুত্তরে টেড ও মেরীকে গুড আফটারনুন জানালেন।

মিসেস বিশপ চলে যেতে মেরী ও টেড আবার কথা শুরু করল। মেরীর মতে ভদ্রমহিলা তাকে অপছন্দ করেন। তাকে দেখলেই বেশ কড়া কথা শুনিয়েছেন।

টেড তাকে আশ্বস্ত করতে বলল যে, বহুদিন মিসেস বিশপ ঘর-সংসারের দেখাশোনা করছেন। সবাইকে হুকুমে রেখেছেন। বুড়ি ওয়েলম্যান এখন মেরীকে সুনজরে দেখছেন বলে মিসেস বিশপ তাক ঈর্ষা করেন।

ঈর্ষা জিনিসটা বড্ড-বাজে, মেরী বলল।

একথার জের টেনে টেড কিছু বলতে শুরু করলে মেরী তাড়াতাড়ি নার্স হপকিন্সের বাড়িতে চা-এর নিমন্ত্রণের কথা জানিয়ে বিদায় নিল। টেড রাগত দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

.

১.২.৬

 নার্স হপকিন্স গ্রামের একপ্রান্তে একটি কটেজে থাকেন। মেরী সেখানে পৌঁছে দেখল নার্স হপকিন্স সবেমাত্র কটেজে ফিরেছেন। এটা-ওটা কথার পর হপকিন্স টেড বিগল্যাণ্ডের কথা তুললেন এবং মেরীকে বললেন, ছেলেটা খুবই ভালো, গ্যারেজের কাজকর্মও ভালোই শিখেছে। আর অন্যান্য চাষীদের তুলনায় ওর বাবার চাষবাসও ভালোই হয়। তবে তোমাকে টেড বিগল্যাণ্ডের বৌ হিসাবে মানাবে না। তোমার জায়গায় আমি হলে সুযোগ পেলে ম্যাসাজের কাজ শিখে নিতাম।

 মেরী জানাল, মিসেস ওয়েলম্যানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তিনি ওকে ছাড়তে রাজী নন এখনই। মেরীর ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন চিন্তা করতে বারণ করেছেন।

নার্স হপকিন্স বললেন, যা করবেন তা যেন লেখাপড়া করে রাখেন, কখন কি হয় বলা যায় না। মেরীকে মিসেস বিশপ যে পছন্দ করেন না এবং তার কারণ যে মিসেস ওয়েলম্যানের মেরীর প্রতি সহানুভূতি তা নার্স হপকিন্স মেরীকে জানান।

.

১.৩.১

 ডাক্তার লর্ডের টেলিগ্রাম পেয়ে এলিনর আর রডি হান্টারবেরী এসে পৌঁছাল।

হান্টারবেরীতে প্রথম যাবার পর রডির সঙ্গে এলিনরের তেমন দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। রডি সম্বন্ধে এলিনর যেন আগের তুলনায় নিরাসক্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মাসির দ্বিতীয় স্ট্রোকের টেলিগ্রাম পেয়ে ওদের মধ্যে সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক হয়ে এল।

ট্রেনে যেতে যেতে তারা লরা মাসির সম্পর্কে নানা আলোচনা করতে লাগল। স্বভাবতই ডাঃ লর্ডের কথা উঠল। এবং ডাঃ লর্ড সম্পর্কে রডির অবিশ্বাস বেশ ভালো বোঝা গেল।

.

১.৩.২

 কপালে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে ডাক্তার লর্ড রোগিণীর জড়ানো কথাগুলোর মানে বোঝবার চেষ্টা করছিলেন এবং মিসেস ওয়েলম্যান যা যা চাইছেন, যেভাবে চাইছেন সব কাজ সেভাবেই হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিতে মিসেস ওয়েলম্যান পরম স্বস্তিতে চোখ বুঝলেন। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দুজন নার্সকে যা যা করার নির্দেশ দিলেন। তারপর নীচে নেমে এলিনর আর রডির জন্য অপেক্ষা করতেই দেখা হল মেরী জেরার্ডের সঙ্গে। উদ্বিগ্ন মুখে মিসেস ওয়েলম্যানের অবস্থার খবর নিলেন। কথার মাঝেই একটা গাড়ির শব্দ হল। ড্রইংরুমে পা দিতেই এলিনর চেঁচিয়ে উঠল, ওঁর অবস্থা কি খুবই খারাপ? রডির মুখ শুকনো, আশংকায় ভরা।

দুঃখিত হয়ে গম্ভীর সুরে ডঃ লর্ড বললেন, ওঁর পক্ষাঘাত হয়েছে। কথা প্রায় বোঝাই যাচ্ছে না। তবে উনি একটি ব্যাপারে দারুণ উদ্বিগ্ন। কাজটা কি ঠিক জানি না, তবে উকিলকে ডাকার কথা বলছেন।

এলিনর ডনাল উকিল মিঃ সেলডনকে সে চেনে। এরপর এলিনর আর ডাক্তার মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে গেলেন। ঝুঁকে পড়ে এলিনর দেখল লরা মাসির মুখটা সামানা বেঁকে গেছে। হঠাৎ চোখ খুলে এলিনরকে চিনতে পারলেন মিসেস ওয়েলম্যান।

অসুস্থ মহিলার গলা থেকে কতকগুলো জড়ানো শব্দ বেরিয়ে এল এবং শেষ পর্যন্ত এলিনর বুঝতে পারল যে মাসি তাঁর উইলে মেরীর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে চান। তিনি যেমন চান তেমনই কাজ হবে প্রতিশ্রুতি দিল এলিনর।

রোগিণী স্বস্তি পেলেন। চোখের দৃষ্টিতে যে করুণ আবেদন ফুটে উঠেছিল তা ধীরে ধীরে প্রশান্তির প্রলেপে সুন্দর হয়ে উঠল।

ডঃ লর্ড আর এলিনর বাইরে এসে দেখলেন সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে মেরী জেরার্ড নার্স হপকিন্সের সঙ্গে কথা বলছে। মেরী ডাক্তারের পরামর্শ শুনে মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে ঢুকলো। এলিনর মাথা ঘুরিয়ে ঘরের মধ্যে মেরীকে দেখছিল। দেখল চোখে মুগ্ধতা নিয়ে ডাক্তার পূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে এলিনর ডাক্তারের মুগ্ধতা কাটাল।

নার্স হপকিন্স নাক টানলেন। এলিনর বলল, দুঃখ হয় মাসির জন্য, ওর অবস্থা দেখে যা কষ্ট পেয়েছিলাম বলার নয়।

তা ঠিক, তবে আপনি ভাবভঙ্গিতে তা প্রকাশ করেননি। দারুণ সংযমের পরিচয় দিয়েছেন।

ঠোঁটে দৃঢ়তা ফুটিয়ে এলিনর বলল, মনের ভাব প্রকাশ না করার শিক্ষা আমার আছে।

ডাক্তার ধীরে ধীরে বললেন, তবে একদিন না একদিন মুখোস খুলে পড়বেই।

 মুখোস?

তাঁ, মানুষের মুখ মোটামুটিভাবে একটা মুখোস ছাড়া আর কি হতে পারে?

তার আড়ালে?

তার আড়ালে আছে আদিম নারী-পুরুষ। কোন কথা না বলে দ্রুত পায়ে এলিনর নীচে নেমে এল।

রডি উদ্বেগের সঙ্গে খবর জানতে চাইল।

 এলিনরের পরেই নীচে নেমে এসেছিল ডঃ লর্ড।

এলিনরকে জানাল তার আর করবার কিছু নেই। সকালের দিকে তিনি একবার আসবেন।

ডঃ লর্ডের করমর্দনের স্পর্শে এক অদ্ভুত আশ্বাসের ধ্বনি সঞ্চারিত হল এলিনরের দেহে-মনে। এলিনরের মনে হল ডাক্তার ওর জন্য দুঃখ বোধ করছে।

ডাক্তার চলে যেতে রডি জিজ্ঞেস করল, উনি কি বিশেষ কিছু করতে চাইছেন?

এলিনর জানাল, লরা মাসি কোন কাজের ব্যাপার হয়তো চিন্তায় আছেন। আপাততঃ ওঁকে বুঝিয়ে শান্ত করে এসেছি যে মিঃ সেলডন কাল সকালেই আসছেন।

রডি প্রশ্ন করল, উনি কি কোন নতুন উইল করতে চান?

উনি কি বললেন…প্রশ্নটা করতে করতে মেরীর দিকে রডির দৃষ্টি নিবদ্ধ হল এবং কথা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেল।

কড়া গলায় এলিনর বলল, কি যেন প্রশ্ন করছিলে তুমি? রডি দরজার দিকেই হাঁ করে তাকিয়ে রইল।

রডির হাবভাব দেখে এলিনর এমনভাবে হাতের মুঠো বন্ধ করল যে তালুতে নখ বসে গেল তার। মনে মনে বলল, এ আমার সহ্যের অতীত, এতোটা আমি সহ্য করতে পারি না…এটা কি বাজে ভাবনা নয়, সত্যিই…রডি…রডি…আমি কিছুতেই তোমাকে হারাতে পারবো না।…

এদিকে আবার এলিনরের মনে অন্য এক চিন্তার জাল ছড়িয়ে পড়ল। ঐ লোকটা…ঐ ডাক্তার…দোতলায় কি দেখছিল ও আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে…।

হায় ভগবান কি অসহ্য এই জীবন কি এক বিশ্রী ভাবনা আমাকে পেয়ে বসেছে। কিছু একটা বলো বোকা হাঁদা। নিজেকে সামলাও…?

এলিনর স্বাভাবিক ভাবে বলল, তার খিদে পায়নি। মনে মনে চিন্তা করল ওর সঙ্গে একা বসে সে আর খেতে পারবে না, জোর করে আগের মতো স্বাভাবিক ব্যবহার করতে বা কথা বলতে পারবে না। তারপরেই চঞ্চল হয়ে উঠে বলল, কাজগুলো আমায় নিজের মতো করে করতে দাও।

.

১.৪.১

 পরদিন সকালে মিসেস বিশপ এলিনরকে জানালেন সেই শোকবার্তা। মিসেস ওয়েলম্যান তার অত্যন্ত প্রিয় মনিব ঘুমের মধ্যেই মারা গেছেন। একেবারে হঠাৎই ঘটে গেল।

একটু কড়া গলায় এলিনর বলল, একেবারে হঠাৎ নয়। উনি তো বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন। আমি একটা ব্যাপারে কৃতজ্ঞ যে ওকে বেশীদিন কষ্ট ভোগ করতে হয়নি।

এলিনর লরা মাসির মৃত্যুর খবর রডিকে জানাল।

গতকাল যে অবস্থায় দেখেছিলাম ওঁকে, ঐরকম বেশীদিন চললে আমার পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠতো?

রডি যে লরা মাসিকে কাল দেখতে গেছিল একথা প্রকাশ হয়ে পড়ায় লজ্জা লজ্জা মুখে রডি জানাল, এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও কাল সন্ধেবেলা একবার সে গিয়েছিল মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে। নার্স গরম জলের বোতল নিয়ে নীচে গেলেন সে ফাঁক পেয়ে ঢুকে পড়েছিল। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে মিসেস গাম্পকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে দেখে চট করে বেরিয়ে পড়েছিল।

মিসেস ওয়েলম্যান চলে গিয়ে যে একপ্রকার উনি মুক্তিই পেয়েছেন এলিনর আর রডি এই নিয়ে আলোচনা করছিল।

.

১.৪.২

 নার্স হপকিন্স উত্তেজিত মুখে গত সন্ধ্যায় হলঘরে ফেলে যাওয়া অ্যাটার্চি কেসটাকে পাগলের মতো হাতড়াচ্ছিলেন। এমন একটা কাজ তিনি যে কিভাবে করতে পারেন তা ভেবে নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছিলেন। নার্স ও’ব্রায়ানের প্রশ্নের জবাবে নার্স হপকিন্স জানাল পেটে টিউমারের দরুণ এলিজা রাইকিনকে সকালে বিকেল মরফিন ইনজেকশন দিতে হয়। কাল একটা নতুন বাক্স কিনে ব্যাগে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ সকাল সেটা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।

নার্স হপকিন্স বললেন, এই হলঘর ছাড়া অন্য কোথাও তিনি কেসটা রেখে যাননি। আর এখানে তুলে নেওয়ার মতো কেউই নেই। তাকে অনেকটা পথ গিয়ে আবার মরফিন কিনতে হবে।

এরপর নার্স ও’ব্রায়ান এবং নার্স হপকিন্সের মধ্যে মিসেস ওয়েলম্যান সম্পর্কে কথা শুরু হল। নার্স ও’ব্রায়ান বলল, ডাঃ ওঁর রোগীদের সম্বন্ধে সবসময়েই একটু বেশী আশাবাদী।

নার্স হপকিন্স জানাল, ডঃ লর্ডের অভিজ্ঞতা অনেক কম এবং বয়েসটাও কম তাই তিনি একটু বেশীই আশাবাদী।

.

১.৪.৩

 নার্স ও’ব্রায়ান ডঃ লর্ডকে খবরটা দিলেন। ডাঃ লর্ড চমকে উঠলেন খবরটা শুনে এবং কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে হঠাৎই একটু গরম জল আনতে বললেন। নার্স ও’ব্রায়ান চমকে উঠলো। কিন্তু বিনা বাক্যব্যয়ে চলে গেল ডাক্তারের হুকুম তামিল করতে।

.

১.৪.৪

 রডারিক ওয়েলম্যান মিঃ সেলডনকে বললেন, আপনি কি বলতে চান মিসেস ওয়েলম্যান উইল করে যাননি, না কি আদৌ কোন উইল করেননি উনি।

মিঃ সেলডন জানালেন সত্যিই তিনি কোন উইল করেননি। রডি জানতে চাইল আপনি কখনও ওঁকে উইল করার কথা বলেনি, বোঝননি যে এটা করে রাখা ভালো। মিঃ সেলডন বললেন, লোকেরা মনে করে তারা অনেকদিন বাঁচবে, আর উইল করলেই মৃত্যু এগিয়ে আসে। মিসেস ওয়েলম্যানকে তিনি বহুবার উইল করার কথা বলেছেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। হয়তো মনস্থির করে উঠতে পারেননি, সম্পত্তি কাকে কিভাবে দিয়ে যাবেন।

এলিনর বলল, কিন্তু প্রথম স্ট্রোক হয়ে যাবার পর নিশ্চয়ই…

মিঃ সেলডন বললেন, মিসেস ওয়েলম্যান হয়ত মরার কথা চিন্তা করতেন, সেই সঙ্গে এটাও ভাবতেন যে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। আর হয়তো এই আশাতেই তিনি উইল করাটাকে অশুভ বলে মনে করেছিলেন। তবে তিনি উইল করবেন না একথা কখনোই বলেননি।

ডঃ বললেন, মানুষ যখন কোন অপছন্দের বিষয়কে এড়িয়ে যেতে চায় তখন কিভাবে এড়ায় জানেন?

মিসেস ওয়েলম্যান সবসময় উইল করার জন্য পরের কোন একটা দিনকেই প্রশস্ত দিন বলে মনে করতেন।

ধীরে ধীরে এলিনর বলল, তার জন্যই কি তিনি কাল রাতে আপনাকে আসবার জন্য বলেছিলেন?

নিঃসন্দেহে–তাই।

উকিলবাবু জানালেন, যেহেতু উইল না করেই মিসেস ওয়েলম্যান মারা গেছেন তাই তার সব সম্পত্তির অধিকারী হবে মিস এলিনর কার্লিসন। সরকার একটা অংশ কেটে নেবে। যেহেতু সম্পত্তির ব্যাপারে কোন সেটেলমেন্ট বা ট্রাস্ট করা হয়নি অতএব সবকিছু সোজা মিস এলিনরের হাতে এসে পড়ছে। ডেড ডিউটি প্রভৃতি ট্যাক্সগুলো দিয়েও যা টাকা থাকবে সেটার পরিমাণ খুব কম নয়। মিঃ সেলডন জানালেন রডারিক ওয়েলম্যান সম্পত্তির কিছু পাবেন না কারণ তিনি মিসেস ওয়েলম্যানের স্বামীর ভাইপো। তার সঙ্গে কোন রক্তের সম্পর্ক রডারিকের নেই।

রডি মিঃ সেলডনের কথায় সম্মতি জানাল।

.

১.৪.৫

 মিঃ সেলডন চলে যাবার পর মুখোমুখি হল এলিনর আর রডারিক। প্রায় মিনতির সুরে এলিনর বলল, তাতে কিছু আসবে যাবে না, তাই তো রডি? লণ্ডনে তো আমরা দুজনে মিলে ঠিকই করেছিলাম আমাদের যে কেউই সম্পত্তি পাক না কেন, চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ আমরা তো বিয়ে করতে যাচ্ছি।

রডিকে নিরুত্তাপ দেখে এলিনর বলল, কিন্তু আমরা কি বিয়ে করতে যাচ্ছি রডি?

আমার তো মনে হয় সেই রকমই কিছু একটা ঠিক ছিল। রডির কথার মধ্যে বেশ উপেক্ষা ও রুক্ষতার ভাব। তবে এখন যদি তুমি অন্যকিছু ভেবে থাকো?

এলিনর প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, তোমার কাছ থেকে কি একটুও আন্তরিকতা আশা করতে পারি না?

রডি বলল, স্ত্রীর পয়সায় খেতে আমার খুব ভালো লাগবে বলে তো মনে হয় না।

 এলিনর সাদা মুখে রুক্ষভাবে বলল-আসল ব্যাপারটা তাই নয়, ব্যাপারটা মেরী? তাই না?

মেরীর ব্যাপারটা রডি পরিষ্কার ভাবে জানাল এলিনরকে। বলল, আমি ওর প্রেমে পড়তে চাইনি।

…তোমাকে নিয়ে আমি বেশ সুখীই ছিলাম। তুমি অসাধারণ এলিনর। তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আমি। এই ব্যাপারটা একটা মোহের ব্যাপার। সব কিছু গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে…

এলিনর শান্ত গলায় বলল, প্রেম খুব একটা যুক্তি মেনে চলে না…

রডি জানাল, মেরীকে সে কিছু বলতেই মেরী তাকে সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেয়।

 হাতের হীরের আংটিটা রডিকে ফিরিয়ে দিতে চাইল এলিনর।

মেরীর মনোভাব জানার চেষ্টা করতে বলল এলিনর। এবং একই সঙ্গে তার মনে হল মেরী যদি না থাকতো।…

.

১.৫.১

 নার্স হপকিন্স ও নার্স ও’ব্রায়ান মিসেস ওয়েলম্যানের শেষকৃত্য সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন ব্লু টিট কাফেতে। নার্স হপকিন্স মিস কার্লিসলের উদারতায় মুগ্ধ। মিসেস ওয়েলম্যানের উইল করে যাওয়া উচিত ছিল বলে বললেন নার্স হপকিন্স।

উইল করে গেলে মিসেস ওয়েলম্যান কাকে সম্পত্তি দিতেন এ প্রশ্ন করতেই বেশ দৃঢ় সুরে নার্স হপকিন্স বললেন, উনি অন্ততঃ কিছু টাকা মেরীকে দিতেনই।

তার কথায় সায় দিয়ে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, যেদিন রাতে মিসেস ওয়েলম্যান খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন সেদিন বৃদ্ধা দুবার মেরীর নাম উচ্চারণ করেছিলেন। এবং খোলাখুলি বলেছিলেন মেরীকে কিছু দিতে হবে।

নার্স ও’ব্রায়ান জোর গলায় বললেন, উইল করে গেলে হয়তো উনি শেষ কানাকড়িটাও মেরী জেরার্ডকে দিয়ে যেতেন।

দ্বিধাগ্রস্ত নার্স হপকিন্সের মতে নিজের রক্তের লোককে না দিয়ে অন্য কাউকে সম্পত্তি দেওয়া উচিত নয়।

নিজের রক্তের লোক কথাটা শুনে বেশ রহস্য করে গাম্ভীর্য বজায় রেখে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, আমি গুজব ছড়াতে চাই না। আর মৃত লোককে ব্ল্যাকমেলও করতে চাই না।

নার্স হপকিন্স নার্স ও’ব্রায়ানের সঙ্গে সম্মত হলেন– চায়ে চুমুক দিয়ে ও’ব্রায়ান এবার মরপিনের শিশিটার কথা তুললেন।

নার্স হপকিন্স জানালেন মরপিনের শিশিটার অদৃশ্য হওয়াটা একটা রহস্যের মতো।

.

১.৫.২

মিসেস ওয়েলম্যানের লেখার টেবিলের সামনে বসে এলিনর সবার ইন্টারভিউ নিচ্ছিল। মিসেস বিশপের পর মেরী জেরার্ডের পালা। মেরী এসে তার আসন গ্রহণ করতে পেশাদারী নিস্পৃহতায়–এলিনর বলল, যেহেতু মাসি উইল না করেই মারা গেছেন, তাই তাঁর ইচ্ছাকে ফলবতী করার দায়িত্ব তার। মিঃ সেলডনের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তারই উপদেশ অনুসারে চাকরদের কাজের ভিত্তিতে কিছু জেরার সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে যদিও মেরী সেই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে না এবং শেষদিন সন্ধ্যাবেলায় মিসেস ওয়েলম্যান মেরীর ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু ব্যবস্থা করার কথা বলছিলেন তাই মেরীকে সে ২০০০ পাউণ্ডের ব্যবস্থা করে দেবে। ও টাকাটা মেরী যেভাবে খুশি খরচ করতে পারবে।

মেরী এলিনরকে কৃতজ্ঞতা জানাল। এলিনর মিঃ সেলডনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আপাততঃ কিছু টাকা যদি পাইয়ে দেওয়া সম্ভব হয় মেরীকে তার প্রতিশ্রুতি দিল। মেরী বিদায় নিল।

.

১.৫.৩

 এলিনর রডিকে জানাল মিসেস বিশপকে পাঁচশো, রাঁধুনিকে একশো, মিলি আর ওলিবকে পঞ্চাশ করে আর অন্যদের পাঁচ পাউণ্ড করে, মালী স্টিভেনকে ২৫ পাউণ্ড দেওয়া সে ঠিক করেছে। তবে মেরীর বাবার জন্য কিছুই আপাততঃ ঠিক করেনি। তবে এলিনর মনে করে জেরার্ডের জন্য পেনসনের ব্যবস্থা করতে হবে। মেরীকে দুহাজার পাউণ্ড দেবার সিদ্ধান্তের কথাও রডিকে জানাল এবং আইনগতভাবে রডিওর কিছু প্রাপ্য জানাল।

রডির লম্বাটে মুখ রাগে সাদা হয়ে গেল, বলল, এলিনর, তুমি ভাবলে কি করে যে তোমার কাছে আমি হাত পাতবো?

এলিনর রডিকে শান্ত করার চেষ্টা করল। রডি জানতে চাইল মেরী কি করতে চায়? এলিনর জানাল ও ম্যাসাজ করার ট্রেনিং নেবে বলছে।

এলিনর রডিকে বলল, মেরীর সঙ্গে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে তার উচিত মাস কয়েকের জন্য কোথায় বেড়িয়ে আসা। তাহলেই সে বুঝতে পারবে প্রকৃতই মেরীকে যে ভালোবাসে না সেটা তার মোহ।

রডি এলিনরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার পরামর্শ মেনে নিল।

.

১.৫.৪

 কয়েকদিন পরে মেরী নার্স হপকিন্সকে তার সৌভাগ্যের কথা জানাতেই তিনি খুশী হয়ে বললেন এলিনর খুব ভালো মেয়ে আর মেরীর ভাগ্য সত্যিই ভালো। মেরী বলল, তার ধারণা এলিনর তাকে বিশেষ পছন্দ করে না।

নার্স হপকিন্স বললেন, সঙ্গত কারণ আছে তার। মিঃ রডরিক মনে হয় গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এবার বলো তো মেয়ে তোমার ব্যাপারটা কি? তুমিও কি ওঁকে মন-টন দিয়েছে নাকি?

মেরী একটু ইতস্ততঃ করে বলল, মানুষটি ভারী চমৎকার।

নার্স হপকিন্সকে মেরী জিজ্ঞেস করল তার বাবার ব্যাপারে সে কি করবে? তার থেকে সে কিছু তার বাবাকে দেবে কিনা।

নার্স হপকিন্স বললেন, না না, ওসব কিছু করতে যেও না। মিসেস ওয়েলম্যান নিশ্চয়ই তোমার বাবাকে ওই টাকাটা দিতে চাননি।

মিসেস ওয়েলম্যান কেন উইল করে যাননি। এই নিয়ে নার্স হপকিন্স আর মেরীর মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। হঠাৎ নার্স হপকিন্স মেরীকে উইল করার প্রস্তাব দিলেন এবং পোস্ট অফিস থেকে ফর্ম এনে নার্সের কটেজে ওরা কথা বলছিল। মেরী তার মাসি মেরী রাইলির নামে উইল করবে বলে স্থির করল।

নার্স হপকিন্সের কথা মতো মেরী ফর্মে লিখল আমি আমার সব কিছু মেরী রাইলিকে দিয়ে যাচ্ছি, যিনি আমার মা, হান্টারবেরীর স্বর্গত এলিজা জেরার্ডের বোন। ফর্ম ভর্তি করে হঠাৎ মুখ তুললেই চমকে উঠল মেরী। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে এলিনর কার্লিসল তাকে প্রশ্ন করছে এত মন দিয়ে কি করছে মেরী?

নার্স হপকিন্স জানাল, মেরী তার উইল করছে। হপকিন্সের কথা শুনে এলিনর এক বিচিত্র হাসি হেসে উঠল এবং নার্স হপকিন্স অবাক হয়ে এলিনরকে দেখতে লাগলেন।

.

১.৫.৫

 পাঁচ-ছ পা এগিয়েছে, হাসির ধমক তখনও থামেনি, কে যেন এলিনরের কাঁধে হাত রাখল। চমকে ফিরে তাকাতেই দেখল ডঃ লর্ড কপালে কুঞ্চন রেখা ফুটিয়ে বিরক্তভাবে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছেন।

ডঃ লর্ড জিজ্ঞেস করলেন, কি দেখে হাসছিলেন এত? এলিনর জানাল মেরী জেরার্ডকে উইল করতে দেখে তার হাসি পেয়েছে কিন্তু কেন তা তার মাথায় আসছে না।

কড়া গলায় ডঃ লর্ড বললেন, পারছেন না, না? বিশ্বাস করুন, আমার দিক থেকে এটা খুবই খারাপ, মনে হয় খুব নার্ভাস লাগছে।

ডঃ লর্ড এলিনরকে জানাল, এলিনর কোন কথা গোপন করছে।

আমি কোন কিছুই গোপন করছি না, আর এর মধ্যেও আমি নেই।

ডঃ লর্ড শান্ত সুরে বললেন, আপনি আছেন এবং বড্ড বেশীভাবে ভাবছেন। এরপর লর্ড জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি এখানে আরো কিছুদিন থাকছেন?

এলিনর জানাল, কালই সে চলে যাচ্ছে এবং ভালো দাম পেলে সে বাড়িটা বিক্রি করে দেবে।

তাচ্ছিল্যের সুরে লর্ড বললেন, তাই নাকি? হ্যাঁণ্ডশেক করার জন্য এলিনর হাত বাড়াতেই ডঃ লর্ড আবার একই প্রশ্ন করলেন। উত্তরে এলিনর একই জবাব দিল। মেরী জেরার্ডকে উইল করতে দেখে সে হাসি চাপতে পারেনি।

ড. লর্ড বললেন আপনি? আপনি উইল করেছেন কি? উত্তরে এলিনর বলল, না, তবে এবার গিয়েই মিঃ সেলডনকে বলব।

পিটার লর্ড বললেন, বলবেন।

.

১.৫.৬

 লাইব্রেরী বসে মিঃ সেলডনকে চিঠি লিখল এলিনর :

প্রিয় মিঃ সেলডন,
আমার জন্য একটা উইলের খড়সা তৈরী করে রাখবেন, আমি গিয়ে সই করবো। খুব সাধারণ উইল। আমার যাবতীয় সম্পত্তি আমি রডারিক ওয়লেম্যানকে দিয়ে যেতে চাই।
আপনার একান্ত
এলিনর কার্লিসল

ওপরের ঘর থেকে ডাকটিকিট আনতে গিয়ে দেখল রডি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে। রডিকে প্রশ্ন করল এলিনর, এটা যদি বিক্রি হয়ে যায় তোমার কি কষ্ট হবে?

রডি জানালা বিক্রি করে দেওয়াই ভালো। চিঠিটা শেষবারের মতো পড়ে নিয়ে খামে ভরে মুখটা আঁটলো এলিনর। তারপর টিকিট লাগাল।

.

১.৬.১

 নার্স হপকিন্সকে লেখা নার্স ও’ব্রায়ানের চিঠি :

১৪ই জুলাই
লাবোরা কোর্ট

প্রিয় হপকিন্স,
কয়েকদিন ধরেই লিখবো লিখবো করছি। বাড়িটা চমৎকার কিন্তু হান্টারবেরীর মতো নয়। আমার রোগীটি খুব শান্ত, ভদ্র। ডবল নিমোনিয়া হয়েছে, এখন ক্রাইসিস কেটে গেছে একটা কথা শুনলে বেশ মজা পাবেন। এ বাড়িতে ড্রয়িংরুমের পিয়ানোর ওপর রূপোর ফ্রেমে বাঁধানো একটা ফটো আছে যেটা অবিকল লিউইস সই করা ফটোটার মতো, সেটা মিসেস ওয়েলম্যান আলমারী থেকে বের করতে বলেছিলেন। বাড়ির পুরনো চাকরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানলাম ফটোটা লেডী র‍্যাটেরীর দাদা স্যার লিউইস রাইক্রফটের। যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। চাকরের কাছ থেকে কথায় কথায় জানতে পারলাম বিয়ে করেছিলেন তবে লেডী রাইক্রফটকে পাগলা-গারদে বিয়ের অল্প পরেই যেতে হয়েছিল। এবং তিনি তখনও বেঁচে ছিলেন। আমরা কতো উল্টো-পাল্টা ভাবতাম, তাই না? মিসেস ওয়েলম্যান আর লিউইস বোধহয় পরস্পরকে ভালোবাসতেন, কিন্তু বউ পাগলা-গারদে ছিল বলে বিয়ে করতে পারেন নি। ভদ্রলোক মারা গিয়েছিলেন ১৯১৭ সালে। দারুণ রোমান্টিক ব্যাপার তাই না? এত বছর ধরে স্মৃতির মণিকোঠায় সযত্নে লালন করা, মরবার আগে ঐ ভাবে ফটোর দিকে তাকিয়ে থাক?
সব খবর দিয়ে চিঠি দেবেন।
 ইতি
আইলিন ও’ব্রায়ান

নার্স ও’ব্রায়ানকে লেখা নার্স হপকিন্সের চিঠি :

১৪ই জুলাই
রোজ কটেজ

 প্রিয় ও’ব্রায়ান,
এখানে সব কিছু আগের মতোই চলেছে। হান্টারবেরীর বাড়িতে বিক্রির নোটিশ ঝুলছে। মিসেস বিশপ খুবই বিচলিত। ওঁর বিশ্বাস ছিল মিস কার্লিসল মিঃ রডারিককে বিয়ে করে এই বাড়িতেই থেকে যাবে। এলিনর লণ্ডনে চলে গেছে। মেরী জেরার্ডকে দুহাজার পাউণ্ড দিয়ে গেছে। মেরীও ম্যাসাজ করা শিখতে গেলে লণ্ডনে। দু-একদিন আগে মিসেস স্ট্যালরীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল (উনি ড. রনসমের বাড়ি দেখাশোনা করতেন, ড. লর্ডের আগে এখানকার ডাক্তার ছিলেন ড. রনসম) লিউইসের নাম করতেই বললেন তিনি ফরবেস পার্কে থাকতেন এবং উনি যুদ্ধে মারা যান। মিসেস ওয়েলম্যানের সঙ্গে তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। ওঁরা বিয়ে করতে পারেনি তার কারণ রাইক্রফটের স্ত্রী ছিলেন পাগলা-গারদে। ডির্ভোস কত সহজেই পাওয়া যায় সুতরাং পাগলামীর কারণে ডিভোর্স না পাবার কোন কারণ ছিল না।
টেড বিগল্যাণ্ড বলে ছোকরা মেরীর লণ্ডনের ঠিকানা নিতে এসেছিল। সি. আর. ডবলু মেরীর দিকে একটু বেশীই ঝুঁকেছেন। শুনেছি মনে খুব দুঃখ নিয়ে এলিনর চলে গেছে। এলিনর এত সম্পত্তি পেল। তারপর তাদের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক ইতি ঘটল। ব্যাপারটা আমার কাছে হেঁয়ালি।
বুড়ো জেরার্ডের শরীর খুব খারাপ। যদিও তার আচরণ একবারেই বদলায়নি। একদিন বলছিল, মেরী ওর মেয়ে নয়। বুড়োর বউ বিয়ের আগে মিসেস ওয়েলম্যানের খাস ঝি ছিল।
গত সপ্তাহে দি গুড আর্থ দেখলাম।
ইতি–
একান্ত আপনার
জেসী হপকিন্স

 নার্স ও’ব্রায়ানকে লেখা নার্স হপকিন্সের পোস্টকার্ড :

মনে হচ্ছে দুজনেই দুজনই এক সঙ্গে চিঠি লিখছি। আবহাওয়াটা খুবই খারাপ।

 নার্স হপকিন্সকে লেখা নার্স ও’ব্রায়ানের পোস্টকার্ড :

 আজ সকালে চিঠিটা পেলাম। একেবারে কাকতালীয় ব্যাপার।

 এলিনর কার্লিসলকে লেখা রডারিক ওয়েলম্যানের চিঠি :

১৫ই জুলাই

প্রিয় এলিনর,
এইমাত্র তোমার চিঠি পেলাম। না, ইন্টারবেরী বিক্রি করার ব্যাপারে আমার কোন মতামত নেই। এখানে বেশ ভালো গরম পড়েছে। তুমি ছাড়া আর সব মানুষকেই আমার কেমন যেন লাগে। দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ডালমেশিয়ান উপকূলে যাব ঠিক করেছি। ২২ তারিখ থেকে আমার ঠিকানা হবে কেয়ার অফ টমাসকুক, বোভনিক। আমার তরফ থেকে যে কোন রকম সহযোগিতার প্রয়োজন বোধ করলে লিখতে কুণ্ঠা করো না। শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি।
-রডি।

মিস এলিনর কার্লিসলকে লেখা মেসার্স সেলডন, ব্রোদারউইক এণ্ড সেলডন কোম্পানীর মিঃ সেলডনের চিঠি :

১০৪, ব্রুস বেরী স্কোয়ার,
২০শে, জুলাই

প্রিয় মিস কার্লিসল,

হান্টারবেরীর জন্য মেজর সামারভিলের বারো হাজার পাঁচশো পাউণ্ড অফার আমার মতে যথেষ্ট ভালো। আজকাল বিশাল বাড়ি বিক্রি করা বেশ কষ্টসাধ্য। অতএব ওর প্রস্তাবটা মেনে নিতে পরামর্শ দিচ্ছি।

মেজর সামারভিল তিন মাসে জন্যে এখুনি নিতে চাইছেন, তার মধ্যে আইনের কাগজপত্র –লেনদেন সব পুরো হয়ে যাবে।
ড. লর্ড বলেছেন বুড়া জেরার্ড বোধহয় আর বেশীদিন বাঁচবে না। প্রবেট যদিও পাওয়া যায়নি তবে মিস মেরী জেরার্ডকে ১০০ পাউন্ড অগ্রিম দিয়ে দিয়েছেন।
ইতি
আপনার বিশ্বস্ত
এডমণ্ড সেলডন

মিস এলিনর কার্লিসলকে লেখা ড. লর্ডের চিঠি :

২৫শে জুলাই

প্রিয় মিস কার্লিসল,
বুড়ো জেরার্ড আজ মারা গেছে। এ ব্যাপারে আপনাকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারি কি? আপনার বিশ্বস্ত
লিটার লর্ড

মেরী জেরার্ডকে লেখা এলিনর কার্লিসলের চিঠি :

২৫শে জুলাই

প্রিয় মেরী,
তোমার বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অত্যন্ত দুঃখিত। মেজর সামারভিল বলে এক ভদ্রলোক হান্টারবেরীর বাড়িটা কিনতে চাইছেন। ওখান থেকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তোমার বাবার জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা কি তোমার পক্ষে সম্ভব হবে? আশা করি তুমি ভালো আছ।
—এলিনর কার্লির্সল নার্স

হপকিন্সকে লেখা মেরী জেরার্ডের চিঠি :

২৫শে জুলাই

প্রিয় নার্স হপকিন্স,
বাবা সম্বন্ধে যা লিখছেন তার জন্য ধন্যবাদ। শেষকৃত্যের জন্য গেলে আপনার ওখানে কয়েকদিন থাকা সম্ভব হবে কি? যদি হয়, তবে উত্তর দেবার দরকার নেই।
আপনার স্নেহের
মেরী জেরার্ড

.

১.৭.১

 ২৮শে জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে কিংস আর্ম, হোটেল থেকে বেরিয়ে মেডেনস ফোর্ডের বড় রাস্তায় এসে এলিনর দেখতে পেল মিসেস বিশপকে।

এলিনর জানাল, মেজর সামারভিলকে বাড়িটা সে বিক্রি করেছে। মিসেস বিশপ বললেন, হান্টারবেরী অন্য লোকের হাতে চলে যাচ্ছে সেটা ভাবতেও খারাপ লাগে।

এলিনর বলল, সেটা ঠিক। কিন্তু এত বড়ো বাড়িতে একলা থাকা সম্ভব নয়। এরপর মিস এলিনর হান্টারবেরীর বাড়ির কোন পছন্দসই ফার্নিচার তাঁকে নিতে বলল। খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে মিসেস বিশপ ড্রইংরুমের দেরাজ লাগানো লেখার বড় টেবিলটা এলিনরের কাছ থেকে চেয়ে নিলেন।

এরপর এলিনর তাকে টেবিলটার সঙ্গে ম্যাচিং করা কিছু চেয়ার নিতে অনুরোধ করলেন, এবং দারুণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মিসেস বিশপ ওগুলো নিতে সম্মত হলেন।

মিসেস বিশপ এলিনরকে জানাল মেরীর বাবাকে গতকাল কবর দেওয়া হয়েছে। মেরী এখন নার্স হপকিন্সের বাড়িতে উঠেছে। হান্টারবেরীতে মালপত্র সরাতে আজ সকালেই তারা যাবে।

এলিনর মিসেস বিশপের সঙ্গে হ্যাঁণ্ডশেক করে এগিয়ে গেল দোকানের দিকে।

.

১.৭.২

 হান্টারবেরীর বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে এলিনর কার্লিসল ঢুকলো। বাগানে এক সারি সুইট পী ফুলের পাশ দিয়ে হাঁটতেই ছোটমালী হরলিক সেলাম জানাল এবং চিঠি পেয়েছে জানাল।

এলিনর এগিয়ে যেতেই মালী তাকে ডেকে বলল, আপনি যদি দয়া করে মেজর সামারভিলকে একটু বলে দেন, ওঁরও তো মালীর দরকার হবে?

এলিনর জানাল সে আগেই একথা ভেবে রেখেছিল। এলিনর চিন্তা করতে লাগল রডি আর ও হান্টারবেরীকে ভালোবাসত। ছোটবেলায় তারা অনেকবার হান্টারবেরীতে এসেছে। মনের কোণে একটা প্রচ্ছন্ন বাসনা বাসাও বেঁধেছিল, ভবিষ্যতে কোনদিন এখানে ও থাকবে। মালির ছোট ছোট কথাবার্তা থেকেও সেরকম একটা ধারণা মনের গড়ে উঠেছিল। রডিও হয়তো দুজনে একসাথে এখানে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখত।

আজ এই মুহূর্তে রডি আর ও এই বাড়িতে থাকত। বাড়ির মালিকের অহংকার নিয়ে বাগানে, বারান্দায় গর্ব ভরে ঘুরে বেড়াতে পারত। সুখের সংসার হত কিন্তু কোত্থেকে বুনো গোলাপের সৌন্দৰ্য্য নিয়ে একটা মেয়ে ওদের সুখের আকাশে ধূমকেতুর মতো উদয় হল।

এলিনর মনে মনে ভাবতে লাগল, মেরী জেরার্ডের কতটুকু জানে রডি? কি দেখল ওর মধ্যে রডি? মেরী জেরার্ড যদি মরে যায়, তাহলে কি রডি একদিন স্বীকার করবে ভালোই হয়েছে, আমাদের মধ্যে কোন মিল ছিল না……হয়তো বিষাদের সুরে বলবে।

খুব মিষ্টি ছিল মেয়েটা..তাই হোক ওর কাছে, সুখের স্মৃতি হয়ে থাকে…সৌন্দর্য সব সয়মই সুখকর।

..মেরীর যদি কিছু হয় তবে রডি নিশ্চয়ই তার কাছে ফিরে আসবে। রডি তারই হবে। এ বিয়ের কোন সন্দেহ নেই।

বাড়িতে ঢুকে এলিনরের মনে হল কে যেন বাড়ির মধ্যে ওঁৎ পেতে বসে আছে ওর জন্যে…। ভাড়ার ঘরে রুটি, মাখন, মাছের কৌটো আর দুধের বোতল নামিয়ে রেখে এলিনর দোতলায় গেল মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে। বড়ো আলমারীর ড্রয়ারটা খুলে কাগজপত্র, জামা কাপড় আলাদা আলাদা করে সাজিয়ে রাখতে লাগল।

.

১.৭.৩

 আউটহাউসে মেরী জের!র্ড খুব অসহায়ভাবে তাকাচ্ছিল চারপাশে। তার মনে পড়ে গেল অতীতের কিছু স্মৃতি।

এটা সেটা কথার পর নার্স হপকিন্স কাজের কথায় এলেন। ফার্ণিচারগুলো সব খুঁটিয়ে দেখে কতগুলো রাখতে আর কতকগুলো বেছে নিতে বললেন এবং একটা লিস্টও তৈরী করলেন।

মেরী জানাল, উকিলবাবু তাকে আগাম কিছু টাকা দিয়েছেন যা দিয়ে সে ট্রেনিং ফি এবং অন্যান্য খরচ চালিয়েছে। পুরো টাকাটা পেতে মাস খানেক লাগবে।

বুড়ো জেরার্ডের কাপড় জামা গোছানোর পর ওরা কাগজপত্র ভরা একটি টিনের বাক্সের মধ্যে জেরার্ডের জমিয়ে রাখা কিছু খবরের কাগজের কাটিং, পুরানো চিঠি ইত্যাদি পেল।

একটা কাগজ খুলে মেরী বলল, এই যে মা-বাবার বিয়ের সার্টিফিকেট, সেন্ট অ্যালবান গির্জা, ১৯১৯ সাল।

হঠাৎ মেরীর গলার স্বর কঠোর হল। কাঁপাকাঁপা গলায় বললো, ১৯১৯ সালে আমি এক বছরের ছিলাম। এটা তো ১৯৩৯ সাল। এখন আমার বয়েস একুশ। ১৯১৯ সালে আমি এক বছরের ছিলাম। তার মানে..যখন আমি হয়েছি তখন আমার মা বাবার বিয়ে হয়নি।

নার্স হপকিন্স বললেন, অনেক স্বামী-স্ত্রী আছে, তাদের যখন চার্চে যাবার কথা তার বেশ কিছু পরে যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গেলে সবটাই ঠিক হয়ে যায়।

আর ঠিক এই কারণেই কি বাবা আমাকে ভালোবাসতেন না? কারণ আমার মা ওঁকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলেন।

নার্স হপকিন্স একটু ইতস্ততঃ করে বললেন, সত্যি কথাটা তাহলে আমাকে বলতে হয়, তুমি জেরার্ডের মেয়েই নও।

মেরীর গাল লাল হয়ে উঠল, কিন্তু আপনি সেটা জানলেন কি করে?

 নার্স হপকিন্স বললেন, মারা যাবার আগে জেরার্ড অনেক কথা বলেছিলেন।

 ভেবে পাচ্ছি না তাহলে আমার আসল বাবা কে?

মুখ খুলতে গিয়ে মনঃস্থির করতে না পেরে নার্স হপকিন্স মুখ বন্ধ করলেন। ঘরে একটা ছায়া দেখে দুজনেই মুখ তুলে দেখল জানালার কাছে দাঁড়িয়ে এলিনর।

প্রাথমিক সম্ভাষণের পর এলিনর জানাল যে তাদের জন্য খাবার এনেছে এবং খাবার জন্য তিনজন এলিনরের বাড়ির দিকে এগোল। খালি বাড়ির শীতল ছায়ায় পা দিয়েই কেঁপে উঠল মেরী। এলিনর জানাল, সকালবেলা তারও ঠিক একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

খাওয়া-দাওয়ার পর নার্স হপকিন্স পাশের ঘরে গেলেন চা করতে আর এলিনর মেরীর সঙ্গে জোর করে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছিল। মেরীর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল এলিনর। অপ্রস্তুত হয়ে মেরী বলল, কিছু হলো কি? আপনি এমনভাবে তাকাচ্ছিলেন।

এলিনর জানাল কোন চিন্তা গভীরভাবে আমাকে পেয়ে বসলে এমনভাবে তাকাই মাঝে মাঝে, এলিনর স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। ছোটবেলায় চা তৈরী করার খেলাটা মেরীও খেলত কিনা জানতে চাইল।

এলিনর বলল, ছোটোবেলায় ফিরে যেতে আমার খুব ভালো লাগে। তোমার লাগে না মেরী? মেরী বলল, মিস এলিনর, আপনার উচিত নয় একথা ভাবা।

এলিনরের গলায় ইস্পাতের ধার, কি ভাবা উচিত নয় আমার?

 মেরী ভয়ে বলল, কি বলছিলাম…ভুলে গেছি আমি।

নার্স হপকিন্স চা আনতে পরিস্থিতিটা সহজ হল।

এলিনর মেরীকে কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

চা খাওয়া শেষ হল। এলিনর ট্রে হাতে বেরিয়ে যেতে যেতে দেখল জানালার ধারে দাঁড়িয়ে মেরী জেরার্ড, তরুণী, সুন্দরী, প্রাণবন্ত…।

.

১.৭.৪

 নার্স হপকিন্স ও এলিনরের কথা হচ্ছিল ভাঁড়ার ঘরে। জামার হাতদুটো গুটিয়ে বাসনপত্র ধোয়ার জন্য এগিয়ে এলেন নার্স হপকিন্স আর হঠাৎ তার কব্জির কাছে রক্ত দেখে এলিনর বলল, কিসের খোঁচা লাগল?

নার্স হপকিন্স হেসে বললেন, আউটহাউসের পিছন দিকে গোলাপের বাগানের কাঁটা ফুটে গেছে।

অতীতের স্মৃতির ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল এলিনরের হৃদয়তটে। ও আর রডি ঐ বাগানে ঝগড়া করত, লড়াই করত, আবার মিলও হত। হাসি, আনন্দে ভরা সুখের সেসব দিনগুলো তার মনে পড়ল, আর হঠাৎই একটা বেদনার শীতল হোত ওর সারা দেহ মনের ওপর দিয়ে বয়ে গেল–সেসব দিন..আর এখন? আমি পাগল হয়ে গেছি…একেবারে বদ্ধ পাগল।

নার্স হপকিন্স পরে বলেছিলেন, একেবারে অদ্ভুত ব্যাপার…মনে হচ্ছিল…নিজে নিজেই কথা বলছিলেন এলিনর। চোখগুলো কেমন যেন গোল হয়ে উঠেছিল।

লরা মাসির জিনিসপত্রগুলো গ্রামে কোথায় দিলে কাজে লাগবে জানতে চাইল এলিনর। তারপর দুজনে মিলে ঘরটা পরিষ্কার করে দোতলায় গেল।

সেখানে মিসেস ওয়েলম্যানের দামী দামী কাপড়জামা সব গুছিয়ে রাখল আর তারপরই নার্স হপকিন্সের হঠাৎ মনে পড়ল মেরীর কথা।

এলিনর বলল, ওকে চা খাবার ঘরে বসিয়ে রেখে তারা চলে এসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক হল। খাবারের ঘরে এসে দেখল মেরী একটা বড় আরাম চেয়ারে গা এলিয়ে শুয়ে আছে, জোরে জোরে অদ্ভুতভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল।

নার্স হপকিন্স হঠাৎ-ই হাঁটু মুড়ে মেরীর পাশে বসে পড়ে মুখের কাছে মুখ নিয়ে কি শুকলেন আর চোখের পাতা টেনে দেখলেন তারপর ড. লর্ডকে ফোন করার কথা বললেন।

কি ব্যাপারটা কি? এলিনর, ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করল! নার্স হপকিন্স জানালেন মেরীকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে চোখে সন্দেহের ছায়া নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন এলিনরের দিকে।